বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#আয়না
সকাল সকাল দরজায় এতো জোরে কড়াঘাত শুনে প্রচন্ডরকম বিরক্ত হলাম। ঘড়িতে সময় দেখলাম সাতটা বেজে কুড়ি মিনিট। এই সময়ে কে আসতে পারে! আমার বাড়িতে আমি একা থাকি।সচরাচর আমার এখানে আসার মত কেউ নেই।শোয়া থেকে উঠে বসলাম। চশমাটা মুছে চোখে দিলাম। দরজায় নক করার শব্দটা থেমে গেছে। চলে গেল নাকি! যাক বাবা, গেলে যাক, আমার কি! থামার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আবার নক।আমি ভাবতে বসলাম কে হতে পারে। আমাকে না জানিয়ে পরিচিত কারো আসার কথা না।সুতরাং ধরে নেয়া যাক, যে এসেছে সে আমার অপরিচিত। কলিংবেল থাকার সত্ত্বেও বারবার দরজায় আঘাত করছে। আঘাত থেমে থেমে করছেনা,ক্রমাগত করে যাচ্ছে।অস্থির স্বভাব বোঝা যাচ্ছে।মেয়ে মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। মেয়ে হলে বয়স কেমন হবে? ১৬-২২ বছরের মেয়েদের ভিতর অস্থিরতা বেশি কাজ করে।সুতরাং বলা যেতে পারে তরুনী।লুকিং গ্লাস না থাকায় কে এসেছে লুকিয়ে দেখার সুযোগ নেই।তাই সরাসরি দরজা খুলে দিলাম।আমার সমস্ত ধারনা কে ভুল প্রমাণ করে বাইরে একজন সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথম দেখাতেই "বাজিল বুকে সুখের মত ব্যাথা" টাইপ চেহারার অধিকারী এই ব্যাক্তি।এক নজরে পুরোটা দেখে নিলাম। আনুমানিক ৫ ফিট ১০ লম্বা,চওড়া কাঁধ,প্রশস্থ বুক,মেদহীন পেট,ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি,উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ। ফরমাল প্যান্ট এর সাথে ইন করে গাঢ় নীল শার্ট পরা,গলায় টাইও দেখা যাচ্ছে,হাতে দামী ঘড়ি,চোখে চারকোনা ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটি ভীড়ের ভেতর আলাদাভাবে চোখে পড়ার মত। বুঝা যাচ্ছে ধনী ঘরের ছেলে। আমি বললাম, " কাকে চাই?"
--" আপনি কি ইলিয়ানা রহমান?"
.
অচেনা ছেলের মুখে আমার নাম শুনে কিছুটা অবাক হলাম।কিন্তু মুখে বিরক্তভাব ফুটিয়ে রেখেই
আমি জবাব দিলাম,
"জি আমি ইলিয়ানা। আপনি কে?"
.
--"বাইরে দাঁড়িয়েই সব বলব?ভেতরে আসা যাবেনা?" বলেই মন ভোলানো হাসি দিল।
যেহেতু আমি অন্য দশটা মেয়ের চেয়ে সামান্য অন্যরকম, তাই তার হাসিকে প্রশ্রয় না দিয়ে কপাল কুঁচকে বললাম, "আমি এই বাসায় নতুন উঠেছি এবং একা থাকি।সুতরাং...
.
--"এই তথ্য আমি জানি মিস ইলিয়ানা। আমি একা আসিনি,জানতাম আপনি ঢুকতে দেবেননা,আমি সাথে করে আমার বোনকে নিয়ে এসেছি।ও গাড়িতে আছে।আপনি অনুমতি দিলে তাকে ডেকে আনি?
.
--"ঠিক আছে, আপনার বোনকে নিয়ে আসুন।আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসছি"
দরজাটা বন্ধ করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ব্রাশে টুথপেস্ট নেয়ার সময় মনে পড়ল পেস্ট শেষ।গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে আনার কথা ছিল,অথচ আনা হয়নি। অগত্যা কোনোরকম টিপেটুপে কিছুটা পেস্ট বের করে দাঁত ব্রাশ পর্ব দ্রুত সারলাম। মুখে পানি দিতেই দরজায় শব্দ।এই ছেলে কি বেল বাজাতে জানেনা নাকি! গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। ছেলেটির পাশে একজন আপাদমস্তক বোরকা পরিহিতা কে দেখতে পাচ্ছি। ইনিই বোধহয় ছেলেটির বোন।বড় বোন নাকি ছোট? মেয়েটি হঠাত রিনরিনে গলায় আমাকে সালাম দিল। গলার আওয়াজ অসম্ভব মিষ্টি।মনে হচ্ছে কথা বলা শেষ কিন্তু কথার ঝংকার রয়ে গেছে। আমি সালামের জবাব দিয়ে উনাদের ঘরে ঢুকতে দিলাম। ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসল দুইজনই। আমি তাদেরকে চা অফার করলাম দুইজনই রাজি হল। উনাদের কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলে চা বসাতে গেলাম। চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে ঘরে ফিরে বেশ চমকালাম। মেয়েটি বোরকা খুলে ফেলেছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে চমকানোর কারন ঠিক বুঝলামনা। আমি তো আগে থেকেই জানতাম এই ঘরে একজন মেয়ে আর ছেলে থাকবে। বোরকা খুলে ফেলবে তা হয়ত ভাবিনি।কিন্তু শুধুমাত্র বোরকা খুলে বসে আছে বলে আমার চমকানোর কথা না। কাছে এগিয়ে গিয়ে মুখোমুখি বসলাম।
--"আপনাদের ঠিক চিনলামনা"
.
