বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

দু’হাত ভর্তি স্বর্ণের চুড়ি (1)

"সত্য ঘটনা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাসরুল্লাহ (০ পয়েন্ট)

X আম্মার দিকে তাকিয়ে আমার চোয়াল ঝুলে পড়লো। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরনে, দু’হাত ভর্তি স্বর্ণের চুড়ি, সকালের রোদ লেগে তাতে ঝিলিক দিয়ে উঠছে, গলায় একটা রূপোর হার, আর মাথায় মুকুট, কোয়েলের ডিমের মতন বড় একটা পান্না মুকুটটার ঠিক মাঝখানে বসানো, সবুজ আলো ঠিকরে পড়ছে সেখান থেকে। এই মুকুটটার আমাদের পরিবারে আসা নিয়ে একটা মোটাসোটা ইতিহাস আছে। আমার বাবার দিদা আলফাকেন্নেসা বিবি ছিলেন লর্ড কার্টারের স্ত্রীর খাস চাকরাণী। একবার লেডি কার্টার পা ফসকে পুকুরে পড়ে গেলে আলফাকেন্নেসা বিবি ঝাঁপ দিয়ে নিজের প্রাণ বাজি রেখে তাকে উদ্ধার করে। লেডি কার্টার তখন খুশি হয়ে তাকে এই মুকুটটা দিয়ে বলেন, “ইহা হাতছাড়া করিয়ো না, সুখ আর সমৃঢঢি সবসময় টোমাডের সাঠে ঠাকবে।” লেডি কার্টারের কথা ফলে যায় দারুণভাবে। মুকুটটা পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই আলফাকেন্নেসা বিবির গর্ভে আমার দাদা আসেন। এরপর থেকে তাদেরকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একটা দোকান দিয়ে, জমি-জমা কিনে বেশ কয়েক বছরের মধ্যেই আলফাকেন্নেসা বিবি ও তার স্বামী মহকুমার মান্য-গণ্য ব্যক্তিতে পরিণত হন। এই পুরো সময়টা মুকুটটা যত্ন করে কাপড়ে মুড়িয়ে ট্রাঙ্কে তোলা ছিল, দিদার হাত ঘুরে যার মালিকানা বর্তেছে আমার আম্মা’র উপর। “কি রে, কইলি না ক্যামন লাগতাসে আমারে?” আমি এক ঝটকায় বাস্তবে ফিরে আসি। আমার সামনে আম্মা মৃদু হাসি মুখে তার বিয়ের সাজে দাঁড়িয়ে, আমার অবহেলায় কিঞ্চিৎ বিরক্তিতে ভ্রূ দু’টো কুচকে আছে।আমি দাঁত বের করে বললাম, “তোমারে এক্কেরে ডানাকাটা পরী লাগতাসে!” “আহ, কি যে কস না! শরম লাগে না আমার?”, আম্মা লজ্জা পেয়ে ঘোমটাটা টেনে দেয় আরেকটু। নাম-না-জানা কি এক ফুলের সুগন্ধ এসে ধাক্কা মারে নাকে। আমার চোখের প্রশ্ন বুঝতে পেরে আম্মা বলে, “তুই যে গত শীতে শহর থিক্কা সেন্ট আইনা দিলি একটা, মনে নাই?” আমি উত্তর না দিয়ে আম্মার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ছোটখাট একটা মানুষ, রং শ্যামলা, একটু কালোর দিকেই বলা যায়-কিন্তু লাবণ্যতা আর কমনীয়তা দিয়ে তা পুষিয়ে দিয়েছে, বয়সের ছাপ পড়েনি বললেই চলে, পাশের গ্রামের রাণুপুর পাশে দাঁড়ালে দুজনকে দিব্যি বোন বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে!-অনভ্যস্ত সাজে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চৌকাঠে, ঘোমটার ফাঁক দিয়ে বড় বড় চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অস্ফুটে বলে উঠলাম, “আব্বা আজকে আইয়া তোমারে দেখলে তার চক্ষু ট্যারা হইয়া যাইবো!” এক মুহূর্তের জন্য আম্মা কেঁপে উঠে কেমন যেন, চোখে একটা দিশেহারা ভাব। ওই এক মুহূর্তের জন্যই, হয়ত আমার দেখার ভুল। নি:শব্দে কেটে গেল অনেকটা সময়, সেই নি:শব্দতার মধ্য দিয়ে কি কথা হয়ে গেলো মা-ছেলের মাঝে, দুনিয়ার কেউ জানলো না! হঠাৎ সপ্রতিভ হয়ে আম্মা নিস্তব্ধতা ভাঙে, “তোর না কাম আছে মাঠে? জলদি যা! হারাদিন তো খালি কামে ফাঁকি দেওনের তালে থাকস!” তারপর চোখ লুকোনোর চেষ্টা করতে করতে আম্মা ঘরের ভেতর ঢুকে যায়।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৪৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now