বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
সকাল বেলায় মায়ের চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ঘুম চোখে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম মা দাড়িয়ে আছে আর বলছে বাইরে থেকে কী এক অভ্যাস করেছ। এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাতে হয়? উঠ কাজ আছে একটু। আমি ঘুম ঘুম চোখেই বললাম কী কাজ মা? মা বলল মেয়ে দেখতে যাব চল। মায়ের মুখে একথা শুনতেই আমার চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেল। আমি ভাবছি ভাইয়া তো বিয়ে করেই ফেলেছে তাহলে আবার কিসের মেয়ে দেখতে যাবে? আমি বললাম মেয়ে দেখতে যাবে মানে? ভাইয়াকে আবার বিয়ে করাবে নাকি? মা হেসে দিয়ে বলল আরে না পাগল। তুমার জন্যে মেয়ে দেখতে যাব উঠ। মায়ের কথা শুনে আমার পিলে চমকে উঠল। আমি নাকি বিয়ে করব। আমি উঠে গিয়ে বললাম একি বলছ? আমার জন্যে মেয়ে দেখতে যাবে মানে? আগে তো বলো নি।
মা হেসে দিয়ে বলল তুমাকে আমি চিনি না? আগে থেকে বললে তুমার অস্তিত্বও তো খুজে পেতাম না। আমি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না মাকে এই বুদ্ধি দিয়েছে কে হঠাৎ আমার জন্যে মেয়ে দেখতে যাবে। আমি বললাম আচ্ছা মা এই বুদ্ধি তুমাকে কে দিয়েছে? মা হেসে দিয়ে বলল কেউই দেয়নি। এবার ঘরে রাখার ব্যবস্হা করছি। এই বলে মা চলে গেলেন। আমিও আর কিছু না বলে ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। দেখলাম আমার সাথে মেয়ে দেখতে যাবে মা, ভাইয়া, ভাবী, বোন আর ছোট মামা। আমার সেন্স অব পাওয়ার বলছে এটা মামার কাজ। তবে এ নিয়ে মামাকে এখনি আমি কিছু বলব না বলে মনস্হির করলাম।
আমি রীতিমতো সাজ-সজ্জা করে বের হলাম। মেয়ে দেখতে যাব বলে কথা। মা আগে থেকেই বলে রেখেছেন মেয়ের পরিবার বা মেয়ের সামনে উল্টা পাল্টা কোন কাজ যেন না করি৷ তবে বিয়ের পর যা খুশি করতে পারি৷ মেয়ে নাকি মোনালিসা বা প্রিন্সেস ডায়ানার থেকে কোন অংশে কম নয় বরং বেশিই হবে। মেয়ের এমন রুপ, গুনাগুন শুনে আমি আগেই মুগ্ধ হয়েছি। এমন নারীকে স্ব-চক্ষে দর্শন করার সুযোগ সবার ভাগ্য হয় না। হয়ত ধূসরের দিকে তার ভাগ্যে চোখ মেলে তাকিয়েছে৷ আমরা সপরিবারে মেয়ের বাসার সামনে হাজির হলাম।
বাসার সামনেই মধ্য-বয়স্ক একটি লোক আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। আমার মনে হয় উনিই মেয়ের বাবা মানে আমার হবু শশুড়। উনি বিরাট অভ্যর্থনা জানিয়ে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। ভিতরে যেতেই বুঝলাম মেয়ের পরিবার বেশ ধনী। বিশাল একটি রুমে আমাদের বসানো হলো৷ সামনে শরবতের গ্লাস, চা, বিস্কিট আরও কত কী সাজানো। তবে সামনের চা আমাকে মারাত্মকভাবে আকর্ষিত করছে। কারণ দিনে ৩-৪ কাপ চা না হলে আমার একদমই চলে না। সেখানে গ্রামে আসার পর এখনো চা পেটে পরে নি। তাই আমার সামনের চায়ের কাপ দেখে আমার লোভ কোনভাবেই সংবরণ করতে পারছি না। আবার লজ্জায় বলতেও পারছি না। আমি এক দৃষ্টিতে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে আছি৷ কিছুক্ষণ পর মেয়ের মা তার মেয়েকে নিয়ে হাজির হলো। আমার সামনের সোফাটাতেই বসানো হলো তাকে। আসার সময় মেয়ের সৌন্দর্যতার বর্ণনা শুনে ভেবেছিলাম কখন মেয়েটাকে স্ব-চক্ষে দেখব। অথচ এখন এখানে আসার পর চায়ের কাপ থেকে আমি দৃষ্টিই সড়াতে পারছি না।
এদিকে মা বলল দেখ তো বাবা কেমন লেগেছে? আমি মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই বললাম জ্বি মা চা খুব সুন্দর হয়েছে।
চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভুলে মেয়ের জায়গায় চা বলে ফেলেছি। নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললাম না মা চা নয় মেয়ে খুব সুন্দরী। আমার কথায় উপস্হিত সবাই হেসে দিয়েছে৷ খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটা লজ্জায় নীচ দিকে মাথা দিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সব মেয়েদের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই লজ্জায়৷ পরক্ষণেই মেয়েটা মাথা তুলে আমার উদ্ধেশ্যে বলল ধূসর ভাইয়া আপনি কী চা খেতে চাচ্ছেন?
