বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#আয়না
#শেষ_পর্ব
আপু, গত দুইরাত আমি ছুড়ি হাতেই ঘুমিয়েছিলাম। সত্যিই আমি আয়নার ভেতরও ছুড়ি নিয়েই ঢুকেছিলাম। অভিকে ভয়ও দেখিয়েছি। আমার এতো অবাক লাগছে আপু! তুমি এটা কিভাবে করলে আপু!
.
আমি রহস্যময় হাসি হাসলাম।
.........
টেস্টের রিপোর্ট টা আজই হাতে পাব। আর হাতে পেলেই বুঝতে পারব, যা সন্দেহ করছি তা ঠিক নাকি ভুল।হাসপাতালে পৌঁছে সাকিবের রুমে ঢুকার আগে আমি একজনকে দেখে চমক খেলাম। আমার সাথে তার চোখাচোখি হতেই দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করল। আমিও কিছুই বললামনা। পালাতে চায়?পালাক!
........
সাকিবের রুমে ঢুকে রিপোর্ট গুলো নিলাম। রিপোর্ট দেখে সাকিব যা শোনালো তা আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম।তবে আরেকটা ব্যাপার সাকিব শোনালো যা আমি চিন্তাই করিনি! তাই বুঝলাম,যত সহজে হিসেব টা করে ফেলেছিলাম, অংকটা ততো সহজ নয়।হঠাত একটা ব্যাপার মাথায় আসতেই দ্রুত আমার নিজের একটা ব্লাডটেস্ট করিয়ে ফেললাম।সাকিবকে বললাম আমার টেস্টের রিপোর্ট টা ১০ মিনিটের মধ্যে চাই।ইমারজেন্সি!
.......
সাকিবের রুম থেকে বের হয়েই আবার তাকে দেখলাম।আবারও পালাচ্ছিল। কিন্তু আমি এবার আর পালাতে দিলামনা। উনাকে ধরে সাকিবের চেম্বার রুমে নিয়ে এলাম। হ্যা, ইনি সেই নার্স,যিনি মিলির বাবার সেবার দায়িত্বে ছিলেন। আমাকে দেখে না পালালে হয়তো আমি বুঝতেও পারতামনা এখানেও বিশাল বড় কারসাজি আছে। নার্স মহিলাকে একটু চাপ দিতেই গড়গড় করে যা জানে সব বলে দিল।
.........
রিপোর্ট নিয়ে বাসায় গিয়েই ল্যাপটপ এ বসলাম। বড় আপুর পাঠানো ইমেইল চেক করলাম।ধীরে ধীরে হিসেব আবার মিলতে শুরু করল।
..........
অভি নামের ছেলেটা নর্থ-সাউথ ভার্সিটি তে ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এ পড়ত। আমার ক্লোজ এক ছোটভাইও সেখানে সেইম ডিপার্টমেন্ট এ পড়ায় আগে থেকেই তাকে বলে রেখেছিলাম অভির ব্যাপারে খোঁজ নিতে। ছোটোভাইটা কে কল দিয়ে দেখা করতে বললাম। আকাশকে কল করে বললাম আগামী দুদিন মিলি রাতে যেনো একা ঘুমায়।সাথে যেনো কেউ না থাকে।
.........
দুই দিন পর.......
মিলির বাসায় মিলির রুমে বসে আছি। শিমু,আকাশ,মিলি আমার সামনেই বসে আছে।শিমুকে ফ্যাকাসে লাগছে।যদিও মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে, কিন্তু মেকি হাসি তা বেশ বুঝতে পারছি। অন্যদিকে মিলি বেশ সুস্থ। মিলিকে দেখে আমার রীতিমত হিংসে হচ্ছে, আবার ভালোও লাগছে। চোখের নিচের কালি চলে গেছে।মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় এখন সে।তাতেও কি পরিমাণ সুন্দর লাগছে! কি অপূর্ব মেয়েটা! যেকোনো সুন্দরী মেয়েকে তাচ্ছিল্য করার মত রূপ আমার আছে।কিন্তু মিলি এতো মিষ্টি! অথচ আমি কিনা ভাবতাম আমার চেয়ে রূপবতী কেউ হতেই পারেনা!
.
মিলিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, "কেমন আছিস মিলি?"
