বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

উপকূলে সংঘর্ষ ১০ম পর্ব

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান আর.এচ জাহেদ হাসান (০ পয়েন্ট)

X ডাক্তার নানা রকম ঔষধপত্র দিল, কিন্তু গলার ব্যথা বেড়েই চললো তাঁর। হাকীম চিকিৎসায় কোন ত্রুটি করলেন না। কিন্তু রুগীর অবস্থা তবু দিন দিন খারেপের দিকেই এগিয়ে চললো। এক সময় কথা বলাও বন্ধ হয়ে গেল তাঁর। ১১৭৪ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গলা ব্যথায় ভুগতে ভুগতে তিনি চির নিদ্রায় ঢলে পড়লেন। ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, নূরুদ্দিন জঙ্গী কঠিন গলার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ দৃঢ়তার সাথে লিখেছেন, জঙ্গীকে হাসান বিন সাবার ফেদাইন গ্রুপের লোক বিষ প্রয়োগ করেছিল। বিষ প্রয়োগ ঠিক তখন করেছিল, যখন জঙ্গী দূর্গত মানুষের পাশে গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। তখন তার খাবার পরিবেশন ও রান্নায় যে অব্যবস্থা হয়েছিল তারই সুযোগ নিয়েছিল ফেদাইন দলের গুপ্তচরেরা। তারা এমন বিষ খাওয়াতে থাকে, যে বিষের ক্রিয়া শুরু হয় আস্তে আস্তে ও অনেক পরে। ডাক্তার এ বিষের ক্রিয়া বুঝতেই পারেননি। জেনারেল মুহাম্মদ আকবর খান তাঁর ইংরেজী বই ‘গেরিলা ওয়ার’- এ নামকরা বড় বড় ঐতিহাসিকের দলিল পেশ করে এ সত্যতা যাচাই করেছেন যে, নূরুদ্দিন জঙ্গী ফেদাইনদের বিষের শিকার হয়েছিলেন। সামান্য গলা ব্যথা তার মৃত্যুর কারণ হবে, জঙ্গী হয়তো এমনটি ভাবেননি। এজন্যই তিনি কোন অসিয়ত করে যাননি। সুলতান আইয়ুবীকেও তার অসুস্থতার খবর পাঠাননি। সুলতান আইয়ুবীর কাছে তখন এ সংবাদ পৌছে, যখন জঙ্গীর দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ খবর পাওয়ার কয়েকদিন পর। দামেস্ক থেকে আইয়ুবীর এক গোয়েন্দা এসে কায়রো পৌঁছলো। আইয়ুবীর সঙ্গে দেখা করে জানালো, ‘মুসাল ও হলবের গভর্নররা নিজেদেরকে স্বাধীন শাসক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দামেস্কের আমীর ওমরাহ্, উজির নাজিররা নূরুদ্দিন জঙ্গীর পুত্র আলমালেকুছ ছালেহ, যার বয়স সবেমাত্র এগারো, তাকেই ইসলামী সাম্রাজ্যের খলিফা নিযুক্ত করেছে।’ সুলতান আইয়ুবী আলী বিন সুফিয়ানকে ডাকলেন। তাঁকে বললেন, ‘তুমি পাঁচ মাস আগে জানালে যে আক্রাতে আপনার এক গোয়েন্দা শহীদ হয়েছে, আর অপরজন গ্রেফতার হয়েছে, কেবল তাদের দলনেতা ফিরে আসতে পেরেছে, তখনই আমার মনে হয়েছিল, এই বছরটা ইসলামী জগতের জন্য হবে অমঙ্গল ও কঠিন পরীক্ষার বছর। এই পরীক্ষা দিতে হবে বিভিন্ন সেক্টরে ও বিভিন্ন ভঙ্গিতে। এখন আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। সেই পরীক্ষার এক ভয়ংকর লগ্ন আমার সামনে উপস্থিত। আমাকে এখন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নামতে হবে।’ o সুলতান আইয়ুবী তাঁর সভাসদদের বৈঠক ডাকলেন। নূরুদ্দিন জঙ্গীর অনুপস্থিতিতে ইসলামী সাম্রাজ্যে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে তার মোকাবেলা করা যায় তাই এ বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। এ সময় এক খাদেম এসে সুলতানকে জানাল, ‘দামেস্ক থেকে নূরুদ্দিন জঙ্গীর বেগম এক কাসেদ পাঠিয়েছেন। কাসেদ আপনার জন্য বেগম জঙ্গীর চিঠি নিয়ে এসেছে। সে বলছে, ‘এ চিঠি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনি তা সুলতানের কাছে পেশ করা জরুরী।’ আইয়ুবী বললেন, ‘এখুনি আমি এ সভা মুলতবী করে দিচ্ছি। দরবারীরা বের হলেই ওকে ভেতরে পাঠিয়ে দিও।’ এর কিছুক্ষণ পর। কাসেদ ভেতরে ঢুকে আদবের সাথে সালাম করে সুলতানের কাছে বেগম জঙ্গীর চিঠি পেশ করলো। চিঠিতে তিনি সুলতান আইয়ুবীকে বলে পাঠিয়েছেন, ‘সুলতান নূরুদ্দিন জঙ্গীর প্রিয়তম দোস্ত ও সাথী সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী! এখন ইসলামের সম্মান, ইজ্জত ও আবরু আপনার হাতে নির্ভর করছে। আপনি হয়তো জানেন, আমার শিশু সন্তানকে ইসলামী খেলাফতের খলিফা নিযুক্ত করা হয়েছে। সকলেই আমাকে সম্মান ও আনুগত্য দেখাতে শুরু করেছে। কারণ এখন আমি শিশু খলিফার মা। তারা মনে করছে, আমি ভাগ্যবতী মা কিন্তু আমার হৃদয়ের রক্ত অশ্রু ঝরছে। তারা আমার সন্তানকে খলিফা নিয়োগ করেনি বরং আমার বুক থেকে আমার সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে। মুসালের আমীর ও অন্যান্য আমীররা আমার শিশু সন্তানকে ঘিরে রেখেছে। আমার স্বামীর ভাতিজারাও স্বাধীন শাসক হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছে। যদি আমার সন্তানকে ঘিরে রাখা আমীরদের মাঝে ইসলামের প্রতি মহব্বত, একতা ও সহনশীলতা থাকতো তবে আমি এতটা পেরেশান হতাম না। এরা একে অপরের দুশমন হয়ে গেছে। এসব আমীরদের কারো কাছ থেকেই আমি কোন মঙ্গলের আশা করতে পারি না। যদি আপনি মনে করেন আমার সন্তানকে খুন করলে মিল্লাতের উপকার হবে, দ্বীনের তরক্কী হবে, তবে আমি নিজ হাতে আমার সন্তানকে খুন করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমীররা তাকে বলীর পাঠা বানিয়ে নিজেদের আখের গুছাতে চাচ্ছে। তার এ কোরবানী ইসলামী সালতানাত বা মীল্লাতের কোনই কাজে আসবে না। কিন্তু আমার শিশুপুত্র অসহায় ও দুর্বল। ধুরন্ধুর আমীরদের কুটিল জাল ভেদ করে বেরিয়ে আসার সাধ্য তার নেই। তাই আমি এক কঠিন পরিণামের ভয় করছি। আপনার কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, মেহেরবানী করে যত দ্রুত সম্ভব আপনি দামেস্কে চলে আসুন। সুলতান আইয়ুবী, আপনিই ভাল বুঝবেন, আপনি কিভাবে আসবেন এবং এখানে আসার পর আপনার ভূমিকা কি হবে। আমি শুধু আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই, যদি আপনি এ ব্যাপারে গুরুত্ব না দেন অথবা সময় নষ্ট করেন তবে খৃস্টানরা বায়তুল