বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ব্ল্যাক ঈগলের সন্ত্রাস
চ্যাপ্টার- ৪
বাকি অংশ
সরদার জামাল উদ্দিন গিয়ে ঢুকল নাতি আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের কক্ষে।
‘দাদু তুমি ভাইয়াকে দেয়া তাদের মেশিনগান ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেটটা দেখবে নাকি?’ বলল আয়েশা আলিয়া কাতানী।
‘হ্যাঁ বোন। আহমদ মুসা হয় ইবলিস শয়তানের চেয়েও বড় কেউ, অথবা জিবরাইলের মতো সৌভাগ্যের কোন ফেরেশতা। তার কথার বিষয়টা পরখ করা যাবে আমাদের আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের মেশিনগান ও ঐ জ্যাকেট থেকে।’ সরদার জামাল উদ্দিন কাতানী বলল।
ওয়াল ক্যাবিনেট খুলে হ্যাংগার থেকে জ্যাকেট এবং ওয়াল ক্যাবিনেটের ভেতরের দেয়ালের গোপন কুঠরী থেকে হ্যান্ড মেশিনগান বের করে নিল।
দু’টি জিনিস টেবিলে রেখে দাদু ও নাতনি হুমড়ি খেয়ে পড়ল আহমদ মুসার কথার সত্যাসত্য পরখ করার জন্যে।
দেখল তারা হ্যান্ড মেশিনগান এবং জ্যাকেটের কলার ব্যান্ডের ভেতরের পাশ।
দু’জনেই মুখ তুলল।
বিস্ময়-বিস্ফোরিত দু’জনেরই চোখ।
আহমদ মুসা যা বলেছে হুবহু তারা তাই দেখতে পেল। হ্যান্ড মেশিনগানের গায়ে শুধু হিব্রু অক্ষর ও সংখ্যাই নয়, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডেভিড বেনগুরিয়ান ষ্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোম্পানির নামও খোদাই করা হয়েছে। জ্যাকেটের কলার ব্যান্ডেও মনোগ্রাম তারা পেল ঠিক আহমদ মুসা যেমন বলেছে।
‘দাদু উনি যা বলেছেন, ঠিক তেমনটাই তো পাওয়া গেল।’ বলল আয়েশা আলিয়া কাতানী।
সরদার জামাল উদ্দিন আরও গম্ভীর হয়ে উঠেছে। তার কপাল কুঞ্চিত। ভাবছে সে। বলল, ‘আমি বুঝতে পারছি না বোন ঘটনা আসলে কি। মুজাহেদীন পাত্তানী মুভমেন্ট (এমপিএম) সম্পর্কে তার বক্তব্য মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু তার উলেস্নখিত প্রমাণগুলোকেও উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। দুটি প্রমাণ তো আমরা এখানে দেখলাম। আর মুজাহেদীন পাত্তানী মুভমেন্ট (এমপিএম) এর শীর্ষ যাদেরকে আমি দেখেছি তাদের বেশির ভাগই তো বিদেশী! কিন্তু মুসলমান নয়- এটা আমি মানতে পারছি না। শীর্ষ নেতা হাবিব হাসাবাহ একজন খুবই পরহেজগার মানুষ। আহমদ মুসার এই অভিযোগ অবিশ্বাস্য।’
‘কিন্তু দাদু তার কথাগুলো যে সত্যি প্রমাণিত হলো, তার ব্যাখ্যা কি?’ বলল আয়েশা আলিয়া।
‘এখানে এসেই তো আমার সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। ছয় কোণা তারকা, ক্রিসেন্টের বুকের উপর ব্ল্যাক ঈগল এবং ইসরাইলের তৈরি অস্ত্র এসব ছোট বিষয় নয়।’ সরদার জামাল উদ্দিন বলল।
কথা শেষ করেই চলতে শুরু করে বলল, ‘এস আয়েশা বোন। ও একা বসে আছে।’
দু’জনেই ড্রইংরুমে ফিরে গেল।
আহমদ মুসার মুখে হাসি। বলল, ‘আসুন জনাব। বসুন। আমার জন্যে কোন সুখবর আছে কি জনাব?’
