বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

রাইন থেকে অ্যারেন্ডসী - চ্যাপ্টার ২ ( পর্ব-১)

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান উৎস বিশ্বাস (০ পয়েন্ট)

X ২ কথা বলছে জোসেফ জ্যাকব আলগার। তার হুইল চেয়ার ঘিরে কয়েকটা চেয়ার নিয়ে বসেছে আহমদ মুসা, আদালা, ব্রুনা, আদালার মা এবং আলদুনি সেনফ্রিড। স্টাডি রুমটা তিন তলায়। বিশাল রুম। ঘরের চারদিকে দেয়াল বরাবর অনেক আলমারি। বইয়ে ঠাসা। কয়েকটা কম্পিউটার আছে কক্ষে। অনেক কিয়টি পড়ার টেবিল। তার সাথে আরামদায়ক কুশন চেয়ার। ঘরে কয়েকটি ইজি চেয়ারও রয়েছে। চেয়ার, আলমারি, টেবিল, ইজি চেয়ার সবই পুরানো। অ্যান্টিকস হিসেবে শো-রুমে থাকার মত। ঘরের সবকিছুই পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। ঘরে ঢুকেই আহমদ মুসা বলেছিল, মনে হচ্ছে আমরা এক অ্যান্টিকস এর জগতে এলাম। কি করে আপনারা এগুলোকে এত সুন্দরভাবে রক্ষা করেছেন?’ জোসেফ জ্যাকব আলগার বলেছিল, ‘আমরা মূল্যবান ফার্নিচার রক্ষা করিনি, আমরা ঐতিহ্য রক্ষা করেছি। আর মি. আহমদ মুসা আমাদের বাড়ির সবকিছুই অ্যান্টিকস, শুধু আমরা ছাড়া। থালা-বাটি থেকে সবকিছুই দেখবেন সেই পুরানো ধাঁচের।’ ‘পুরানো ধাঁচের বটে, কিন্তু পুরানো নয়। আজকের আধুনিকতার সময়হীন নিরাভরণ ও প্রতিযোগিতার বাজারে কষ্ট-ইফেকটিভ পণ্যের সয়লাবে অ্যান্টিকস আজ মর্যাদার আসন লাভ করেছে।’ আহমদ মুসা বলেছিল। জোসেফ জ্যাকব আলগার আহমদ মুসাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিল, ‘সব বিষয়কে সুন্দর করে বলার শক্তি ঈশ্বর আপনাকে দিয়েছেন।’ কথা বলছিল জোসেফ জ্যাকব আলগার। তার ইজি চেয়ারের চারপাশে বসা আহমদ মুসা, ব্রুনা, আলদুনি সেনফ্রিড, আদালা ও আদালার মা আলিসিয়াদের অখণ্ড মনোযোগ তার দিকে। বলছিল জোসেফ জ্যাকব আলগার, ‘যা বললাম তা সত্যি। আমরা হাফ-জার্মান, হাফ-খৃস্টান ও দাসবংশোদ্ভুত- তাদের এই অভিযোগ সম্পর্কে আমি বিস্তারিত কিছুই জানি না। আমার দাদুকে আমি বেশি দিন পাইনি। বাবাকে তো পেয়েছি, কিন্তু তিনি আমাকে কিছুই বলেননি। তবে বাবার কয়েকটা কথা আমি একদিন হঠাৎ শুনে ফেলেছিলাম। বাবা এই স্টাডিতে বসে আন্টির সাথে গল্প করছিলেন। আন্টি ছিলেন বাবার বড়। দরজা ও জানালা সব বন্ধ ছিল। আমি পাশের করিডোরটা ধরে জানালার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আন্টির একটা কথা আমার কানে গেল, ‘হ্যাঁ জোসেফ, কথাগুলো সত্য যে, আমরা পুরো জার্মান নই, পুরোপুরি খৃস্টানও আমাদের কখনও মনে করা হয়নি। আমাদের দাসবংশোদ্ভুত একথাও একটা কঠিন সত্য। আন্টির কথা শুনেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। শুনতে লাগলাম তাদের কথা। ‘কিন্তু এই অভিযোগ কেন সত্য হবে? সত্য হলে পরিবারের সবাই এটা জানবে না কেন?’ বাবা প্রশ্ন করলেন আন্টিকে। আমারও প্রশ্ন দাদুর কাছে এটাই ছিল। দাদু আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলেছিলেন, জার্মানীতে প্রচুর অজার্মান ও নন-ইউরোপিয়ান এসেছেন সেই প্রাচীন কাল থেকে, মধ্যযুগের আরও বেশি আগে থেকে। তাদের বেশির ভাগ খৃস্টধর্ম গ্রহণ করেছে। কেউ ইচ্ছায়, কেউ বাধ্য হয়ে। এরা আবার মুখে খৃস্টান হলেও মনেপ্রাণে খৃস্টান হয়নি। খৃস্টধর্মের মূল স্রোতে কখনও এদের গ্রহণ করা হয়নি। এদেরই বলা হয় হাফ খৃস্টান, হাফ জার্মান। আর এ কথাও সত্যি, মধ্যযুগের দাস ব্যবসায়ের যুগে যুদ্ধে পরাজিতদের কিংবা কোনওভাবে ধৃত বিদেশি, বিশেষ করে নন-ইউরোপিয়ানদের দাস হিসেবে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মত জার্মানীতেও প্রচুর মানুষ বিক্রি করা হয়েছে। তারাও হাফ খৃস্টানদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। মনে করা হয় আমাদের পরিবার এ ধরনেরই এক দাসবংশোদ্ভুত পরিবার। আমি দাদুর শেষ বাক্যটা শুনে বলেছিলাম, ‘মনে করা হয় কেন? সত্যটা কি?’ দাদু বলেছিলেন, ‘কারণ, কোন নিশ্চিত প্রমাণ নেই, আমাদের পরিবারেও এ ধরনের কোন দলিল নেই। তবে বোন, আমার দাদু জার্মানীর প্রথম আদমশুমারির বরাত দিয়ে আব্বাকে বলেছিলেন তাতে নাকি প্রত্যেক পরিবারের অরিজিন কি তার উপর একটা কলাম ছিল। সে কলামে নন-ইউরোপিয়ানদের জন্যে NE এবং দাস বংশোদ্ভুতদের s বর্ণ-সংকেত দেয়া ছিল। পরবর্তী আদমশুমারিতে এ ধরনের কলাম আর ছিল না। কিন্তু প্রথম আদমশুমারির তথ্যই বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও লেখায় বিভিন্নভাবে উদ্ধৃত হয়ে আসছে।’ আন্টির কথা এ পর্যন্ত শুনেই আমি চলে এসেছিলাম। বিভিন্ন সময়ের এসব কথা থেকেই আমাদের পরিবারে সাধারণ সবা্রই জানা হয়ে গেছে যে আমাদের পরিবার দাস বংশোদ্ভুত এবং আমাদেরকে পুরো জার্মান ও খৃস্টান মনে করা হয় না।’ থামল আদালার বাবা জোসেফ জ্যাকব আলগার। থেমেই আবার সংগে সংগে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ, আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ভুলে গেছি। সেটা আমাদের একটা ফ্যামিলি সিক্রেট। এই সিক্রেট পরিবারের সবাই জানে না। পরিবারের ঐতিহ্য অনুসারে পরিবারের হেড অব দ্য ফ্যামিলী যখন ঠিক মনে করবেন বা প্রয়োজন মনে করবেন, তখন তিনি তাঁর সরাসবি উত্তরসূরি সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ, তার অবর্তমানে সরাসবি উত্তরসূরি বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলাকে সিক্রেট জিনিসটি হস্তান্তর করে যান।’ থামল জোসেফ জ্যাকব আলগার। অপার বিস্ময় নামল আদালা হেনরিকা ও তার মা অ্যাল্লি আলিসিয়ার চোখে-মুখে। বলল আদালা তার পিতাকে লক্ষ্য করে, ‘এত গোপনীয় যে জিনিসটা, সেটা কি বাবা?’ ‘এটা সত্যিই খুব গোপনীয়। কিন্তু কেন সেটা গোপনীয় আমি জানি না। বাবা-দাদাসহ আমাদের কোন পূর্বপুরুষই এটা প্রকাশ করেননি। আমিও পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য অনুসরণ করব, কোনভাবেই এটা প্রকাশ করব না। আজকের এই ঘটনার আগ পর্যন্ত আমার এটাই সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু মি. আহমদ মুসাকে দেখার পর এই সিদ্ধান্ত আমার পাল্টে গেছে। আমার মনে হয়েছে মি. আহমদ মুসার মত এমন সচেতন, জ্ঞানী, নিষ্ঠাবান বিশ্বাসী এবং সব দিক দিয়ে যোগ্য ও সহমর্মী এবং সেই সাথে দুনিয়ার সর্বকনিষ্ঠ ধর্ম ইসলামের অনুসারী কোন মানুষের সাক্ষাৎ আমাদের পরিবার ইতিপূর্বে নিশ্চয় পায়নি। আমি যখন পেয়েছি, তখন সুযোগটা আমি গ্রহণ করবো।’ বলল জোসেফ জ্যাকব আলগার। ‘কিন্তু বাবা কি এমন বিষয় সেটা, যার জন্যে এমন লোকের সাক্ষাৎ জরুরি?’ আদালা হেনরিকা বলল। ‘গোপন জিনিসটার সাথে একটা ছোট্ট পরামর্শ যুক্ত আছে। সেটা হলো, একত্ববাদী সর্বকনিষ্ঠ ধর্মের অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও জ্ঞানী লোক বিষয়টির গোপনীয়তার রহস্য ভেদ করতে পারবেন। মি. আহমদ মুসাকে আমার এই ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছে।’ বলল জোসেফ জ্যাকব আলগার। ‘ধন্যবাদ। আমি জানি না আমি সেই ব্যক্তি কি না। বিষয়টি কোন কিছুর পাঠোদ্ধার বা ‘রিলিজিয়াস কোড’ ধরনের মত কোন কিছুর ডিকোড করার বিষয় হতে পারে। তাই কি জনাব?’ আহমদ মুসা বলল। ‘ধন্যবাদ মি. আহমদ মুসা। আপনি ঠিক ধরেছেন। বিষয়টি ডিকোড ধরনের।’ বলল জোসেফ জ্যাকব আলগার। ‘ডিকোডের প্রয়োজন! তাহলে জিনিসটা কি বাবা?’ আদালা হেনরিকা বলল। মাথা একটু নিচু করল জোসেফ জ্যাকব আলগার। মুহূর্তেই আবার মাথা তুলল সে। বলল, ‘সেটা একটা মেহগনি কাঠের বাক্স। বাক্সে সোনার কারুকাজ। লকটি পোড়ানো খাদহীন লোহার। লক-এর তিনটি ঘোরানোর উপযোগী তিনটি ক্ষুদ্র চাকার প্রত্যেকটিতে রয়েছে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো। সংখ্যার ধাঁধায় যুগ-যুগান্তর ধরে আটকে রয়েছে বাক্সটি।’ বলল জোসেফ জ্যাকব আলগার। ‘বাক্সটি কার?’ জিজ্ঞেস করল আদালা হেনরিকা। ‘এটা নির্দিষ্ট করে কেউ জানে না। বলা হয় এটা আমাদের আদি পুরুষের একটি পবিত্র আমানত। সেই পুরুষ জার্মানীতে আমাদের প্রথম পুরুষ, না দ্বিতীয় বা তৃতীয় তা আমরা কেউ জানি না।’ বলে্ একটু থামল জোসেফ জ্যাকব আলগার। বলল আবার, ‘মি. আহমদ মুসা, আমি কি বাক্সটি আনতে পারি? বাক্সের কোড-রহস্য ভেদ করতে পারি কি আপনার সাহায্য চাইতে?’ ‘ধন্যবাদ মি. জোসেফ জ্যাকব আলগার। আপনাদের কোন প্রকার সাহায্য করতে পারলে আমি খুব খুশি হবো।’ আহমদ মুসা বলল। ‘ধন্যবাদ মি. আহমদ মুসা।। বলেই জোসেফ জ্যাকব আলগার ঘুরে তাকালো আদালা হেনরিকার দিকে। একটা আলমারি দেখিয়ে বলল, ‘মা, ঐ আলমারির নীচের তাকের বইগুলো নামিয়ে ফেল। কাঠের তাকটার দু’প্রান্তে দেখো দু’টো কাঠের স্ক্রু আছে। স্ক্রু দু’টো তুলে ফেল। তাকটা সরিয়ে দেখ আয়তাকার ছোট সুন্দর একটা বাক্স পাবে। ওটা বের করে আন। ‘পরিবারের পবিত্র আমানত বাক্সটা কি ঐখানে আছে বাবা?’ জিজ্ঞাসা আদালা হেনরিকার। ‘হ্যাঁ, মা। এখানে কতদিন ধরে আছে আমি জানি না। বাবা আমাকে এখানে দেখিয়ে গেছেন। আমার মনে হয় এই আলমারির বয়স ততদিন, যতদিন ধরে বাক্সটা এখানে আছে।’ বলল জোসেফ জ্যাকব আলগার। হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘সাধারণ অথচ অসাধারণ নিরাপদ জায়গা এটা। যিনিই এটা করুন, তার অসাধারণ কল্পনাশক্তি ছিল।’ ‘ধন্যবাদ স্যার, আমি উঠছি।’ বলে আদালা হেনরিকা উঠে দাঁড়াল। যেভাবে তার বাবা বলেছিল, সেভাবেই ছোট সুন্দর বাক্সটি বের করে আনল আদালা। এনে তার বাবার হাতে তুলে দিল বাক্সটি। চলবে...


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৮৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ রাইন থেকে অ্যারেন্ডসী- চ্যাপ্টার ১ (পর্ব-১)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now