আমি তুই সম্বোধন করায় মিলি একটু অবাক হল।আবার মুহূর্তেই হেসে বলল, "খুব ভালো আপু।খুব ভালো"
এবার শিমুর দিকে তাকালাম।সে তার ঠোঁটে এখনও মেকি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।বললাম--
"শিমু, শরীর মন ভালো?"
শিমু মাথা নাড়ল।
.
আমি আকাশকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আমার একটু শিমুর সাথে কথা বলা দরকার, একা।
আকাশ ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে মিলিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।আমি মিলির ঘরের দরজা লক করে দিলাম।অডিও রেকর্ডার টা চালু করে নিলাম।
........
"মিস শিমু জাহান,দি গ্রেট কেমিস্ট।
উহু,ভুল বললাম, মিসেস শিমু জাহান,দি গ্রেট কেমিস্ট। কেমিস্ট্রি তে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি নেয়া! তা ড. কি মিসেসের আগে বসাও,নাকি মিসেসের পরে? ড. মিসেস শিমু জাহান?"
.
শিমু ঘামছে।প্রচন্ড ঘামছে। ওর নার্ভ সিস্টেম ডাউন হতে শুরু করেছে।গ্রেট!
.
উবু হওয়া থেকে ২ সেকেন্ডে শিমু মেরুদন্ড সোজা করে বসল।বলল,
"ইলিয়ানা আপনি কি বলছেন,আমি বুঝতে পারছিনা"
.
আমি প্রস্তুত ছিলাম। হালকা হেসে বললাম, " তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে। আশা করি তুমি আমাকে বোকা ভাবোনা। আমার হাতে সময় কম। তুমি নিজে থেকে বলবে নাকি আমি বলব?"
.
--কি বলবেন,বলেন শুনি! কি মিসেস মিসেস শুরু করেছেন।আমার বিয়ে সামনে।এখনও হয়নি।"
.
-- অবশ্যই আপনার বিয়ে সামনে তবে সেটা ২য় বিয়ে।
.
শিমু কম্পিত গলায় বলল, " মানে কি! কি আবোল-তাবোল বলছেন?"
.
আমি মিলির রকিং চেয়ারটায় হেলান দিতে দিতে উদাস গলায় বললাম, আপনি ধরা পড়ে গেছেন ড. শিমু। এতদিন তুমি করে বলতাম,কারণ ভেবেছিলাম আপনি আমার থেকে ছোট।এখন দেখি পি.এইচডি ডিগ্রিধারী বয়স লুকায়িত বয়োজ্যেষ্ঠ আপনি! যাই হোক, বুদ্ধির খেলায় আপনি হেরে গেছেন। হয়ত মিলি আমার কাছে না আসতে চাইলে আপনিই জিতে যেতেন। পুরো একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিতেন। কিন্তু আপনার ব্যাড লাক!"
.
--কিসের মিসেস?কি বলছেন আপনি এসব?আপনি লিমিট ক্রস করছেন, সেটা বুঝতেছেন?
.
-- শুধু শুধু গলা ফাটিয়ে লাভ হবেনা শিমু। আপনার সব ইনফরমেশন এখন আমার হাতে আছে।তা মিসেস শিমু,আপনার হাজবেন্ড নীল আহমেদ কেমন আছেন?
.
আমার মুখে নীলের নাম শুনে শিমু হঠাত শান্ত হয়ে গেল। চোখে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভীড় করল।
.
আমি বললাম, "শিমু, আপনি বলবেন নাকি আমি বলব?
--(নীরবতা)
ঠিকাছে আমিই বলছি। আপনি বরং আমাকে সাহায্য করুন।
আমি বলা শুরু করলাম।
.
আপনার হাজবেন্ড নীল মরণব্যাধি ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে আছেন।তাকে বাঁচানোর জন্য আপনার অনেক টাকার প্রয়োজন।কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল আপনার হাতের সব টাকা পয়সা শেষ। তাই নীল কে বিদেশে রেখে দেশে এসে পুরোনো প্রেমিক আকাশের মন ভোলালেন।কি, ঠিক বলছি তো?
.
শিমু বিষ্মিত হয়ে বললেন, এতো কথা আপনি কিভাবে জানলেন? আমি তো আপনাকে নজরদারির ভেতরেই রেখেছিলাম।আপনি তো কানাডা যাননি! এসব কি করে জানলেন?
