বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#আয়না
#পর্ব_২য়
কয়েক সেকেন্ড রুমে পিন পতন নীরবতা। হুট করে মিলি বলল,
"বাদ দাও, তুমি বিশ্বাস করবেনা আপু,তাই আমি বলবনা। ভাইয়া কে ডাক। আজ উঠি" -- বলেই সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল।
.
আমি ওকে বসালাম।বললাম,
"তুমি বল, আমি বিশ্বাস করব"
.
কয়েকসেকেন্ড ভেবে মিলি বলল,
"আপু আমি আয়নার ভেতর ঢুকতে পারি "
.
--বুঝলাম না,কোথায় ঢুকতে পার?
--আয়নার ভেতরে আপু। আয়না। মিরর।
.......
আমার প্রচন্ড হাসি পেল।কোনোরকম হাসি চেপে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললাম,
.
-- তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি বলছো এগুলো?
.
মিলি করুণ গলায় বলল, "আমি আগেই জানতাম,তুমি বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু বিশ্বাস কর আপু,আমি সত্যি বলছি।আমি আয়নার ভিতর ঢুকতে পারি। আমি ঢুকতে চাইনা আপু, কিন্তু আমি একটু ঘুমালেই হঠাত কি যেনো হয়ে যায়,আর আমি আয়নার ভিতরে চলে যাই।সেখান থেকে আমি বাইরের সব দেখতে পাই।কিন্তু আমি ডাকলে কেউ শোনেনা।আমার খুব ভয় লাগে আপু,খুব ভয় লাগে।আমি ভয়ে ঘুমুতে যাইনা।আয়নার ভেতরটা খুব ঠান্ডা।"
.
বলেই মিলি কান্না শুরু করল।
আমি মিলির দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললাম,
.
"কান্না করোনা।আমি বিশ্বাস করলাম তোমার কথা। এবার আমি যা যা প্রশ্ন করি তার ঠিক ঠিক উত্তর দিবে।ঠিকাছে? নাও পানি খাও আর কান্না থামিয়ে আমার কথা শোনো।
.
তুমি কি নিশ্চিত তুমি আয়নার ভেতর প্রবেশ কর?"
.
মিলি উপর নিচ মাথা নাড়াল।
.
-- আয়নার ভিতরে তোমার সাথে আর কে কে থাকে?
.
-- কেউ থাকেনা।আমি একাই থাকি।এখানে আমার রুম,আমাদের বাড়ি, রাস্তা সবকিছু যেমন, আয়নার ভেতরেও তেমন।শুধু দিকগুলো উলটা।
.
-- উলটা মানে বুঝলামনা।বাড়িঘর উলটা?
.
--না আপু, মনে কর আমার রুমের দরজা দিয়ে বের হয়ে বাম দিকে ভাইয়ার রুম।কিন্তু আয়নার ভেতর সেটা ডানদিকে।আবার আমার বাসার ছাদের ডানদিকে গোলাপ গাছ।কিন্তু আয়নার ভেতর সেটা বামদিকে।
.
--আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। এবার আমাকে বলতো,প্রথম কবে তোমার মনে হয়েছে তুমি আয়নার ভেতর চলে গিয়েছ?
.
-- আপু এক সপ্তাহ আগে।
.
--ব্যাপারটা একটু ডিটেইলসে বলোতো।আর তুমি কি নিশ্চিত আয়নার ভেতর তুমি একাই থাক? আমার কিন্তু সেটা মনে হচ্ছেনা।
.
মিলি বার দুয়েক কেঁপে কেঁপে উঠল। তারপর চুপ মেরে গেল।বুঝলাম বলতে চাচ্ছেনা। তাই আমি জোর করলামনা।এতোটা যখন বলেছে, বাকিটাও বলবে।শুধু সময়ের ব্যাপার। তাই আমি মিলিকে বললাম,
.
" মিলি তোমার যদি এখন বলতে সমস্যা হয় তাহলে একটু বিশ্রাম নাও।একটু পরে নাহয় বলো।
মিলি বলল, "আপু ভাইয়াকে ডেকে দাও একটু প্লিজ"
.....
