বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মাসুদ রানা *মরণখেলা* পর্ব ৫

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ১৬ মাসুল্ডানা-১৪১ বলি, আমরা ফেল করেছি।’ দ্রুত কাজ করছে রানার মাথা। অ্যাডমিরালের সইটা চিনতে পেরেছে ও, জাল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু ওকে দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে চিঠির ভাষা। অ্যাডমিরাল ওকে আদেশ করতে অভ্যস্ত নন, সম্পর্কটা সে রকম নয়, অথচ প্রথম বাকন্ধা আদেশের সুরেই লিখেছেন তিনি। যেন ওয়াশিংটনে সি.আই.এ-র অপারেশনাল চীফের সাথে রানার দেখা করাটা একান্ত জরুরী, ওখানে যেন কি একটা খবর অপেক্ষা করছে রানার জন্যে। পরের বাকন্ধা অবশঞ্জনুরোধের সুরে লেখা, কিন্তু বাহুলল্টর্জিত ঢঙে। প্রতি দ’লাইনের মাঝখানে প্রায় সময়ই কিছু অলিখিত বার্তা থাকে, সেটা পড়তে পারছে না বলেই অস্বস্তি বোধ করল রানা। ওর মন বলছে, ওয়াশিংটনে যাওয়া ল্ডকার। অথচ সি.আই.এ-র আচরণে ও বিরক্ত। ‘ঠিক আছে, যাব আমি,’ বলল রানা। ‘কিন্তু আমার সাথে মাত্র একজন আসতে পারবে তোমরাÑতুমি, রেক্স।’ ‘প−ীজ, রানা, এটা অমানবিক...,’ প্রায় হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি করল রেক্স। ‘এই দুর্যোগের মধ্যে...’ ‘ঘুমন্ত মানুষকে ট্রেন থেকে নামানো অমানবিক নয়?’ কঠোর দেখাল রানাকে। ‘ইয়েস, অর নো?’ ‘আচ্ছা শালা, অফিসে পৌঁছে নিই!’ মনে মনে বলল রেক্স। সঙ্গীল্ডে দিকে ফিরল সে, নিচু স্বরে কথা বলল কিছুক্ষণ। তারপর ঘুরে গাড়ির দিকে এগোল। ‘এয়ারপোর্ট এখান থেকে কত দূর?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘তুমি ড্রাইভ করবে।’ মরণখেলা-১ ১৭ দুই উনিশে ফেব্র“য়ারি, শনিবার, রাত তিনটে। ওয়াশিংটন, সি.আই.এ- র অপারেশনাল হেড অফিস। নিজের অফিসে পায়চারি করছেন জেনারেল স্যামুয়েল ফচ। ঠাণ্ডাকে তাঁর বড় ভয়, বোধহয় সেজন্যেই আর্কটিক জোনের অপারেশনাল চীফ বানানো হয়েছে তাঁকে। সামনে স্ফাড়িয়ে কথা বলা দায়, ভুর ভুর করে কাঁচা রসুনের গন্ধ বেরোয় মুখ থেকে। মাঝারি আকৃতির শক্ত-সমর্থ মানুষ, শিশুর সারল্য মাখা চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই বুদ্ধির প্যাঁচ কষতে এই লোকের জুড়ি মেলা ভার। হিটিং সিস্টেম চালু থাকায় অফিসের ভেতর তাপমাত্রা তিরাশি ডিগ্রী ছাড়িয়ে গেছে, ওপরের দুটো বোতাম খোলা শুধ একটা শার্ট গায়ে ঘামছেন তিনি। ‘আপনার মাসুল্ডানা এইমাত্র এয়ারপোর্টে নামল,’ জেনারেল ফচের সহকারী টমাস উড ফোনের রিসিভার নামিয়ে রেখে বলল। ‘গাড়িতে করে নিয়ে আসা হচ্ছে ওকে।’ জেনারেল ফচ থামলেন না, বরং আরও দ্রুত হলো পায়চারি, জোড়া ভুরুর মাঝখানটা কচকে আছে। আপনমনে কাঁধ ঝাঁকাল টমাস উড। ‘এত থাকতে এই বাংলাদেশী মেজরকে কেন যে ল্ডকার হলো আমাল্ডে, আমি বুঝতে অক্ষম!’ নরম কিন্তু অভিযোগের সুরে বলল সে। ‘সহজ একটা অপারেশন, আমাল্ডে ছেলেরাই করতে পারে। ইভেনকো ১৮ মাসুল্ডানা-১৪১ রুস্তভ কখন আই.আই. ফাইভে আসছে জানার সাথে সাথে আমরা একটা পে−ন পাঠাব, পে−নটা তাকে নিয়ে ফিরে আসবে...’ ‘সহজ নয়,’ টমাসকে থামিয়ে দিয়ে বললেন জেনারেল ফচ। ‘হাতির তিমি গেলার মত কঠিন। তাছাড়া, গোড়াতেই ভুল করছ তুমি। ইভেনকো রুস্তভ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, শুধু যদি মাসুল্ডানাকে পাঠানো হয় তবেই সে আসবে।’ মুখ বেজার করে টমাস বলল, ‘রাশিয়ানল্ডে এই মাসুল্ডানা প্রীতি, অসহ্য!’ ‘রুশ প্রশাসন বা কম্যুনিস্ট পার্টির হতাকর্তারা রানাকে কি চোখে দেখে, আমাকে জিজ্ঞেস কোরো না,’ মুচকি হেসে বললেন জেনারেল। ‘তবে রাশিয়া থেকে মিগ-একত্রিশ ছিনিয়ে আনার পর থেকে কিছু রুশ নাগরিক সতিদ্দর ভারি ভক্ত হয়ে পড়েছে। তাল্ডে মধ্যে ইভেনকো রুস্তভ একজন। ছিনিয়ে এনে আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে মিগটা, অর্থাৎ নিজের বিশ্বস্ততা এবং যোগ্যতা প্রমাণ করেছে রানা। অভিজ্ঞতাটা আমাল্ডে জন্যে তিক্ত নিঃসন্দেহে, কিন্তু রাশিয়ানল্ডে মধেল্ট্যাপারটা যারা জানে তারা তো ওর ভক্ত হবেই।’ ‘ইভেনকো যাই বলুক, রানাকে সে তো আর চেনে না,’ বলল টমাস। ‘আমাল্ডে একজন এজেন্টকে রানা বলে চালাতে অসুবিধে কি?’ ‘রাশিয়া থেকে এর আগে যারা পালিয়ে এসেছে তাল্ডে চেয়ে ইভেনকো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, স্বীকার করো?’ নিরীহ ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল টমাস। ‘করি।’ ‘কাজেই আমরা কোন ঝুঁকি নিতে পারি না,’ বললেন মরণখেলা-১ ১৯ জেনারেল ফচ। ‘সোভিয়েত এন.পি.সেভেনটিন* থেকে রওনা হবে সে, আমাল্ডে সবেচেয়ে কাছের রিসার্চ বেস আই.আই. ফাইভে পৌঁছুতে হবে। আই.আই. ফাইভ এই মুহূর্তে সোভিয়েত আইল্যান্ড থেকে পঁচিশ মাইল দূরে। ওখানে তিনজন প্রফেসর রয়েছে আমাল্ডে, দ্বীপটা ভেঙে যাবে তাই ফেরত আসার জনেঞ্জপেক্ষা করছে। বুঝতে কোথাও অসুবিধে হচ্ছে, টমাস?’ ‘না, স্যার...’ ‘ইভেনকো পালিয়ে আসছে, তিন প্রফেসরের কেউই তা জানে না। আমরা বলিনি, কারণ ওল্ডে কারও টপ সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেই।’ ‘আমাল্ডে হয়তো উচিত রেডিয়োতে ওল্ডেকে আভাস দেয়া যে...’ ‘মাঝে মধ্যে ভাবি, তোমার সার্টিফিকেটগুলো জাল কিনা!’ জেনারেল ফচের এটা প্রিয় একটা মন্তব্য, সুযোগ পেলেই ঝেড়ে দেন। