বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#লাশ♦রহস্য
ইমরান খান
লাল মিয়ার নতুন বউ সমলা, ভোর রাতে বদনা
হাতে বাইরে গেল। ফিরে এল লাশ হয়ে।
‘আমি মরে গেছি, জলদি দাফন-কাফনের
ব্যবস্থা করেন‘ বলেই লাশটা লাল মিয়ার
পাশে লেই মেরে শুয়ে পড়ল। লাল মিয়া এটা-
সেটা বলে, বউয়ের কোনো সাড়া-শব্দ নেই।
সে হাত দিয়ে দেখে বউ তর পাথরের মত শক্ত।
ভয়ে লাল মিয়ার গায়ের লোম খাড়া হয়ে
গেল। সে কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে না
পেরে এক লাফে মেঝেতে পড়ে হাউমাউ
করে কান্না জুড়ে দিল।
তার চিৎকার চেচাঁমেচিতে পাড়ার লোকের
ঘুম ভেঙ্গে গেল। ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে‘
বলতে বলতে লোকজন এসে ভিড় করেছে লাল
মিয়ার ঘরের ভেতরে ও বাইরে। লাল মিয়া
প্রলাপে-বিলাপে কেঁদে-কেটে হয়রান।
খাটে তার বউয়ের লাশ।
কৌতূহলী লোকের কাছে প্রিয়তমা বউয়ের
লাশ হওয়ার কাহিনী বয়ান করতে করতে
লালের মুখে ফেনা উঠে গেছে।
ময়মুরুব্বীরা লাল মিয়ার বাড়ির বাইরের
উঠোনে বসে মেলা সময় ধরে শলা-পরামর্শ
করলেন। আর দেরি করা ঠিক হবে না। সিদ্ধান্ত
হলো, লাশ দ্রুত কবর দেয়ার ব্যবস্থা করতে
হবে। দা, কোদাল, বাঁশ, তুস, খেজুর পাতা,
কলাপাতা, চাটাই ইত্যাদি নিয়ে গোরস্থানে
চলে গেল কয়েকজন। পুরোদমে কাজ শুরু করে
দিয়েছে তারা।
ভেতর বাড়ির উঠোনের এক কোণায় চৌকি
ফেলে এর ওপর মশারী টানা হয়েছে। তার
চারপাশে সাদা শাড়ির বেড়া। এখানে
লাশের গোসল হবে। মলিন মুখে মহিলারা
রান্না ঘরে বড় ডেকচিতে বড়ই পাতা-পানি
গরম করছে। একজন অতি বৃদ্ধামহিলা চৌকির
কোণায় সাবান আর তোয়ালে হাতে নিয়ে চুপ
করে বসে আছেন লাশ ও গরম পানির
অপেক্ষায়। দু‘জন শক্ত মহিলা ধরাধরি করে
গরম পানির ডেকচিটা দিয়ে গেল বুড়ির
সামনে। তিনি লাশের গোসল দিবেন।
একজন দায়িত্বশীল মহিলা এসে ব্ব্যস্ত হয়ে
আঙ্গুল নেড়ে বলে, ‘ভেতর বাড়িতে কোন
পুরুষবেটা থাকতে পারবে না, সবাই বাইরের
উঠানে চলে যাও। মহিলার কথায় পুরুষবেটারা
নিঃশব্দে চলে গেল বাইরের উঠোনে। মহিলা
ঘরে ঢুকে দেখে লাল মিয়া খাটের পায়ায়
শরীর হেলান দিয়ে এক ধ্যানে বসে আছে।
সে লালকে বলে, এই, তুইও বাইরে যা, লাশের
গোসল হবে, এখানে কোনো পুরুষবেটা থাকতে
পারবে না।‘ এ কথা শুনে লাল মিয়া চোখের
পানি ও নাকের পানি এক করে আগড় বাগড়
কী সব বলল তা কারো বুঝার সাধ্য নেই।
মহিলাটি কি আন্দাজ করে জানি লালকে
বলল, আইচ্ছা তুই এহানেই থাক, লাশের গোসল
দিমু। কোন ঝামেলা করবি না কইলাম, বহুত
