বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
বাকি অংশ
আহমদ মুসা তখন ড্রেসিং এর জন্যে স্থির হয়ে বসেছে। ঐ অবস্থায় বলল যয়নব যোবায়দার কথার উত্তরে, ‘আমি একটা আশংকা করছি, কিন্তু তার আগে যদি বিপদ আসে?’
‘বেটা এ সময় কথা না বললে আমার কাজটা সুন্দর হবে।’ বলল ডাক্তার খালাম্মা।
‘তুমি কাজ কর ডাক্তার মা। আর কেউ কথা বলবে না।’ বলল দাদী।
‘আমি দুঃখিত’ বলে যয়নব যোবায়দা দাদীর পাশে গিয়ে বসল।
ড্রেসিং শেষ করে ডাক্তার হাত পরিষ্কার করে এসে সোফায় বসে বলল, ‘বেটা বিভেন বার্গম্যান। তোমার নাম খৃষ্টান হলেও তুমি খৃষ্টান নও। যারা হারাম খায়, তাদের গা একটা বিজাতীয় গন্ধ ছড়ায়। অমুসলিম কলিগদের সাথে আমি কাজ করি বলে আমি এটা জানি। তুমি খৃষ্টান নও অবশ্যই। তোমার কথা-বার্তার ষ্টাইলেও এটা বুঝা গেছে। তুমি তাহলে কি? কে তুমি। আমার পুরানো প্রশ্ন এটা।’
ডাক্তার খালাম্মার কথা শেষ হতেই ঘরে ঢুকল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন। তার মুখে কিছুটা উত্তেজনা। আহমদ মুসার দৃষ্টি ফিরে গেছে তার দিকে। বলল, ‘ফরহাদ, মনে হচ্ছে কিছু খবর আছে?’
‘স্যার আগের ছয়জন পুলিশ চলে গেছে। নতুন ছয়জন পুলিশ এসেছে।’ বলল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন।
‘আলহামদুলিল্লাহ, এসপি উদয় থানি তাহলে বেঁচে আছেন।’
একটু থেমেই ফরহাদ ফরিদ উদ্দিনের দিকে তাকিয়ে আহমদ মুসা বলল, ‘পুলিশরা কিছু বলেনি? বলাবলি করেনি?’
‘নতুনরা নেমেই আগের পুলিশদের বলেছে, অফিসে একটু গোলমাল আছে, তোমরা তাড়াতাড়ি যাও। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি গোলমাল? প্রশ্নের উত্তর তারা এড়িয়ে গেছে।’ ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন বলল।
আহমদ মুসা যয়নব যোবায়দাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আমি যে বিপদের কথা বলেছিলাম, সে বিপদ কেটে গেছে। যে ছয়জন পুলিশ এতক্ষণ পর্যন্ত এখানে ছিল, তাদের প্রতি আমার আস্থা ছিল না। তাই এদের তুলে নিয়ে নতুন পুলিশ দিতে বলেছিলাম উদয় থানিকে। তিনি সেটা করেছেন।’
‘কেন তুমি সন্দেহ করেছিলে এই পুলিশ ছয়জনকে?’ বলল দাদীমা।
আহমদ মুসা পাত্তানী শহরের ডিএসপি মহিদলের সাথে সন্ত্রাসীদের সম্পর্কের বিষয় সামনে এনে বলল, ‘আগের ছয়জনকে মহিদল নিয়ে এসেছিল। সুতরাং তাদেরকে আমি বিশ্বস্ত মনে করিনি দাদীমা।’
কথা শেষ করেই আহমদ মুসা বলল, ‘আমি মি. উদয় থানিকে আর একবার দেখি। ওখানে কি ঘটল জানতে পারলাম না।’
আহমদ মুসা আবার টেলিফোন করল এসপি উদয় থানিকে। মোবাইলে রিং হলো কিন্তু কেউ সাড়া দিল না।
আহমদ মুসা ভাবল ঘটনা এই হতে পারে যে, তাঁর হাত থেকে মোবাইল পড়ে যাবার পর সেটা আর তোলা হয়নি এবং উদয় থানি সেই ঘরে এখন নেই।
