বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
চলন্ত ট্রেনে হঠাৎ দেখা – ০২
নাফিজ আহমেদ
আমি কিছুক্ষণ ধরে তার দিকে চেয়ে আছি। যত তাকাচ্ছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। সত্যি বলতে, তার শুভ্র অবয়ব থেকে চোখ ফেরাতে মন সায় দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে, তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে যাই ভাবনার অতলে।
মেয়েটি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বাইরের ঝিরঝিরে হাওয়ার কোমল পরশ এসে যেন তাকে আলতো ছুঁয়ে আপন গন্তব্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধ সেই হাওয়ায় তার চুলের ঢেউ খেলে যাচ্ছিল—একেবারে আকাশ ছুঁতে ব্যাকুল কোনো কালো মেঘের মতো, আলকাতরার মতো ঘন, মসৃণ, আর উন্মাতাল।
চোখ দুটি ছিল ঠিক গভীর রাতে হারিয়ে যাওয়া দুটি নক্ষত্রের মতো—যাদের গভীরে লুকিয়ে আছে এক অপার ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণ। যেন এক সৌম্য চুম্বক, আমাকে টেনে নিচ্ছে তার রহস্যময় জগতে।
ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা সেই ঝাপসা চাঁদের হাসি—এক লাজুক জ্যোৎস্নার মত, যা মেঘের আড়ালে থেকেও দ্যুতি ছড়ায়। তাকালে মনে হয় পৃথিবীর সকল গোধূলি যেন তার ঠোঁটের হাসিতেই লুকিয়ে আছে।
তার পরণে ছিল বাদামি পাতার রঙে মিশে থাকা থ্রি-পিস, ঠিক যেন শরতের ঝরা পাতার কোমল ছোঁয়া। সেই সাজের সাথে ছায়ার মতো সঙ্গী হয়ে ছিল একজোড়া কালো পাজামা—নীরব, অথচ গভীর। সব মিলিয়ে সে যেন ঝিলামের রাজকন্যা, জলরঙে আঁকা এক বিস্ময়, যার অস্তিত্ব শুধু কবিতার ছায়ায় খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে আমি বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল—লজ্জায় নিজেকেই হারিয়ে ফেলব। তাই একটু দূরে সরে এলাম। কিন্তু হৃদয়ের প্রতিটি ধ্বনিতে কেবল তারই নাম বাজছিল।
এতক্ষণে ট্রেন ভাঙ্গা রেলস্টেশনে এসে থেমেছে। আমি কাশিয়ানী স্টেশন থেকে এই বগিতে উঠে ছিলাম, এবার নিজের নির্দিষ্ট আসনে ফিরে যাওয়ার সময়।
ট্রেন এবার আর থামবে না, সোজা যাবে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত। নিজের সিটে চলে এলাম, কিন্তু হৃদয়টা বারবার চাইছিল আরেকবার তাকে দেখতে। অনেক চেষ্টা করলাম, চোখ ফেরালাম, কিন্তু সফল হতে পারলাম না।
সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা ৭:৩০। ট্রেন পৌঁছে গেছে কমলাপুর স্টেশনে। সবাই রেল থেকে নামছে, আমরাও নেমে এলাম। আমি আর ম্যাচের বড় ভাই শহরতলীর একপাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। যাত্রীরা একের পর এক আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে, অথচ আমি কেবল তাকেই খুঁজছি।
হঠাৎ—দশ মিনিট পর, তাদের দেখা মিলল আবার। তারা আমাদের পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয়বার তার মুখ দেখে যেন প্রাণ জুড়িয়ে গেল। আমি তাকিয়ে আছি অপলক, অথচ সে এগিয়ে যাচ্ছে—ধীরে ধীরে চোখের আড়ালে মিলিয়ে গেল।
চাইলেও আর দেখা যাচ্ছে না। আমি ভাইকে বারবার বলছি উঠি, কিন্তু তিনি উঠছেন না। অবশেষে তিনি উঠলেন, আমরাও এগোলাম। কিন্তু কোথাও তাদের ছায়াও নেই। মনে হলো—হারিয়ে গেছে, কোনো অচিনপুরে। আর দেখা হবে কি না, তার নিশ্চয়তাও নেই।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে ভাই বললেন, তিনি শাহবাগ যাবেন। রিকশায় মতিঝিল যাবেন, সেখান থেকে মেট্রোরেলে শাহবাগ। আমি বললাম, “ঠিক আছে ভাই, দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।”
তাকে বিদায় দিয়ে নিজের গন্তব্যে পা বাড়ালাম। টিকিট কাউন্টার থেকে ঢাকাটু জয়দেবপুরের টিকিট কেটে প্লাটফর্মে এলাম। কিছুদূর এগোতেই—হঠাৎ দেখি, একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে আমার স্বপ্নের রাজকন্যা...
চলবে...
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now