গম্ভীর মুখ সরদার জামাল উদ্দিনের। আহমদ মুসার কথার জবাব না দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা বল, তোমার কথা যদি ঠিক হয়, ওরা যদি ‘ব্ল্যাক ঈগল’ই হয়ে থাকে, তাহলে পাত্তানীদের নেতা জাবের বাংগসা জহীর উদ্দিন ওদের সাথে এক হয়ে সংগ্রাম করছে কেন? এই তো সেদিন পাত্তানী শহরের উপকণ্ঠে ওদের এক অভিযানে জাবের বাংগসা জহীর উদ্দিন প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঐ অভিযানে তিনি আহত হন। তার রক্তমাখা জামা থাই সৈন্যরা উদ্ধার করেছে। এর ছবি তারা সংবাদপত্রে প্রকাশও করেছে। এটা তুমি কি করে অস্বীকার করবে?’
আহমদ মুসা গম্ভীর হলো। সোজা হয়ে বসল। বলল, ‘হ্যাঁ জনাব, আপনি যা বলেছেন, থাই সরকারও আমাকে এ কথাই বলেছিল। তারা আমাকে নতুনভাবে বুঝাতে চেষ্টা করছিল যে, আমি ঘটনাকে যেভাবে দেখছি সেটা ঠিক নয়। জাবের বাংগসা জহীর উদ্দিনকে তার দলের লোকরাই পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সে নিজে অংশগ্রহণ করছে। তার রক্তাক্ত জামা এর সর্বশেষ প্রমাণ। কিন্তু থাই সরকারের এ বক্তব্যের সাথে আমি একমত হইনি। আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম.............।’
আহমদ মুসা আর সামনে এগুতে পারল না।
ড্রইং রুমের বাইরের দরজায় একটা শব্দ হয়েছে এবং তার সাথে একটা কণ্ঠ চিৎকার করে উঠেছে, ‘থাম মিথ্যাবাদী। থাই সরকারের কুত্তা, এজেন্ট থাম।’
সবারই মাথা এক সাথে বোঁ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সে শব্দ লক্ষে।
আহমদ মুসা দেখল একজন তরুণ যুবক। তার দুই হাতে দুই রিভলবার তাক করা আহমদ মুসার দিকে।
যুবকটি আহমদ মুসার ডান পাশ থেকে সোজা পূর্বে আট দশ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে। আহমদ মুসা বসে আছে উত্তরমুখী হয়ে। তার সামনে সরদার জামাল উদ্দিন। তার পেছনে আয়েশা আলিয়া।
যুবকটিকে দেখে সরদার জামাল উদ্দিনের কণ্ঠ থেকে স্বগত একটা উক্তি বেরিয়ে এল, ভাই আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন!
আয়েশা আলিয়ার মুখ ফুটেও একটা স্বগোতুক্তি বেরিয়ে এসেছে, ‘ভাইয়া।’
প্রথমটায় সরদার জামাল উদ্দিন ও আয়েশা আলিয়া দু’জনকেই বিস্ময় এসে ঘিরে ধরেছিল।
বিস্ময় থেকে মুক্ত হয়ে সরদার জামাল উদ্দিন তার নাতি আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনকে লক্ষ্য করে দ্রুত কণ্ঠে বলল, ‘কি করছ তুমি রিভলবার নামও। ইনি আমাদের মেহমান।’
‘না দাদু ইনি মেহমান হতে পারেন না। এর ফটো আমি দেখেছি। এ খুনি বিভেন বার্গম্যান। এ পর্যন্ত এ আমাদের মুজাহেদীন পাত্তানী মুভমেন্টের প্রায় এক শতের মতো লোককে হত্যা করেছে। এর কারণেই গ্রেফতার হয়েছে আমাদের অর্ধশতের মতো লোক। একে দেখা মাত্র হত্যার নির্দেশ আছে।’
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের দু’চোখ বারুদে আগুন লাগার মতো জ্বলছিল। তার কথা শেষ হওয়ার আগেই তার দুই তর্জনি দুই রিভলবারের ট্রিগারে চাপ বাড়াচ্ছিল।
আহমদ মুসার বাম পকেট থেকে তার বাম হাতে রিভলবার আগেই উঠে এসেছিল।
গুলী করার পূর্ব মুহূর্তে আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের দুই রিভলবারের নল শেষ বারের টার্গেট এডজাষ্ট করে নিচ্ছিল।
‘ভাইয়া গুলী করো না, শোন।’ বলে চিৎকার করে উঠল আয়েশা আলিয়া কাতানী।