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে টমাস উড এত বেশি অ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশন অর্জন করেছে, সবগুলোর কথা তার মনেও থাকে না। রুশ সহ ছয়টা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে টমাস। ক্রিপটোগ্রাফ এবং রেডিও-কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ সে, আমেরিকার ছয়জন সেরা ইন্টারোগেটরের মধ্যে একজন। শুধু একটা ব্যাপারে তার কোন অভিজ্ঞতা নেই, জীবনে কখনও মেরু- প্রদেশে যায়নি। বরফের রাজ্য সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। * আর্কটিকে সমস্ত ভাসমান সোভিয়েত বেসকে এন. পি. (নর্থ পোল) বলা হয়, প্রত্যেকটিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয় এন. পি.-র শেষে একটা করে সংখ্যা জুড়ে দিয়ে। অনেক সময় দেখা যায় বেস বা বেসগুলো হয়তো নর্থ পোল থেকে একশো মাইল দূরে রয়েছে, প্রতি মুহূর্তে ভেসে যাচ্ছে আরও দূরে। ২০ মাসুল্ডানা-১৪১ ‘সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেই, আভাসই বা দিই কিভাবে? পে−ন ভতি একদল লোক পাঠিয়ে èে, সে উপায়ও নেই, রাশিয়ানরা তাতে সতর্ক হয়ে যেতে পারে। ওরা যত্থিল্ডে বেস সীল করে দেয়, তখন? ইভেনকো আর বেরুতে পারবে? কাজেই আই.আই. ফাইভের পরিবেশ শান্ত আর স্বাভাবিক রাখতে হবে।’ ‘মোট কথা ইভেনকো শর্ত দিয়েছে, কাজেই কাজটা রানাকে দিয়ে না করিয়ে আমাল্ডে উপায় নেই, এই তো?’ টমাসের চোখে চোখ রেখে এদিক ওদিক মাথা নাড়লেন জেনারেল ফচ। ‘আরও কারণ আছে।’ ‘কি কারণ?’ ‘কুয়াশা।’ ‘কুয়াশা?’ ‘ধরো আই. আই. ফাইভ কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেল? ইভেনকোকে আনার জনেঞ্জামাল্ডে লোক তাহলে এখানে পৌঁছুবে কিভাবে? নিরেট পোলার প্যাকে জাহাজ চলবে না। কুয়াশার ভেতর পে−ন চালানো সম্ভব নয়। কাজেই পায়ে হেঁটে বা ¯ে−জে চড়ে যেতে হবে। রানাকে দিয়ে কাজটা করাবার পিছনে এটাও একটা কারণ।’ ‘কেন, রানা কি?’ ‘বরফের রাজেশুানাকে গ্যারান্টীড ইন্সুরেন্স বলতে পারো,’ ভারী গলায় বললেন জেনারেল ফচ। ‘সব মানষই যে-কোন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, কিন্তু তার রকম ফের আছে। আর্কটিকে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষ তাল্ডে স্বাভাবিক গুণগুলো হারিয়ে ফেলে। আমার কথাই ধরো, ঠাণ্ডাকে মরণখেলা-১ ২১ আমার বড় ভয়, আর্কটিকে গেলে জড় পদার্থ বনে যাব, ব্রেন কাজ করবে না। কিন্তু রানার বৈশিষ্ট্য হলো, আবহাওয়া আর পরিবেশ যত বিরূপ হবে ওর স্বাভাবিক গুণগুলো ততই বেশি করে ফুটবে।’ মুখ হাঁড়ি করে টমাস বলল, ‘আপনি এমন করে বলছেন যেন ও একটা সুপারম্যান...’ ‘অথচ তুমি জানো, কারও প্রশংসা করা আমার স্বভাব নয়।’ পিরিচ থেকে খোসা ছাড়ানো এক কোষ রসুন তুলে মুখে পুরলেন জেনারেল ফচ। ‘নির্জলা বাস্তব ঘটনা বর্ণনা করছি, কিছু বাড়িয়ে বলছি না। এর আগে একাধিক বার আর্কটিকে গেছে রানা, প্রমাণ করেছে...’ বসের কথা কেড়ে নিয়ে টমাস বলল, ‘প্রমাণ করেছে যে সে সি. আই.এ-র সাথে বেঈমানী করতে ওস্তাদ।’ তার চেহারা কঠোর হয়ে উঠল। ‘যাই বলুন, স্যার, জেনেশুনে ভয়ঙ্কর ঝুঁকি নিতে যাচ্ছি আমরা। এর আগেও ঠিক এ-ধরনের কাজের দায়িত্ব রানাকে দেয়া হয়েছিল, সেবার রাশিয়ান বিজ্ঞানীকে আমাল্ডে হাতে তুলে না দিয়ে যুগো¯−াভিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিল সে। এবারও যে সে...’ জেনারেল ফচ মুচকি হাসলেন। ‘বেঈমানী করার সুযোগ এবার আমরা রানাকে দিচ্ছি না, টমাস। ওর যারা প্রিয় লোকজন, তাল্ডে কয়েকজনকে আমরা জিম্মি রাখছি। এদিকে এসো, কাজটার জন্যে শুধু এক রানাকেই কেন উপযুক্ত বলে মনে করছি, ব্যাখ্যা করে বলি।’ চেয়ার ছেড়ে আর্কটিক ম্যাপের সামনে গিয়ে স্ফাড়ালেন তিনি। থমথমে চেহারা নিয়ে তাঁর পাশে চলে এল টমাস। ম্যাপের মাথার দিকে রাশিয়ান উপকূল, ডান দিকে মারমানস্ক ২২ মাসুল্ডানা-১৪১ আর লেনিনগ্রাদ। মাঝখানে স্পিটবার্জেন আর গ্রীনল্যান্ড সহ নর্থ পোল, নিচে কানাডিয়ান আর আলাস্কান উপকূল। মার্কার চিহ্নিত করছে আই. আই. ফাইভের বর্তমান পজিশন, ম্যাপের খুবই নিচের দিকে সেটা, আইসবার্গ অ্যালি-র ঠিক ওপরে গাঁথা, গ্রীনল্যান্ড আর স্পিটবার্জেনের মাঝখানে জাহাজের চিমনি আকৃতির ভাসমান বিশাল বরফ খণ্ড। ‘আই. আই. ফাইভ* এখন গ্রীনল্যান্ড উপকূলের একশো বিশ মাইল দূর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে,’ জেনারেল ফচ মৃদু গলায় বললেন। ‘আরও পঁচিশ মাইল পুবে রয়েছে রাশিয়ান বেস, এন.পি.সেভেনটিন, ওখান থেকে যাত্রা শুরু করবে ইভেনকো রুস্তভ। দুটো বেসই বিশাল দুই বরফের টুকরোর ওপর রয়েছে, টুকরো দুটো পোলার প্যাকের সাথে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলেছে আইসবার্গ অ্যালির দিকে। শেষবার নর্থ পোল থেকে ফিরে আসার পর রানা আর্কটিক রিসাচ ইনস্টিটিউটে যে রিপোট করেছিল তাতে লিখেছে, দুনিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা ওটা। ওর সাথে আমি একমত।’ ‘আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন...’ ‘গোটা এলাকাটা রানা চেনে, গেছে, এবং বেঁচেবর্তে ফিরে এসেছে,’ ধমকের সুরে বললেন জেনারেল ফচ। ‘কি বলতে চাইছি * বিশাল আকৃতির বরফ-দ্বীপগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জনেঞ্জাইস আইল্যান্ড ওয়ান, টু, থ্রী, এইভাবে উলে−খ করে আমেরিকানরা। আই. আই. ওয়ান (আইস আইল্যান্ড ওয়ান), সবচেয়ে পুরানো বরফ-দ্বীপ, উনিশশো ছেচলি−শ সালের চোদ্দই আগস্ট কানাডিয়ান আর্কটিক উপকূলের কাছাকাছি প্রথমবার একটা সুপারফোর্ট্রেসের রাডার অপারেটরের চোখে ধরা পড়ে। মরণখেলা-১


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৯১৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ মাসুদ রানা *মরণখেলা* পর্ব ৪
→ মাসুদ রানা *মরণখেলা* পর্ব ৩
→ মাসুদ রানা-*মরণখেলা* পর্ব ২

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now