--মি. আকাশ, আপনি একটু এই ঘরে আসুন।
.
আকাশ এগিয়ে এলেন।তার হাতে "দি উইচ উইমেন" বইটি দেখতে পাচ্ছি। বোধহয় পড়ছিলেন।
মিলি উঠে দাঁড়াল।
.
-- আপু,আজ আসি। আমার ভালো লাগছেনা।ভাইয়া আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম,তুই আয়।
.
মিলি তাড়াহুড়া করে দরজা অবধি যেতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেল।সাথে সাথে আমি গিয়ে ধরে ফেললাম।মিলি বলল, "ইটস ওকে আপু।আমি ঠিক আছি"
আকাশও মিলিকে ধরল। আকাশ বললেন,
"আমি ওকে গাড়িতে দিয়ে আসছি।একটু অপেক্ষা করুন দয়া করে মিস ইলিয়ানা।"
.
--শিওর। আপনি ওকে দিয়ে আসুন।
......
১০ মিনিট হয়ে গেল আকাশ ফিরে এলেননা। বুঝলামনা, কিছু না বলে চলে গেল! হঠাত ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল।আননোন নাম্বার থেকে বার্তা এসেছে। মেসেজটা খুলে পড়লাম।
.
"দুইমিনিট কথা বলা দরকার।ফোন দেয়া যাবে কি?
---সৈয়দ আকাশ "
.
বুঝলাম আকাশ উনার নাম্বার থেকে মেসেজ পাঠিয়েছেন।আমি নাম্বারটায় কল দিলাম।একবার রিং হওয়ার পর অপরপাশ থেকে কেটে গেল। আকাশ কলব্যাক করলেন। আমি ফোন রিসিভ করতেই উনি জানালেন মিলির শরীর বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছিল।তাই আর আসতে পারেননি আমার কাছে। আমি যেন কিছু মনে না করি। আমিও বললাম সমস্যা নেই।
.
আকাশের নাম্বারটা সেভ করে নিলাম।
.......
অফিসটাইম আজ ১২ টায়। দ্রুত তৈরী হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।সারাদিন অফিস করতে করতে আর বসের ঘ্যানঘ্যান শুনতে শুনতে মাথা থেকে মিলির ব্যাপারটা বেরিয়ে গেল। রাতে বাসায় ফিরে শাওয়ার নিলাম। বাথরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলাম। আয়নার দিকে তাকাতেই সকালের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। কি আজগুবি কথা মা গো!! আয়নার ভিতরে নাকি চলে যায়! মেয়েটা মানসিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়েছে। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছে এমনটা আপাতত মনে হচ্ছেনা। মেয়েটার ঘোলাটে দিশেহারা চোখ অন্তত তাই ইংগিত দেয়। তবুও বলা যায়না। মিথ্যাও বলতে পারে। কম বয়সী মেয়ে,এদের মাথায় যে কি ঘোরে তা এরাই ভালো জানে। মিলির সাথে আবার কথা বলতে হবে।আকাশ ছেলেটির সাথেও কথা বলা দরকার। ফোনটা হাতে নিয়ে আকাশকে কল দেয়ার আগেই দেখলাম স্ক্রিনে আকাশের ৩ মিসড কল।গোসলে ছিলাম আর ফোনও সাইলেন্ট ছিল তাই দেখিনি। দ্রুল কলব্যাক করলাম। দুবার রিং হতেই অপর প্রান্ত থেকে আকাশের গলা।
.
---ইলিয়ানা, রাতের বেলা বিরক্ত করলাম। কিছু মনে করবেননা প্লিজ।
.
আমি হেসে ফেললাম।হাসতে হাসতেই বললাম,
-- না, কিছু মনে করিনি। তবে আপনি কি আসলেই এত বিনয়ী? নাকি কথায় কথায় "কিছু মনে করবেননা " বলাটা আপনার মুদ্রাদোষ?
অপর প্রান্তে আকাশও হেসে ফেললেন।
.
-- আরে কি যে বলেন।ঐ আর কি!! আচ্ছা আপনার কাছে কি আমরা আগামীকাল বিকালে আসতে পারি?
