বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

স্মৃতির শরীর নেই

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান জেবা মায়মুনা(guest) (০ পয়েন্ট)

X #স্মৃতির_শরীরনেই #পর্বঃ১ #জেবা_মায়মুনা স্মৃতির শরীর নেই। কিন্ত রাতের অন্ধকারে, যখন সমস্ত নিঃশব্দে গিলে ফেলে চারপাশকে,তখন সেই শরীর হীন স্মৃতির ছায়া দেওয়ালে হাঁটে। সে ঘুমায় না। সে সপ্ন দেখে না। কিন্ত সে বাস করে---মানুষের ভেতরে, বাড়ির কোণে, পুরনো কফির কাপে লেগে থাকা ঠোঁটের দাগে। একটা গন্ধ... একটা শব্দ... কিংবা পুরনো ডায়েরির পাতায় অস্পষ্ট হাতের লেখা।এই সামান্য জিনিসেই খুলে যায় স্মৃতির সেই দরজা,যেটা একবার খুললে আর আগের মতো রাখা যায় না। মানুষ ভাবে, সে যা ভুলে গেছে,তা আর নেই। এই উপন্যাস সেইসব স্মৃতির কথা বলে যারা কাদেঁ,হাঁসে,অপেক্ষা করে--- কিন্ত কাঁদে না চোখ দিয়ে,হাঁসে না ঠোঁট দিয়ে,অপেক্ষা করে না সময় মেনে। তাদের শরীর নেই। তবুও তারা আছে। মনের ভেতরে,দেয়ালের ফাঁকে,বাতাসের ঘ্রাণে,ছায়ার মতো। তারা ফিরছে। তারা দেখছে। তারা খুঁজছে তাদের শেষ সমাপ্ত,সেই ভুলে যাওয়া প্রতিজ্ঞা। স্মৃতি যখন ছায়া হয়ে ফিরে আসে,তখন সে শুধু মন নয়,জীবন কেও গ্রাস করে। স্মৃতি এমন এক বস্ত--- যেটা মানুষ চোখে দেখতে পায় না, তবুও তার ওজনে বুক ভার হয় থাকে । হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও কিছু স্মৃতি মানুষ মনে রাখে, আর কিছু স্মৃতি লোক ইচ্ছে করে মগজের এক কোণে ধুলায় পরে থাকতে দেয়, কিছু মাত্রা কষ্ট বা ঘ্রাণ, একটা শব্দ--- সেই ধুলা উড়িয়ে ফেলে আবার তুলে আনে সবটা। এই উপন্যাস সেইসব এক স্মৃতিকে নিয়েই--- যার শরীর নেই, কিন্ত যার উপস্থিতি জীবিতদের মতোই জীবন্ত। ******************************************* অ্যার্লামটা বেজে উঠলো ঠিক সাত টা কুড়ি মিনিটে।বেজে উঠলো মানে জাগিয়ে দিল না,বরং মিষ্টির ঘুম ভেঙে গেল একরকম ঠান্ডা বাতাসে।চোখ মেলেই জানালার পর্দা অল্প হেলে আছে,তা দিয়ে সূর্যের তীক্ষ্ণ আভা আসছে।ঘরের নিঃশব্দতা একরকম চেনা---যেন এই নিঃশব্দতাই মিষ্টির সবচেয়ে পুরনো সঙ্গী। ---মিষ্টি!!উঠেছিস? 'ক'টা বাজে সে খেয়াল আছে?উঠে পর তাড়াতাড়ি, ভার্সিটির ক্লাস আছে তো! মায়ের গলা এলো রান্নাঘর থেকে।গলায় অভ্যাসের তাড়া, তাতে ছড়িয়ে আছে একটা অনুচ্চারিত ক্লান্তি। মিষ্টি উঠে দাঁড়াল ধীরে।তাঁর চলনে কোনো হড়বড়ানি নেই।নেই কোনো ব্যাস্ততা ---যেন সকালের প্রতিটি মুহূর্তকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই দেখলো ,তাঁর মা নাস্তা তৈরি তে ব্যাস্ত। --- Good morning মা! মা চুল বাঁধতে বাঁধতে পিছন ফিরে তাকালেন,মুখে এক টুকরো আলোর ঝলমল।আদুরে সুর নিয়ে বলল, --- Good morning সোনা মা।আমার মিষ্টি পাখিটার ঘুম ভেঙেছে? মিষ্টি চোখ কচলাতে কচলাতে বলল, ---হ্যাঁ মা ভাঙল,এখন খাবার দাও তাড়াতাড়ি,খিঁদে পেয়েছে খুব। মা চুলের ক্লিপ টেনে চুল বাধঁতে বাধঁতে বললেন, ---এই যে দিচ্ছি।