বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আমার সাইন্টিস মামা (১৪)

"ছোটদের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X পরের দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রওনা দিয়ে দুপুর বেলা আমরা আমাদের জায়গায় পৌঁছে গেলাম। প্রথমে পাকা রাস্তা, তারপর ইটের রাস্তা তারপর কাঁচা রাস্তা, তারপর কোনো রাস্তাই নাই। সেই খানাখন্দ জঙ্গলের মাঝে মামা ঘটর ঘটর করে তার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত একটা জংলা জায়গায় মামা তার মাইক্রোবাস থামিয়ে বলল, “আগামী কয়েকদিন এইটা আমাদের আস্তানা।” মামা মাইক্রোবাস থেকে নেমে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল, “জায়গাটা কী সুন্দর দেখেছিস?” এটা হচ্ছে বড় মানুষদের সমস্যা। দুই চারটা গাছপালা কিংবা একটা নদী কিংবা কয়েকটা গরু ছাগল দেখলেই তারা আহা উঁহু করতে থাকে, বলতে থাকে, কী সুন্দর! কী সুন্দর! মামাকে খুশি করার জন্য আমিও বললাম, “হ্যাঁ মামা, খুব সুন্দর জায়গা।” “এখানে নদী আছে, হাওড় আছে, জঙ্গল আছে এবং পাহাড় আছে। একসাথে কখনো এতোগুলো জিনিস পাওয়া যায় না।” আমি মনে মনে বললাম, “নিশ্চয়ই মশাও আছে এবং জোকও আছে। জোরে জোরে বললাম, “এখন আমরা কী করব মামা?” “প্রথমে লাঞ্চ করব তারপর কাজ শুরু করে দেব।” ঠিক কী কারণ জানা নাই মামার সাথে রওনা দেওয়ার পর থেকে আমার খিদে বেড়ে গেছে। কী খাওয়া হবে সেটা নিয়ে এখন আমার অনেক আগ্রহ। জিজ্ঞেস করলাম, “কী লাঞ্চ করব মামা?” “তোর মা কিছু রান্না করে দিয়েছিল। সেগুলো নিশ্চয়ই পচে গিয়েছে।” “তাহলে?”  “পাউরুটি আছে।” আমি শুকনো মুখে বললাম, “আর?” “আর আরো পাউরুটি।” আমার মুখ দেখে মনে হলো মামার একটু মায়া হলো, বলল, “সাথে একটা ডিম সিদ্ধ করে নিতে পারিস।” “ডিম?” “হ্যাঁ।” “কীভাবে সিদ্ধ করব?” “মাইক্রোওয়েভ ওভেনে।”  মামা কোথা থেকে একটা পাউরুটির প্যাকেট বের করে সেখান থেকে এক স্লাইস রুটি নিয়ে মহানন্দে চাবাতে চাবাতে তার যন্ত্রপাতি টানাটানি করতে লাগল। আমিও এক স্লাইস রুটি চাবানোর চেষ্টা করলাম, চিবিয়ে নরম করার পরও সেটা গলা দিয়ে নামতে চায় না। কারণটা কী কে জানে? মামা কাজ করতে করতে কোথা থেকে জানি একটা ডিম বের করে দিল। আমি সেটা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ঢুকিয়ে ওভেনটা চালু করে দিলাম। মামা কেমন জানি মুচকি হাসি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে এক দুই তিন করে গুণতে শুরু করল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী গুণছ মামা?” “দেখি কতোক্ষণ গুণতে হয়।”  “কতোক্ষণ কী গুণতে হয়?”  “তুই নিজেই দেখবি।” পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত গুণার পর মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভিতর বোমা ফাটার মতো একটা প্রচণ্ড শব্দ হলো। মামা গোণা বন্ধ করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দরজা খুলে বলল, “এই যে তোর সিদ্ধ ডিম। পুরা মাইক্রোওয়েভে লেপটে গেছে। খিমচে খিমচে খেয়ে নে।” তারপর আনন্দে হা হা করে হাসতে লাগল। আমি বললাম, “তুমি জানতে ডিমটা বাস্ট করবে?”  “না জানার কী আছে? সবাই জানে।” “তাহলে আমাকে না করলে না কেন?” “না করলে কী এই মজাটা হতো?” মামা আমাকে এক টুকরা কাপড় দিয়ে বলল, “নে ওভেনটা পরিষ্কার কর। তা না হলে পচা গন্ধ বের হবে।” আমাকে ঘষে ঘষে পুরো ওভেনটা পরিষ্কার করতে হলো। মামা তখন আরেকটা ডিম দিয়ে বলল, “নে, এইটা ঠিক করে সিদ্ধ কর।” “ঠিক করে কীভাবে সিদ্ধ করব?” “ভেঙে একটা পিরিচে রাখ, কুসুমটা গেলে দে। ইচ্ছা হলে একটা কাপের পানিতে ডিমটা ভেঙে কুসুমটা গেলে দিতে পারিস। যেভাবে ইচ্ছা।” আমি একটা কাপে পানি রেখে ডিমটা ভেঙে সেখানে দিলাম, তারপর ভয়ে ভয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেন চালু করলাম। এবারে ওভেনের ভেতর বিকট কোনো শব্দ হলো না। এক মিনিট পরে ওভেন খুলে দেখলাম কাপের ভিতর একটা এবড়োথেবড়ো সিদ্ধ ডিম। দেখে মনে হয় অক্টোপাসের বাচ্চা। দেখতে বিদঘুঁটে হলেও ডিমটা খেতে ঠিক সিদ্ধ ডিমের মতো! আমি শুকনা রুটি আর বিদঘুঁটে সিদ্ধ ডিম খেয়ে কোনোমতে পেট ভরিয়ে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মামা, আমি এখন কিছু করব?” “না। তোর এখন কিছু করতে হবে না। যখন করতে হয় বলব।”  “তাহলে কী করব?”  “জায়গাটা ঘুরে দেখতে পারিস। হারিয়ে যাবি না তো?”  “না মামা। এই জঙ্গলে বাঘ ভালুক আছে?” “থাকার কথা না। থাকলেও তোকে খাবে না। তোর ভয় নাই।” “আমাকে খাবে না কেন মামা?”  “তুই এতো রোগা পটকা। তোকে খেয়ে পোষাবে না।” আমি তখন আমার পিঠে ব্যাকপেকটা ঝুলিয়ে ঘুরতে বের হলাম। ব্যাকপেকের ভিতর রাখলাম কিছু জামা কাপড়, একটা গল্প বই, কাগজ কলম আর অস্ত্র হিসেবে একটা পেন্সিল কাটার চাকু। একটু হাঁটতেই আমি জংলা জায়গাটা থেকে বের হয়ে এলাম। সামনে উঁচু নিচু মাঠ, অনেক দূরে পানি চিক চিক করছে। সূর্যটা বেশ মাথার উপর, রোদটা ভালোই লাগছে। আমি আশপাশে দেখতে দেখতে পানির দিকে এগুতে লাগলাম। চারপাশে নির্জন। এর আগে আমি এরকম নির্জন জায়গা খুব বেশি দেখি নাই। নির্জন জায়গার মনে হয় এক ধরনের ভাব আছে, এখানে অন্য রকম লাগে। আমাকে কেউ দেখছে না তাই আমি যা খুশি তাই করতে পারি। ইচ্ছা করলে খালি গা হয়ে শার্টটা খুলে মাথায় বাঁধতে পারি। তাহলে রোদটাও কম লাগবে। আমি অবশ্য উল্টাপাল্টা কিছু না করে সামনের দিকে হাঁটতে থাকি। মাঝে মাঝে ঝোঁপ ঝাড় আছে। একটা ঝোঁপ থেকে মনে হলো একটা শেয়াল বের হয়ে খুব সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আরেকটা ঝোপে অদৃশ্য হয়ে গেল। একটা ছোট মতো জলা জায়গাও আছে সেখানে পৌঁছাতেই চারিদিক থেকে অনেকগুলো ব্যাঙ এক সাথে পানিতে লাফ দিল! আমি রীতিমতো চমকে উঠলাম। ব্যাঙরা যে এক সাথে লাফ দেয় আমি সেটাও জানতাম না। নানারকম পাখি দেখতে পেলাম, আমি অবশ্য কোনো পাখিকেই চিনি না। কিছু পাখি একেবারে লতাপাতার সাথে মিশে থাকে, দূর থেকে বোঝাই যায় না একেবারে কাছে গেলে ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়ে যায়। হেঁটে হেঁটে পানির কাছে পৌঁছানোর পর বুঝতে পারলাম জায়গাটা যেরকম পুরোপুরি নির্জন ভেবেছিলাম এটা সেরকম না। একটা ছোট নদী, পানিটা বেশ নিচুতে সেখানে বেশ কিছু নৌকা, একটা নৌকাতে একজন ছোটখাটো মানুষও আছে। আমি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নৌকাটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। নৌকার মাঝি নৌকা থেকে নেমে পানিতে অদৃশ্য হয়ে গেল, একটু পরে ভুস করে ভেসে উঠল, তার হাতে একটা খাঁচার মতো কী যেন। সে খাঁচাটাকে নৌকার উপর রেখে তার ভেতর থেকে চকচকে মাছ বের করে একটা ঝুপড়ির মাঝে রাখে, তারপর আবার খাঁচাটা নিয়ে পানির নিচে অদৃশ্য হয়ে যায়। বেশ অনেকক্ষণ পর সে পানি থেকে ভেসে উঠে। একজন মানুষ যে নিঃশ্বাস না নিয়ে এতক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারে আমি সেটাও জানতাম না। মানুষটা যখন আবার তার নৌকায় উঠে একটা লগি দিয়ে ঠেলে নৌকাটা সামনে আনতে থাকে তখন আমি বুঝতে পারলাম যে মানুষটা আসলে আমার বয়সী একটা ছেলে! খালি গা, একটা লুঙ্গী মালকোচা মেরে পড়েছে। মাথায় একটা লাল গামছা, প্রত্যেকবার পানি থেকে উঠে গামছা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। নির্জন জায়গায় নদীর তীরে এসে মানুষের মনে নানারকম ভাব আসে। আমার ভিতরেও একটা গভীর ভাব এসে গেল। মনে হলো আহা, এই ছেলেটা আমার বয়সী কিন্তু আমি ভালো জামা কাপড় পরে স্কুলে লেখাপড়া করি কিন্তু এই ছেলেটাকে জীবন বাঁচানোর জন্য মাছ ধরতে হয়, পানিতে ডুবতে হয়। নিশ্চয়ই স্কুলে পড়ে না– আমার মতো সুযোগ পায় না। গভীর ভাবের কারণে আমি বড় মানুষের মতো একটা বিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৪৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • TARiN
    Golpobuzz ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে
    ফারহান ভাইয়া। gjgj

  • TARiN
    Golpobuzz ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে
    ধন্যবাদ জাম ভাইয়া।

  • Farhan
    User ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে
    বইটা পড়া আছে!gj, বইমেলা থেকে কেনা হয়েছিল gj

  • ZAiM
    User ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে
    এডব্যাঞ্চার কিপ গোয়িং অন এন্ড অন , ওয়ান , টু , থ্রি , ফোর , ফাইভ , সিক্স ..... ( নেক্সট গল্প কতক্ষন পর আসবে গুনতেছি gj )