আমি এবার সমস্ত লজ্জা ভেঙে বললাম যদি দিতেন তাহলে খুব ভালো হত। মেয়েটা আর কিছু না বলে ফ্লাক্স থেকে চা ঢালতে লাগলো। আমার হাতে চা দেওয়া মাএই আমি আপন মনে চা খেতে লাগলাম। এদিকে তারা বেশ আড্ডা জমিয়েছে। মা, মামা আমার প্রশংসা করতেই ব্যাস্ত। তবে ঐসবে আমি কান না দিয়ে চা খেতে লাগলাম। চা খাওয়া শেষে মেয়েটার প্রশংসা করতে ভুল করলাম না। চা সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। মা আমার উদ্ধেশ্যে বলল তুমাদের আলাদা কোন কথা বলার থাকলে পাশের রুমে যেয়ে বলতে পার। মায়ের কথায় মেয়ের বাবা- মা দুজনেই সম্মতি জ্ঞাপন করল। আমি বললাম না কথা বলার কী আছে। কথা বলার জন্যে তো সারা জীবন পরেই আছে। সাথে সাথেই মেয়েটা বলল আমার কথা আছে।
মেয়ের কথা মতো আমি মেয়েটার পিছন পিছন পাশের রুমে চলে গেলাম। রুমে যেতেই মেয়েটি বলল আপনি যে বললেন কথা বলার দরকার নেই। যার সাথে সারা জীবন থাকবেন খাবেন তার সম্পর্কে সবকিছু জানতে হবে না?
আমি বললাম হ্যা জানতে হবে৷ আপনার নামটাই আমি জানি না। যদি নামটা বলতেন তাহলেই খুশি হতাম। মেয়েটা অবাক হয়ে বলল কী? আপনি আমাকে দেখতে এসেছেন অথচ এখনো আমার নামটাও জানেন না? যাইহোক আমার নাম বৃষ্টি।
আমি বললাম আমার জীবনটা তাহলে মেঘ আর বৃষ্টিময় হয়ে গেল। বৃষ্টি বলল মানে? কী বললেন ঠিক বুঝলাম না। আমি বললাম বুঝবেন পরে। আচ্ছা আমাকে আপনার ভালো লেগেছে? বৃষ্টি হেসে দিয়ে বলল ভালো না লাগলে বাইরে থেকেই রিজেক্ট করে দিতাম। ভিতরে কে নিয়ে আসত? আচ্ছা আপনার মা বলল আপনি আপাতত কিছুই করেন না। কিছুই করেন না কেন? আমি বললাম কিছু করি না কোথায়? আমি মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করি। বৃষ্টি বলল কী সেটা?
আমি হেসে দিয়ে বললাম হাটাহাটি করি। বৃষ্টি অবাক হয়ে বলল হাটাহাটি কোন কাজ নাকি? আচ্ছা আপনি কখনও কারও প্রেমে পরেছেন?