মোকাদ্দাসের ওপর তো তাদের আধিপত্য বিস্তার করেই আছে, পবিত্র কাবা শরীফেও তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আমি আপনার কাছে জানতে চাই, তবে কি লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্ত ব্যর্থ হয়ে যাবে? যারা নূরুদ্দিন জঙ্গী ও আপনার নেতৃত্বে জীবন কোরবানী দিয়েছেন তাদের সে কোরবানী কি বিফলে যাবে? আপনি হয়ত আমাকে প্রশ্ন করবেন, আমি কেন আমার সন্তানকে আমার প্রভাবে রাখতে পারছি না? আমি সে উত্তর প্রথমেই দিয়েছি। আমার সন্তানকে ওমরারা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। তার পিতার মৃত্যুর পর সে মাত্র একবার আমার কাছে আসার যুযোগ পেয়েছিল। এখন তাকে আমার সন্তান বলে মনেই হয় না। আমার ধারণা, তাকে হাশিশ সেবন করিয়ে রাখা হচ্ছে, অথবা সে ওমরাদের কাছে নজরবন্দী আছে। সে হয়তো ভুলেই গেছে, আমি তার মা! ভাই সালাহউদ্দিন, তুমি জলদি চলে এসো। ইসলামের প্রতি মহব্বত রাখে এমন হাজারো লোক এখনো দামেস্কে আছে। দামেস্কের এই লোকেরা তোমাকে স্বাগতম জানাবে। ভাই আমার! সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করো না। তুমি আমার কাসেদের কাছেই বলে দিও, তুমি কি করবে অথবা কিছুই করতে পারবে না।’ ইতি- তোমার এক হতভাগী বোন। চিঠি পড়া শেষ করে মাথা তুললেন আইয়ুবী। কাসেদকে বললেন, ‘তুমি এখনি ফিরে যাও। জঙ্গীর বিধবা স্ত্রীকে আমার সালাম দিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করে বলবে, আইয়ুবী আপনার চিঠির মর্মার্থ ও গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। মুসলিম মিল্লাতের জন্য এ বড় নাজুক সময়। এ সংকটময় মুহূর্তে ধৈর্যহারা হলে সংকট বাড়বে বৈ কমবে না। এ সংকট নিরসনে আমি আমার সাধ্যমত পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবো না। কিন্তু এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হলে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। তাঁর চিঠির প্রতিটি শব্দ আমি আমার বুকে খোদাই করে নিয়েছি। তাঁকে শুধু বলবে, তিনি যেন আমার জন্য এবং এ জাতির হেফাজতের জন্য দোয়া করতে থাকেন।’ কাসেদকে পাঠিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সুলতান আইয়ুবী পড়লেন আলী বিন সুফিয়ানকে নিয়ে। বললেন, ‘আলী, দামেস্ক, মুসাল, হলব, ইয়েমেন এবং সমস্ত ইসলামী রাজ্যগুলোতে গুপ্তচর পাঠাও। দ্রুত তদন্ত করে সেখানকার সঠিক অবস্থা জেনে আসবে তারা। পারলে তুমি নিজেই এক চক্কর দিয়ে এসো দামেস্ক থেকে।’ এটা কোন সরকারী শুভেচ্ছা স্ফর ছিল না। আলী বিন সুফিয়ান বা তার নিয়োজিত গোয়েন্দাকে সে সব এলাকায় বহুরুপী সাজতে হবে, তদন্ত করতে হবে বিচিত্র এলাকায়। প্রথমেই জানতে হবে, যে সকল শাসকরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, তারা কতটা অনড়, কতটা আবেগের বশে এ পথে পা বাড়িয়েছে। এরপর জানতে হবে, খৃস্টানদের সাথে তাঁদের সম্পর্ক আছে কি নেই, থাকলে কতটা গভীর। খলিফার সৈন্য বাহিনীর সাথে তাদের মিল বা অমিল কতটুকু। জানতে হবে সৈন্যদেরকে এমন কাজে ব্যবহারের প্রস্তুতি আছে কিনা, যা ইসলামের জন্য ক্ষতিকর ও শত্রুদের জন্য লাভজনক? আরও জানতে হবে, সে সকল অঞ্চলের জনমত কেমন? জনগণের আবেগ ও নীতি-বিশ্বাস কি রকম? এ সব অঞ্চলে ফেদাইনরা কতটা তৎপর? এটাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সুলতান আইয়ুবী দামেস্ক অথবা কোন মুসলিম এলাকাতে সৈন্য সমাবেশ ও অভিযান চালালে তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে? ১১৭৪ খৃস্টাব্দের মে মাসের দিনগুলো, মুসলিম জাহানের জন্য গভীর অন্ধকারের দিন, নূরুদ্দিন জঙ্গীর মৃতদেহকে তখনও গোসলই দেয়া হয়নি, অনেকের মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা গেল। যাদের মুখে এ ঝিলিক দেখা গেল এরা কিন্তু কেউ খৃস্টান নয়, এরা সবাই মুসলমান। জঙ্গীর মৃত্যুতে এরা যেন খৃস্টানদের চেয়েও বেশী উৎফুল্ল। এরা সেই সব লোক, যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন মুসলিম রাজ্য ও পরগণার আমীর, জায়গীরদার বা শাসক। তারা সকলেই একত্রিত হয়েছে জঙ্গীর বাড়ীতে। তারা এসেছে তাঁর জানাজায় শরীক হওয়ার জন্য। জানাজায় শরীক হওয়ার জন্য যারা এসেছে তাদের মধ্যে আরেকদল ছিল, যাদের চেহারায় গভীর দুঃখ ও বেদনা প্রকাশ পাচ্ছিল। জঙ্গীর মৃত্যুতে সত্যিকার অর্থেই তারা ছিল অস্থির ও বেদনাবিধুর। যারা উৎফুল্ল তাদের মধ্যেও এক ধরণের অধীরতা দেখা গেল, তাদের অধীরতার কারণ, সন্ধ্যার আগেই যেন দাফন-কাফন শেষ করা যায়। জানাজায় বহু লোকই শরীক হয়েছিল বটে, তবে তাদের মন মানসিকতায় ছিল বিচিত্র অনুভূতি। তারা একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখছিল। যদিও তাদের ধর্ম এক, আল্লাহ এক, রাসূল এক, কোরআন এক, এবং তাদের শত্রুও এক, তবু তাদের চিন্তাধারা এক ও অভিন্ন ছিল না। এই জনসমুদ্রকে এমন এক গাছের সাথে তুলনা করা চলে, যে গাছের বিভিন্ন ডালপালা বৃক্ষের মূল কাণ্ড থেকে কেটে এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছে আর প্রতিটি ডালপালা নিজেকে এখন স্বাধীন মনে করে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। এ যুগটাই ছিল প্রকৃতপক্ষে জায়গীরদারীর যুগ। কয়েকজন মুসলিম সুলতানের রাজ্য একটু বিস্তৃত ছিল, অন্যসব রাজ্যগুলো ছিল ছোট ছোট। এর শাসকদের বলা হতো আমীর। এ সকল আমীররা কেন্দ্রীয় খেলাফতের অধীন ছিল। ইসলামের যে কোন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হলে, আমীররা খলিফাকে অর্থ ও সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতো। কিন্তু এ সাহায্য শুধু সাহায্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো, তার মধ্য কোন জাতীয় চেতনাবোধ ও আবেগ থাকতো না। তারা বিলাস ও আরামের জীবন যাপনের জন্য ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চাইতো। প্রকাশ্যে এরা খলিফাকে সাহায্য করতো, আর গোপনে জাতীয় শত্রু খৃস্টানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আরাম আয়েশের সামগ্রী সংগ্রহ করতো। এদের কেউ কেউ গোপনে শত্রুদের সাথে শান্তি চুক্তিও করে রাখতো। নূরুদ্দিন জঙ্গীর শাসনকাল খৃস্টানদের জন্য ছিল দুঃসহ আতঙ্কের। ইসলামী চেতনা বিনাশের যে কোন প্রচেষ্টাকেই তিনি রুখে দাঁড়াতেন। খৃস্টানদের সাথে সখ্যতা করার কারণে তিনি বহুবার মুসলমান ওমরাদের সতর্ক করেছেন। তাদের তিনি বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে চেষ্টা করতেন যে, খৃস্টানরা মুসলমানদের বন্ধু হতে পারে না। আমরা একতার বন্ধন ছিন্ন করলে তারা একে একে আমাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। খৃস্টানদের আমদানী করা ইউরোপীয় মদ, মেয়ে, ও সোনার টুকরোগুলর এত শক্তি ছিল যে, তারপরও তারা বিভ্রান্ত হয়ে যেতো। নিজের বিবেক বুদ্ধিকে বন্ধক রেখে পাপের সাগরে ডুবে যেতো যখন তখন। কিন্তু জঙ্গীর সতর্কবাণী বার বার তাদের ফিরিয়ে আনতো চেতনার রাজপথে। তারা ‘মুসলমান’ এটা তাঁদের বড় পরিচয় ছিল না, তাঁদের প্রথম পরিচয় ছিল তারা জায়গীরদার বা আমীর। তারপরে যদি ধর্মের পরিচয় প্রয়োজন হতো তবে তাঁরা নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দিত। তাঁদের দ্বীন-ধর্ম সব কিছুই ছিল তাদের রাজ্য, ক্ষমতা ও জায়গীরদারী। ক্ষমতার দম্ভই ছিল তাদের ঈমান ও বিশ্বাসের বস্তু। ইসলামী চেতনা ও ঐক্যের প্রতি এদের কোন মমত্ববোধ ছিল না। যুদ্ধকে এরা ভয় পেতো, ঘৃণা করতো। তাদের বড় ভয়, যদি খৃস্টান শক্তি তাদের জায়গীরদারী কেড়ে নেয়! তারচে বড় ভয়, প্রজারা ইসলামের সঠিক চেতনায় উজ্জীবিত হলে তাদের অপকর্ম, অন্যায়, বিলাসিতা ও বেহায়াপনার বিরুদ্ধে যদি রুখে দাঁড়ায়! জনগণের মনে এ জাগরণ এলে তা ক্ষমতার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে যাবে যে! জঙ্গী মুসলমানদের মধ্যে জাতীয় চেতনাবোধ ও সম্মান জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করে বলে তারা জঙ্গীকে ভয় পেতো। জঙ্গীর সেনাবাহিনীতে যারা যোগ দেয় তারা তো তাদেরই প্রজা! এই প্রজারা একবার রুখে দাঁড়ালে কি উপায় হবে তাদের! প্রকৃত ইসলামী জযবা থাকার কারণে মুজাহিদরা দশগুণ শক্তিশালী শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতেও ভয় পায় না। মুজাহিদদের এই জযবা আমীরদের কাছে ছিল অসহ্যের ব্যাপার! এ কারণেই তারা জঙ্গীকে এবং সুলতান আইয়ুবীকে একদম দেখতে পারতো না। জঙ্গীর মৃত্যুর সাথে সাথে তার জিহাদী জযবাও কবরস্থ হয়ে গেছে এ কথা মনে করেই তারা আজ খুশী। নূরুদ্দিন জঙ্গীর দাফন শেষ হয়েছে। মুসলমানদের ওপর খৃস্টানদের যে আতংক ছিল, সে আতংক আর নেই। এখন