বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
৩
আছে,’ শান্ত গলায় আশ্বস্ত করল সে।
‘হেডকোয়ার্টারের ইনফরমেশন ভুল হতে পারে না।’
‘থাকলেও,’ বলে খানিক ইতস্তত করল ধূমপায়ী, ‘ওর সম্পর্কে
যা শুনলাম, ট্রেন থেকে নামানো সহজ হবে বলে মনে হয় না।’
‘এটা দেখে বাপ্ বাপ্ করে নেমে আসবে।’ ওভারকোটের
পকেট থেকে পয়েন্ট ফরটিফাইভ কোল্ট রিভলভারটা বের করে
দেখাল দলপতি। সিলিন্ডার চেক করে আবার সেটা পকেটে রেখে
দিল সে। ‘মনে আছে তো, আমাল্ডে নাটকের এক-আধজন দর্শক
থাকতে হবে। আর অভিনয়ে কোন খুঁত থাকা চলবে না।’
‘মাসুল্ডানা...মাইরি বলছি, নামটার মধ্যে কেমন যেন
ইস্পাত ইস্পাত, নিরেট একটা ভাব আছে...’
‘ভয়ের কিছু নেই। সে একা, আমরা চারজন...’
‘কিন্তু খেপে গেলে সে নাকি একাই একশো...’
‘আরে রাখো, অমন বীরপুরুষ কত দেখলাম!’ তাচ্ছিলেশু
সাথে মন্তব্য করল একজন।
আরেকজন ঝাঁঝের সাথে বলল, ‘আহত করা যাবে না, এ
আবার কি কথা! ও যè্যািপারটা টের পেয়ে যায়, কি অবস্থা হবে
ভাবতে পারো? এক একজনকে ধরে আছাড় মারবে, অথচ আমরা
তার গায়ে আঁচড়টাও কাটতে পারব না!’
‘নির্দেশ নির্দেশই,’ দলপতির গম্ভীর তিরস্কার শোনা গেল।
‘সব কথা জানো না, কাজেই চুপ করে থাকো। আর, আহত করা
যাবে না মানে আমি বলতে চেয়েছি, লোকটাকে অচল করা যাবে
না। বিশেষ করে পা, চোখ, আর হাত যেন অক্ষত থাকে। কেউ
গুলি করবে না, কারণ কোথায় লাগতে কোথায় লাগে তার ঠিক
৪
নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ওর নাক বা স্ফাত ভাঙা যাবে
না। অফিসে ওর ওপর টরচার চালানো হবে বলে শুনে এসেছি।
শুধু লক্ষ রাখতে হবে, লোকটা যেন অচল হয়ে না পড়ে।’
সতেরো মাইল দূরে রয়েছে ফ্লোরিডা এক্সপ্রেস। চেহারায়
রাজেশু উদ্বেগ নিয়ে ঝড়ো রাতের দিকে তাকিয়ে আছে ড্রাইভার।
এইমাত্র পেরিয়ে আসা সিগন্যালের নির্দেশ ছিল, গতি কমাতে
হবে। অথচ দু’ঘণ্টার মধ্যে ট্রেনের কোথাও থামার কথা নয়। কি
ঘটছে কী?