ঠিক এ সময় আহমদ মুসার বাম হাত চোখের পলকে ছুটে যায় ডান পাশে। হাতে কালো রংয়ের ছোট রিভলবার। রিভলবার থেকে দুটি গুলীর শব্দ হলো।
বাম হাতটা ছুটে আসা ও গুলী করার সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেল।
আহমদ মুসার দুটি গুলী লেগেছিল যুবকটির দুই হাতের দুই রিভলবারে। দুটি রিভলবারই যুবকটির হাত থেকে ছিটকে পড়ে গিয়েছিল।
আহমদ মুসা তার রিভলবার যুবকটির দিকে উদ্যত রেখেই উঠে দাঁড়িয়েছিল। ছিটকে পড়া রিভলবার দু’টি কুড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যুবকটির মুখোমুখি হয়ে বলল, ‘আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন এস, বস। তোমার সব অভিযোগ শুনব।’
কল্পনার চেয়ে দ্রুত ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল।
বিমুঢ় ভাব কাটলে তার চোখে সেই বারুদের আগুন আবার জ্বলে উঠল। কিছু বলতে যাচ্ছিল।
‘যা বলবে, সব বসে বল।’ বলে আহমদ মুসা ডান হাত দিয়ে তাকে টেনে এনে তার দাদুর পাশে বসাল। আহমদ মুসার বাম হাতে তখনও উদ্যত রিভলবার।
সরদার জামাল উদ্দিন ও আয়েশা আলিয়া দু’জনেই অবিশ্বাস্য এক ঘটনা দেখে বিস্ময়-বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। যখন তারা সম্বিত ফিরে পেল, খুশি হলো যে আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের কোন ক্ষতি হয়নি, আহমদ মুসাও বেঁচে গেছে।
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন পাশে এসে বসার পর সরদার জামাল উদ্দিন বলল, ‘তোমাকে ধন্যবাদ আহমদ মুসা তোমার গুলী নিখুঁত হওয়ার জন্যে। আমার অবাক লাগছে, এত দ্রুত করা গুলী এত নিখুঁত হলো কি করে!’
‘দাদু, এর নাম আহমদ মুসা নয় বিভেন বার্গম্যান।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। তার কন্ঠ ক্রোধ ও ক্ষক্ষাভে ভরা।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘দু’দিন আগ পর্যন্ত ওরা আমার নাম ‘বিভেন বার্গম্যান’ই জানত। কিন্তু দু’দিন হলো তারা জানতে পেরেছে, আমি আসলে আহমদ মুসা। এরপরই তারা দেখামাত্র আমাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে।’
‘কিন্তু আজও ওদের কাছে আপনার নাম বিভেন বার্গম্যান শুনেছি।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘তুমি মুসলমান। তুমি কেন, কোন মুসলমানের কাছেই আমার নাম ‘আহমদ মুসা’ একথা তারা প্রকাশ করবে না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘কেন?’ জিজ্ঞেস করল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘নাম নিয়ে তোমার প্রশ্ন থাক কামাল। জাবের বাংগসা জহীর উদ্দিনের রক্তমাখা জামা নিয়ে উনি কথা বলছিলেন। তুমিও শুনেছ। কথাটা তাঁকে শেষ করতে দাও।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
আহমদ মুসা তাকাল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের দিকে। বলল, ‘হ্যাঁ কামাল, আমার বিরুদ্ধে তোমার যে অভিযোগ, এ থেকেও তারও কিছু জবাব তুমি পেয়ে যাবে।’
