বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আমার একটি শিক্ষিত ও ধার্মিক মা আছে

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান MD. RAKIBUL HASAN (০ পয়েন্ট)

X ইসলামের মৌলিক ধারণাটা আম্মু খুব শক্ত করে রপ্ত করিয়েছেন তার প্রাণপণ প্রচেষ্টায়। বিকেলে বাজার করতে গেলে আসরের নামাজ পরতাম কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য এলাকায় চাচা দাদাদের আমার পেছনে লেলিয়ে রাখতেন। গোয়েন্দা প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী আম্মা যখন জানতেন, আজকে বাজারে নামাজ ফাঁকি দিয়েছি। তখন যেকোন মূল্যে সেই নামাজ আদায়ে বাধ্য করতেন। খুব ভালো করে বুঝতে পারতাম, এই পরিবারে থাকতে হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেই থাকতে হবে। সেই বুঝের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে আমার শৈশব, কৈশোর, আর যৌবনের ভিত্তি। আমি কৃতজ্ঞ আমার মমতাময়ী আম্মুর কাছে। তা না হলে হয়তো যৌবনের জোয়ারে ভাসমান টগবগে শৈশব আর কৈশোর নিক্ষিপ্ত হতো অশ্লীলতার অতল গহ্বরে। সম্ভবত ক্যারিয়ার গড়তে তিনিই আমার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। শিশুকালে তাঁর সেই ধর্মীয় বিধান বর্ণনা আমাকে এত মুগ্ধ করেছিল যে পরে বিখ্যাত সুমধুর কন্ঠে আজহারীর মাহফিলও আমার সেই মুগ্ধতাবোধকে ছাপিয়ে উঠতে পারেনি। আমার ছোটবেলা মায়ের শাসনে কেটেছে। মা যখন রান্নাঘরে সুস্বাদু পিঠে বা মচমচে ভাজা কোনও নাস্তা বানাতেন তখন আমরা তাঁকে ঘিরে থাকতাম, মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতাম, একটু চোখে দেখার জন্য দরবার করতাম। তাওয়া থেকে প্রথম পিঠেটি নামিয়ে ঠান্ডা করার জন্য মা যেই ফুঁ দিতে শুরু করতেন, তিনি খাবেন বলে। আমি তাঁর হাত থেকে সেই পিঠাটাই ছিনিয়ে নিতাম। কারণ মায়ের হাতের ছোঁয়া আর অনেক গুলো পিঠার মধ্যে তিনি ওই পিঠাকে চয়েস করেছেন' বলে আমার কাছে বিশেষ মর্যাদার ছিল। আর আমি শুধু মাত্র ওই পিঠাটাই খাইতাম। এজন্য আমার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে প্রসিদ্ধ একটা কথা রাকিব পিঠাটিডা তেমন পছন্দ করে না। আমি আর Farhan Nur Sayed একসাথে, অভিন্নভাবে বড় হয়েছি। আমাদের শিশুকাল থেকেই শৈশব কৈশোর এবং তারুণ্য কেটেছে এক্কেবারেই এক পাত্রে। মা আমাদের সযত্নে শাসনে লালনে পড়ালেখা ও বাস্তবতা শিখাতেন। আর কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা হতো। বিশেষ করে এশার নামাজ হতো পড়ালেখা ফাঁকি দেওয়ার অন্যতম নিদর্শন। নামাজে এসে একসাথে আড্ডা, হাত দিয়ে ছোট ছোট মাছ শিকার করা, গল্প করতে করতে সময় নষ্ট করা, টিভিতে হাতিম, ইত্যাদি, আর ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য ফাঁকিবাজি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আর আমাদের দুজনের সাথে জরিয়ে থাকা আরো একজন শ্রদ্ধেয় গুরুজনের ভুমিকা মনে থাকবে চিরকালের চিরদিন। একসাথে ভাত খাইয়ে দেওয়া, গোছল করিয়ে দেওয়া, খেলাধুলার আসবাবপত্র সুন্দর