বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
যে গল্পের কোন নাম নেই
--শাহরিয়ার বিশাল
[এক]
- ছোটভাই এই লও তোমার বেতন । আর শোন পোলাডারে ভালমত পড়াইবা । আর তুমি তো দেহি লাঠি ই লও না । আইজকালকার পুলাপাইন, দু চারটি পিট্টি না লাগাইলে পড়ে ।
- না ফিরোজ ভাই, মুন্না ভালই পড়ে, লাঠির কাজ নাই ।
- ঐসব তোমার কারবার, যেইডাই কর পোলার কিন্তুক ভাল রেজাল্ট চাই ।
শোন মিয়া পোলাডা ভাল রেজাল্ট না করলে মান ইজ্জত কিচ্ছু থাকব না । ঐ যে আজিজের পোলাডা সব সময়ের লাইগা ফাস্ট হয়, ওরে সরাইতে হইব । ওর বাপের বড় ভাব হইছে । আর তোমার লাইগাও পুরষ্কার রাখছি, এক্খন জানবার চাইও না । আগে পোলাডার রেজাল্ট দেহি তারপর ।
দিলখোলা হাসি দিয়ে ফিরোজভাই বলে গেলেন কথাগুলো, দু চোখে আজিজ মিয়াকে হারানোর স্বপ্ন ।
- আচ্ছা ভাই । আজকে যাই মুন্নাকে পড়া দিছি একটু খেয়াল করবেন । আসি ।
একহাতে শক্ত করে খামটা আকড়ে বেরিয়ে আসি রাস্তায় । প্রথম মেসে থাকা, বেশ খরচ । বাসা থেকে টাকা পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছিলো এক বড় ভাই কে বলে এই টিউশনি নেয়া ।
কেন যেন টাকাটাকে খুব আপন মনে হচ্ছে ।
[দুই]
- ঐ তুই কি প্যান্টে সি করে দিয়েছিস ।
হাসি চেপে খালাতো বোনটা প্রশ্ন করে ।
- ক্কককই নাআআ তো ।
- তাহলে তোর প্যান্ট ভেজা কেন ?
হেট করা মাথাটা আরো নিচু করলাম । আসলে এই দাওয়াত বাড়িতে আসার ইচ্ছে একদম ছিল না । একেতো একটাই প্যান্ট আর তাও কাল রাত্রে ধুয়ে দেয়ায় ভেজা । কি করব একা বাসায় থাকতে চাইলাম, খালা দিল না । কে জানে আমাকে একা রাখার চিন্তায় নাকি একা বাড়িটাকে আমার সাথে রাখার চিন্তায় ।
ওপাশে তুমুল হাসাহাসি চলছে । ইচ্ছে হচ্ছিলো নায়িকার মত এক দৌড়ে বিছানায় পড়ে কাদি, কিন্তু না আমি নায়িকা না বাংলা নায়ক নিমিষেই জীবনের চাকাটাকে ঘুরিয়ে ফেলতে হবে যে আমাকে, কাদলে চলবে ? বোঝাই নিজেকে ।
[তিন]
- মা একজোড়া জুতো লাগত ।
অপরাধীর স্বরে আব্দারটা করি আমি । ভাল করেই জানি টানাটানি চলছে ।
- কালকে সাড়ির কাজের টাকা পাব, কাল দেব কেমন ।
মায়ের মুখে ক্ষীণ একটা হাসি, ছেলের আব্দার পূরণের হাসি ।
- মা যাবে না ?
- তোর মামা তো শাড়ির টাকা এখন ও দিল না, আগে দিক তারপর যাই কেমন ।
- আচ্ছা মা, পরেই দিও । আমাকে দশ টাকা দাও শুধু জুতোর চটায় গাম লাগাব তো খুলে গেছে ।
মা আমাকে জড়িয়ে হু হু করে কেদে ফেলে । যার মর্মদ্ধার আমিও আজও করতে পারি নি । কেন কাদল মা ? নিজের অক্ষমতায় নাকি ছোট্ট ছেলেটার হুট করে বড়মানুষী কাজ করায় ।
[চার]
- বাবু দেখ দেখ তোর জামা ।
- এ মা কত্ত সুন্দর মা, দাড়াও তোমার হিংসুটে ভাগনিকে দেখিয়ে আনি । কাল বলছিলো তোর তো সব জামা সেলাই করা আর ছেড়া আর আমার জামা দেখেছিস ? আজকে আমিও বলব আমারও নতুন জামা আছে । তাই না মা ?
- হ্যা বাবা, একদিন তোর এত্ত টাকা হবে আর তুই এত্ত জামা কিনবি ।
- হ্যা মা তোমাকেও এত্ত শাড়ি কিনে দেব, তোমার শাড়ি কত্ত পুরোনো ।
- হ্যাঁ বাবা তাই দিস ।
মায়ের চোখ দিয়ে টপাটপ জল পড়ে আর বারো বছরের আমি অবাক চোখে দেখি । আচ্ছা মা কাদে কেন ?
হাজার টাকার নোটগুলো নিয়ে ল্যাম্পপোষ্টের নিচে দাড়িয়ে আমি, চোখ থেকে টপাটপ জল ঝড়ছে আর ঘটনাগুলো একের পর এক চোখের সামনে ভাসছে । কটা টাকার জন্য কতই না কষ্টটা পেতে হয়েছে আমাকে আমাদেরকে ।
টাকাগুলো পুরোটাই চোখের জলে ভিজে গেছে, ভিজুক আজ টাকাগুলোর ভিজতে মানা নেই ।
রিক্সা করে বাড়ি ফিরছে ফরহাদ, এক অদ্ভুদ দৃশ্য চোখে পড়ল তার । নিশিগ্রস্ত এক যুবক একদৃষ্টিতে হাতের টাকাগুলোর দিকে চেয়ে আছে আর মুক্তোবিন্দুর মত জলগুলোতে টাকাগুলো ভিজছে। হয়তো চোখের জলে পবিত্র হওয়ার আশা জেগেছে তাদের ।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now