সেই কখন ধরে ডেকে যাচ্ছি,তোর তো কোনো খবর ই নেই। মিষ্টি কিছু বলল না। টেবিলে চুপচাপ বসে পড়ল,হঠাৎ খেয়াল করল,মা এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রয়েছে। ---মা,এভাবে কি দেখছো? মা একটু হেসে বলল, কিছু নারে,খেয়ে চটজলদি রেডি হয়ে নে,ক্লাস আছে আবার। মিষ্টি খেয়াল করে মায়ের চোখজোড়ার এক কোণে জল জমে আছে।যা এই মুহূর্তে মা লুকোনোর চেষ্টা করছে। চেয়ার ছেড়ে মায়ের কোলে গিয়ে বসে চোখের কোণে থাকা জলটুকু মুছতে মুছতে বলল, ---কি আবার ভাববো, আমার সমস্ত ভাবনা,ইচ্ছে, আকাঙ্খা জুড়ে তো শুধু তোর বসবাস। ---তা তো জানি ই মা।কিন্ত তুমি কি নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করো বলতো? মা মিষ্টির মাথায় হাত রেখে বলে, আমার দুশ্চিন্তা টাও যে শুধু তোকে নিয়ে রে, কবে যে তোকে একজন সঠিক মানুষের কাছে তুলে দিব! মিষ্টি বিরক্তির সুরে বলল, ---ধুর!!! মা তুমিও না এসব কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করো হ্যাঁ?আমি তোমাকে একলা রেখে কোথাও যাচ্ছি না,এই বলে দিলাম। মা এবার চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, ---তুই বড় হ মা,অনেক বড় হ, এটাই আমার শেষ চাওয়া। মিষ্টি আবারও বিরক্তির সুরে বলল, ---হ্যাঁ হ্যাঁ হবো,এখন কান্নাকাটি বন্ধ আর আমাকে বিদায় দাও,ভার্সিটির সময় হয়ে গিয়েছে। মা এবার একটু হেসে কিছু না বলে মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। সকাল টা জেনো একটু ভারি হয়ে উঠল,কিন্ত তবুও এক ধরনের শান্তি ঘিরে রইলো। ***************************** পুরো নাম রুবাইয়া তাসনীম মিষ্টি। পরিবার বলতে মা ই রয়েছে,যা তাঁর---পৃথিবী।বন্ধু মহলে রয়েছে চারজন---জয়- মিষ্টি,রাকিব-দৃষ্টি। শেহজাদ খান জয়,খান পরিবারের এক মাত্র নাতি! তবে একমাত্র নাতি হওয়াতেও তাঁর মধ্যে নেই কোনো অহংকার,নেই কোনো রুক্ষতা সে বরাবরই নম্রভদ্র,সুদর্শন,মেধাবী।তবে সে ইচ্ছে করে কারো সাথে লাগে না,কিন্ত কেউ ওর সাথে লাগতে আসলে তার আর রক্ষে নেই!! রাকিব হচ্ছে সবচেয়ে সরল-সোজা,ভোলাভালা,ওকে যা বুঝাবে তাই বুঝবে,আর এই সরলতার সৎ ব্যবহার করে দৃষ্টি!বাবার এক মাত্র কন্যা হওয়ায় রাগ,জেদ টা বরাবরই বেশী।ওর শরীররে যত রাগ আছে সব রাগ ঝারবে রাকিবের উপর।বেচারা রাকিব, শতো লাঞ্চনার পরেও দৃষ্টি কেই তাঁর ভালোবাসা চাই। আর মিষ্টি? সে তার নামের মতোই মিষ্টি,তার মায়াভরা চেহারা মুহূর্তেই যেকোনো পুরুষ কে ঘায়েল করতে সক্ষম।ওরা চারজন খুব ভালো বন্ধু যাকে ইংরেজীতে বলে Best friend. **************************** মিষ্টি বাড়ির গেট পেরিয়ে বেরোতেই সকাল টা যেন একটু থমকে গেল। ভার্সিটির গেটের পাশে রোদের নিচে দাড়িয়ে আছে জয়।হঠাৎ কর্ণকুহরে ভেসে আসছে চেনা পায়ের শব্দ,যেন সকালের নিঃশব্দ বাতাসে কারো নামে বাজানো ঘন্টা। মিষ্টি হেটে আসছে ধীরে ধীরে। ওকে দেখে জয় নিজের অজান্তেই থমকে যায়।