আহমদ মুসা স্বগত কণ্ঠে বলল, ‘আল্লাহ ভরসা।’
বলেই আহমদ মুসা তাকাল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিনের দিকে। বলল, ‘পুলিশ থাকলেও আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ওদের সম্ভাব্য আক্রমণ সফল হলে,ওরা এখানেও হামলা চালাতে পারে। এখন রাত ৮টা। রাত ২টা পর্যন্ত তুমি পাহারা দেবে। রাত ২টায় আমাকে জাগিয়ে দেবে। পরের দায়িত্ব আমার।’
‘অবশ্যই পারব স্যার।’ বলল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন।
‘কিন্তু উনি গুলী চালাতে জানেন না। পাহারা দেবেন কিভাবে?’ টিপ্পনি কাটার সুরে বলল যয়নব যোবায়দা।
মুখ লাল হয়ে উঠেছে ফরহাদ ফরিদ উদ্দিনের। বিব্রত কণ্ঠে কিছু বলতে যাচ্ছিল। আহমদ মুসা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘বন্দুক চালনা ভালো জিনিস নয়। ফেৎনা-ফাসাদের আগ্রাসন মোকাবিলার অপরিহার্য কাজেই শুধু এই খারাপ কাজকে বৈধ করা হয়েছে। সবাইকে সব সময় এ কাজের জন্যে প্রয়োজন হয় না, হলে ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন কারো পেছনে থাকবে না। আপাতত তার দায়িত্ব আমাকে প্রয়োজন অনুসারে ও ঠিক সময়ে জাগিয়ে দেয়া।’
মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছে যয়নব যোবায়দার ঠোঁটে।
আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই দাদী বলল, ‘খাবার দেয়া হয়েছে। এখন উঠ, সবাইকে খেতে হবে।’
‘বিকেলে আমার নাস্তা একটু বড় হয়েছে। আমি এখন খাব না। দু’টায় উঠে কিছু খেয়ে নেব। চল ফরহাদ এশার নামায পড়ে নিই। তারপর আমি ঘুমাব, তুমি জাগবে।’
বলে উঠতে যাচ্ছিল আহমদ মুসা।
ডাক্তার খালাম্মা বলে উঠল, ‘উঠ না, বিভেন বার্গম্যান। তোমার পরিচয় আমার কাছে কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। তুমি এর মধ্যে একবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’, আরেকবার ‘আল্লাহ ভরসা’ বলেছ। তার মানে তুমি খৃষ্টান নও। তাহলে তোমার নাম বিভেন বার্গম্যান কেন? বলতে হবে কে তুমি? তোমার এই ছদ্মবেশ কেন?’ ডাক্তার খালাম্মার নাছোড়বান্দা কণ্ঠ।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘খালাম্মা, আমার যে পরিচয় পেয়েছেন সেটা সত্য। আমার বাকি পরিচয় আপনি ম্যাডাম যয়নব যোবায়দার কাছ থেকে জানতে পারবেন। আমার ছদ্মবেশ বিপক্ষকে বিভ্রান্ত এবং কাজের সুবিধার জন্যে খালাম্মা।’ গম্ভীর কণ্ঠ আহমদ মুসার।
আহমদ মুসার গম্ভীর, প্রশান্ত মুখের দিকে একবার তাকিয়ে ডাক্তার খালাম্মা বলল, ‘ঠিক আছে বেটা।’
যয়নব যোবায়দা উঠে দাঁড়িয়েছিল। বলল ডাক্তার খালাম্মাকে, ‘আসুন খালাম্মা। খেতে খেতে সব বলা যাবে।’
পরে আহমদ মুসাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘বোনকে ‘ম্যাডাম’ বলা কি ভালো দেখায়?’
