বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আমিনার দিনরাত্রি

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাসরুল্লাহ (০ পয়েন্ট)

X শরীরটা খুব ক্লান্ত,সারাদিন খাটাখাটুনির পর বিচানায় গাঁ এলাতেই ঘুমিয়ে পরে আমিনা। বাবা মায়ের ভিটামাটি ছেড়ে,দুবেলা দু’মুঠো পেটের আহার জোগার করার জন্য চলে আসে সুখের আশায়। অন্য এক গ্রামে। গরিব বাবা মা;নিজেরাই তিনবেলা ঠিক মতো খেতে পায় না। তার উপর বিয়ের উপযোগী মেয়ে। বাবা মায়ের চিন্তার অন্ত নিই। ভাবে আমিনার বাবা। গরিব মানুষ আমি। যদি কোন অগটন ঘটে যায়,তাহলে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে। তার চেয়ে ভালো হয়। বাবা মা ছাড়া এতিম পুলা সিদ্দিক মিয়ার কাছে বিয়েটা দিয়ে দেয়া। অনেক দিন থেকেই পুলাটা আমার পিছন পিছন ঘুরছে। না আমিনার বাবা আর ভাবতে পারছে না। কোন কিছু না ভেবেই নেশা গ্রস্ত সিদ্দিক মিয়ার কাছে বিয়ে দেয় আমিনার। কন্যা দ্ধায় থেকে বেচে যায় আমিনার বাবা মা। কিন্তু আমিনা পরলো দুঃখের অথই সাগর জলে। মেনে নেয় আমিনা,বাবা মাকেও দোস দেয় না আমিনা। সব কিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়। বিয়ের কিছু দিন ভালোই কাটে আমিনার। ভেবে ছিল সুখি হবে আমিনা। সুখের আশায় স্বামী বলার আগেই সব কিছু করে রাখে। স্বামীও খুশি বৌয়ের এরকম কাজ কর্মে। দুঃখ যার জীবন গড়া সুখ কি তার কপালে বেশি দিন সয়। সয় না। আমিনার কপালেও বেশি দিন সুখ সয়নি। কিছু দিন যাওয়ার পর স্বামী আর আগের মত ঘরে ফেরে না। অনেক রাত করে ঘরে ফেরে। কিছু বলতে গেলে আমিনাকে মারধর করে। যার কারনে মুখ খুলে কিছু বলতে ও পারে না আমিনা। এভাবেই কাটে আমিনার দিনরাত্রি। একদিন গভির রাতে আমিনার স্বামী নেশা করে ঘরে ফেরে। নেশার ঘুরে অনেক্ষন দরজায় দাক্কানোর পরে ও আমিনা দরজা খুলেনি। কারন অনেক রাত হয়ে যাওয়ার ফলে আমিনা ঘুমিয়ে পরে। যার কারনে আমিনা টের পায়নি। যেই দরজা খুললো। ভিতরে ডুকেই আমিনাকে মারধর শুরো করে। তার স্বামী। এক সময় মেরে আমিনাকে ঘর থেকে বের করে দেয় এবং ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়। আমিনা দরজার সামনে পরে যায়। গুর অন্ধকার চার পাশে কিছুই দেখা যায় না। চুপচাপ এক জায়গায় বসে যায় আমিনা। বসে বসে ভাবে আমিনা। অনেক সয্য করেছি,আর না। এভাবে ঘর করা যায় না। না খেয়ে পেট মাটি দিয়া পইরা থাহুম। তারপরও ওর ভাত খামু না। সেই গুর অন্ধকারেই আমিনা চলে আসে তার বাপের বাড়ি। এত্ত রাতে মেয়েকে দেখে বাবা মা চমকে উঠে। আমিনার বাবা মেয়েকে বলল,কিরে মা এত্ত রাইতে তুই এইহানে কেন?কি ওইছে তর?আব্বা আমি আর ওর ভাত খাইমু না। আমি এক কাপোরে চইলা আইছি। আমিনার মা কোন কিছু না শুনেই। মেয়ের চুলের মুটি ধরে মারতে শুরো করে। আর খারাফ ভাষায় গালাগালি শুরো করলো। বাবা মাকে থামিয়ে বলল। আমিনার মা;তুই এত্ত রাইতে কি শুরো করলি। এইবার একটু তাম। মাইয়াডা কত্তদিন পর আইলো। যা ওইছে পরে দেখমুনে। এহন যা। ঘরে যা আছে মাইয়াডারে খাইতে দে। না এই মাইয়ারে আমি খাওন দিতে পারুম না। এত্ত বড় শাহস। এত্ত রাইতে কেহুই সুয়ামির ঘর ছাইড়া বাপের বাইত আইয়ে। যা তর এই বাড়িত কোন জাগা নাই। আমিনার বাবা তার মাকে দমক দিয়ে বলল। যা তুই এহান থাইকা। আমার মাইয়ারে আমি দেহুম। তর এত্ত চিন্তা করতে ওইবো না। আয় মা ঘরে আয়। আমিনা ঘরে যায়। শুয়ে শুয়ে আবারও ভাবে আমিনা। না অভাবের সংসারে আমি আর বুঝা হইয়া থাহুম না বাবা মায়ের গাড়ের উপর। আমি চইলা যামু অনেক দূর,যেহানে কেহুই আমারে খুইজা পাইবু না। আর কারোর বুঝা হইয়া আমি বাইচা থাকতে