বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
দিনশেষে মায়ের খোঁজে
লেখকঃ নাফিজ আহমেদ
জীবনে চলার পথে কোন এক সময় এমন মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হবে তা কখনো বোধগম্য হয়নি। অনেক দিনের আকাঙ্খা ছিল যে অবসর সময়ে তাবলীগে সফর করব। যেই ভাবনা সেই কাজ, দাখিল পরিক্ষা শেষ হলেই বাড়ি থেকে বাহির হয়ে যায় চিল্লার উদ্দেশ্য। নিয়মানুযায়ী আমাদের রোক পরে পাবনা জেলায়। দিনগুলো ভালোই অতিবাহিত হচ্ছিল আমাদের থেকে। কোন এক নিঝুম জোসনা ভরা রাত্রিতে আমি একটু মসজিদ থেকে বাহির হয়েছি। এই নিস্তব্ধ পরিবেশে একাকী পায়চারি করতে এক অন্যরকমের উপলব্ধি কাজ করছে হৃদয়ের অতল গহব্বরে। একটু হাঁটাহাঁটি করার মধ্যখানে অবলোকন করলাম আমাদের এক সাথী ভাই উপবিষ্ট আছে একাকী। আমি তার দিকে হেঁটে গেলাম। তার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই একাকী এখানে বসে কি করছেন? একটু পরেই এক দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে বলতে থাকল তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা। আমি অনুভব করতে পারলাম হয়তোবা তার এই ছোট্ট জীবনে লুকিয়ে আছে এক বিরাট রহস্য। সে আমাকে তার ভিতরে চেপে থাকা অভিমতগুলো ব্যক্ত করতে থাকল, তারেখ বলল আজ থেকে ছয় বছর আগে আমি সকলেরই ন্যায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলাম।
কিন্তু ঘুর্ণিঝড় তুফানের মতো আমার জীবনে আগমন ঘটালো এক নিকৃষ্ট অভ্যাস। হ্যাঁ, ধীরে ধীরে আমি পদার্পণ করি এক ভিন্ন জগতে। আমি নিজেকে লিপ্ত করি এক অন্যরকম নেশার সাথে। যেটা আমার জীবনের এক বৃহৎ অংশ জুড়ে নিয়েছিল৷ আমি কোনভাবেই ঐ জগৎ থেকে বাহির
হতে পারছিলাম না। হঠাৎ একদিন কোনভাবে আমার মা অবহিত হলো যে তার সেই আদরের ছোট্ট তারেক আজ নেশাদ্রব্যের সাথে জড়িত, তাৎক্ষনিক সে আমাকে সকলের সম্মুখে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। আমি তাদেরকে বলতে পারিনা,তবে আমি তাদেরকে এতটুকু শান্তনা দিই যে যতদ্রুত সম্ভব আমি এই বাজে জগৎ থেকে বাহির হওয়ার চেষ্টা করব। হঠাৎ কোন এক পড়ন্ত বিকালে আমি জানতে পারি যে, আমার জননী আকস্মিকভাবে ব্রেন স্টোক করেছে। আমি এমনই এক হতভাগা যে,তখনো আমি নিজেকে নেশার সাথে ব্যাস্ত রেখেছি। খবরটা শোনা মাত্রই আমি যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছে গেছি। আমার আগেই আমার পরিবারের সকলে হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছে। তারা আমাকে বলল যে, মা আমাদের কাউকে চিনতে পারছে না। মা শুধু তোকে খুঁজছে। আমি তখনি আমার মায়ের কাছে গেলাম। মা তেমন কথা বলতে পারছে না। শুধু আমাকে অবলোকন করে আপন ভাষায় কি যেন বলতে চাইছে। কিন্তু কেন যেন তার অভিমত প্রকাশ করতে পারল না। তবে চোখের ভাষায় যেন বলতে চাই, বাবা আমার সময় হয়ে এসেছে আমি হয়তো আর কখনো নিজের হাতে রান্না করে তোকে খাওয়াতে পারব না। হয়তো আর কখনো শীষের ভেজা ভোরে তোর ঘরে গিয়ে তোকে গভীর নিদ্রা থেকে ডেকে তুলতে পারবো না। আমি আর কোন ঈদে নিজ হাতে সেমাই রান্না করে তোকে দিতে পারবো না। তুই আর কখনো আমার কাছে কোন আবদার করতে পারবি না। তোর অগোছালো কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য হয়তো আর কোন দিন আমাকে নিজের কাছে পাবিনা। আমি জানি কোন এক জোছনা ভরা রাত্রিতে তোর ঘুম আসবে না, সেদিন আর মাথার কাছে এসে আমি ঘুম পাড়ানী গানটাও শুনাইতে পারবো না। তখন তুই তারা ভরা আকাশটার দিকে এক নাগারে তাকিয়ে থাকবি আর আমার কথা মনে করবি। তবে তুই আমার জন্য কাঁদিস না। নিজের এই অগোছালো জীবনের জন্য একজনকে বেঁচে নিস,আমি তো আর থাকবো না। আমি অবলোকন করলাম তার চোখ বেয়ে অশ্রু ধরা গড়িয়ে পড়ছে। নিজের রত্নকে ছেড়ে যেতে তারও ইচ্ছা করছে না। কিন্তু কি করা মৃত্যু তো আর কেউ আটকাতে পারে না! কিছুক্ষণ পরে আমার মা আমার কোলে মাথা রেখে
চলে গেল পরলোকগমনে। ইহজগতে সমস্ত মায়া কাটিয়ে পাড়ি জমালো চিরস্থায়ী জীবনে। আমার পরিবারে সকলে কাঁদতে থাকল। কিন্তু আমি যেন কি এক চিন্তার জগতে হারিয়ে গেছি। আমি শুধু ভাবতে থাকলাম যখন আমার মা আমার কাছে এসেছে আমি তাদেরকে এড়িয়ে ডুবে ছিলাম নেশার অতল গহব্বরে। আমি তাদের সাথে তেমন সময় ব্যয় করিনি। আর আজ যখন আমি আমার মায়ের কাছে ছুটে এসেছি তখন সে আমাকে ফাঁকি দিয়ে হারিয়ে গেল এক অন্য জগতে। যেখান থেকে হাজার বার চাইলেও আমি তারেক তাকে কখনো ফিরিয়ে আনতে পারবো না। মায়ের দাফন কাজ সম্পূর্ণ করে আমি বেড়িয়ে গেলাম স্বপ্নের দেশে আমার মায়ের খোঁজে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now