‘আপনিও আমাকে ‘স্যার’ বলেন।’ বলল আহমদ মুসা।
যয়নব যোবায়দার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, ‘আর বলব না ভাই সাহেব।’
যয়নব যোবায়দা পা বাড়াল ডাইনিং রুমের দিকে যাবার জন্যে।
আহমদ মুসারা এগুলো জায়নামাযের দিকে।
রাত তখন সাড়ে তিনটা। ব্ল্যাক ঈগলের পাত্তানী সিটির আইজ্যাক জ্যাকব এবং ব্ল্যাক ঈগলের থাই অপারেশন প্রধান শিমন আশের একটা ছোট ঝাউ গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে নাইটভিশন দূরবীন চোখে লাগিয়ে পাত্তানী পুলিশ হেডকোয়ার্টার এবং তার আশপাশ পর্যবেক্ষণ করছে।
পাত্তানী পুলিশ হেডকোয়ার্টার একটা উচ্চভূমির উপর। উচ্চভূমি গোটাটাই ফলজ গাছের বাগান। উচ্চভূমির মাঝখানে গড়ে তোলা হয়েছে লাল ইটের তৈরি পুলিশ হেডকোয়ার্টারটি। হেডকোয়ার্টারের চারদিক ঘিরে বাগান। এই বাগানেরই এখানে-সেখানে পুলিশদের রেসিডেন্সিয়াল বস্নক।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার তিন তলা। কিন্তু মাটির নিচে রয়েছে আরও দু’টি আন্ডার গ্রাউন্ড ফ্লোর। এই ফ্লোরগুলোতে রাখা হয় ভয়ংকর সব ক্রিমিনালদের।
বাগানের ভেতর ছোট একটা ঝাউয়ের আড়াল থেকে আইজ্যাক জ্যাকব ও শিমন আশেরের নাইটভিশন দূরবীন এই পুলিশ হেডকোয়ার্টারকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। তাদের উদ্দেশ্য পাহারায় থাকা পুলিশদের দেখা। তাদের নাইটভিশন দূরবীনের দৃষ্টিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ফ্রন্ট ভিউ নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। কিন্তু একজন পুলিশকেও কোথাও পাহারায় দেখছে না।
স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল আইজ্যাক জ্যাকব এবং শিমন আশের দু’জনের মুখেই। আইজ্যাক জ্যাকব বলল, ‘মি. আশের স্যার, মনে হচ্ছে আমাদের ডিএসপি মহিদল পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে পেরেছে।’
‘তাহলে তো কাজ শুরু করা দরকার। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ডিউটিরত ও পাহারায় থাকা পুলিশদের সংজ্ঞাহীন করার জন্য যে বিশেষ ক্লোরোফরম গ্যাস তাকে দেয়া হয়েছে, তার মেয়াদ দু’ঘণ্টা। এক ঘণ্টা পর সবাই সংজ্ঞা ফিরে পাবে। আমাদের কিন্তু ১৫ মিনিট সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে ফিরতে হবে।’ বলল শিমন আশের।
‘ঠিক। তা না হলে বাধা পাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কেউ এলে কিংবা টেলিফোন করে অব্যাহতভাবে নো রিপ্লাই পেলে বিষয়টা ধরা পড়ে যেতে পারে।’ বলে আইজ্যাক জ্যাকব হাতঘড়ির রেডিয়াম ডায়ালের দিকে তাকাল। সময় ৩টা বেজে ৩২ মিনিট। ঠিক তিনটা ৩০ মিনিটে সে ক্লোরোফরম গ্যাস ছেড়েছে। সুতরাং দুই মিনিট চলে গেছে অপারেশন শুরু হবার পর।
