বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ভেবেছিলাম,
আমাদের বিয়ে হবে, একটা
ভাঙাচোরা সংসার হবে, আমাদের
বয়স বাড়বে আর ঘরের টিনে জং ধরে
টিন ফুটো হয়ে যাবে, সেই ফুটো দিয়ে
রাতের জোছনা, গ্রীষ্মের রোদ আর
বর্ষার পানি ভেতরে আসবে, আমি
শার্ট-প্যান্ট ছেড়ে পাঞ্জাবী-
পাজামা পরা শুরু করব আর সে লাল
রঙের শাড়ী ভুলে পিত্তি রঙ বেছে
নেবে, যে টাকা আমার শেভ করতে
খরচ হত তা দিয়ে দুজনের পানের খরচ
চালাবো, আমার হাতের শির ভেসে
উঠবে আর তার মুখের চামড়া দলা হয়ে
যাবে, হঠাৎ-ই একদিন আমি নামমাত্র
সম্পত্তি সন্তানদের নামে লিখে দেব
আর তার কিছুদিন পরেই অসুখে পড়ে
কাশতে থাকব, সে আমার অসুখ নিয়ে
ভয়ে থাকবে আর পান ছেড়ে দেওয়ার
জন্য বকাবকি করবে, তারপর একদিন
আমার অবস্থা আরো খারাপ হলে কোন
এক সরকারি হাসপাতালের সাদা
বিছানায় ছেলেরা শুইয়ে দেবে, চোখ
বন্ধ করার আগে আমি তার মুখটাই শেষ
বারের জন্য দেখব, তখনও তার চিকন
খসখসে দুটি হাত আমার ক্যানোলা
পরানো হাতকে আঁকড়ে ধরে থাকবে,
আমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ তখন কিন্তু
তার চোখের পানি ঠিকই দেখতে
পারব। হৃদযন্ত্রটা শেষবারের জন্য ফুলে
উঠবে আর চোখের পাতা চিরকালের
জন্য বুজে যাবে। বাড়ির পাশে
আমগাছ তলায় বাশবাগানের পাশে
মাটি দেওয়া হবে আমাকে, সে রোজ
আমার কবরের কাছে এসে কান্না
করবে, অনেক ডাকবে, আমি তা দেখব,
শুনবো আর হাসবো। প্রায় ৩ মাস সে
এভাবে কবরের কাছে আসার পর হঠাৎ
এক বর্ষার দিনে গায়ের সব শক্তি
হারিয়ে ফেলবে, আমার কিনে দেওয়া
চশমাটাও সেদিন তার সাথে বেঈমানী
করবে, দেখতে পাবেনা কিছুই, কাউকে
আর চিনতেও পারবে না হয়তো। খাওয়া
দাওয়া বন্ধ করে দিবে আর আমার
স্বপ্নে বিভোর থাকবে সে, হঠাৎ
একদিন তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে
আসবে, টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার
শব্দকে হার মানিয়ে জয়ী হবে ছেলের
বউ এর মেকি কান্নার আওয়াজ। কবর
খোড়ার লোকজন ততক্ষনে আমার
কবরের পাশের আমগাছ টা কেটে
ফেলবে, কবর খুঁড়বে তার জন্য, কিছুক্ষন
পর বৃষ্টিতে ভেজা লাশটাকে
শোয়ানো হবে আমার পাশে। মেঘ
হয়তো আমাদেরকে একা ছেড়ে
দেওয়ার কথাটা গর্জে উঠে মনে
করিয়ে দেবে কবরের কাছে উপস্থিত
সবাইকে, বৃষ্টি পড়া শুরু করবে আর
লোকের ভিড় কবরের কাছ থেকে উধাও
হয়ে যাবে। ৪৭ বছর আগে এমনই এক
বর্ষাতুর দিনে দেখা হয়েছিল
আমাদের, আজ ৪৭ বছর পর আবার দেখা
হল, ভিন্নরূপে, ভিন্নভাবে। এই দেখাই
শেষ দেখা। যে শেষের শুরু আছে, শেষ
নেই। হঠাৎ-ই পাশের কবর থেকে তরুণী
কন্ঠে আওয়াজ আসবে,
.
- "তুমি কি ঘুমিয়ে পড়লে?"
.
আর আমার কবর থেকে তরুণ কন্ঠে উত্তর
যাবে,
.
- "না, ঘুমাইনি। বল"
.
সে বলবে,
.
- "ভালবাসি"
.
ঠোটে একটা লম্বা হাসি নিয়ে পাশ
ফিরে শুয়ে আমি বলব,
.
- "আমিও"
.
এভাবেই শুরু হবে আমাদের নির্জনতম
পবিত্রতম প্রেম। কল্পনায় ভেসে
যাবো বহুদূর, হয়তো সেই মাটির চার
দেওয়ালের বাইরে, হয়তো এই
বাস্তবতার ওপারে। অভিমান হলে কথা
না বলে ঘুমিয়ে পড়ব দুজনেই, শত বছর
পর অভিমান ভুলে ঘুম ভাঙিয়ে
জাগিয়ে তুলবো তাকে, আবার উড়বো
নিজেদের জগতে, ভাসবো আবেগের
স্রোতে, থাকবো প্রেমময় কবরে,
পাশাপাশি, কাছাকাছি, চিরদিন,
চিরকাল।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...