আহমদ মুসা একটু থামল। পরক্ষণেই আবার বলা শুরু করল, ‘সরদার সাহেব, আমি বলেছিলাম জাবের জহীর উদ্দিনের কথিত রক্ত মাখা জামা সম্পর্কে আপনি যা বললেন, আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন যা মনে করে, থাই সরকারও আমাকে এটাই বুঝাবার চেষ্টা করেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, থাইল্যান্ডে সন্ত্রাস মুসলমানরা করছে না। করছে তৃতীয় একটি ষড়যন্ত্রকারী পক্ষ। এবং জাবের জহীর উদ্দিনকে ছিনতাই করে নিয়ে গেছে তার বন্ধুরা নয় শত্রুরা। তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে তারা তাকে ব্যবহার করতে চায়। আমার এ মতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্যে থাই সরকার থেকে আমাকে বলা হয়, জাবের জহীর উদ্দিনের রক্তমাখা জামা সংঘর্ষের স্থলে পাওয়াই প্রমাণ করে জাবের প্রত্যক্ষভাবে সংঘর্ষে অর্থাৎ সন্ত্রাসে অংশগ্রহণ করেছিল। অতএব আমার কথাকে তারা অসত্য বলে অভিহিত করে। আমি তাদেরকে অনুরোধ করি, সংঘর্ষেল সময় এবং জাবেরের জামায় যে রক্ত পাওয়া গেছে তা ঝরার সময় এক কিনা পরীক্ষা করে দেখুন। সংঘর্ষ ও জামায় রক্ত লাগার সময় যদি এক হয়, তাহলে সংঘর্ষে জাবের জহীর উদ্দিন অংশগ্রহণ করেছিল বুঝা যাবে। আর যদি সময় এক না হয়, তাহলে প্রমাণ হবে জাবের জহীর উদ্দিন সংঘর্ষে অংশ নেয়নি। রক্ত পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয়েছে জামার রক্ত লাগার সময় ও সংঘর্ষের সময় কয়েক ঘণ্টা আগের। তার মানে জাবের জহীর উদ্দিন সংঘর্ষে অংশগ্রহণের কথা মিথ্যা।’
বিস্ময়ে হা হয়ে গিয়েছিল সরদার জামাল উদ্দিনের মুখ। আয়েশা আলিয়ার মুখ প্রসন্ন হয়ে উঠেছিল।
বিস্ময়ের একটা ছায়া নেমেছে আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের চোখে-মুখে। কিন্তু চোখে-মখের বিক্ষুব্ধ ভাব তখনও অটুট আছে। বলল, ‘তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন জাবের জহীর উদ্দিন মহোদয়ের রক্তমাখা জামা তারা সংঘর্ষের স্থানে নিয়ে গিয়েছিল এবং তা ওরা ফেলে রেখে এসেছিল জাবের জহীর উদ্দিন সংঘর্ষে অশং নিয়েছিল, এটা প্রমাণের জন্যে।’
‘আমি বলতে চাচ্ছি শুধু নয়, এটাই সত্যি আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু কেন আপনি বলতে চাচ্ছেন? আপনি কে? কেন আপনি আমাদের সংগ্রাম বিকৃত করছেন। কেন আপনি আমাদের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন?’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের মুখ থেকে বিস্ফোরণের মতো বেরিয়ে এল কথাগুলো।
আহমদ মুসা প্রথমে হাসল। তারপর গম্ভীর হয়ে উঠল। বলল, ‘আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন আমি নাক গলাইনি, তোমাদের ঘটনা আমার নাককে তার মধ্যে টেনে এনেছে।’
বলে আহমদ মুসা থাইল্যান্ডে প্রথম যেদিন সে ল্যান্ড করে হোটেলে আসছিল, তখন সে কিভাবে জাবের জহীর উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার মধ্যে পড়ে যায়, কিভাবে তার ট্যাক্সি পুলিশ দখল করে, কিভাবে পুলিশের হাতে সে বন্দী হয়, কিভাবে সে আহত হয়েও ডজন খানেক সন্ত্রাসীকে হত্যা করে, পুলিশ ও সরকারের আস্থা অর্জনের পর কিভাবে সে জাবের জহীর উদ্দিন ও থাই মুসলমানদের সন্ত্রাস থেকে আলাদা করার এবং সন্ত্রাসের জন্যে দায়ী তৃতীয় পক্ষকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে, কিভাবে ব্যাংককে তার উপর বার বার আক্রমণ হয় সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে, কিভাবে সন্ত্রাসীরা তাকে থাইল্যান্ড ছাড়ার জন্য আলটিমেটাম দেয়, হোটেলে কিভাবে সন্ত্রাসীদের লোকরা তার হাতে ধরা পড়ে, কিভাবে তাদের কাছ থেকে জানতে পারে যে জাবেরকে পাত্তানীর এক জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে, কিভাবে আহমদ মুসা কৌশল করে পাত্তানী যাত্রা করে এবং