শুধু একটি কাঁটাই রয়ে গেছে, সে হলো সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী। তার ব্যাপারে খৃস্টানরা তেমন উদ্বিগ্ন নয়। কারণ এতদিন জঙ্গী ও আইয়ুবী মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে তাদের লড়তে হয়েছে। এখন আইয়ুবী সম্পূর্ণ একা। তাকে সাহায্য করার জন্য জঙ্গী আর নেই। একা আইয়ুবী আর কতক্ষণ লড়বে, কতদিক সামলাবে? খৃস্টানরা আনন্দিত এ জন্য যে, নূরুদ্দিন জঙ্গীর মৃত্যুর পরে তাঁর ওমরা ও উজীররা জঙ্গীর অল্পবয়স্ক শিশুসন্তান আল মালেকুছ সালেহকে সিংহাসনে বসিয়েছে। যার বয়স সবেমাত্র এগারো বছর। এটা তাদেরই কাজ, যারা গোপনে খৃস্টানদের বন্ধু ছিল! এভাবেই সুলতান জঙ্গীর গদী খৃস্টান ক্রীড়নকদের হাতে চলে গেলো। এই ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে ছিল গুনাশতগীনও, যিনি জঙ্গীর দূর্গের অধিপতি ছিলেন। আর ছিল মুশালের শাসক সায়ফুদ্দিন, দামেস্কের শামসুদ্দিন আব্দুল মালেক। আল জাজিরা ও আশেপাশের অঞ্চলের শসনের কর্তৃত্ব ছিল নূরুদ্দিন জঙ্গীর ভাতিজাদের হাতে। এ ছাড়া ছোট ছোট আরও কিছু জায়গীরদার ছিল, যারা সকলেই সুলতান নূরুদ্দিন জঙ্গীর মৃত্যুর পর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। সুলতান বেঁচে থাকতে এরা প্রকাশ্যে খলিফার অধীন থাকলেও কার্যত ছিল খৃস্টানদের বন্ধু। নূরুদ্দিন জঙ্গীর মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্বের যে ক্ষতি হয়েছিল, সে ক্ষতি নূরুদ্দিন জঙ্গীর স্ত্রী মর্মে মর্মে অনুভব করছিলেন। সুলতান আইয়ুবীও এই শূন্যতা অনুভব করছিলেন তীব্রভাবে। আর অনুভব করছিলেন তারা, যারা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। জঙ্গীর শিশু পুত্র গদীনশীল হওয়ায় এরা সবাই ছিলেন সীমাহীন পেরেশানীর শিকার। o এই ঘটনার পর বেশ কিছু দিন অতীত হয়ে গেল। সুলতান আইয়ুবী তাঁর কামরায় পায়চারী করছিলেন। কামরায় মোস্তফা জুদাত নামে জঙ্গীর এক উর্ধতন সামরিক অফিসার বসা। মোস্তফা জুদাত তুরস্কের অধিবাসী। তিনি নূরুদ্দিন জঙ্গীর সেনাবাহিনীর মেনজানিক বিভাগের ইনচার্জ ছিলেন। জঙ্গীর মৃত্যুর পর ইসলামী দুনিয়ার দূরাবস্থা লক্ষ্য করে তিনি সীমাহীন অস্থিরতায় পড়লেন। কি করে মিল্লাতকে এ সংকট থেকে উদ্ধার করা যায় ভেবে কোন কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি। প্রচণ্ড অস্থিরতায় ভুগতে ভুগতে এক সময় তার মনে হলো, যদি কেউ জাতিকে এ সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারে, তিনি একমাত্র আইয়ুবী। আইয়ুবীই পারেন এ সংকটময় মুহূর্তে ঝুঁকি গ্রহন করতে। ................ চলবে.............. (বি:দ্র: কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩১৩ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • আর.এচ জাহেদ হাসান
    User ৬ বছর, ৬ মাস পুর্বে
    nice