ছেলেটি বলে উঠল, "আমি আকাশ, সৈয়দ আকাশ। আর ও আমার বোন মিলি। মিলির দিকে তাকালাম আমি।মাথা নিচু করে বসে আছে। আকাশ বললেন,
"আমার বোন আপনাকে কিছু বলতে চায়।ও কিছুদিন ধরেই অদ্ভুত আচরণ করছে। বাবা কিংবা আমাকে বলেনি কিছু। কাল রাতে হঠাত আমাকে ডেকে আপনার কথা বলল।তারপর আপনার ঠিকানা খুঁজে বের করে আজ আসলাম।সকাল সকাল বিরক্ত করেছি বিপদে পড়ে।দয়া করে কিছু মনে করবেননা।"
.
--"না,ঠিক আছে।এবার আমি মিলির দিকে তাকালাম।মুখটা দেখতে পাচ্ছিনা,তাই বুঝতে পারছিনা মিলি নামক মেয়েটি আমার পূর্বপরিচিত কিনা। আমি ডাকলাম,"মিলি,কেমন আছ?"
.
মিলি মুখ তুলে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিল।একটু আগে আমার চমকানোর কারণ টা এবার বুঝতে পারছি। মেয়েটার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু একটা আছে যেটা আমাকে পীড়া দিচ্ছিল। সেটা হল মেয়েটি অদ্ভুত সুন্দর কিন্তু কেমন যেন মরা মানুষের মত ফ্যাকাশে।
চোখের নিচে কালি,গালের নীল শিরা কেমন জেগে আছে।চোখের মনি কেমন ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে। অথচ যে কেউ এক দেখায় বলে দিতে পারবে,মেয়েটা অপূর্ব সুন্দরি। মেয়েটার চোখদুটি খুবই অস্বাভাবিক। চোখের দিকে তাকালে কেমন যেন ঘোর লাগে।আমি দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নিলাম।রান্নাঘরে গিয়ে চা বানানোতে মন দিলাম। চা বানানোর ফাঁকে কয়েকটা ব্যাপার বুঝার চেষ্টা করলাম।প্রথমত,মেয়েটার এই অস্বাভাবিকতা শারীরিক অসুস্থতার কারণে নাকি মানসিক? মেয়েটি আমার পূর্বপরিচিত নয়,তাহলে আমার কাছে কেন আসতে চাইল?আমাকে চিনলোই বা কি করে? আমি ঢাবি থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে জব করছি।বাড়তি কাজের মধ্যে যা করি তা টুকটাক রহস্য সমাধান।তাও পরিচিত মানুষদের।আমার শখ এটা। কিন্তু মিলি নামের মেয়েটি আমাকে কিভাবে চিনলো সেটাই ভাবছি।
......
ট্রে তে দু'কাপ চা নিয়ে রুমে আসলাম। আমি একা মানুষ তাই কখনও বেশি কিছুর প্রয়োজন হয়নি।ঘরে ২ টা মাত্র কাপ ছিল।কাপে আকাশ ও মিলি কে চা দিলাম আর আমি একটা মগেই চা নিলাম। চা এ চুমুক দিয়ে আকাশ কথা বলতে নিলে আমি বললাম, " চা টা শেষ করে কথা বলি? খাওয়ার মাঝে কথা বলা আমার অপছন্দের।দয়া করে কিছু মনে করবেন না "
.
ভেবেছিলাম আকাশ বিরক্ত হবেন।কিন্তু সেই পুরোনো হাসিটি দিয়ে বললেন,"আচ্ছা ঠিক আছে, খেয়েই না হয় বলছি "
......
"এবার বলুনতো পুরো ব্যাপারটা কি? আমার ঠিকানা কোথায় পেলেন? এই ঠিকানা তো আমি কাউকে দেইনি।"
.