পথে কি ঘটে, পাত্তানীতে আসার হোটেলে কিভাবে সে সন্ত্রাসীদের চোখে পড়ে যায়, কিভাবে সে হোটেল বয়ের মাধ্যমে শাহ পরিবারের সন্ধান পায়, তাদের বাড়ি দেখতে গিয়ে কিভাবে সে শাহবাড়ির নিচের মেলায় সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়, কিভাবে সে সেই রাতে শাহবাড়িতে যায় এবং শাহ পরিবারের উপর সন্ত্রাসীদের আক্রমণ নস্যাৎ করে কিভাবে শাহ পরিবারকে এক বিপর্যয় থেকে বাঁচায় এবং এরপর কিভাবে শাহ পরিবারের সাথে জড়িয়ে পড়ে, কিভাবে তাদের উপর বার বার আক্রমণ হয়, কিভাবে তারা রক্ষা পায় ও অনেক সন্ত্রাসী বন্দী হয় এবং সব শেষে কিভাবে সে পাত্তানী পুলিশ হেডকোয়ার্টারে সন্ত্রাসীদের আক্রমণের বিষয় আঁচ করে এবং কিভাবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার রক্ষা ও সন্ত্রাসীরা পাকড়াও হয়, কিভাবে সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে জাবের জহীর উদ্দিনকে হত্যার আলটিমেটাম দেয়া হয়, কিভাবে আহমদ মুসাকে হত্যার জন্যে সন্ত্রাসীরা সর্বাত্মক জাল পাতে, কিভাবে আহমদ মুসা শাহ বাড়ির ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে সন্ত্রাসীদের ফাঁকি দিয়ে ‘হাঁটাই’তে আসে এবং সেখান থেকে কিভাবে মালয়েশিয়ার সুংগাই পেতানীতে আসে এবং সেখান থেকে কিভাবে সে বেতাংগ এল তার সংক্ষিপ্ত ও ধারাবাহিক বিবরণ আহমদ মুসা তুলে ধরল।
আহমদ মুসা যখন কথা শেষ করল, তখন সরদার জামাল উদ্দিন, আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন ও আয়েশা আলিয়া তিনজনই যেন স্বপ্নের জগতে। তাদের বিস্ময় বিস্ফোরিত দৃষ্টি আহমদ মুসার উপর আঠার মতো লেগে আছে। তাদের চোখের পাতাও যেন নড়ছে না। বাকরুদ্ধ তারা।
আহমদ মুসাও দীর্ঘ কথা শেষ করে সোফায় হেলান দিয়েছে।
পল পল করে বেশ কতকটা সময় বয়ে গেল। তারা কথা বলল না।
আহমদ মুসাই আবার মুখ খুলল। বলল, ‘কি ব্যাপার আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন কথা বলছ না যে! আমার কথা বিশ্বাস করছ না? রূপ কথা মনে করছ আমার কথাকে?’
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন মুখ নিচু করল।
সরদার জামাল উদ্দিন ও আয়েশা আলিয়ার মুখ নিচু হয়ে গেছে।
কথা বলল না তাদের কেউ।
বাইরে বৃষ্টি তখন থেমে গেছে।
নিস্তব্ধ চারদিকে।
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনকে আবার কিছু বলতে গিয়েছিল আহমদ মুসা। কিন্তু দেখল তার নত মুখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে উরুর উপর রাখা তার দুই হাতের উপর। আয়েশা আলিয়ারও দুই গন্ড অশ্রুসিক্ত দেখতে পেল সে। শুধু মুখ শুকনো সরদার জামাল উদ্দিনের।
আহমদ মুসার মনটাও আবেগ প্রবণ হয়ে উঠল। কিন্তু নরম সান্তনা নয়, শক্ত কথাই বলল আহমদ মুসা, ‘অশ্রু মুছে ফেল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন, তোমাদের মতো তরুণদের চোখে আগুন থাকবে, অশ্রু নয়।’ শক্ত কণ্ঠ আহমদ মুসার।
মুখ তুলে তাকাল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন আহমদ মুসার দিকে।
তার মতো সরদার জামাল উদ্দিন ও আয়েশা আলিয়াও তাকিয়েছে আহমদ মুসার দিকে।
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন রুমাল দিয়ে চোখ মুছল। তার মুখ গম্ভীর। বলল, ‘সত্যি জনাব, আপনার শক্ত কণ্ঠ আমার কাছে নেতার আদেশের মতো মনে হয়েছে।’ বলতে গিয়ে তার চোখে অশ্রুর একটা ঢেউ এল আবার।