.
জলের গ্লাসে টুং করে টোকা দিয়ে বললাম,
"জলের মত সহজ।আমার বড় বোন কানাডা থাকেন। তার থেকেই প্রথমে জানি যে আপনি কেমিস্ট।পরে আপনাকে নিয়ে আরেকটু খোঁজ-খবর নিতেই নীল সাহেবের কথা জানা গেল। আপনি টরেন্টো ভার্সিটি থেকে পি.এইচ.ডি করেছেন এবং কাকতালীয় ভাবে আমার বোনও সেখানকারই!
-- ওহ! তা আর কি জানেন আপনি?
.
"আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা জানি। মিলির বাবার জন্য আপনার ঠিক করা নার্স সেটা আমাকে জানিয়েছে। অসুস্থ মানুষটাকে দিনদিন আরো খারাপ কন্ডিশনে নিয়ে গেছেন আপনি। আপনি তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন যাতে সমস্ত সম্পত্তি আকাশ পায় এবং পরবর্তীতে আকাশকে সরিয়ে আপনি।"
.
-- হাস্যকর কথা! নার্স বলল আর হয়ে গেলো? ডাক্তারদের নিশ্চই আমি ঠিক করিনি, তাহলে ডাক্তাররা কেন ধরতে পারছেনা উনার কি রোগ!
-- আপনি এতো কাঁচা খেলোয়াড় না শিমু।আপনি নিয়ম করে ওই নার্সকে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমান মার্কারি আর আর্সেনিক এর মিশ্রন মিলির বাবার রক্তে মিশিয়ে দিয়েছেন। আপনি একজন কেমিস্ট, তাই খুব ভালো করেও জানেন মার্কারি আর আর্সেনিক এর মিশ্রণ রক্তে মিশলেও সেটা সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়েনা।এটা এক ধরনের স্লো পয়জনিং।নার্স মহিলা সব স্বীকার করেছে।
.
শিমু একটা জঘন্য ইংলিশ গালি দিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালে আঘাত করল।গালিটা বাংলা করলে চ- বর্গীয় গালি হয়!
.
আমি বললাম,
" মিলির সাথে অভির সম্পর্কের কথা আপনাকে মিলি বলেছিল তাইনা?"
.
--হ্যা,মিলি আমার সাথে অনেক ফ্রি।
-- মিলি তো প্রেগন্যান্ট হয়েছিল তাইনা?আপনিই তো মিলিকে নিয়ে এবোরশন করিয়ে এনেছেন।
.
শিমু চোখ বড় বড় করে বলল,
"এই কথা আপনাকে মিলি বলেছে?"
-- নাহ, মিলি বলেনি।মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট বলে মিলি আগে প্রেগন্যান্ট হয়েছিল। আর বাকিটা আমিই গেজ করে নিলাম।মিলি একমাত্র আপনার সাথেই ফ্রি। আমার গেজ তো সত্যি,তাই না?
.
শিমু কঠিন দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি বললাম,
"আপনার অবশ্যই উচিত ছিল মি: আকাশ কে জানানো। অভি নামের ছেলেটার শাস্তি হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আপনি করলেন উল্টোটা! মিলিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এবোরশন করিয়ে অভির সাথে ব্রেক আপ করালেন। এতে আপনার সার্থ কি সেটাই বুঝলামনা।"
.
-- আমার কোনো স্বার্থ নেই। আমি মিলির ভালোর জন্যই করেছি।অভি ছেলেটা ভালো না।
.
আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।
--"আপনি মিলির ভালো চান! অতি হাস্যকর কথা! মিলিকে মানসিকভাবে পাগল বানাতে আপনি কি ভয়ানক ছক কেটেছেন, তা কি আমার এখনও অজানা?
.
-- অদ্ভুত তো! আমি আবার কি করলাম।মিলি কিভাবে যেনো ঘুমের ভেতর আয়নার মধ্যে চলে যেত।আমি প্রতিদিন ওর কাছে এসে ওকে সাপোর্ট দিয়েছি,ওর পাশে থেকেছি।রাতে মাথার কাছে জেগে থেকেছি।আর আপনি কিনা আমার উপর দোষ চাপাচ্ছেন!এটা ঠিক আংকেলকে আমি টাকার জন্য মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মিলিকে কেন?