‘চলুন তাহলে অগ্রসর হওয়া যাক। আমি সংকেত দিচ্ছি সবাই আমাদের ফলো করবে।’ বলল শিমন আশের।
‘না স্যার, সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে এভাবে অগ্রসর হওয়া যাবে না। আমি দেখে আসি।’ বলে ছুটল আইজ্যাক জ্যাকব পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দিকে।
গেটে পৌছেই সে দেখল গেটের দু’পাশের দুই গেট বক্সে চারজন পুলিশের দেহ সংজ্ঞাহীনভাবে কোনটা টেবিলে, কোনটা মেঝেতে পড়ে আছে। ভেতরে ঢুকে ডিউটি রুম পর্যন্ত একই দৃশ্য দেখল আইজ্যাক জ্যাকব। বিভিন্ন স্থান মিলে প্রায় তিরিশজন পুলিশকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সে দেখতে পেল। ডিউটি রুমে ডিএসপি মহিদলকেও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখে সে ভীষণ খুশি হয়েছে। এটাই পরিকল্পনা ছিল যে, ডিএসপি মহিদল নিজেও সংজ্ঞাহীন হবে, যাতে সে সকল সন্দেহের উর্ধে থাকে।
ডিউটি রুম থেকে বেরুবার সময় আইজ্যাক জ্যাকব টেবিলের উপর ঢলে পড়ে থাকা পুলিশের দেহ তুলে ধরে একটা ঝাকুনি দিল ক্লোরোফরমের এ্যাকশন দেখার জন্যে।
ঝাঁকুনি দিয়ে ছেড়ে দিতেই গড়িয়ে দেহটি মেঝেয় পড়ে গেল।
হাসি মুখে ছুটে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে এল আইজ্যাক জ্যাকব।
পৌছে খবর দিল আশেরকে, ‘স্যার মাঠ একদম পরিষ্কার। ৩০ জন পুলিশকে সংজ্ঞাহীন পড়ে থাকতে দেখে এলাম। ডিএসপি মহিদলকেও। চলুন যাওয়া যাক।’
‘যাব। শোন আইজ্যাক জ্যাকব, তুমি তো জান, মহিদল যা বলেছে। তিন তলার রেড সিকিউরিটি রুমে লিফট আছে ভূগর্ভস্থ কক্ষে নামার। ভূগর্ভের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আমাদের লোকদের রাখা হয়েছে। তুমি দশ বারো জনকে নিয়ে যাবে তাদের উদ্ধারের জন্য। আমি অবশিষ্টদের নিয়ে নিচে পাহারায় থাকব। যাওয়া ও আসার মধ্যে দশ মিনিটের বেশি সময় তুমি পাবে না মনে রেখ।’ বলল শিমন আশের।
‘দশ মিনিট যথেষ্ট স্যার। চলুন।’ আইজ্যাক জ্যাকব বলল।
সবাই পৌছল পুলিশ হেডকোয়ার্টারে।
পরিকল্পনা মোতাবেক আইজ্যাক জ্যাকব ১২ জনকে নিয়ে তিন তলার রেড সিকিউরিটি রুমের দিকে ছুটল সিঁড়ি দিয়ে। দুই তলা শূন্য দেখল। চার তলাও তাই। তবে রেড সিকিউরিটি রুমে ঢুকে দেখল চারজন পুলিশ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছে। খুশি হলো আইজ্যাক জ্যাকব। একজনের পাঁজরে লাথি মেরে বলল, ‘হারামজাদারা, আমাদের লোকদের আটকে রেখেছিল?’ লিফটের সুইচ অন করল আইজ্যাক জ্যাকব। লিফটের দরজা খুলে গেল।
লিফটে উঠল ওরা বার জন।
লিফট গিয়ে পৌছল ভূগর্ভস্থ দুই ফ্লোরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে।
লিফটের দরজা খুলে গেল। সামনেই বিরাট হল ঘর।