কানছছ, এহন বইয়া জিরাইয়া ল।‘ অনুগত লাল
মিয়া ঝিম মেরে বসে রইল।
দু‘জন মহিলা লাশের ওপর মশারী টেনে
ধরেছে। আর চার শক্তমহিলা মাথার আঁচল
কোমরে বেধে লাশ বাইরে আনতে ঘরে গেল।
চারজনে চারদিক থেকে ধরাধরি করে
লাশটা উপরে তুলতেই তারা শুনতে পেলো,
‘আস্তে ধইরেন গো, ব্যথা পাই, মরছি হেই
কোনসময় আর এহন দিবেন গোছল?‘ এ কথা
শুনে মশারীধারী ও লাশধারী ছয় মহিলা
কপালে চোখ তুলে আচমকা দাঁড়িয়ে গেল।
হতভম্ব হয়ে একজন আরেক জনকে বলল, ‘ঘটনা
কী, কথা কইল কেডা!‘ কেউ জবাব দিবার
আগে পাশে বসা লাল মিয়া ভাঙ্গা গলায়
বলল, ‘কেডা আবার, লাশে কথা কইছে।‘ হায়
হায় কয় কী! ধড়াম করে মশারীসুদ্ধ লাশটা
খাটে ফেলে দিয়ে ছয় শক্ত মহিলা লাফিয়ে
গিয়ে উঠোনে আছাড় খেয়ে পড়ে বিরাট
হাঙ্গামা বাধিয়ে দিল। ছয় মহিলা চীৎকার
চেঁচামেচি করে পাড়া মাথায় তুলল। বাইরের
উঠোন ও আশপাশের বাড়ি থেকে স্রোতের
মত মানুষ এসে ভিড় করতে লাগল। ভয়ার্ত ছয়
মহিলা কাঁপতে কাঁপতে নাকে মুখে কথা বলে
ভিড় ঠেলে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে পালিয়ে গেল।
ছয় মহিলার কান্ড দেখে হতভম্ব লোকজন ভয়ে
জানবাজি দৌড়ে যে যার ঘরে গিয়ে খিল
এঁটে বসে হাঁপাতে লাগল। দৌড়ে পেছনেপড়া
মহিলা ও শিশুদের ভয়ার্ত চিৎকারে পাড়ার
কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে এলোপাতাড়ি
ছুটাছুটি করছে। কয়েকজন দৌড়ে কুলাতে না
পেরে লাফিয়ে গাছে উঠে ডালপালা
ঝাপটে ধরে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
মুহূর্তের মধ্যে লাল মিয়ার বাড়ি জনশূণ্য
বিরাণ হয়ে গেল।
লাল মিয়া উঠোনে একা অসহায়ভাবে
দাঁড়িয়ে রইল। ঘরে বউয়ের লাশ-বাইরে লাল
মিয়া। মাঝখানে অন্তহীন ভয়ঙ্কর দূরত্ব।
ঘটনা শুনে মুরুব্বিরা লোক পাঠিয়ে দিলেন।
অসংখ্য তাবিজ-কবচ, মাদুলি, শুকনো
ডালপালা ও সালু কাপড় পরিহিত ও তিন
শিস্য পরিবেষ্টিত ঝটাধারী এক ওঝা এসে
উপস্থিত। নাম তার দাংশুওঝা। সে সাপের
বিষ নামানো ও জিন-ভূত তাড়ানোর মত বহু
রহস্যবিদ্যায় পারদর্শী। তার চলন-বলন,
চেহারা-ছুরত, সাঝসজ্জা আর উদ্যোগ-
আয়োজন দেখে সবার ভেতরে আশার আলো
সঞ্চারিত হলো। সবাই বলাবলি করছে ‘জাত
ওঝা রে, এ ব্যাটাই পারবে‘।
ঘরের চার কোণা থেকে চার চিমটি মাটি
নিয়ে লাশের শিথানে দু‘ চিমটি রাখল ও
লাশের পায়ের পাতায় ঘষল দু‘ চিমটি। লাশের
শিথানে লম্বামত আঁকাবাঁকা একটা সফেদ
লাঠি অবলীলায় খাঁড়া করে রাখল দাংশু।
তার নির্দেশে তিন শিষ্য গাল ফুলিয়ে পাল