-- সেটার জবাব আপনিই দেবেন শিমু। মিলিকে কেন? সব সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাই-বোন কে রাস্তায় নামাতেন।পাগল বানানোর কি দরকার ছিল?
--আমি কিচ্ছুই করিনি।
.
--আপনিই সব করেছেন।আপনি সব জানেন।আপনি একটা বাজে খুনী মাইন্ডের মহিলা।আমার কাছে শিমুর ফুল বডি মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট আছে। আপনি একজন কেমিস্ট।আপনি বেশ ভালো করে জানেন কিভাবে বিভিন্ন মেডিসিন বানানো যায়। আপনি এলপিজিডি নামক একটি নেশাদ্রব্যের সাথে আরো কয়েকটা মৌলিক ধাতু মিলিয়ে অদ্ভুত কিছু একটা তৈরী করেছেন,যেটা প্রতিনিয়ত রাতের বেলা আপনি মিলির শিরায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এই দ্রবণ শরীরে গেলে শরীর ঘুমিয়ে যায়,কিন্তু মস্তিষ্ক জেগে থাকে। এই অবস্থায় মানুষ কান দিয়ে যা শুনবে, তার অবচেতন মন মস্তিষ্ককে সেই সিগন্যাল দেবে।পুরো ব্যাপারটা তখন মস্তিষ্কের ভেতর চলতে থাকে। ভুক্তভোগী আধো ঘুম আধো জাগরণের ভেতর থাকে।
.
আমি দম নিয়ে আবার বলা শুরু করলাম।
.
মিলি বেশ সুন্দরী। রূপবতী মেয়েদের অনেকগুলো শখের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত শখ টা হল আয়না দেখা। আমার নিজেরই আয়নাপ্রীতি আছে। তবে মিলির আয়নাপ্রীতি যে কতটা প্রকট,সেটা আমি সেদিনই বুঝেছিলাম,যেদিন মিলির আয়নাঘরে ঢুকেছিলাম।আমি তো অবাকই হয়েছিলাম,পরে রহিমা জানালো মিলি এই ঘরে ঢুকে আয়না দেখে।তাই চারপাশে এতো আয়না। আপনিও মিলির আয়নার প্রতি অতিরিক্ত নেশাটা ধরতে পেরেছিলেন।তাই আপনি মিলিকে মানসিক রোগী বানানোর এর প্ল্যান টা করলেন।
প্রতিদিন রাতে আপনি মিলিকে এই মিশ্রণ টা ইঞ্জেক্ট করতেন।মিলি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেই আপনি তার কানের কাছে আয়নার ভিতরে ঢুকার কথা বলতেন। আয়নার ভিতর অভি চরিত্রকেও ঢুকিয়ে দিলেন,যাতে মেয়েটা একসেকেন্ডও শান্তি না পায়। খুব সূক্ষ্ম বিষয়গুলোয় ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন।যাতে কোনো সাইক্রিয়াটিস্ট আসল ব্যাপারটা না ধরতে পারে। যেমন আয়নার ভেতরে বাম আর ডান দিকের উলটে যাওয়ার ব্যাপারটা।মেয়েটাকে মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে দিলেন।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হল কেন? আমি যতদূর খোজ-খবর নিয়ে জেনেছি, অভি ছেলেটাকে মিলি চাইলেই বিয়ে করতে পারত। তবুও আপনি অভিকে দূরে সরিয়ে দিলেন। কিন্তু কেন? মিলির বিয়ে দিয়ে দিলে তো আপনার বেশ সুবিধাই হত।
.
শিমু প্রচন্ড রেগে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।টেবিলে রাখা গ্লাসটা সজোরে মাটিতে ফেলল।মুহূর্তেই ঘরময় কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল।আমি চাচ্ছিলাম শিমু রেগে যাক। এবার প্রচন্ড রাগে সে নিজেই বাকিটা বলবে।
.
