বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মধ্য রাতে পথ চলার সময় একটা কান্নার আওয়াজ কানে এল রবিনের কানে। রাস্তাটা বেশ সুনসান। পথের ধারে একটা ডোবা। কান্মার আওয়াজ টা সেখান থেকেই আসছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় রবিন। ডোবার ধারে পানিতে একটা বাচ্চা! শরীরের প্রায় পুরোটাই পানিতে। শুধু মুখটা উপরে।
"ইশ! মানুষ কত নীচ হলে এইরকম কাজ করতে পারে।" ভাবতে ভাবতে একমুহূর্ত দেরী না করে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিল রবিন। তারপর ছুটল বাসার দিকে।
আপাতত বাসায় এসে বাচ্চাটাকে ভালো করে পরিষ্কার করল রবিন। আশ্চর্য! বাচ্চাটার শরীরের রঙ গাঢ় লাল! একেবারে রক্তের মত! আরো আশ্চর্যের বিষয়, বাচ্চাটা এতক্ষণ পর্যন্ত একবারও শ্বাস নেয় নি! রবিন ভয় পেয়ে গেল। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছে এর বয়স চব্বিশ ঘন্টার মত। এর মাঝে বাচ্চাটার ফুসফুসের ব্যবহার শিখে নেওয়ার কথা। ফুসফুসের ব্যবহার জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যে না শিখলে মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু বাচ্চাটা এতক্ষণ বেঁচে ছিল। পানিতে থেকে ঠান্ডা লেগে শ্বাসকষ্ট শুরু হল না তো? কিন্তু তাহলে বাচ্চাটা তো তাহলে অন্তত শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করার কথা। অক্সিজেনের অভাবে বাচ্চাটার ঠোঁট নীলবর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু সে শ্বাস নেওয়ার কোন চেষ্টাই করছে না! রবিন ভয় পেয়ে তার রুমমেট সুজনকে ফোন দিল।
রবিন আর সুজন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। দুজন একসাথে একটা ভাড়া বাসায় থাকে। সুজন এসে বাচ্চাটাকে দেখেই অবাক হয়ে গেল। কিন্তু রসস্যটা তার মাথায় ঢুকে গেল সহজেই।
"মিউটেশন! মিউটেশনের কারণে এই মেয়েটার রক্তনালির প্রাচীরের ভেদ্যতা বেড়ে গেছে! ফলে রক্তের হিমোগ্লোবিন রক্তনালী ভেদ করে দেহকোষে চলে এসেছে। হিমোগ্লোবিন লাল, তাই বাচ্চাটাও লাল দেখাচ্ছে!"
একনাগাড়ে কথাগুলো বলল সুজন। বাচ্চাটার মা-বাবা কেন ওকে ফেলে দিয়েছিল, সেটা বুঝতে কোন সমস্যা হল না দুজনেরই।
"তবে বাচ্চাটা শ্বাস নিচ্ছেনা কেন?" জিজ্ঞেস করল রবিন।
এই বিষয়টাও বিদ্যুতগতিতে বের করে ফেলল সুজন। "মেয়েটার দেহকোষে অক্সিজেন সংবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান আছে। তাই পানি থেকে অক্সিজেন সরাসরি ত্বকের কোষে ঢুকে গেছে ব্যাপন প্রক্রিয়ায়। অনেকটা মাছের ফুলকার মত। তাই মেয়েটির আর ফুসফুস ব্যবহারের দরকার হয় নি। পানিতেই সে দিব্যি বেঁচে ছিল!"
-"কিন্তু মানুষের ত্বকের বাইরে তো কেরাটিনের ভারী আবরণ থাকে। তাহলে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন কিভাবে ভেতরে ঢুকবে?" পাল্টা প্রশ্ন রবিনের।
-"এটাও নিশ্চয়ই মিউটেশনের ফল! মিউটেশন এর কারণে মেয়েটার ত্বকের কেরাটিনের আবরণ পাতলা বা নেই হয়তো!" বলল সুজন।
-"একটা বাচ্চার মধ্যে এতগুলো মিউটেশন!" রবিন সুজনের কথাগুলো গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগের সুজন বাচ্চাটার হাত এক গ্লাস পানিতে চুবিয়ে দিল। দুজনেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করল বাচ্চাটার হাত থেকে গ্যাসের ছোট ছোট বুদবুদ বের হচ্ছে।
"কার্বন ডাই অক্সাইড" বলল সুজন। "দেহকোষের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড এর ঘণত্ব বেড়ে যাওয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষের বাইরে চলে আসছে!"
তারা দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল বাচ্চাটার দিকে। তাদের সামনে প্রকৃতির এক অনন্য উপহার!
সাল ২১৪৫। গ্রিনহাউজ ইফেক্টের প্রভাবে পুরো পৃথিবীর প্রায় সম্পূর্ণ স্থলভাগই পানির নিচে। কিন্তু মানুষের জন্য এখন এটা কোন সমস্যাই না।এখন মানুষ ত্বক দিয়ে শ্বাস নিতে পারে। মানুষের দেহের বর্ণ এখন গাঢ় লাল। মানুষকে এখন বলা হয় লোহিত মানব। বিজ্ঞানের ভাষায় Homo erythro-amphibians, বিবর্তনিক ধারায় Homo sapiens এর পরের ধাপ। ফুসফুস ও ত্বক দুই মাধ্যমেই শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা থাকার কারণে মানুষ এখন উভচর প্রাণী। এইজন্য তারা একজন মানুষের প্রতি বিশেষভাবে ঋণী। একুশ শতকের একটি মানুষ। ইতিহাস অনুযায়ী তার নাম রবিন। এই মানুষটার মানবতার কারণেই আজও মানুষ বেঁচে আছে পৃথিবীর বুকে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
SM Samiya Mahejabin
User ৪ বছর, ৭ মাস পুর্বে