হল ঘরে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে তাদের ১২ জন লোক।
আইজ্যাক জ্যাকবদের দেখে ওরা আনন্দে চিৎকার করে উঠল।
দ্রুত ওদের বাঁধন খুলে দেয়া হলো।
আনন্দে একে অপরকে ওরা জড়িয়ে ধরল। কুশল বিনিময় শুরু হয়ে গেল।
আইজ্যাক জ্যাকব চিৎকার করে বলল, ‘এখন এসব রাখ। আগে বের হও পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে।’
বলেই আইজ্যাক লিফটের বন্ধ দরজার দিকে চলল।
চাপল লিফটের উপরে উঠার সুইচ।
সবাই ছুটে আসতে লাগল লিফটের দিকে।
লিফটের দরজা খুলল না ।
সুইচের দিকে তাকাল আইজ্যাক জ্যাকব। দেখল সুইচে আলো জ্বলছে না। চমকে উঠল আইজ্যাক জ্যাকব। আবার সুইচ টিপল। না সুইচে আলো জ্বলছে না। চমকে উঠল আইজ্যাক জ্যাকব। আবার সুইচ টিপল। না সুইচে আলো জ্বলছে না।
‘তাহলে কি বিদ্যুৎ চলে গেছে?’ স্বগত কণ্ঠেই যেন বলে উঠল আইজ্যাক জ্যাকব।
আইজ্যাক জ্যাকবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল আগে বন্দী হয়ে আসা ১২ জনের একজন অ্যারন আজিজ।
অ্যারন আজিজ লেবানন বংশোদ্ভুত একজন ইহুদী। তার বর্তমান বসবাস থাইল্যান্ডে।
অ্যারন আজিজ বলল, ‘স্যার বিদ্যুৎ যায়নি। দেখুন এই ঘরে তো বিদ্যুৎ আছে।’
‘ঠিক তো বিদ্যুৎ যায়নি! তাহলে সুইচে বিদ্যুৎ নেই কেন?’ তার চোখে-মুখে উদ্বেগ।
কথা শেষ করেই আবার বলে উঠল, ‘শুধু লিফটের বিদ্যুৎ তো এভাবে যায় না! কেউ কি লিফটের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিল?’ আর্তনাদের মত শোনার আইজ্যাক জ্যাকবের কথা।
সে পাগলের মত লিফটের সুইচ টিপতে লাগল। লাথি লাগাল লিফটের দরজায়।
আইজ্যাক জ্যাকবের লাথিতে লিফটের দরজায় সামান্য শব্দও হলো না।
অ্যারন আজিজ বলল, ‘স্যার লিফট এবং সিঁড়ি মুখের দরজা কয়েক ইঞ্চি পুরু ষ্টিলের। আমরা অনেক লাথি-টাথি মেরে দেখেছি। মনে হয় বোমাতেও দরজার কিছু হবে না।
আইজ্যাক জ্যাকব মোবাইল বের করল শিমন আশেরকে টেলিফোন করার জন্যে। কিন্তু দেখল মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই।
‘আমাদেরকে ওরা ট্রাপে ফেলেছে’ বলে চিৎকার করে উঠে আইজ্যাক জ্যাকব তার মেশিনগানের সব গুলী উজাড় করল লিফটের দরজার উপর।
লিফটের দরজায় লাগা সবগুলো গুলী ঝরে পড়ল মেঝেতে। দরজায় সামান্য দাগও পড়ল না। তার মানে দরজাগুলো বুলেট প্রুফ।
ক্রোধে, ক্ষোভে, উদ্বেগে পাগলের মত হয়ে ওঠে আইজ্যাক জ্যাকব। উন্মত্তের মত লাথি দিতে লাগল লিফটের দরজার উপর।
ওদিকে শিমন আশের আইজ্যাক জ্যাকবকে তাদের লোকদের উদ্ধারের জন্যে পাঠিয়ে দিয়েই পুলিশ হেডকোয়ার্টার ভেতরে বিভিন্ন স্থানে পজিশন নেয়। পজিশন নিয়েই নির্দেশ দেয় সংজ্ঞাহীনদের পাশে পড়ে থাকা ষ্টেনগান ও রিভলবার নিয়ে তার সামনে এক জায়গা জমা করতে।
সে নিজে পজিশন নিয়েছিল দুই গেট বক্সের মাঝখানে।
অস্ত্রগুলো এক জায়গায় স্তুপ করার পর সবাই রিলাঙ মুডে গল্প-গুজব শুরু করল।
ঠিক এই সময় তিন তলায় গুলীর একটি শব্দ হলো।
শিমন আশের চমকে উঠে দাঁড়াল।
সাথে সাথে ব্ল্যাক ঈগলের যে যেখানে ছিল অস্ত্র নিয়ে উঠে দাঁড়াল। তাদের সবার দৃষ্টি তিন তলার দিকে।
অন্যদিকে গুলীর শব্দের সংগে সংগে সংজ্ঞাহীন পুলিশের সবাই গড়িয়ে গড়িয়ে বিভিন্ন দিকে সরে গেল এবং লুকানো অস্ত্র নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারা প্রত্যেকেই যার যার নিকটবর্তী ব্ল্যাক ঈগলের লোককে টার্গেট করল।
দুই গেট বক্সের চার সংজ্ঞাহীন পুলিশ বেরিয়ে এসেছে নিঃশব্দে। তাদের হাতেও গোপন স্থান থেকে বের করে নিয়ে আসা চার ষ্টেনগান।
গুলীর শব্দের পর থেকে তাদের বেরিয়ে আসার মধ্যে ১৫ সেকেন্ড সময়ও লাগেনি।
তারা দু’দিক থেকে যখন শিমন আশেরের পেছনে এসে দাঁড়াল, তখনও তার উদগ্রীব দৃষ্টি তিন তলার দিকে। তার হ্যান্ডমেশিনগান বেল্টে ঝুলছে এবং তার রিভলবার হাতে ঝুলছে।
চারজনের একজন গিয়ে তার ষ্টেনগানের বাঁট দিয়ে শিমন আশেরের রিভলবার ধরা হাতে আঘাত করল।
রিভলবার পড়ে গেল তার হাত থেকে।
চমকে উঠে চরকির মত ঘুরে দাড়াল শিমন আশের। তার একটা হাত চলে গিয়েছিল তার হ্যান্ডমেশিনগানের বাঁটে।
ষ্টেনগান দিয়ে যে পুলিশ শিমন আশেরের হাতে আঘাত করেছিল, তার ষ্টেনগান উঠে গিয়েছিল শিমন আশেরের বুক বরাবর। সে উঠে দাঁড়াবার সংগে সংগেই বলল, ‘লাভ হবে না অস্ত্রে হাত দিয়ে তোমার সামনে চারটা ষ্টেনগান। একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে তুমি।’
শিমন আশেরের হাত সরে এল হ্যান্ডমেশিনগানের বাঁট থেকে।
চার পুলিশের একজন দ্রুত গিয়ে শিমন আশেরের দুই হাত পেছনে টেনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দিল।
শিমন আশের ক্রুব্ধ কণ্ঠে বলে উঠল, ‘তোমরা চারজন। কিন্তু আমার তিন ডজন লোক তোমাদের হেডকোয়ার্টার দখল করে আছে। এখনি এসে পড়বে তারা।’
একজন পুলিশ শিমন আশেরকে ঘুরিয়ে দিল যাতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ভেতরটা দেখতে পায়।
ভেতরে চোখ পড়তেই আঁৎকে উঠল শিমন আশের। দেখল, ব্ল্যাক ঈগলের প্রত্যেকের পেছনে একজন করে পুলিশ। সবারহ হাতেই হ্যান্ডকাফ।
বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ অবস্থা শিমন আশেরের। তাহলে পুলিশের সংজ্ঞাহীন হওয়ার ব্যাপারটা কি ভুয়া?’
এক পুলিশ বলল, ‘আশা করবেন না যে, আপনাদের যারা বন্দী ব্ল্যাক ঈগলদের উদ্ধার করতে গেছে, তারা আপনাদের উদ্ধার করতে আসছে। উদ্ধার করতে গিয়ে ওরা নিজেরাই এখন সাথীদের সাথে খাঁচা-বন্দী হয়েছে।’
বিস্ময়-উদ্বেগে মুখ চুপসে গেল শিমন আশেরের। বলল, ‘ডিএসপি মহিদলের সংজ্ঞা হারানোও কি নাটক?’