আবার চোখ মুছল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘হয়তো শুনেছ নেতার কণ্ঠ। কিন্তু আমি নেতা নই কামাল। আমি কর্মি। কাজ করে বেড়াই আমি।’
‘সত্যিকার নেতারাই এমন কথা বলতে পারেন স্যার।’ বলল আয়েশা আলিয়া।
সেও তার চোখের অশ্রু মুছে ফেলেছে।
‘কিন্তু প্রথমেই আপনি শাহ বাড়ির কথা কেন বলেননি? কেন বলেননি যে আপনি শাহ পরিবার থেকে এসেছেন? জানেন ঐ বাড়ি আমাদের কেন্দ্র। ঐ পরিবার আমাদের নেতা।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। তার কণ্ঠে অশ্রুভেজা আবেগ।
‘শুরুত বললে এভাবে তোমরা বিশ্বাস করতে না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমার একটা ব্যাপার খুব বিস্ময় লাগছে। শাহ পরিবারের সাথে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে আপনি একাত্ম হয়ে গেলেন? শাহ পরিবার খুবই ধার্মিক পরিবার। আমি শুনেছি, বাইরের মানুষের সাথে মেলামেশা তো দূরে থাক সাক্ষাতও ওদের হয় না। আপনি কি আগে থেকে ওঁদের পরিচিত ছিলেন?’ বলল আয়েশা আলিয়া।
‘আমি কোনভাবেই পরিচিত ছিলাম না। এমনকি শাহ পরিবার সম্পর্কে আমার বলতে গেলে কিছুই জানা ছিল না। তবে থাইল্যান্ডে আমার আসার পেছনে একটা কাহিনী আছে। সে কাহিনীর সাথে এই পরিবার জড়িত।
বিস্ময়-কৌতুহলের একটা ঢেউ খেলে গেল ওদের তিনজনের চোখে-মুখে। আয়েশা আলিয়াই দ্রুত বলে উঠল, ‘কাহিনীটা কি সত্যি ঘটনা?’
‘সত্যি ঘটনা। তবে রূপকথার চেয়ে মজার।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কি সে ঘটনা?’ দ্রুতকণ্ঠে বলে উঠল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
আহমদ মুসা সোফায় হেলান দিয়ে বসল। বলতে শুরু করল আহমদ মুসা, ‘রূপকথা সাধারণত বড় হয়। এ রূপকথা কিন্তু খুব বড় নয়। ঘটনার সূত্রপাত আন্দামানে। আমি সেদিন আন্দামানে ঠিক আন্দামান সাগরের উপর দাঁড়ানো এক ড্রইং রুমে অনেকের সাথে বসে। বসে আছি জানালার পাশে। দৃষ্টি ছিল আদিগন্ত সাগরের দিকে। হঠাৎ.............।’
‘স্যার’ বলে কথার মাঝখানে বাধ সাধল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
তার চোখে-মুখে যেন একটা প্রশ্ন ঠিকরে পড়ছিল।
থেমে গেল আহমদ মুসা।
‘স্যরি’ বলে কথা শুরু করল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন, ‘স্যার আন্দামান সরকারের সাথে কি আপনার সংঘাত বেঁধেছিল?’
‘হঠাৎ এ প্রশ্ন?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘আগে জবাবটা দিন। কারণ বলছি।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘আন্দামান সরকারের সাথে আমার সংঘাত বাধেনি। আন্দামান সরকারের গভর্নর একটি গোপন সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা ছিলেন, সে সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে আমার সংঘাত বেধেছিল। আর সন্ত্রাস থেকে মানুষকে রক্ষা করা, বাঁচানো যদি সন্ত্রাস হয় তাহলে সে সন্ত্রাস আমি করেছি।’
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন তার সোফায় বলা যায় এ্যাটেনশন হয়ে বসেছে। তার চোখ দু’টিতে অপার বিস্ময়। সেই সাথে তার চোখ জুড়ে একটি ঔজ্জ্বল্য। আহমদ মুসা থামলেই আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল, ‘আপনি যাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলছেন, তাদের সাথে দুনিয়ার আর কোথাও কি আপনার সংঘাত হয়েছে?’