আমি বললাম হ্যা আমি প্রায় রোজই কারও না কারও প্রেমে পরি। বৃষ্টি আবারও অবাক হয়ে বলল কী বলছেন এসব? আমি বললাম ঠিকই বলেছি৷ বৃষ্টি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল তাহলে এখন কার সাথে রিলেশনে আছেন? তাকে বিয়ে করবেন না? আমাকে যে দেখতে আসলেন। আমি বললাম আমি কারও সাথে রিলেশন করি না। বৃষ্টি রাগান্বিত হয়ে বলল একটু আগে যে বললেন প্রায় প্রতিদিনই কারও না কারও প্রেমে পরেন৷ আমি বললাম হ্যা পরি তো। ওসি সাহেবের প্রেমে পরেছি, শামসু ভাইয়ের প্রেমে পরেছি আবার এক মটরসাইকেল আরোহীর প্রেমেও পরেছি। আমার কথায় বৃষ্টি উচু স্বরে হেসে দিল। সে হাসির শব্দ নিশ্চই বাইরেও গিয়েছে৷ এ মেয়ে খুব বেশি জোরে হাসে৷ মেঘলাকে কখনও আমি এত জোরে হাসতে দেখিনি৷ পরক্ষণেই বৃষ্টি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল আরে বোকা আমি এই প্রেমের কথা বলিনি৷ বলেছি কোন মেয়ের প্রেমে পরেছেন? আমি বললাম না পরিনি তবে মেঘলা নামের একটা মেয়েকে ভালোই লাগে আমার। বৃষ্টি মেঘলার মতো ভ্রু কোচকে বলল ভালো লাগে? এই মেঘলাটা কে আবার শুনি? আমি বললাম বাইরে যেয়ে আকাশের দিকে তাকাবেন। মেঘলাকে দেখতে পাবেন। মেঘলা হলো মেঘেদের রাণী। বৃষ্টি আমার কথা শুনে বলল ধূর ভাইয়া কীসব বলেন আমার মাথায়ই ডুকে না। আচ্ছা আমি যদি এই বিয়েতে রাজি না হই আপনি কী করবেন? আমি বললাম কিছুই করব না শুধু ১ মিনিট নিরব থেকে শোক পালন করব৷ বৃষ্টি আমার কথা শুনে রাগ করল নাকি খুশি হলো বুঝতে পারলাম না। বৃষ্টি বলল আচ্ছা আপনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাস করবেন? আমি বললাম না আমার কিছু জিজ্ঞাস করার নেই। কারণ আপনার আগে থেকেই একজন ভালোবাসার মানুষ আছে। একথা বলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাব অমনি বৃষ্টি বলল এই দাড়ান৷ আমি বললাম জ্বী বলুন।
বৃষ্টি চোখ বড় বড় করে বলল আমি কাউকে ভালোবাসি আপনি কী করে জানেন? আমি হেসে দিয়ে বললাম অনুমান করে বলেছি। বৃষ্টি বলল অনুমান করে বলেছেন মানে? আমি বললাম দেখুন আপনার এত বয়স হয়েছে এখনো কাউকে ভালোবাসেন না এটার সম্ভাবনা মাএ ১০%। এখনকার অধিকাংশ ছেলে মেয়েরাই আরও আগে থেকেই এসব ভালোবাসার ক্লাসে ভর্তি হয়ে যায়। তাই অনুমান করে বললাম। বৃষ্টি আমতা আমতা করে বলল যাইহোক আমি আপনাকেই বিয়ে করব। আমি বললাম আপনি আমাকে বিয়ে করলে খুবই খুশি হব আমি। আপনার মতো এমন মেয়ে আমার ভাগ্যে আছে সত্যিই ভাবতেই পারছি না আমি। আমার কথায় মেয়েটা কিছুটা লজ্জা পেয়ে হেসে দিয়ে বলল আপনার চায়ের খুব নেশা বুঝতে পেরেছি। আমারও তাই। আচ্ছা আপনার এমন আর কোন নেশা নেই তো?