‘না তারটাই আসল। তার সাথে আপনাদের যোগসাজশের শুধু ঐটুকুই বাস্তবায়িত হয়েছে। তাকে সংজ্ঞালোপ করে ফেলে রাখা হয়েছিল আপনাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্যে।’ বলল একজন পুলিশ।
এ সময় দোতলা থেকে এসপি উদয় থানির কণ্ঠ শোনা গেল। নির্দেশ দিল সে, ‘বন্দী সবাইকে ব্ল্যাক চেম্বারে নিয়ে এস।’
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ‘ব্ল্যাক চেম্বার’ হলো একটা ট্রানজিট কক্ষ। মাত্র এক দরজার জানালাহীন এক বিশাল ঘর এটা। বাতাস যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ক্ষুদ্রাকারের ভেন্টিলেশন রয়েছে ঘরটিতে। গ্রেফতারের পর ক্রিমিনালদের জেলে বা পুলিশ হাজতে কিংবা স্থানান্তরে পাঠানোর আগে এই ঘরে রাখা হয়।
হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় প্রত্যেককে সেই ঘরে নিয়ে তোলা হলো।
ভূগর্ভস্থ কক্ষ থেকে আরও ২৪ জনকে হ্যান্ড কাফ পরা ও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এনে ‘ব্ল্যাক চেম্বারে’ তোলা হলো। এদের মধ্যে আইজ্যাক জ্যাকবও সংজ্ঞাহীন ছিল।
ব্ল্যাক চেম্বারে ‘ব্ল্যাক ঈগল’ এর বন্দীর মোট সংখ্যা ৪৮ জন।
বাম হাতে ব্যান্ডেজ বাধা এসপি উদয় থানি শিমন আশেরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তুমিই সম্ভবত পালের গোদা। তোমরা ডিএসপি মহিদলকে বশ করে মনে করেছিলে বন্দীদের উদ্ধার করাসহ যা ইচ্ছা তাই করে যাবে। কিন্তু পারনি। সত্যি বলতে কি তোমাদের এতবড় বিপর্যয় এত সহজে হবে আমরাও কল্পনা করতে পারিনি। এর অর্থ তোমাদের খেলা খতম হওয়ার পথে।’
শিমন আশেরের বিধ্বস্ত চেহারায় যেন আগুন জ্বলে উঠল। বলল, ‘ব্ল্যাক ঈগলকে এত ছোট করে দেখ না। পস্তাতে হবে। মনে রেখ ব্ল্যাক ঈগলের ডানার নিচে গোটা দুনিয়া। আর থাইল্যান্ডেও ব্ল্যাক ঈগল দুর্বল নয়। শাহবাড়ি, যয়নব যোবায়দার বাসা এবং আজকের বিপর্যয় আমাদের কাছে দুর্বোধ্য। কিন্তু এর মূল্য তোমাদেরকে দিতে হবে।’
‘মূল্য আমরা অনেক দিয়েছি। বহু থাই মানুষকে তোমরা মেরেছ। এবার আমাদের মূল্য আদায় করার পালা। কিন্তু বলত তোমরা এখানে মুসলমানদের ঘাড়ে চড়েছ কেন? তাদের ঘাড়ে সন্ত্রাসের বদনাম চাপিয়ে তোমাদের লাভ?’ বলল এসপি উদয় থানি।
‘ব্ল্যাক ঈগল কাউকে কৈফিয়ত দেয় না।’ বলল শিমন আশের।
‘দেয় না। কিন্তু এবার দেবে।’ বলল উদয় থানি। তার কণ্ঠ কঠোর।
উদয় থানি থামতেই শিমন আশের বলে উঠল, ‘আমাদের এই চব্বিশ জন সংজ্ঞাহীন হলো কি করে?’
‘পুলিশদের সংজ্ঞাহীন করার জন্য তোমরা যে ক্লোরোফরম গ্যাস মহিদলকে দিয়েছিলে, সেই গ্যাস দিয়ে বন্দীখানায় এদের আমরা সংজ্ঞাহীন করেছি। যাতে নিরুপদ্রবে সবাইকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে এই ব্ল্যাক-চেম্বারে আনতে পারি।’
বলেই এসপি উদয় থানি ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সংগে সংগে ষ্টিলের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
কপালের ঘাম মুছে এসপি উদয় থানি কম্যুনিকেশন রুমে ঢুকল ব্যাংককের সাথে কথা বলার জন্য। ডিএসপি মহিদলের ঘটনার ব্যাপারে পূর্বেও একবার সে কথা বলেছে ব্যাংককের সাথে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now