বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ভিন্ন রাতের গল্প-০১
লেখকঃ নাফিজ আহমেদ
মানুষের হৃদয়ের গহীনে প্রতিনিয়ত জমা হতে থাকে অগণিত গল্প—কখনো জানা, কখনো অজানা। কিছু গল্প নিঃশব্দে মিশে যায় জীবনের ভিড়ে, আবার কিছু গল্প জায়গা করে নেয় স্মৃতির গহিন কুঠুরিতে।
সেদিন দুপুর প্রায় ২টা ১৫ বাজে। আমি তখন নিজের ঘরেই ছিলাম। হঠাৎ কেন যেন মনে হলো, ঢাকায় যাওয়া দরকার। কেন সেই তাগিদ—তা পরে বলছি।
রুম নম্বর ৫০১-এ গিয়ে আমার মেসমেট রাগিবকে বললাম,
— “ভাই, আপনি কি আজ একটু ঢাকায় যাবেন? চলুন না।”
— “ঢাকায়? কী হয়েছে?”
— “মুশফিক ভাই বলেছে—আপনাকেও যেতে বলেছে। আঃ হাকিম ভাইকে দেখতে যেতে হবে।”
আব্দুল হাকিম আমাদের মাদ্রাসারই ছাত্র। খুব ঘনিষ্ঠও বটে। দীর্ঘদিন বাসায় ছিল—সিরাজগঞ্জে। ক’দিন আগে আম পাড়তে গিয়ে গাছে উঠেছিল। হঠাৎ করে ডাল ভেঙে পড়ে যায়। দুই হাতই ভেঙে গেছে তার!
মুশফিক ভাই আগেই গেছেন, কারণ ওখানে থাকার মতো কেউ ছিল না। হাকিম ভাইয়ের পিতা সদ্য প্রয়াত হয়েছেন, মা-ও অসুস্থ। এমন এক পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্য থেকেই কাউকে না কাউকে পাশে দাঁড়াতেই হতো।
আমরা বিকেল ৩টার দিকে রওনা হলাম। গন্তব্য: পঙ্গু হাসপাতাল। যেহেতু আমরা এশিয়া পাম্প এলাকায় থাকি, তাই সেখান থেকে ভিআইপি পরিবহনের বাস ধরলাম।
ভাড়া ৬০ টাকা হলেও আমরা ছাত্র পরিচয় দিয়ে ৩০ টাকা দিতে চাইলাম। কন্ডাক্টর প্রথমে মানতে চাইল না। একটু বাগবিতণ্ডা হলো, তারপর আইডি কার্ড দেখিয়ে আমরা হাফ ভাড়ায় আসাদ গেইটে নেমে পড়লাম।
সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে আরেকটি বাসে উঠলাম। এবার গন্তব্য শিশুমেলা। ঢাকা শহরের প্রচণ্ড যানজটের মধ্যে দিয়ে বাস এগোচ্ছিল ধীরগতিতে। অবশেষে পৌঁছে গেলাম শিশুমেলায়। এখানে ভাড়া লাগল বিশ টাকা।
বাস থেকে নেমে শুরু হলো হাঁটা। পথচারীদের জিজ্ঞেস করতে করতে ফ্লাইওভার পার হয়ে সামনে গিয়ে দেখতে পেলাম পঙ্গু হাসপাতালের দালান।
মুশফিক ভাই আগেই আসায় আমরা তাকে ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ পর ভাই আমাদের গেইটে এসে迎ে নিলেন। সেখান থেকে সবাই একসাথে হাঁটা ধরলাম।
চারপাশে শুধু রোগী আর রোগী। ভাঙা হাত, পা নিয়ে কেউ হুইলচেয়ারে, কেউ স্ট্রেচারে, কেউবা মেঝেতে শুয়ে আছে। এমন দৃশ্য মানসিকভাবে ধাক্কা দিয়ে যায়।
অবশেষে দেখতে পেলাম আঃ হাকিম ভাইকে। দুটি বালিশের ওপর তার দুটি হাত শুয়ে আছে—ড্রেসিং করা, প্লাস্টার বাঁধা। এমন হাসিখুশি মানুষটিকে আজ যেন চেনাই যাচ্ছে না। মুখে বিষণ্ণতা, চোখে ব্যথার ছায়া।
তবুও আমাদের দেখে একটু ম্লান হাসি ফুটল তাঁর মুখে—একটি সুন্নতি হাসি। আমরা পাশে বসে খোঁজ নিলাম,
— “ভাই, ঠিক কীভাবে হলো বিষয়টা?”
তিনি বললেন,
— “আম গাছে উঠেছিলাম। একদম ওপরে। হঠাৎ চিকন ডালে পা পড়তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যাই।”
— “এখানে চিকিৎসা কেমন হচ্ছে ভাই?”
তিনি বললেন,
— “আগের দিন একজন ডাক্তার দেখে গিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কেউ আসে নি।”
এ কথা শুনে সাদ ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। তিনি হাকিম ভাইয়ের শিক্ষক, একই জেলার বাসিন্দা এবং একজন আইনজীবী। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় তিনি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন এবং বললেন, নতুন ব্যবস্থা করার প্রয়োজন আছে।
(চলবে...)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now