বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মোনাজাতের শক্তি

"ইসলামিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান জাহিদ হোসাইন (জয়) (০ পয়েন্ট)

X মোনাজাতের শক্তি November 28, 2017 ফাতেমা জাহান লুবনা এমন দুরন্ত ডানপিটে একটা ছেলে যার আছে তার কি আর কাজ শেষে ফুরসত মিলে? বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা যতœ, রান্না-বান্না আর এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত সংসারে দূরে থাকা স্বামীর ফোন ধরাটাও অনেক সময় দূরূহ হয়ে দাঁড়ায়। ফোন ধরতে এলে সাধারণত চার বছরের শিশুপুত্র নবীন এসে ফোন নিয়ে দৌড় দেয়। কোন মতে তার কাছ থেকে ফোনটা উদ্ধার করা গেলেও কথা বলার সময় কান্না জুড়ে দেয়। কথা স্পষ্ট করে এখনও বলতে পারে না সে। তবু তার দুষ্টুমিতে কমতি নেই। বড় বাড়ির উঠোন জুড়ে দৌড়াদৌড়ি তো আছেই ঘরে এলেই বিছানার চাদর, কাপড়-চোপড়, বই পত্র, রান্নার সরঞ্জাম এলোমেলো করাটা তার প্রিয় কাজ। এক বছরের নবীন তার তুলনায় অনেক শান্ত। এক জায়গায় বসিয়ে দিলে সেখানে বসেই খেলনা নিয়ে খেলতে থাকে। দুইজনেই একই রকম দুষ্টু হলে হাজেরার অবস্থা যে কতটা মন্দ হত তা বিধাতাই উত্তম জানেন। তবু যত দুষ্টুমিই করুক না কেন হাজেরা তাকে জোরে ধমক বা মার দিতে পারে না। জন্মের পর এক কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া এই ছোট্ট সোনামনির শত দুষ্টুমিই সে সহ্য করে যায়। সেই দিনের কথা স্মৃতির পাতা থেকে সে কিছুতেই সরাতে পারেনি। প্রায়ই মনের মাঝে জেগে ওঠে আর স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার চক্ষু শীতল করে জল নেমে আসে। আর নিজের প্রতিজ্ঞার কথাটা স্মরণে চলে আসে। তখনই সে ভীষণ চিন্তান্বিত হয়ে যায়, কি করবে সে ? সে কি পারবে স্রষ্টাকে দেওয়া তার ওয়াদা পূরণ করতে? নাকি সে হেরে যাবে সেভাবে যেভাবে সে হেরে গেছে জীবনের অনেক অর্জন থেকে? সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নবীন যখন জন্মগ্রহণ করে তার কয়েক ঘণ্টা পরে হাজেরার জ্ঞান ফিরে এলে তাকে দেওয়া হয় তার বুকের উপরে। চাঁদের টুকরোর মতোই শিশু নবীনের চেহারা তাকে আনন্দিত করে আর বক্ষকে শীতল করে দেয়। স্বামী তার শিউরেই বসা ছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। রাতের গভীরতা, সিজারিয়ান অপারেশনের যন্ত্রণা আর ঘুমের ঔষধের প্রতিক্রিয়া সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজেরা ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরের ক্ষীণ আলোয় যখন একজন নার্স এসে তার পাশে শুইয়ে দিয়ে যায় তখন হাজেরা তার পুত্র সন্তানের কানের কাছে মৃদু শব্দে আজান শুনায়। বাংলাদেশে থাকলে হয়তোবা এই কাজটি তার স্বামীই করত। তবে তখন সে ছিল তার স্বামীর কর্মস্থল সুইজারল্যান্ডে। পরবর্তীতে একমেয়ে হওয়ার পরে সে চলে আসে নিজের দেশের মাটিতে। যাহোক ইউরোপের নিয়ম অনুযায়ী শিশু জন্মগ্রহণের পর তার পুরো শরীর চেকআপ করা হয়। নবীনের বেলাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিছুক্ষণ পরে হাজেরার কাছ থেকে নিয়ে নবীনের পুরো শরীর চেকআপ করে তারা। এরপর ডাক্তার নবীনের বাবা মাসুদ সাহেবকে ডেকে জানালেন তার ছেলের হার্টে একটি সমস্যা আছে। তাকে যতদূর সম্ভব তাডাতাড়ি অপারেশন করতে হবে। তা নাহলে পরবর্তীতে জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে। রাতে জন্মগ্রহণ করা শিশুকে পরেরদিন দুপুর বারোটার দিকে তারা পাঠিয়ে দিল অন্য এক শহরের হাসপাতালে যেখানে হার্টের অপারেশনের জন্য দেশ-বিদেশের নামী ডাক্তাররা ছিলেন। সাথে গেল হাজেরার স্বামী আর হাজেরা তখনও অসুস্থ থাকায় যেতে পারেনি। এরপর থেকে প্রতিদিন মাসুদ সাহেব সকাল বেলায় তার স্ত্রীর সাথে দেখা করে আবার ছেলেকে দেখতে হাসপাতালে রওয়ানা হতেন। সেখান থেকে ফিরে আবার কাজে যোগ দিতেন। এভাবে টানা পাঁচ দিন অতিবাহিত হয় আর হাজেরাও কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। তবু একদিকে অপারেশনের স্থানে ব্যথা আবার অন্যদিকে ছেলের অসুস্থতার খবরে কান্নাকাটি করে তার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই সে তার স্বামীকে অনুরোধ করে নবীন যে হাসপাতালে ভর্তি আছে সেখানে নিয়ে যেতে। স্বামী-স্ত্রী একত্রে রওয়ানা দেয় সেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। সেখানে থেকে যায় হাজেরা কয়েকদিনের জন্য। জন্মের বারো দিনের দিন নবীনের অপারেশনের ডেট ধার্য হয়। ভোর বেলাতেই নবীনকে নার্সরা গোসল করিয়ে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করায়। এরপর নবীনকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় আর যাওয়ার আগে হাজেরার কোলে দেয়। দু’চোখ তার ঝাপসা হয়ে আসে জলে। শিশুপুত্রের গালে আর কপালে অনেকগুলো চুমু দিয়ে তুলে দেয় তার স্বামীর কোলে। এরপর সেও তাকে বেশ কয়েকবার চুমু দিয়ে জল ছলছল চোখে নার্সদের হাতে সমর্পণ করে। টানা চার – পাঁচ ঘণ্টা তারা ওয়েটিং রুমে বসে থাকে আর মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে থাকে। অপারেশন শেষে নবীনকে তারা অন্য একটি রুমে নিয়ে আসে। সেখানে আরও দুটি শিশুকেও রাখা হয়েছিল। ডাক্তার এবং নার্সরা মিলে অত্যন্ত যতেœর সাথে তাদের তদারকি করছিল। তবে তাদের মুখ সবারই অনেক মলিন ছিল। তেমন কোন কথা বলছিল না কেউ। শুধু যতটুকু ভাষা বুঝা গেল হাজেরা বুঝতে পারল তারা সবাই বড় ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছিল। এরপর বড় ডাক্তার যখন এলেন তখন তিনি হার্টের এক্সরে করে নবীনের বাবাকে তার চেম্বারে বসিয়ে বললেন, ‘আসলে আমরা যে সমস্যার কারণে হার্টের অপারেশন করেছিলাম সেটা সফল হয়নি। আবার অপারেশ করতে হবে।’ পেপারে সাইন করতে হবে শিশুর পিতামাতা উভয়কেই। নবীনের বাবা তার মা হাজেরাকে ডেকে নিয়ে এলেন ডাক্তারের চেম্বারে। বললেন, ‘শুনে যাও ডাক্তার কি বলছেন।’ ডাক্তারের কাছ থেকে কথাগুলো শুনে কিছু না বলেই বিষণœ মনে হাজেরা বের হয়ে আসে চেম্বার থেকে। দ্রুত পদে হেঁটে হাজেরার স্বামী তার সামনে এসে হাত ধরে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এভাবে চলে এলে কেন? ডাক্তার কি ভাববেন?’ আবেগের বশে হাজেরা বলে-‘আমার সুস্থ ছেলেটাকে একবার অপারেশনের পর পরই আরেকবার অপারেশন করতে চায় ওরা। আমার ছেলে কি তাহলে বাঁচবে?’ নীরব হয়ে যান মাসুদ সাহেব আর হাজেরা গুটি গুটি পদে এগিয়ে চলে সামনের দিকে। ডাক্তারের চেম্বারের পাশেই তার ছেলের কক্ষ পার হয়ে আরও সামনে এক কোনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে প্রশস্ত কাঁচের কক্ষে তার ছেলের বিছানা দেখা যায়। এমনই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাজেরা নিবিষ্ট চিত্তে আল্লাহ্র সাহায্য চাইতে থাকে আর কান্না করতে থাকে। তখনই সে মহান আল্লাহ্র কাছে কিছু প্রতিজ্ঞা করে এবং বলে, ‘হে আল্লাহ্! তুমি আকাশ জমীনের স্রষ্টা। তুমি জীবন-মৃত্যুর স্রষ্টা। তুমি মৃতকে জীবন দান করতে পার আবার জীবিতকে মৃত্যু দিতে পার। তুমি ইচ্ছা করলে সবকিছুই করতে পার। তুমি রহমানুর রহীম। আমার সন্তানকে তুমি তোমার কুদরতে সুস্থ করে দাও আল্লাহ্। বিনা অপারেশনে তার সমস্যা দূর করে দাও। তুমি তাকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখলে আমি ইনশাআল্লাহ্ তাকে কোরআনের হাফেজ বানাব। আর আমিও পৃথিবীর রং-রসের দিকে না তাকিয়ে ইসলামের নির্দেশিত পথে চলার চেষ্টা করব। আমীন।’ এভাবে কিছুক্ষণ মোনাজাত করার পর হঠাৎ করে নবীনের রুমের ভিতরে ডাক্তার এবং নার্সদের মৃদু কলরব শোনা গেল আর তাদের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা হাজেরার দৃষ্টি গোচর হল। তার স্বামী দৌড়ে এসে তার কাছে বললেন, ‘নবীনের সমস্যা ঠিক হয়ে গেছে। এদিকে এসো।’ সাথে সাথে হাজেরা সেজদায় পড়ে মহান আল্লাহ্র কৃতজ্ঞতা স্বীকার করল। রুমে যাওয়ার পর শুনতে পায় ডাক্তার এবং নার্সরা তাদের ভাষায় বলাবলি করছেন, ‘এটা সৃষ্টিকর্তার কাজ ! এটা তো ভীষণ অলৌকিক ব্যাপার!’ সেই থেকে হাজেরা বুঝে নিয়েছে মানুষের মোনাজাত কতখানি শক্তিশালী, কতখানি অর্থবহ! মহান আল্লাহ্ মানুষের প্রতি পরম স্নেহশীল, শুধু মানুষকে চাওয়ার মতো চাইতে জানতে হয়-যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে মোনাজাতের শক্তি পার্থিব যেকোনো শক্তিকে হার মানাতে পারে, কারণ সকল কিছুর উপরেই মহান আল্লাহ শক্তিশালী। আল্লাহ্র শক্তি শুধুমাত্র পৃথিবীর সকল শক্তির উপরেই নয়; রয়েছে সমগ্র বিশ্বজগতসমূহের উপরে ইহলোক এবং পরলোকের উপরেও। মন্তব্য:আমি সংগ্রহ করছি।so (no news is absolutely good news)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩১৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ মোনাজাতের শক্তি
→ মোনাজাতের শক্তি!

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Khalid bin walid
    User ৩ বছর, ৮ মাস পুর্বে
    খুব ভালো হয়েছে

  • Sp Lucky
    User ৩ বছর, ৮ মাস পুর্বে
    অনেক ভালো লাগল gj ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য gj