বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম। মামা দরজা খুলে নেমে প্রায় দৌড়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে গেল। কয়েক মিনিট পরে কয়েকজন মানুষ একটা ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে চলে এলো, সাথে একটা হুইল চেয়ার মাইক্রোবাসের দরজা খুলে আহত মানুষটাকে ধরাধরি করে ট্রলিতে শোয়ানো হলো। মহিলা হুইল চেয়ারে বসলেন, বাচ্চাটা তার কোলে বসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বসে রইল। এতোক্ষণ চুপচাপ ছিল এখন আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে।
একজন আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি যাবা না?”
আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, “আমার কিছু হয় নাই।”
“তোমার কাপড়ে এত রক্ত?”
“আমার রক্ত না।”
আরেকজন জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছিল?”
“আমি জানি না। এরা রাস্তার পাশে পড়েছিল আমরা তুলে হাসপাতালে এনেছি।”
মানুষটা শুনে মাথা বাঁকা করে মুখটাতে কেমন একটা ভঙ্গী করল। সেই ভঙ্গী থেকে কাজটা ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে বুঝতে পারলাম না।
কিছুক্ষণ পর মামা ছোট বাচ্চাটার হাত ধরে বের হয়ে এলো। আমার কাছে এসে বাচ্চাটাকে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “টোপন তুই লিটনকে দেখে রাখ কিছুক্ষণ। আমি ইমার্জেন্সিতে আছি।”
“কী অবস্থা মামা?”
“ভালো। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু না। এক্সরে করছে।”
“ঠিক আছে।”
মামা পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নে, তোরা কিছু খেয়ে নে।”
আমি বললাম, “আমার কাছে টাকা আছে।”
“থাকুক। রাখ তোর কাছে।”
আমি টাকাগুলো নিয়ে পকেটে রাখলাম। মামা যেভাবে এসেছিল আবার সেভাবে হাসপাতালের ভিতর ঢুকে গেল।
আমি এবারে ছেলেটার দিকে তাকালাম, একটু আগে যেরকম ভয় পেয়েছিল এখন তার আর সেরকম লাগছে না। একটু সামলে নিয়েছে। ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার নাম লিটন?”
ছেলেটা মাথা নাড়ল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কী অনেক ভয় পেয়েছিলে?”
ছেলেটা আবার মাথা নাড়ল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ব্যথা পেয়েছিলে?”
ছেলেটা মাথা নাড়ল। তারপর হঠাৎ মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল, “আমার আব্বু কী এখন মরে যাবে?”
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, “না, মোটেও না।”
“তাহলে আম্মু?”
“না, তোমার আম্মুর তো কিছুই হয়নি। কেন শুধু শুধু মরে যাবে?”
ছেলেটা গম্ভীর মুখে বলল, “মানুষ যখন মরে যায় তখন তাকে হাসপাতালে নেয়। আমার নানুকে নিয়েছিল। আমি জানি।”
আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, “না। মানুষের যখন অসুখ হয় নাহলে একসিডেন্ট হয় তখন তাকে হাসপাতালে নেয়। আমার যখন ডেঙ্গু হয়েছিল তখন আমাকে হাসপাতালে নিয়েছিল। আমি কী মরে গেছি? আমি মরি নাই। বিশ্বাস না হলে আমাকে ছুঁয়ে দেখ।”
লিটনের কী মনে হলো কে জানে। সে সত্যি আমাকে ছুঁয়ে দেখল। তারপর মাথা নাড়ল। আমি বললাম, “তোমার খিদে পেয়েছে? কী খাবে বল।”
“আমি কিছু খাব না।”
“কিন্তু আমি তো খাব। তুমিও খাবে আমার সাথে।”
“তুমি কী খাবে?”
“দেখি কী পাওয়া যায়। আস আমার সাথে।”
আমি লিটনের হাত ধরে নিয়ে গেলাম, একটা দোকান থেকে একটা বিস্কুটের প্যাকেট, দুইটা চিপসের প্যাকেট আর দুইটা কোল্ড ড্রিংকের বোতল কিনে আমরা আবার হাসপাতালের সামনে ফিরে এলাম। তারপর হাসপাতালের বারান্দায় বসে খেতে লাগলাম।
খেতে খেতে লিটন হঠাৎ করে বলল, “ভুম করে শব্দ হয়েছিল।”
“কখন ভুম করে শব্দ হয়েছিল?”
“যখন একসিডেন্ট হয়েছিল।”
“তখন তুমি কী করেছিলে?”
“আমি ভেবেছি আমরা সবাই মরে গেছি।”
“মরে গেছ?”
“হ্যাঁ। সবাই মরে গেছি।”
“তারপর?”
“তারপর ভেবেছি শুধু আব্বু আর আম্মু মরে গেছে।”
“আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, “আসলে কেউ মরে নাই।”
লিটন কিছু বলল না। চুক চুক করে কোল্ড ড্রিংক খেতে থাকল। একটু পর জিজ্ঞেস করল, “এখন আব্বু আর আম্মুকে কী করবে?”
“মাথায়, পায়ে মনে হয় ব্যান্ডেজ করে দেবে?”
“কিন্তু তোমার মামা যে বলেছে এক্সরে করবে?”
“এক্সরে তো ছবি তোলা। শরীরের ভিতরের ছবি তোলা। এক্সরে করে দেখবে শরীরের ভেতরে কিছু হয়েছে কী না।”
লিটন বলল, “ও।” আবার কিছুক্ষণ চুক চুক করে কোল্ড ড্রিংস খেয়ে জিজ্ঞেস করল, “তোমার মামা কি ডাক্তার?”
“না। আমার মামা হচ্ছে ডক্টর।”
“ডক্টর?”
“হ্যাঁ।”
“ডাক্তার আর ডক্টরে পার্থক্য কী?”
“ডাক্তার হচ্ছে যে চিকিৎসা করে। আর ডক্টর হচ্ছে যে সায়েন্টিস্ট।”
“সায়েন্টিস্ট? ডক্টর মানে সায়েন্টিস্ট?”
আমি ঠিক করে জানি না শুধু সায়েন্টিস্ট হলেই ডক্টর হয় না কি অন্যরাও ডক্টর হতে পারে কি না। তাই আলোচনা ঘোরানোর চেষ্টা করলাম। বললাম, “আমার মামা সায়েন্টিস্ট।”
“সত্যিকারের সায়েন্টিস্ট?”
“হ্যাঁ সত্যিকারের সায়েন্টিস্ট।”
“সত্যিকারের সায়েন্টিস্টরা কী করে?”
“যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করে।”
“তোমার মামার অনেক যন্ত্রপাতি আছে?”
“হ্যাঁ। দেখতে চাও?”
লিটন ভুরু কুচকে তাকাল। বলল, “হ্যাঁ দেখতে চাই।”
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...