স্পীড ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছে ড্রাইভার। ইস্পাত-মোড়া
ছাদে ঝাঁক ঝাঁক বৃষ্টি পড়ছে, কাঁচমোড়া ল্ডজা আর জানালার
বাইরে দাপাদাপি করছে বাতাস। পরবর্তী সিগন্যালকে পাশ
কাটিয়ে এল ট্রেন। টকটকে লাল সঙ্কেতÑমানে, সামনে বিপদ।
ট্রেন থামাবার চূড়ান্ত নির্দেশ। এর মানেটা কি? ব্রেকের ওপর চাপ
আরও বাড়াল ড্রাইভার। সেডার ফলসের কাছাকাছি চলে এসেছে
ট্রেন। সামনে পরিত্যক্ত স্টেশন। অনির্ধারিত বিরতি।
দু’মিনিট পর একটা ঝাঁকি খেয়ে স্ফাড়িয়ে পড়ল ফ্লোরিডা
এক্সপ্রেস। কড়কড় কড়াৎ করে কাছে পিঠে কোথাও একটা বাজ
পড়ল। ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরল মাসুল্ডানা, ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ
একটু হাসি ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল, সারা শরীর শিউরে উঠল
গোপন পুলকে। স্বপ্ন দেখছে রানা, মধুর সুখে ওর শরীর-মন
ভরপুর।
করিডরের দু’পাশের পর্দা হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে ফেলা হলো।
ভেজা রেনকোট পরা তিনজন লোক রানার বিছানার সামনে
স্ফাড়াল। কেবিনের মেঝেতে পানি জমছে। দলপতির হাতে
মরণখেলা-১
৫
পাসপোর্ট সাইজের একটা ফটো, রানার চেহারার সাথে ফটোটা
মেলাল সে। ‘হ্যাঁ, এই লোকই, ডিক,’ শান্ত গলায় বলল সে।
ধীরে ধীরে চোখ মেলল রানা। কোল্ট ফরটিফাইভের কালো
মাজ্ল্ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ‘সরাও ওটা,’
বিড়বিড় করে বলল ও। ‘গুলি বেরিয়ে যেতে পারে, তোমার হাত
ভিজে।’
এক নিমেষে বিপজ্ঝাঁচ করে নিয়েছে রানা। ট্রেন চলছে না,
তিন আগন্তুকের গায়ে ভিজে রেনকোট, প্রৌঢ় আরোহীর বিস্ফারিত
চোখে স্পষ্ট আতঙ্ক। দলপতির দু’পাশে স্ফাড়ানো লোক দু’জন
রিভলভার বের করেনি, তবে রেনকোটের বোতাম খুলে
ওভারকোটের পকেটে হাত ভরে রেখেছে। ওল্ডে একজন রানার
দিকে একটু পাশ ফিরে আছে, লক্ষ রাখছে অপর আরোহীর
দিকে।
‘কাপড় পরো,’ কঠিন সুরে নির্দেশ দিল দলপতি। ‘ট্রেন থেকে
নামতে হবে তোমাকে।’
‘মামার বাড়ির আবদার?’ উদ্বেগ গোপন করে ফোঁস করে
উঠল রানা। ‘কে তুমি?’ রানা এজেন্সির শাখা অফিসগুলোয়
সারপ্রাইজ ভিজিট দিচ্ছে ও, বিরতিহীন এক হপ্তা চরকির মত
আমেরিকার এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ক্লান্ত।
সম্ভাবনাগুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনা করল। অতর্কিতে ঝটকা
মেরে দলপতির হাত থেকে রিভলভারটা ফেলে দিতে পারে। একই
সাথে তার ডান পাশে স্ফাড়ানো লোকটার তলপেটে হাঁটু দিয়ে
গুঁতো মারতে পারে। তৃতীয় লোকটা ওভারকোট থেকে রিভলভার
বের করার আগেই...না, ঝুঁকি নেয়া উচিত হবে না। গুলি শুরু হলে
৬
বেচারা এঞ্জিনিয়ার মারা যেতে পারে।
‘রেক্স, এফ.বি.আই.,’ ঘেউ ঘেউ করে উঠল দলপতি।
‘তাড়াতাড়ি করোÑট্রেন তোমার জন্যে সারারাত স্ফাড়িয়ে থাকবে...’