সাদা লম্বা গাউনের বুকজুড়ে হালকা স্টোনের কাজ,গলায় কালো জরজেটের ওরনা,হাত ভরা রেশমি কালো চুড়ি, কানে ছোট্ট একজোড়া কালো দুল, কপালে এক ফোঁটা কালো টিপ,চোখে মোটা কাজল,মুখে কইছে না বলা দৃঢ়তা আর খোলা মেহেগুনি চুল----ঠিক যেন শরতের দুপুরে উড়ে যাওয়া কোনো শুভ্র মেঘ। এই এক ফালি শুভ্র মেঘ যেন প্রতিদিনই নতুন করে ঘূর্ণি তোলে জয়ের মনে। আগ বাড়িয়ে নিজেই মিষ্টির কাছে গিয়ে বলল, --- Good morning মিষ্টি।কি খবর? ওর কন্ঠে ছিল বৃষ্টি পড়া জানালার মৃদু শব্দ। মিষ্টি মুখ তুলে তাকায়,ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। --- Good morning জয়।এইতো চলছে।তোর খবর কি? Assignment সব শেষ? জয় কিছু বলতে যাবে---এমন সময়েই শুনতে পেল পেছনে এক ঝাক তড়পানো শব্দ--- --- Rakiiiiiiiiiiibbbbbbb er bacchaaa!! দৃষ্টি রাগে ফুলে ফেঁপে দাড়িয়ে আছে,চোখে যেন আগুন জলছে! রাকিব তাড়াহুড়ো করে ভার্সিটির দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে---কাধেঁ ব্যাগ,শার্টের বোতাম একটু খোলা,চুল গুলো এলোমেলো। রাকিব গেটে ঢুকেই হোঁচট খেয়ে ব্যাগ ঠিক করতে করতে বলল, Hey wait!!আমি এখনও বিয়ে করেনি,আমার কোনও বাচ্চাকচ্চা নেই,তবে তুই রাজি থাকলে বিয়ে করব আর....আরে দাঁড়া দৃষ্টি!শোন তো একবার লাস্ট বার তো সময়মতোই এসেছিলাম। ---ওওও তাই নাকি! তোর ওই লাস্ট বারের গল্প আমি গুনে গুনে মুখস্থ করে ফেলেছি! একে তো দেরি করে এসেছিস তারপর flirt করছিস? রাকিব দুই হাত folded করে বলে, ---sorry,sorry,sorry! রাগ কমাও আমার পৃথিবী!আমি চলন্ত বাসের মতো ঠিক সময়ে দাঁড়াতে পারি না! দৃষ্টি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ---আবার "পৃথিবী" বলিস, পৃথিবীই যদি হতাম তাহলে সূর্যের চারদিকে ঘুরতিস।কিন্ত না তুই তো শুধু মোবাইলের চার্জার খুজিস! রাকিব তখন করুনার সুরে বলল, ---এবারের মতো ক্ষমা করে দেও!!my earth,my moon and everything!!! ওদের এই চেনা কান্ড দেখে জয় বলে উঠল, ----আহাহা......এমন প্রেমকাহিনি Shakespeare ও লিখতে পারেনি। মিষ্টি মুখ টিপে হাসে। জয় পাশ থেকে হালকা হাসি দিয়ে বলে, ---তোদের ঝগড়ার পর্ব শেষ হলে চল ভিতরে ঢুকি?নাকি এখানেই ক্লাস করার ইচ্ছে আছে? রাকিব তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, ---করলে কিন্ত মন্দ হয় না বল। চারজনই হাসতে হাসতে একসাথে হাটতে শুরু করে ক্লাসের ভিতর।চারপাশের সকাল টা একটু বেশিই কোলাহল,কিন্ত তাদের চারজনের ভেতরেই একটা গোপন ছন্দ,অদেখা বোঝাপড়া। জয় হাঁটার ফাঁকে একবার মিষ্টির দিকে তাকায়,চোখে সেই এক ই কাজল,এক ই নিরবতা। ও জানে----- মেয়েটা হাজার মানুষের ভিড়ে থেকেও বড্ড একা! এই ছিল সেই দৃশ্য---যেখানে ভালোবাসা বলা হয় না,শুধু চোখে ভেসে থাকে,আর বন্ধুত্ব ঝগড়ার মধ্যে ও নিজের ছায়া খুঁজে পায়। চলবে......?? Response please.......!!


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ স্মৃতির শরীর নেই

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now