---" হ্যা, সব আমিই করেছি। মিলিকে মানসিক রোগীও আমিই বানিয়েছি। অভির সাথে ওর সম্পর্কও ভেঙেছি। কেন জানেন? কারন অভি আমার আপন খালাত ভাই। আমার নিজের ভাইএর মত। আমি জানতাম না যে মিলির অভিই আমার ভাই অভি। মিলির পেটে বাচ্চা আসার পর যখন মিলি অভির ছবি দেখে কাঁদত, তখন আমি বুঝি এটা আমার ভাই অভি।
মিলি যদি আমারই আত্মীয়ের পরিবারে বউ হয়ে যায়,তাহলে আমার পুরো প্ল্যান টা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই অভিকে আমি মিলির সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলি।আর মিলর কাছে অভিকে নিয়ে। এভাবে ওদের সম্পর্ক ভেঙে দেই।
.
শিমু আচমকা কাঁদতে শুরু করল। অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখা কান্না।হেচকি তুলে তুলে কেঁদে কেঁদে বলল,
" আমি যা করেছি সব আমার স্বামী নীলের জন্য। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। ও আমার চোখের সামনে কষ্ট পাবে,এটা আমি বেচে থাকতে কোনোদিনও মানতে পারবনা।"
--কিন্তু তাই বলে এভাবে! নীলের যে কন্ডিশন,সে কোটি টাকা হলেও আর বেশিদিন সারভাইভ করতে পারবেন না। মিলির মা মারা গেছে মাত্র কয়েকমাস হল। একাকীত্বে ডুবে থাকা বৃদ্ধ আর অসহায় মা হারা ছেলে-মেয়েগুলোর অসহায়ত্বের প্রত্যেকটা সুযোগ আপনি নিলেন। আপনার বিবেকে বাধলোনা?
.
শিমু মাথা নিচু করে কাঁদছে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
"আপনি অনেক ট্যালেন্টেড।আফসোস, ট্যালেন্ট ঠিক জায়গায় না লাগিয়ে এসব জঘন্য কাজে লাগিয়েছেন।
যেদিন আমি মিলিকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য এ বাড়িতে এলাম,সেইদিনই আপনি বুঝেছিলেন যে মেডিকেল চেক আপ এ কিছু ধরা পড়লেও পড়তে পারে। আবার মিলিকে না যেতে দিলেও আমি সন্দেহ করব। সেজন্য আপনি সেদিন কথা বলার ফাঁকে কৌশলে আমার শরীরেও মিলিকে দেয়া সেই মেডিসিন পুশ করেছিলেন। এবং সেটার পরিমাণ টা এতো বেশি ছিল যে পরপর দুদিন আমিও দেখলাম যে,আমি আয়নার ভিতরে চলে এসেছি। যেহেতু আমি সারাদিন মিলির আয়না জগত ব্যাপারটা নিয়েই ভাবি,তাই আমার অবচেতন মন আমাকে দুইরাত একই জিনিস দেখিয়েছে। এই ব্যাপারটা মিলির রিপোর্ট দেখার পর আমার মাথায় আসে।তাই আমার ব্লাড টেস্টটাও করিয়ে নেই।আমাদের দুইজনের রক্তেই সেই মেডিসিন পাওয়া যায়। একটু ঘাটাঘাটি করতেই মেডিসিনের প্রভাব,কাজ,উপাদান সবই নেটে পেয়ে যাই। "
দুইমিনিট নীরবতা। শিমু নি:শব্দে চোখের জল ফেলছে। এই চোখের জলে উনার প্রায়শ্চিত্ত হবে কি!
.
আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম। শিমুকে বললাম,
" আমি ম্যানেজার সাহেবকে শুধু শুধুই সন্দেহ করেছিলাম!পারলে সবার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেবেন।আকাশ মিলি আপনাকে ক্ষমা করবে কিনা জানিনা, আমি হলে করতাম না। আসছি,ভালো থাকবেন।
.
দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।আকাশ আর মিলির প্রশ্ন ভরা চোখ। আমি কিছু না বলে অডিও রেকর্ডার টা আকাশের হাতে দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
........
আকাশ আর মিলি আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।শিমুকে পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করা হয়েছে। আকাশ বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা ফিরে এসে এমন বেঈমানি করবে,তা তার কল্পনাতীত ছিল।মিলিকে আজ বড্ড সুন্দর লাগছে!
মিষ্টি করে হেসে আমি বললাম,
"বাহ মিলি,তোমায় তো বেশ লাগছে। এসো ভেতরে এসো।
তা মি. আকাশ আপনার কি খবর? "
--জি ভালোই!