‘আন্দামানে যাদের সাথে আমার সংঘাত হয়েছে, তারা ভারতের। কিন্তু তাদেরকে সাহায্য করেছে ইহুদীবাদী গোয়েন্দারা। এই ইহুদীবাদী সংগঠনের সাথে দুনিয়ার নানাস্থানে আমার সংঘাত হয়েছে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘সম্প্রতি কিছুদিন আগেও আমেরিকায় সংঘাত হয়েছে?’ জিজ্ঞাসা আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের। ওর কণ্ঠ ভারী ও ভেঙে পড়ার মতো।
‘হ্যাঁ, আমেরিকায়ও হয়েছে।’ আহমদ মুসা বলল।
আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন ছুটে গিয়ে আহমদ মুসার পায়ের কাছে বসল। তারপর আহমদ মুসার দুই হাঁটুর উপর মুখ গুঁজে বলল, ‘আমাকে মাফ করুন স্যার। আমি কি অকথ্য ভাষায় আপনাকে গালি দিয়েছি। আপনাকে হত্যা করার জন্যে রিভলবার উঠিয়েছিলাম। এমনকি আপনার ‘আহমদ মুসা’ নাম শুনেও বুঝতে পারিনি যে, আপনি সেই মহান বিপ্লবী!’ অপরিসীম আবেগের বিস্ফোরণ ঘটার মতো তার কণ্ঠ ভেঙে পড়ল এবং তার চোখ ফেটে অশ্রুও গড়িয়ে পড়ল।
আহমদ মুসা হেসে তাকে তুলে পাশে বসাল। বলল, ‘তুমি যা করেছ তার মধ্যে দিয়ে জাতির প্রতি তোমার ভালোবাসারই প্রকাশ ঘটেছে। অন্যায় কিছু করনি।’
বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল সরদার জামাল উদ্দিন এবং আয়েশা আলিয়া। আহমদ মুসা থামতেই সরদার জামাল উদ্দিন আহমদ মুসাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘কি ব্যাপার আহমদ মুসা। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’
আহমদ মুসা একটু হাসল। বলল, ‘কিছুই না জনাব, আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন আমার পরিচয় উদ্ধার করে ফেলেছে।’
‘কি পরিচয় পেল? কিভাবে পেল?’ বলল আয়েশা আলিয়া।
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন চোখ মুছে বলল, ‘দাদু, আয়েশা, ওনার পরিচয় দিতে গেলে একটা বিরাট বক্তৃতা দিতে হবে। এইটুকু শুনুন, দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান মেহমান আমাদের ঘরে এসেছেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন।’
বিস্ময় বিস্ফোরিত হযে উঠেছে আয়েশা আলিয়ার চোখ। অভিভূতের মতো যেন অজান্তেই সে উঠে দাঁড়িয়েছে। বলল, ‘ভাইয়া, ইনি তাহলে কি সেই আহমদ মুসা?’
‘হ্যাঁ আয়েশা, এঁর কথাই আমরা পত্রিকা, ম্যগাজিন ও ইন্টারনেটে পড়েছি।’
ধপ করে সোফায় বসে পড়ল আয়েশা আলিয়া। মুখ ঢাকল দু’হাত দিয়ে। যেন নিজেকে সে আড়াল করতে চায় আহমদ মুসার কাছ থেকে।
বিস্ময় সরদার জামাল উদ্দিনের চোখেও। বলল, ‘আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যাপারটা। কয়েক দিন আগে ইন্দোনেশিয়ার পাহাড়ি কবিলাদের এক সম্মেলনে দেখা হয়েছিল মিন্দানাওয়ের প্রেসিডেন্ট মুরহামসারের সাথে। তিনি এক আহমদ মুসার গল্প করেছিলেন। গল্পটা যেন জগৎ জোড়া এক রূপকথা। এই রূপকথার আহমদ মুসার কাছে কিংবদন্তীর রবিনহুড, শার্লক হোমস তো বাচ্চা শিশু। সেই আহমদ মুসা নাকি এখন আন্দামানে, বলেছিলেন মুরহামসার। সেই তিনি এখন আমার বৈঠক খানায়! আমার সামনে!’