আকাশ হাসলেন। বললেন, "ঠিকানা বের করা কঠিন কিছু না। আর আমি আপনাকে চিনিওনা।আমার বোন হয়ত চেনে। আপনি ওর সাথে কথা বললে ভালো হয়।"
.
মিলির দিকে তাকিয়ে দেখলাম একদৃষ্টে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ঘুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
" আপনার মা কবে মারা গিয়েছেন?"
আকাশ বেশ অবাক হলেন।
--"আমি তো আপনাকে একবারও বলিনা যে আমার মা মারা গেছেন।আপনি কি ভাবে জানলেন?"
.
আমি মৃদু হাসলাম। মি. আকাশ, আমি একজন মনোযোগী শ্রোতা। কেউ কিছু বললে খুব মনোযোগ দিয়ে শোনা আমার অভ্যাস।আপনি প্রথমেই আমাকে বলেছেন আপনার বোন মিলি আমাকে কিছু বলতে চায়।তবে সে ব্যাপারে আপনাকে কিংবা আপনাদের বাবাকে মিলি কিছুই জানাচ্ছেনা। মায়ের কথাটা আপনি তোলেননি।অথচ মেয়েরা মা কেই আগে বলে সবকিছু।সুতরাং আপনার যে মা নেই,সেটা বোঝা কঠিন কিছুই না "
.
আকাশ খুব আস্তে করে বললেন, " মা মারা গেছেন ২ মাস হতে চলল। "
.
-- ঠিক আছে আকাশ।আপনি এখন পাশের ঘরে বসুন।সেখানে বই আছে প্রচুর।আপনি বই পড়তে পারেন।আমি এখন মিলির সাথে কথা বলব।
.
--ঠিক আছে আমি পাশের রুমে যাচ্ছি। কথা শেষ হলে ডেকে পাঠাবেন প্লিজ
--অবশ্যই
........
--মিলি তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
-- জি না।
জি না বলেও মিলি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
--"বড্ড পিপাসা পাচ্ছে।একটু পানি খাব আমি"-
বলেই কেমন হাঁসফাঁস করতে লাগল।
আমি একগ্লাস পানি এনে মিলির সামনে রাখলাম। এক চুমুক খেয়েই কেমন মুখ বিকৃত করে ফেলল।তারপর গ্লাসটা রেখে দিল।
.
--কি ব্যাপার,পানি খেলেনা?
--না পিপাসা চলে গেছে!
-- আচ্ছা ঠিক আছে।চল পরিচিত হই।তুমি আমার অনেক ছোট তাই তুমি করেই বলছি।কোন ক্লাসে পড় তুমি?
.
--আমি এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব।
.
-- বেশ, খুব ভালো। তা তোমার চোখ মুখের এ অবস্থা কেন? পরীক্ষার টেনশন?
মিলির মুখটা করুণ হয়ে গেল। আমি বললাম,
" কি হয়েছে সেটা আমাকে তুমি নিশ্চয়ই বলবে।বলবে বলেই তুমি আমার কাছে এসেছ।তার আগে এটা বল তুমি আমাকে চেন কিভাবে?"
.
মিলি গ্লাসে ২য় বারের মত চুমুক দিয়ে আবারও মুখ বিকৃত করল। তারপর বলতে শুরু করল।
.
"আপু, আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের কাছে তোমার কথা শুনেছিলাম। তুমি নাকি আমার ফ্রেন্ডের বড় বোনের জীবনের একটা বড় সমস্যার মিমাংসা করেছিলে। ওই আমাকে তোমার কথা বলেছে।তুমি নাকি সব সমস্যার সমাধান দিতে পার আপু। প্লিজ আমাকে সাহায্য কর।আমি জানি তুমি ছাড়া কেউ আমাকে হেল্প করতে পারবেনা।
.
--আচ্ছা আচ্ছা।শুনি তোমার সমস্যা।আগে আমাকে বল কি হয়েছে?
মিলি কোনো কথা বললোনা। আমি মিলির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওকে লক্ষ্য করছি। মিলি ঘামছে প্রচন্ড। কয়েকসেকেন্ড রুমে পিন পতন নীরবতা। হুট করে মিলি বলল,
"বাদ দাও,তুমি বিশ্বাস করবেনা আপু,তাই আমি বলবনা। ভাইয়া কে ডাক। আজ উঠি" - বলেই সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। আমি ওকে বসালাম।বললাম,
"তুমি বল, আমি বিশ্বাস করব"
কয়েকসেকেন্ড ভেবে মিলি বলল, "আপু আমি আয়নার ভেতর ঢুকতে পারি "
.
--বুঝলাম না,কোথায় ঢুকতে পার?
--আয়নার ভেতরে আপু। আয়না। মিরর।
#চলবে……………
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now