বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#আরব্য_বেদুঈন
#পর্ব_০৯
দিন দুয়েক কেটে গেল মেলা আর শহর দেখতে দেখতে। তবে শহর দেখার নাম করে আমার নফররা যথেষ্ট খবর সংগ্রহ করেছে শেখের সম্পর্কে। আলাউদ্দিন শেখ, এই শহরের সব থেকে পয়সাওলা মানুষ। ওর কথায় হুকুমত চলে। বাড়িতেই চল্লিশটা সেপাই পাহারা দিচ্ছে ছব্বিশ ঘন্টা। লোকটার সঙ্গে শক্তিতে পাঙ্গা নেওয়া সহজ কাজ নয়। মোতি বললো, জঙ্গ নয় বুদ্ধি করে লুঠ করতে হবে ওই শেখের খাজানা। রক্তপাত হবে না। এমন কিছু একটা করতে হবে।
ঠিক হলো শেখের বাড়িতে সৌদাগর হয়ে ঢুকবো আমি আর সোলেমান। তারপর কথায় ভুলিয়ে পুরো দলবল নিয়ে ঢুকে পড়বো।
যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। আমার খাজানায় দুটো দামি হিরে জহরৎ বসানো তরোয়াল ছিলো। খুব সুন্দর দেখতে, ওগুলোকে কাপড়ে জড়িয়ে চললাম দুজনে। পাহারা পেরিয়ে শেখের সামনে এসে কুর্নিশ করলাম। নাদুস নুদুস চেহারা, দেখলেই বোঝা যায় এ শেখ আইয়াশী। জঙ্গবাজ একেবারেই নয়। সারাদিন সুরা আর নারীতে ডুবে থাকা চেহারা। কাপড় সরিয়ে তলোয়ার দুটো দেখাতেই পছন্দ হয়ে গেল শেখের। যে দাম বললাম, সে দামেই রাজি হয়ে গেল।- বহোত খুব! বহোত খুব!
বাহবা দিতে লাগলো আমাদের। সুযোগ বুঝে বললাম, চাইলে আরো খুশ করতে পারি আপনাকে, মেহেরবানী করে একটু সময় দিলেই, গানা বাজানা পেশ করতে পারি।
- কবে আসতে চাও? প্রশ্ন করে শেখ।
- হুজুর চাইলে কালকেই। আমার দলের সুন্দরীরা চাইলে সারা রাত মেহেফিল জমিয়ে দেবে।
দোস্তি হতে শুরু করলো লোকটার সঙ্গে, শরাব খেতে বললো আমাকে, মেহেমান নওয়াজী করতে কসুর করলো না লোকটা। আমাকে বললো, তোমার দলের দশটা সুন্দরী আছে? ওদের মধ্যে সব থেকে সুন্দরী তিনজনকে আমি আমার সঙ্গে রেখে দিতে চাই।
- কিনবেন হুজুর?
- না! যতদিন ভোগ করার ইচ্ছে ভোগ করবো! তারপর ফিরিয়ে দেবো তোমায়। বহুত বড়ো ইনাম দেবো! ভেবে দেখো। বিনা বাক্যব্যায়ে রাজি হয়ে গেলাম লোকটার কথায়। কথা হলো পরের দিন আমার দল নিয়ে ওর বাড়ি আসবো। খানা পিনা গানা বাজানা হবে। আরো কতো কিছু হবে! আমরা মনে মনে ভাবলাম, সে সব টের পাবে শেখ কালকে!