‘নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হয়েছে তোমাল্ডে,’ গম্ভীর গলায় বলল
রানা। ‘আমি একজন বাংলাদেশী...,’ হুকের সাথে ঝুলন্ত
জ্যাকেটের দিকে হাত বাড়াল ও।
‘ওয়াচ ইট!’ গর্জে উঠল রেক্স। চোখের পলকে তার দুই সঙ্গীর
হাতে রিভলভার বেরিয়ে এল।
‘আমি নিরস্ত্র,’ ব্যঙ্গ মেশানো মুচকি একটু হাসি দেখা গেল
রানার ঠোঁটে। ওল্ডে হুমকি গ্রাহ্য না করে হুক থেকে জ্যাকেটটা
নামাল ও। ‘পাসপোর্ট বের করছি।’ তিনটে রিভলভারের মাজ্ল্
ওর দিকে তাক করা, দেখেও না দেখার ভান করল ও। ভেতরের
পকেট থেকে দু’আঙুলে ধরে সাবধানে পাসপোর্টটা বের করে
দলপতির দিকে বাড়িয়ে দিল।
এক হাত বল্টহার করেই পাসপোর্টটা খুলল রেক্স, খুঁটিয়ে
দেখল, তারপর গম্ভীর গলায় বলল, ‘জাল পাসপোর্ট, ডিকÑতাও
একেবারে কাঁচা হাতের কাজ।’ রানার দিকে ফিরল সে,
পাসপোর্টটা নিজের পকেটে ভরল। ‘বুঝতেই পারছ, তুমি ধরা
পড়ে গেছ। এখন আর কোন কৌশলই কাজে আসবে না। লক্ষ্মী
ছেলের মত যাবে, নাকি টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে হবে?’
‘ওটা যদি জাল পাসপোর্ট হয়, তাহলে তোমরাই বলো, আমি
কে?’ জিজ্ঞেস করল রানা। দ্রুত চিন্তা করছে ও। এল্ডে সাথে
কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু মুক্তি পেতে হলে ট্রেন থেকে
নামতে হবে ওকে। মোক্ষম একটা সুযোগ ল্ডকার, নিরীহ একজন
মরণখেলা-১
৭
আরোহীর উপস্থিতিতে তা পাওয়া যাবে না।
জবাব না দিয়ে হাতঘড়ি দেখল রেক্স, রানার কথা যেন
শুনতেই পায়নি।
‘আমি জন ফাইবার,’ করিডরের ওদিক থেকে বলল প্রৌঢ়
এঞ্জিনিয়ার। ‘এই ভদ্রলোকের সাথে আমার কথা হয়েছে। বললেন,
রানা ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির উনি ডিরেক্টর...’
‘ভদ্রলোক, হুঁহ্!’ ঘড়ি থেকে চোখ তুলে এঞ্জিনিয়ারের দিকে
তাকাল রেক্স। ‘রানা ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ওকে আমাল্ডে
হাতে তুলে দেয়ার জন্যে গরুখোঁজা করছে।’ রানার দিকে ফিরল
সে। ‘আল মাসুদ, হাত দুটো এক করে বিছানার ওপর রাখো!’
গায়ের কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নামল রানা। দ্রুত এক পা
পিছিয়ে গেল রেক্স। দেখা গেল টাই, জ্যাকেট আর জুতো ছাড়া
কাপড়চোপড় পরেই শুয়েছিল রানা।
‘আমরা নেমে গেলেই ট্রেন ছাড়বে,’ রানার টাই আর জুতো
পরা শেষ হতে এঞ্জিনিয়ারকে বলল রেক্স। ‘তখন আপনি নিশ্চিন্ত
মনে ঘুমাতে পারবেন। ভাগ্যকে ধনল্টাদ দিন যে বদমাশটার সাথে
এতক্ষণ থেকেও প্রাণটা খোয়াননি।’
জ্যাকেট পরতে পরতে নির্লিপ্ত চোখে দলপতির দিকে তাকাল
রানা, প্রতিবাদ করল না।
‘ওটা তোমার ব্যাগ?’ জিজ্ঞেস করল রেক্স, উত্তরের অপেক্ষায়
না থেকে ডান পাশের সহকারীকে ইশারা করল সে। সহকারী
টেবিল থেকে রানার ব্যাগটা তুলে নিল। ‘এবার হাত দুটো এক
করে...’ রেক্সের বাঁ পাশের লোকটার হাতে একটা হ্যান্ডকাফ দেখা
গেল...।
(চলবে...)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now