-- মন কি বেশি খারাপ?
আকাশ বিচিত্রভাবে হেসে জবাব দিলো, " নাহ,মন ভালোই"
এই হাসির আগা-গোড়া কষ্টে মাখা, হতাশাই মাখা।
--- মিলি, তোমার বাবার কি অবস্থা?ডাক্তাররা কি বলছেন?
মিলির মন খারাপ হয়ে গেলো।বলল, "ডাক্তাররা বলেছেন আপাতত কিছু বলা যাচ্ছেনা। বাবার অবস্থা খুব একটা ভালোনা।"
.
--থাক মন খারাপ করোনা। আকাশ, নীলের ব্যাপারে কোনো ডিসিশন নিলেন? শুনলাম নীল নাকি আপনার বন্ধু ছিলেন?
--জি,কলেজ লাইফের বন্ধু। অথচ এতদিন যোগাযোগ ছিলনা! ওর সমস্ত চিকিৎসা খরচ আমি নিয়েছি।ওখানকার ডাক্তারদের সাথে কথা হয়েছে।বেশিদিন বাচবেনা হয়ত!
--ওহ! নীলের খরচটা নিয়ে ভালোই করলেন আপনি। মানবিকতার নিদর্শন রাখলেন!
.
আরো টুকটাক কথা হল আমাদের।এক পর্যায়ে মিলি কথায় কথায় বলে উঠল, "ইলিয়ানা আপু, তুমি আমার ভাবী হলে কিন্তু বেশ হত!"
.
আমি খুবই বিব্রত হলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে। নীরবতার মধ্যেই আকাশ হালকা আওয়াজে বলল,
"এই মিলি, কি বলস এসব! চুপ কর!"
.
মিলি আকাশের কথা পাত্তাই দিলোনা।আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
" ইলিয়ানা আপু প্লিজ প্লিজ।দেখ আমাদের নামেও কত মিল! ইলি আর মিলি! আর আমার ভাইয়া কিন্তু দেখতেও খুব হ্যান্ডসাম। আর তুমি যে পরিমাণ সুন্দরী! উফফ তোমাদের যা মানাবেনা! তোমাদের বাবুটা এত্ত কিউট হবে!"
.
বাচ্চার কথা বলে মিলি নিজেই বোকা হয়ে গেল। আমি দ্রুত বসা থেকে উঠে গেলাম। আকাশও উঠে দাঁড়াল। আমি সিড়ি ভেঙে ছাদের উদ্দেশ্যে উঠতে শুরু করলাম।
..........
তুলোর মত গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ ভাসছে।শরৎ এর নীল আকাশ আমার মাথার উপর। আর আরেকজন আকাশ আমার পাশে দাঁড়িয়ে, যার চোখে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ।হেরে যাওয়া মানুষের চাহনি তার চোখে।
.........
আমি ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। নীরবতা ভেঙে আকাশ বলল,
"অনেক উপকার করলেন ইলিয়ানা। আপনার ঋণ কিভাবে শোধ করব আমি জানিনা।"
আমি মৃদু হাসলাম। বললাম,
" কি যে বলেন! রহস্য সমাধানে আমি আনন্দ পাই।এতে এত কৃতজ্ঞতার কিছু নেই। খালি ভবিষ্যৎ এ যেকোনো ডিসিশন নেয়ার আগে এই ঘটনা মনে করবেন"
.
--ইলিয়ানা
--জি
আকাশ ঘুরে আমার চোখে চোখ রেখে বললেন,
"মিলির ইচ্ছাটা কি পূরণ হওয়া সম্ভব? ব্যাপারটা এমন না যে আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে এইটুকু বুঝতে পারছি, আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব। আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে ইলি?
আমি চোখ সরিয়ে উপরের নীল আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশকে বললাম,
" ভালোবাসা জিনিসটা আমার সাথে যায়না। কাউকে ভালোবাসা মানে নিজ জগতকে সংকুচিত করা। আমি তা পারবনা! ভালোবেসে নিজ জগত গুটিয়ে নিতে আমি নারাজ। আমার জগত হবে বিশাল! ঠিক আয়না জগতের মত।
#সমাপ্ত
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now