দিন থাকতে থাকতে দল বল নিয়ে পৌঁছে গেলাম আলাউদ্দিন শেখের বাড়ি। শেখ খুবই সৌখিন মানুষ, ঝাড়বাতি জ্বেলে ফরাস পেতে নাচঘর একদম ঝাঁ চকচকে করে রেখেছে ওর নকর গুলো। বাবুর্চিকে প্রথমেই আলাপ করিয়ে দিলাম। ওর কথায় খুশি হয়ে শেখ ওকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দিলো, শেখের বাবুর্চিদের
কিছু উমদা রন্ধন কৌশল শিখিয়ে দেবার জন্য। আমার শয়তান চোখদুটো খুশিতে নেচে উঠলো। এখানে এখনো পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাট এগোচ্ছে। খুশি মনে গিয়ে বসলাম নির্দিষ্ট ফরাসে।
আমার ঘনিষ্ঠ লোকেরা আর আমার বান্দা বাঁদিরা নাচের দল সেজেছে, বাজনদার সেজেছে। আবদুল্লাহ শেখের বাজনদারদের সঙ্গে সঙ্গত করে নিচ্ছে সারেঙ্গীতে। সকলের কাছেই লুকোনো অস্ত্র আছে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে। তবে এই দেশে সেটা সবার কাছেই থাকে কদিন থেকে দেখেছি।
আলাউদ্দিন শেখ এলো বেশ কিছুক্ষণ পর। থলথলে ভারি দেহটা নিয়ে নড়তে কষ্ট হয় লোকটার। তাও শখ কতো। গায়ের অতিরিক্ত মাংস ঝুলে পড়েছে। আমি মনে মনে ভাবছি, একে কোতল যদি করতে হয় তাহলে মাংসের তাল পার হয়ে কলিজা বিদ্ধ করা একমাত্র ভালা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর আমরা ভালা তো আনিনি। আছে শুধু খঞ্জর। দেখা যাক কি করা যায়।
শেখ এসে আমাকে আলিঙ্গন করলো। যেন কোনো নরম গদির মধ্যে কেউ আমাকে ঠেসে ধরলো। মেহেরের নরম শরীর, কিন্তু এ যেন নরম তুলো। শরীরের কোথার বুক কোথায় পেট , তাই বোঝা যায় না। শেখ ঢুকতে দামী আফগান আতরের গন্ধে ভরে উঠলো ঘরটা। সঙ্গে ঢুকলো শেখের চার বিবি। বিবিরা বসলে একটু তফাতে, পাতলা পর্দার পেছনে।
ওখানেই জায়গা হয়েছে মেহের আর মোতির। শেখের বিবিরা দেখলাম অল্প সময়ের মধ্যেই এদের আপন করে নিয়ে, খোশ গল্প শুরু করে দিলো।
শুরু হলো নাচ গান। তার সঙ্গে শেখের বিন্দা বাঁদিরা শুকনো খাবার দিয়ে গেল। আর দিলো মদিরা। আমার চোখ চকচক করে উঠলো।
গান চলছে, আরো খানা এসে হাজির হলো। শেখ খাচ্ছে। আয়েশা নাচতে নাচতে শেখের একদম কাছে চলে এসেছে। আমি ওকে চোখ মারলাম।
ও শেখকে নিজের হাতে মদিরা খাইয়ে দিলো। বেশ বুঝতে পারছি, লোকটার উত্তেজনা বাড়ছে। আয়েশা শেখের কোলে বসলো, গাইছে, আমার চোখ আবদুল্লাহর দিকে, ও এক মনে সারেঙ্গীতে সুর ধরেছে। চোখ বন্ধ। শেখের মুখে হাসি, ওর হাত আয়েসার নাভিমূলে খেলা করছে। হাত দুটো ছটফট করছে ওর নিটোন যৌবনের মাঝে পড়ে, কখনো স্তনের বিভাজিকায়, কখনো নাভির তলায় ছুটে চলেছে । আয়েশা আরো উত্তেজিত করে তুলছে লোকটাকে। হঠাৎ আয়েশা ছিটকে উঠলো ওর হাতে শেখের মদিরার পেয়ালা, ও নিপুন হাতে গোপনে মদিরায় মিশিয়ে দিচ্ছে ঘুমের তরল। আমার চোখ ঘুরছে সব দিক। হ্যাঁ, কাজ হচ্ছে আমাদের বুদ্ধির শেখের সবকটা পাহারাদার এই ভরা সন্ধ্যায় ঢুলছে। বাবুর্চি খানার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছে প্রচুর পরিমানে। সোলেমানকে ইশারা করলাম শেখের বাড়ির চারদিকটা দেখে নিতে। ও হুকুম তামিল করে শেখকে কুর্নিশ জানিয়ে বেরিয়ে গেল। ওর লোকেদের সঙ্গে মিশে গিয়ে খুঁজে দেখতে হবে কোন ঘরে শেখের খাজানা লুকানো আছে।
শেখের বিবিরাও খানা খাচ্ছে। ওরাও আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়বে। জানি। হাতে সময় খুব অল্প। সোলেমান কাজের ছেলে সব খবর ঠিক নিয়ে আসবে কিছু ওয়াক্তের মধ্যেই।