কথা শেষ করেই সরদার জামাল উদ্দিন চোখের পলকে গিয়ে আহমদ মুসার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসল এবং মাথা নুইয়ে আহমদ মুসার হাত চুম্বন করল।
আহমদ মুসা সরদার জামাল উদ্দিনকে টেনে তুলে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘আমি দুঃখিত। আপনি আমাকে আপনার নাতির মতো বলেও আমার পায়ের কাছে এসে বসেছেন। এটা ঠিক হয়নি।’
‘দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। আনুগত্য প্রকাশের, বুজুর্গের প্রতি শদ্ধা নিবেদনের এটাই আমাদের যুগ যুগান্তের পাহাড়ী রীতি।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘কিন্তু এটা ইসলামী রীতি নয়।’ আহমদ মুসা বলল।
সরদার জামাল উদ্দিন আহমদ মুসাকে বসিয়ে নিজে তার সোফায় ফিরে গেল। বলল, ‘এটা একটা রীতি মাত্র। ইসলাম লোকাল অনেক রীতিকেই গ্রহণ করেছে। আমাদের শাহ পরিবারের শেখ আবদুল কাদেরের কাছে এটা শুনেছি। তিনি এ রীতিকে অনুমোদন দিয়েছেন।’
আহমদ মুসা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘থাক এ প্রসংগ এখন। আমি উঠতে চাই।’
‘না উঠবে কোথায়। তোমার হোটেলে থাকা চলবে না। আমি হোটেলে টেলিফোন করে দিচ্ছি, তোমার ব্যাগ সব দিয়ে যাবে কিংবা কামালকে পাঠাচ্ছি। সে গিয়ে নিয়ে আসবে।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘না জনাব, হোটেলে থাকাই আমার কাজের জন্যে সুবিধাজনক। আমি উঠি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘এখানে থেকে দেখ কোন অসুবিধা হয় কিনা। অসুবিধা হলে আমিই তোমাকে হোটেলে দিয়ে আসব। আর আমি যা বুঝেছি, সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে গোটা বেতাংগ শুধু নয় সমগ্র কাতান পাহাড় অঞ্চলে আমার বাড়ির চেয়ে নিরাপদ জায়গা কোথাও নেই।’
আহমদ মুসা কৌতুহলি দৃষ্টি নিয়ে তাকাল সরদার জামাল উদ্দিন কাতানীর দিকে।
হাসল সরদার জামাল উদ্দিন কাতানী। বলল, ‘তুমি কোহেতান কবীর’ পরিবারকে খুঁজছ না? আমাদের কবিলাই সেই পরিবার।’
‘কিন্তু বাড়ির নেমপ্লেটে তো তা লেখা নেই?’ বলল আহমদ মুসা।
‘এটা বাড়ির একটা ছদ্মবেশ।’ সরদার জামাল উদ্দিন বলল।
‘কেন?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
সরদার জামাল উদ্দিন গম্ভীর হয়ে উঠল। বলল, ‘কোহেতান কবীর’ পরিবার তুমি যাকে ‘ব্ল্যাক ঈগল’ বলছ, আমরা যাকে মুজাহেদীন পাত্তানী মুভমেন্ট’ বলি তার সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। এর পরেই এই ছদ্মবেশ সতর্কতার জন্যে।’
আহমদ মুসার চোখে-মুখে বিস্ময় ও আনন্দ দুয়েরই প্রকাশ ঘটল। তার মনে হলো, সে তার মিশনের সাফল্যের দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছে। এই পরিবার কাতান টেপাংগো যাওয়ার রাস্তাও চেনে, ‘ব্ল্যাক ঈগল’দেরও চেনে।
‘আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি যে তিনি এভাবে আমাকে আপনাদের মধ্যে এনে দিয়েছেন। এ দিনটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দের দিনগুলির একটি। আমি আপনাদের সাহায্য চাই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘পরিস্থিতি তোমার কাছে যা শুনলাম তাতে আমরা তোমাকে সাহায্য করা নয় আমাদেরই তোমার সাহায্য ভিক্ষা করা উচিত যা শাহজাদী যয়নব যোবায়দা করেছে। কিন্তু এ প্রসংগ আপাতত মুলতবী থাক। এখন তুমি মুখ-হাত ধুয়ে কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। অনেক ভিজে গেছ তুমি।’
বলেই সরদার জামাল উদ্দিন তাকাল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের দিকে। বলল, কামাল তুমি এঁকে টয়লেট দেখিয়ে দাও এবং একপ্রস্ত পোশাক এনে দাও। আর বোন আয়েশা তুমি যাও উপরের গেষ্টরুমে বেড ও সবকিছু ঠিক-ঠাক করে দাও।
উঠল সরদার জামাল উদ্দিন।
উঠল সবাই।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now