বানিয়ে শঙ্খ-শিঙ্গায় ফু দিল। দাংশুর চোখে
মুখে রহস্যের ও আত্মবিশ্বাসের ভয়ঙ্কর ছাপ
ফুটে উঠল। শঙ্খখ-শিঙ্গা বাজিয়ে তিন শিশ্য
কাহিল হয়ে গেল।
দাংশু ঝোলা থেকে বিন বের করে নিজেই ফু
দিল। বেজে উঠল বিন। বিন বাজাতে
বাজাতে ঘরের বাইরে চলে এলো দাংশু।
খানাখন্দ, গর্ত, ছিদ্র বাদ রাখল না কিছু;
সবখানেই লাগিয়ে দিল তন্ত্রমন্ত্রের ছোঁয়া।
আবার ঘরে প্রবেশ করল দাংশু। লাশটা ভালো
করে দেখে গাল ফুলিয়ে আবারো বাজাতে
শুরু করল বিন। কিছুতেই কিছু হচেছ না। তারপর
দাংশু বিন ফেলে উচু নিচু স্বরে, মাথার ঝটা
ও হাত বিতবশিপ্ত করে জিন, ভূত ও সাপের
চৌদ্দগোষ্ঠীকে গালাগালি করে ও
মন্ত্রবাণে তুড়ি মেরে লাশের মুখে ফু দিতে
গেল। অমনি ঠাশ্ করে একটা শব্দ হলো,
থাপ্পড় মারার শব্দ। লাশের থাপ্পড় খেয়ে
দাংশুওঝা গালে হাত দিয়ে একটা চিৎকারে
দরজা ভেঙ্গে লাফিয়ে উঠোনে পড়ে হাঁটু
ধরে বেশুমার হাঁপাতে লাগল। তার গালে
পাঁচটা আঙ্গুলের পষ্ট দাগ। তার মুখ থেকে
গলগল করে তাজা রক্ত বেরুচেছ। তার
চারপাশে লোকজন সভয়ে এসে ভিড় করেছে।
চারদিক থেকে অসংখ্য প্রশ্নের বান তার
দিকে। দাংশু কথা বলতে পারছে না। সে হাত
ইশারায় কি জানি বলতে চেয়েও বলতে পারল
না; কাতরাতে কাতরাতে মাটিতে ঢলে পড়ে
বেহুঁশ হয়ে গেল। অবস্থা বেগতিক দেখে তিন
শিষ্য একটা মই এনে গুরু দাংশুকে তুলে হন হন
করে এখান থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে গেল।
মারাত্মক বিপদ আঁচ করে হতভম্ব লোকজন
ছুটাছুটি করে পালিয়ে গেল।
লাল মিয়ার আশপাশে কেউ নেই। উপায়হীন
লাল মিয়া বহু কষ্টে পাশের নদীতে কলা
গাছের ভেলায় বউয়ের লাশ ভাসিয়ে দিল।
এবং দু‘হাত তুলে চোখের জলে কাতর স্বরে
বলল, ‘দয়াল তুমি সত্য, আমি সত্য, আমার বউ
সত্য; তবে তার বাঁচা-মরা নিয়ে এত রহস্য
কেন? এই আমার প্রিয় বউয়ের লাশ ভাসিয়ে
দিলাম নদীতে। তুমি তাকে আমার কাছে
আবার ফিরিয়ে দিও। যে কোনো মূল্যে
তাকে আমি ফিরত পেতে চাই দয়াল।‘
গভীর রাতে দরজায় ঠকঠক শব্দ পেল
লালমিয়া। সে হুড়মুড়িয়ে উঠে গিয়ে দরজা
খুলে দেখে, দরজার সামনে ঘোমটাপরা এক
মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।
কে! কে?!
-আমি সমলা।
-সমলা মরে গেছে।
-না, মরেনি, এই যে বেঁচে আছি।
লালমিয়া ভূত! ভূত! করে ঠুস-ঠাশ শব্দে দরজার
কপাট বন্ধ করে দিল।
পরের দিন লালমিয়া ফুরফুরে মেজাজে
পাত্রীর সন্ধানে চারদিকে লোক পাঠিয়ে
দিল।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Eihana akter mahi
User ৪ বছর, ৩ মাস পুর্বে