আবার শেখের কোলে আয়েশা, নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে মদিরা। ওর চোখ বোঝার চেষ্টা করছে, লোকটার নেশা ধরতে সময় লাগছে মনে হচ্ছে। ইশারা করলাম, সময় দিতে। আয়েশা সরে গিয়ে গান ধরলো। একটা নরম ঘুমের সুর।
বাবুর্চি খানায় আমার বাবুর্চি অন্য বাবুর্চিদের সঙ্গে গপ্পো জুড়েছে, ওর গপ্পো শুনতে শুনতেই এক এক করে ঘুমে ঢলে পড়ছে লোকগুলো। ও বেরিয়ে এসে মহলের বাঁদি জেনানা দের দেখছে, ওরাও নেশাড়ুদের মত ঝিমোচ্ছে। দূরে দরজার কাছ থেকে ও ইশারা করলো সব ঠিক আছে, আর দেরী করা যায় না। শেখ তখনো মুর্ছা যায়নি। ঢুলু ঢুলু চোখে আমাদের দেখছে। ওর বিবিগুলো ঢলে পড়েছে গভীর ঘুমের দেশে। পরিবেশ বেশ ঢিলেঢালা।
সোলেমান ছুটে এসে ইশারা করলো সব কিছু নিয়ন্ত্রণে। আমার বান্দারা, যারা নাচের দলে রয়েছে, ওরা বিশ্রাম নিচ্ছিলো। ওদের হুকুম দিলাম। সোলেমানকে অনুসরণ করতে। ওরা বেরিয়ে গেল মেহেফিল থেকে। যুদ্ধ জয়ের পর শত্রুর দৌলত লুঠ করতে ওরা সিদ্ধ হস্ত। দিলরুবা এগিয়ে এলো শেখের কাছে। শেখ হামাগুড়ি দিয়ে ওকে ধরতে গেল, ঐ বিশাল চেহারা হামাগুড়ি দিচ্ছে দেখে আমার হাসি পেয়ে গেল। দিলরুবা আর আয়েশা শেখের গলার দামী দামী হার গুলো খুলে নিয়ে নিজেরা পরে ফেললো। শেখ নিস্তেজ হয়ে আসছে। মোতিজান ইশারা করলো আমাকে বেরিয়ে পড়তে। এখানকার ব্যাপারটা ও সামলে নেবে। বাড়ির ফটকের কাছে গেলাম। ওখানে দুজন রক্ষী নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, কিন্তু জেগে আছে। আমাকে দেখে কুর্নিশ করলো। আমার কাছে এক বোতল ঘুমে্য ওষুধ মেশানো মদিরা ছিলো, খুশি হবার ভান করে ওদের বোতলটা তঝফা দিলাম। ওরা বারবার কুর্নিশ করতে লাগলো। একটু তফাতে বাড়ির বাইরে আমাদের ঘোড়া আর উট গুলো বাঁধা ছিল, দেখে এলাম ওগুলো ঠিক আছে কি না। ততক্ষণে রক্ষীরা ঢুলে পড়েছে, এ ওর গায়ে।আবদুল্লাহ সঙ্গীদের নিয়ে চুরির মাল পত্র সমেত বেরিয়ে এলো। ওদের বললাম ঘোড়া নিয়ে কিছু লোক তাঁবুতে ফিরে গিয়ে তাঁবূ গুটিয়ে ফেলতে।
আমি শেখের পুরো খাজানা লোপাট করা হয়েছে কিনা আবার দেখে নিলাম। শেখের খাজানা ঘর পুরো খালি করে ফেলেছে আমার লোকরা। মেহেরকে ইশারা করলাম, ও সব মেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে এসে উটে চড়ে বসলো। আমিওকাল বিলম্ব না করে হুকুম দিলাম।পালাবার। নাচঘরে নজর পড়লো শেখের দিকে, ও উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে ওর চার বিবির মাঝখানে গায়ে গা দিয়ে। বিবিগুলোও সম্পুর্ন বিবস্ত্র। এ বদমায়েশি বূদ্ধি মোতি ছাড়া কারোর নয়। সবার গয়না তো খুলে নিয়েছেই, সঙ্গে জামাকাপড় গুলোও খুলে নিয়েছে। সকালে যখন ঘুম থেকে ওরা উঠবে। নোকর চাকরের সামনে বেইজ্জতির শেষ থাকবে না।
নদীর পাড়ের আস্তানা গুটিয়ে, ছুটে চলেছে আমার ঘোড়া আর উটের দল। রাতের ঠান্ডা মরুভূমির বুক চিরে আরও উত্তর দিকে। এই রাতেই কয়েক ক্রোশ দূরে সরে যেতে হবে। আলাউদ্দিন শেখের এক্তিয়ারের বাইরে। আমি মোতিজানের ঘোড়ায় সওয়ার। মোতি আমার দিকে মুখ করে গলা জড়িয়ে বসে। ওর ঠোঁটে একটা লম্বা চুম্বন এঁকে দিয়ে বললাম, দুষ্টু বুদ্ধি তো মাথায় ভালোই আছে দেখছি! মরুভূমির আকাশে তখন নরম চাঁদ উঠে , আমাদের আলো দিয়ে পথ দেখাচ্ছে।
চলবে....
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now