বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

উট ও ইঁদুর

"রূপকথা " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Shakil Ahmed (০ পয়েন্ট)

X উট ও ইঁদুর একদিন একটা ইঁদুর বিস্তীর্ণ মরু এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। ইঁদুরটি ছিল বেশ তরতাজা, নাদুস নুদুস এবং তরুণ বয়সের। তারুণ্য সবসময়ই নিজের ভেতর শক্তি সামর্থ আর অপরাজেয় একটা মানসিকতার জন্ম দেয়। যেন ওই মানসিকতা দিয়ে সমগ্র পৃথিবী জয় করে ফেলতে পারবে। এই মানসিকতা যৌবনে জন্ম দেয় অহংকারের। ছোটো বড়ো কোনো কিছুই যেন তারুণ্যের কাছে সমস্যা নয়। সবকিছুই তার কাছে ছোট্ট বলে মনে করতে ইচ্ছে হয়। তরুণ ইঁদুরটিও সবসময় ভাবত বিশ্বের যতো ইঁদুর আছে সবার চেয়ে সে-ই বেশি শক্তিশালী এবং সবার চেয়ে বেশি চালাক। এরকম অহংকারে অন্ধ হয়ে পড়ার কারণে তার বিবেক ঠিকমতো কাজ করত না। তরুণ ইঁদুর মনের সুখে শিস দিয়ে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিল। যেতে যেতে রাস্তার পাশে দেখলো একটা উট সবুজ ঘাসের মাঝে বিচরণ করছে। ইঁদুর মনে মনে ভাবলো: উটটাকে চুরি করলে কেমন হয়...! ভাবতেই সে তো খুশিতে বাগবাগ..। বাহ্‌! পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ইঁদুর আজ মরু জাহাজ খ্যাত উট চুরি করবে! কেমন মজা হবে! আইডিয়াটা ভীষণ ভালো লাগল তার। ফুরফুরে একটা আনন্দের আমেজ যেন তার ভেতরে খেলে গেল। সামনে এগিয়ে গিয়ে ইঁদুর উটের লাগাম ধরে টানতে লাগল। মজার ব্যাপার হলো উট কোনোরকম প্রতিবাদ করলো না। ইঁদুর তার লাগাম ধরে টান দেওয়াতে ভীষণ কৌতুক বোধ হলো তার। মজা পেল উট। কৌতূহলও হলো তার। সেজন্যে ইঁদুরের পেছনে পেছনে যেতে শুরু করলো সেও। বিশাল উটের লাগাম পিচ্চি একটা ইঁদুরের নিয়ন্ত্রণে। ইঁদুর সামনে সামনে যাচ্ছে আর পেছনে উট যাচ্ছে জাবর কাটতে কাটতে। কী এক হাস্যকর দৃশ্য। উট ভালো করেই খেয়ে দেয়ে একেবারে পেট ভরিয়ে নিয়েছে। সেজন্যে সে ছিল নিশ্চিন্ত এবং প্রফুল্ল, তার মাঝে কোনো টেনশনই কাজ করছে না। এ কারণে ভাববারও চেষ্টা করে নি ইঁদুর কী করতে চায়, কোথায় নিয়ে যেতে চায়। ইঁদুরের হাতে উটের লাগাম। উট যাচ্ছে ইঁদুরের পিছে পিছে। এই দৃশ্য দেখে ইঁদুর মনে মনে ভাবছে, বেশ মজা তো! উট তো তার কমান্ড ফলো করছে। কমান্ডারের মতোই একটা ভাবসাব এসে গেল ইঁদুরের ভেতর। যেন হাওয়ায় ভাসতে লাগল সে। মনে মনে বলল: ‘আজ পর্যন্ত কেউ কি দেখেছে আমার মতো ক্ষুদ্রকায় একটা ইঁদুর বৃহদাকার উটের লাগাম টেনে নিয়ে যেতে? আমি আসলেই শক্তিশালী। পৃথিবীর বুকে আমিই সবচেয়ে শক্তিশালী, চালাক এবং বিচক্ষণ ইঁদুর’। হ্যাঁ, অহংকারী ক্ষুদ্র ইঁদুরের হাতে উটের লাগাম। সামনে যাচ্ছে ইঁদুর, পেছনে যাচ্ছে উট। যেন ইঁদুর হলো উটের নেতা। এভাবে যেতে যেতে হঠাৎ সামনে পড়ল বড়ো একটা খাল। খালের তীরে যেতেই ইঁদুর থমকে দাঁড়িয়ে গেল। খালের পানিতে ভীষণ ঢেউ এলোমেলো উচ্ছল। বিস্ময়ের সাথে ইঁদুর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়েই থাকলো। নিরূপায়ের মতো ভাবতে লাগল: ‘হায়! এই বিশাল ঢেউয়ের পর ঢেউ খেলানো খাল কীভাবে পাড়ি দেবো! কীভাবে খালের ওপারে যাবো এখন’! উট ইঁদুরকে থমকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে মনে মনে হাসল। ইঁদুরকে বলল: ‘কী হলো! পেরেশান মনে হচ্ছে...? বীরের মতো সামনে এগিয়ে যাও! ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি তো আমার চেয়ে অগ্রগামী, যাও সামনে এগিয়ে যাও...’! ইঁদুর উটের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল। বুঝে উঠতে পারছিল না কী জবাব দেবে। শেষ পর্যন্ত মাথাটা উপরে তুলে বলল: ‘খালে তো প্রচুর পানি, বেশ গভীর মনে হয়। ভয় পাচ্ছি ডুবে না যাই আবার’! উট হাঁসতে হাঁসতে বলল: ‘এই সামান্য পানির ছোট্ট একটা খাল পার হতে এতো ভয় পাচ্ছো’? তুমি না কতো শক্তিশালী? একটা বিশাল উটকে নিজের পেছনে পেছনে টেনে আনার মতো ক্ষমতাশালী? তাহলে ছোট্ট একটা পানির নহর পার হতে এতো ভয় পাচ্ছো কেন? চল’! ইঁদুর চুপচাপ। উট বলল: ‘ঠিক আছে, আমি বরং আগে পানিতে নেমে দেখি কতটুকু গভীর-বেশি নাকি কম’। এ বলেই উট পানিতে নেমে গেল। একটু গভীরে গিয়ে দাঁড়ানোর পর দেখা গেল মাত্র উটের হাঁটু পর্যন্ত পানি, বেশি না। উট ইঁদুরকে লক্ষ্য করে বলল: ‘দেখেছো হে প্রিয় ইঁদুর আমার! ভয়ের কোনো কিছু নেই। পানি তো মাত্র আমার হাঁটু পরিমাণ। চলে আসো, পানি পার হয়ে যাই! একদম ভয় করো না’। ইঁদুর এবার বিস্ময়ের সাথে উটের দিকে তাকিয়ে বলল: ‘তুমি কি বুঝতে পারছো কী বলছো? তোমার হাঁটুর উপরে পানি। তার মানে কী বোঝো না তুমি?’ উট আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল: না তো, কী, বুঝতে পারছি না তার মানে কী? ইঁদুর লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বলল: উটের হাঁটু আর ইঁদুরের হাঁটুর মাঝে বিস্তর ফারাক আছে...’। উট ছোট্ট ইঁদুরের কথা শুনে হাঁসল। ইঁদুর দেখলো সত্যিই সে খাল পার হতে পারবে না। বুঝতে পেরেছিলো পানি পার হবার চেষ্টা করার মানে হলো নির্ঘাত্ ডুবে মরা। তাই ইঁদুর শুরু করে দিলো অনুনয় বিনয়। উটকে অনুরোধ করল যাতে সে তাকে খালটি পার হতে সাহায্য করে। উট বেচারা খুবই দয়ালু এবং উপকারী একটা প্রাণী। সে ইঁদুরের অনুনয় বিনয় আর অনুরোধ শুনে আ..র কঠোর হতে পারল না। ইঁদুরের করুণ অবস্থা দেখে তার অন্তরটা গলে গেল। ইঁদুরকে তাই বলল: ‘ঠিকাছে! আমার পিঠে উঠে বস’! উট ইঁদুরেকে খাল পার করিয়ে দিল। তারপর তাকে কিছু উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করলো। বলল: ‘অযথা অহংকার করে লাভ নেই। যে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই সে কাজে হাত না দেওয়াই ভালো’। উটের কথাগুলো শুনে ইঁদুর লজ্জায় মাথা নীচু করে রাখলো।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৯৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কেন ইঁদুর ব্যবহার করা হয়
→ গবেষণাগারে গিনিপিগ হিসেবে 'ইঁদুর' ব্যবহারের কারণ কী?
→ ওসমানদের সাদা ইঁদুর
→ ইঁদুর ও বিড়াল
→ মঠো ইঁদুর ও শহুরে ইঁদুর
→ ইঁদুরের নাচ
→ ইঁদুরের বিয়ে
→ কাক এবং ইঁদুরের বন্ধুত্ব
→ কাক এবং ইঁদুরের বন্ধুত্ব
→ এক ইঁদুরের গল্প
→ মেঠো ইঁদুর ও শহুরে ইঁদুর
→ লোভী ইঁদুর
→ লোভী ইঁদুরের গল্প
→ ইঁদুরের মা

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now