ভাবেই সাজিয়ে রাখা, আমাদের যত্নে তার অনুগ্রহ অতুলনীয়। তিনি হলেন ফারহান ফাহিমের নানু। অর্থাৎ (Parvin Akther কাকির আম্মা) যাই হোক, এতো কিছু বলার পেছনে অবশ্যই কারণ রয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে আম্মুকে দেখি না। আম্মুর হাতের রান্না খাই না। গোছল করার পর প্যান্ট লুঙ্গি আম্মুর আশায় রাখা হয় না। পাঞ্জাবি পায়জামা ময়লা হয়ে জমে থাকলেও কেউ বলে না, তোর জামা কাপড় ধুয়ে দেই‌। অথচ আম্মু আমাকে না জানিয়ে ধুইয়ে, শুকিয়ে, গুছিয়ে রাখতেন। বিছানার মশারী টাঙিয়ে দেয়না এখন কেউই। অথচ আম্মু বিছানা ঝাড়ু দিয়ে সযত্নে আরামদায়ক ঘুমের ব্যবস্থা করে রাখতেন। এখন আর হলের ক্যান্টিনে যা রান্না হয় অভিযোগ করার সুযোগ নেই আর আমি দৈনিক আম্মু কে বলতাম এটা খাব না, ওটা খাব না। এই তরকারি খাই না, ডিম ভাজি করে দাও তাড়াতাড়ি। কারনে অকারণে সবথেকে বেশি বকাঝকা দেওয়া ব্যক্তিটাই ছিল আমার মা। সবথেকে বেশি যার সাথে রাগান্বিত কন্ঠস্বরে কথা বলা হয়, সেই মানুষটাই আমার মা। পড়ালেখার উদ্দেশ্যে সেই কবে যে বাড়ি ছেড়ে আসলাম ঢাকায়। যখন মনে পরে আম্মুর কথা তখন অনুভব করি, এই ইট পাথরের রঙিন শহরে মায়ের স্বাদ না থাকায় আমার কাছে মনে হয় পুরো পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে আজ। আমার পড়ালেখার জন্য আম্মুর জীবন উৎসর্গ করে করে এপর্যন্ত এসেছে। বুনন নকশিকাঁথা ঘর এর একজন শ্রেষ্ঠ কারিগর তিনি। বাসায় সারাদিন একের পর এক ব্যাজ শিক্ষার্থীদের সময় দেন। আমি মাস শেষে টাকা চাইবো বলে। আমার বাসা ভাড়া, খাওয়া,কলেজ খরচে আব্বুর পাশাপাশি সেও অবদান রাখতে চায়। নানা বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ভূলেই গেছেন, আমার জীবনের পথ সুগম করতে। অবসর সময়ে বিশ্রাম তার জন্য বিলাসীতা। সময় অপচয় করেন না তিনি। বিন্দু বিন্দু করে মহাসিন্ধুর সংসার তৈরি করছেন তিনি। নিজের শরীরের যত্ন নেওয়ার ভাবেন না। সবসময় রাকিব MD Abu Rayhan রবিউল (ছোট ভাই, ঢাকা এয়ারপোর্ট একটি মাদ্রাসায় হিফয পড়ে)। গতকাল বললো "রাতে ঘুম আসে না, রাকিব একজায়গায়, রায়হান অন্য যায়গায়, রবিউল মাদ্রাসায় কি খায় না খায়। আব্বু থাকে তার মাদ্রাসায়, একমাত্র ভাগিনা জুনায়েদের জ্বর।" এই চতুর্দিকের টেনশনে কাতর তিনি। আল্লাহ গো টেনশন মুক্ত জীবন দাও। আম্মুর শরীর অসুস্থ। তাই এতো লেখালেখি। এতো কথা। এতো কান্না। এতো দোয়া। আমি সব সময় আম্মুর জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তাআলার রহমতে নিমজ্জিত থাকুক আমার একমাত্র জননী‌। আল্লাহ নেক হায়াত দান করুন। সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। সবাই দোয়া করবেন। আমার আম্মুর জন্য। যাই হোক শিক্ষক দিবসে একজন আদর্শ মাকে শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। তার ধার্মিকতা তাকে মহা সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ আমার একটি শিক্ষিত ও ধার্মিক মা আছে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now