.
-- একটু হোল্ড করুন।শিডিউল চেক করে বলছি..... জি, আসতে পারেন।কালকে বিকালে ফ্রি আছি
.
-- ধন্যবাদ।অনেক ধন্যবাদ।
-- স্বাগতম। ঠিকাছে, শুভ রাত্রি
-- শুভ রাত্রি
......
সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা অবধি অফিস করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরলাম।বাসার সামনে এসে দেখি কালো পাজেরো দাঁড়িয়ে আছে। আমি এগুতেই আকাশ গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। মিলিও বের হল। আজও বোরকা পরা মিলি। কুশল বিনিময় করতে করতে তিনজনই বাসায় ঢুকলাম। আকাশ বললেন,
.
"মিলি আপনার সাথে কথা একা বলতে চায়।আমি পাশের রুমে যাচ্ছি।
......
মিলি বোরকা খুলল। আজকে ওকে আরো বিধ্বস্ত লাগছে।চোখের নিচে কালি জমে খুবই কালচে হয়ে আছে।চোখের পাতা ফুলে ঢোল পুরো! ব্রণের মাথা দেখা যাচ্ছে সারা মুখে। এক কথায় ভয়ানক অবস্থা। চুলও উস্কো খুস্কো।
আমি ওকে দেখে ভিতরে ভিতরে আঁতকে উঠলাম।কিন্তু বাইরে সেটা প্রকাশ করলাম না। স্বাভাবিক ভাবেই মিলিকে জিজ্ঞেস করলাম,
.
--মিলি,রাতে ঘুমাওনি? এমন অবস্থা কেন তোমার?
মিলি হতাশ গলায় বলল,
.
-- আপু আমি অনেকদিন ভালোভাবে ঘুমাইনা। ঘুমালেই আমি আয়নার ভেতর চলে যাই। আমি যেতে চাইনা আপু। আয়নার ভেতর আমার খুব কষ্ট হয়।
মিলির হতাশ গলা কাঁদো কাঁদো গলায় পরিণত হল।
.
"মাথার ভিতরে যন্ত্রনা হয় খুব।কানের ভেতরটা শা শা করে।আয়নার ভিতরে ভয় খুব আপু।"
আমি মিলির দিকে কিছুটা ঝুঁকে প্রশ্ন করলাম,
.
" কিসের ভয়? আয়নার ভেতর তো তুমি একা। তাহলে ভয় কিসের?শারীরিক যন্ত্রণা কিছুটা আছে সেটা বলতে পার।কিন্তু তোমার ভয়টা অন্য।
.
মিলি চুপ মেরে গেল।ওর চোখে আমি তীব্র ভয় দেখতে পেলাম।আমি মিলির কাঁধে হাত রাখলাম। বললাম,
--"তুমি আমার থেকে যদি সামান্য কিছুও লুকাও,তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য কিভাবে করব বল?"
.
মিলি হকচকিয়ে গেল।
আমি বললাম, "মিলি তুমি আমার থেকে কিছু লুকালে আমি তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারবোনা সরি। আমি জানি আয়নার ভেতর তুমি একা থাকনা,সাথে অন্য কেউও থাকে।এবার চট করে বলে ফেলো সেই অন্য কেউ টা কে?"
.
মিলি মাথা নিচু করে ফেলল। ওর চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে। এক মুহুর্তের মধ্যে আমি আবিষ্কার করলাম,
দুই চোখের পানি কখনও প্রথমেই একসাথে পড়েনা।আগে এক চোখের পানি পড়ে,তারপর অন্যটা।এরপর একসাথে পড়তে থাকে।
.
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।অন্য কেউ কাঁদলে খেয়াল করতে হবে!
মিলি মুখ খুলল। --
"আমার সাথে অভি থাকে। অভি কে আমার ভয় লাগে।ও কুৎসিত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসে।আমার গা ঘিনঘিন করে।"
-- অভি কে?
.
মিলি দুইসেকেন্ড সময় নিল।বোধহয় সিদ্ধান্ত নিল আমাকে বলবে কিনা।
#চলবে…………
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now