চাই না। সারাটা রাত আমিনা ঘুমাতে পারেনি,তার পরও একবারের জন্য স্বামীর কথা মনে পরেনি আমিনার। মনে পরবেই বা কি করে। যার আদর ভালোবাসা পায়নি কোনদিন,তার কথা মনে পরবেই বা কি করে। এক মাতাল উন্মাতের কথা মনে করেই লাভ কি! তাইতো তার চলে আসা ভিন গ্রামে। সরাদিন কাজ করে রাতে ঘুমায় এক বাড়ির রান্না ঘরে। ভালোই কাটছিল দিনগুলো। কারোর শাসন নিই,স্বামীর অত্যাচার নিই। মন চাইলে কাজে গেলো,না মন চাইলে পাড়াপরশির সাথে গল্প করলো। দুঃখ যেনো আমিনার পিছু ছাড়ে না। আমিনা যেখানে যাবে ঠিক দুঃখও যেনো সেখানে ঘর বাঁধবে। এযেনো এক রহস্যময় দুঃখ। আমিনার রুপযৌবনেই যেনো এর দায়ী। এই রুপযৌবনের পাগল এই গ্রামের এক প্রবাবশালির ছেলে আছমত আলী। চলেবলে কৌশলে আমিনার সাথে সম্পর্ক্যরে দাঁনা বাঁধে আছমত আলী। আমিনাকে বিয়ের প্রলোবন দেখায়,সুখের স্বপ্ন দেখায়,নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায় আছমত আলী। দিনে দিনে আমিনা কেমন যেনো দূর্বল হয়ে যায় আছমত আলীর কথার জালে। সত্যি সত্যি আমিনা একদিন আছমত আলীর প্রেমে পড়ে যায়। সুখের স্বর্গে যেনো ভেসে ভেড়ায় আমিনা। দিনে দিনে যেনো তার রুপযৌবন ভেড়ে উঠছে। কাচা হলুদের মতো চিকচিক করে চেহারা। মনে যেনো রঙ লেগেছে আমিনার,তাই স্বপ্নের মাঝে ভেসে ভেড়াচ্ছে সারাদিন। ঐদিকে যে তার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা সর্বনাশ হতে চলছে সেদিকে তার খেয়াল নিই। আমিনা যে স্বর্গ সুখের খেলায় মেতে উঠেছিল। সেই সুখের ফসল এখন তার পেটে। আমিনা বুঝতে পারে না তার এমন হচ্ছে কেন। মনে মনে অনেক ভয় হচ্ছে আমিনার। কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না। কি করে বলবে,কাকে বলবে এই লজ্জার কথা। রাতে আছমত আলী আমিনার ঘরে আসে। আছমত আলী আমিনাকে বলল। কি অইলো তোমার মনডা খারাপ ক্যান। তুমি আমারে তাড়াতাড়ি বিয়া কর। তা না অইলে আমি গেরামে মুক দেহাইতে পারুম না। ক্যান কি অইছে! কি অইছে তুমি বুঝ না। বুঝাইয়া না কইলে কি কইরা বুঝুম। তোমার বাচ্চা আমার পেডে! কি কউ তুমি! আমি হাচাই কইতাছি। এহন যা করার তাড়াতাড়ি কর। আমি আর ভাবতে পারতাছি না। মানুষ জানতে পারলে মরন ছাড়া আমার কোন গতি নাই। এই বলে আমিনা কাঁদতে শুরু করলো। আমিনাকে থামিয়ে দিয়ে আছমত আলী বলল। তুমি থামু আমার মাথায় আগুন দইরা গেছে। এহন আমি কি করি। আব্বা হুনলে আমারে আর আস্তু রাকবো না। যে করেই হুক আমারে একটা উপায় বার করতে হইবো। আছমত আলী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের পাপ ঢাকার জন্য মাথার চুল সব চেড়ে ফেলছে। নিজেকে আর সামলাতে পারছে না আছমত আলী। এদিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টির শব্দ শুনতে পেয়ে আছমত আলী মনে মনে অনেক খুশি। ভেতরে ভেতরে শয়তানি বুব্দি আটছে,এই বিপদ থেকে কি ভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। অনেক্ষন চুপ করে থেকে আছমত আলী বলল। তুমি অহন ঘুমাইয়া পড়!যা করার কাল সহালে করুমনে। তুমি এহন কি করবা আমিনা বলল। তুমি ঘুমাইয়া তাহ,আমি মেঘডা সাইরা গেলে যামুগা। আমিনা ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু আমিনা জানে না এই ঘুমেই তার শেষ ঘুম। শয়তান আছমত আলী ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে আমিনাকে আজীবনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেয়। নিজের পাপ ঢাকার জন্য ফুলের মতো একটি জীবন শেষ করে দেয়…


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ আমিনার দিনরাত্রি

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now