আমি হেসে দিয়ে বললাম জ্বী আছে। মদ পান করাও আমার একটা নেশা। সিগারেট ছাড়া তো একটা দিনও চলে না। তবে মদ বেশি খাইনা মাঝে মাঝে আর কী৷ আমার কথা শুনে মেয়েটির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মেয়েটি বলল আপনি মদ,সিগারেটও খান? আমি মাথা নেড়ে বললাম সামনে এটা নিয়মিতও হতে পারে। আচ্ছা কথা শেষ হলে যাই তাহলে। এই বলে আমি চলে এলাম বৃষ্টিকে রেখে। বাইরে বের হয়ে আমি মাকে বললাম মা মেয়ে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। মামাকে বললাম আপনি বিয়ের ব্যবস্হা করে আসুন আমি যাচ্ছি।
আমি এখন বাইরে বেড়িয়ে পরলাম। এখানে শহরের মতো গাড়ির জ্যাম, আওয়াজ নেই। গ্রামটা পুরো নিস্তব্দ হয়ে আছে৷ দূর থেকে একটা কোকিলের কণ্ঠ কানে আসছে বারবার। আমি ভাবছি এই সময় তো কোকিল ডাকে না। তাহলে এটা কেন ডাকছে? আমার মনে হচ্ছে কোকিল যেন আজ আমার কাছে তার গ্রামের সৌন্দর্যতা বর্ণনা করতে এসেছে।
বিকালের দিকে বাড়ি পৌছালাম। আজ পুরো গ্রাম ঘুরে দেখেছি। বাড়ি পৌছাতেই দেখলাম বাড়ির সবাই একসাথে বসে আছে। আমি ভাবলাম হয়ত আমার বিয়েরই প্রস্তুুতি নিচ্ছে। আমি মাকে বললাম তাহলে মা আমার বিয়ে কবে হচ্ছে? আমার কথার সাথে সাথেই মা রেগে গিয়ে বলল তোর কপালে বিয়ে নাই। মা প্রচন্ড রেগে গেলে আমাকে তুই বলে সম্মোধন করে। বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। আমি বললাম কী হয়েছে? রেগে আছ কেন? মা বলল তুই মেয়েকে ঐসব কী বলেছিস? তুই মদ খাস, সিগারেট খাস? কবে খেলি এসব? আমি হেসে দিয়ে বললাম ওহ এই ব্যপার। এখন খাইনা তবে ভবিষ্যৎতের কথা তো বলা যায় না। ধরো বিয়ে করার পর আমার ঐসব খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেল তখন বউ তো কথায় কথায় বলবে আগে জানলে বিয়ে করতাম না। তাই আমি আগে থেকেই বলে রাখলাম যেন পরে ঐ কথা বলতে না পারে। মা বলল হুম ভালো করেছিস। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবি ঐটাই ভালো। বিয়ে করা লাগবে না তোর। মেয়ে তোকে পছন্দ করেছিল শেষে ঐভাবে ঐ কথা না বললেই পারতি! আমি বললাম বাদ দাও তো মা। নতুন করে আবার মেয়ে খুজতে শুরু কর৷
এই বলে আমি আমার রুমে চলে এলাম। আমি ভাবছি জন্ম, মৃত্যুে, বিয়ে নাকি সব উপরওয়ালার হাতে মানুষ বলে। কিন্তুু আমার কাছে মনে হয় বিয়েটা মানুষের দ্বারা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। সৃষ্টিকর্তা শুধু জোড়ায় জোড়ায় পাঠিয়েছেন। কিন্তুু বিয়েটা হয়ত আমাদের ইচ্ছার মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন৷ কারণ আমি ঐসব না বললেই বৃষ্টির সাথে আমার বিয়ে হয়ে যেত৷ ঐসব বলেছি এই ভেবেই যে, যে কেউ আমার প্রতি সব নেগেটিভ ধারণা নিয়ে থাকুক। যেন আমার কাছে কারও কোন প্রত্যাশা না থাকে৷ অবশ্যে বৃষ্টি মেয়েটা দেখতে অসাধারণই ছিলো।
Me✍️
বি.দ্রঃ গল্পটি আমার মেঘের উপারে সিরিজের একটি পর্ব!!
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now