বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

রঙিন মাছের অভিশাপ

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Rakib Rubel (০ পয়েন্ট)

X রঙিন মাছের অভিশাপ নওফেল ছোটবেলা থেকেই মাছ খুব ভালোবাসে। বাজারে গেলে রঙিন মাছের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সে অপলক দৃষ্টিতে মাছগুলোর নাচন দেখত। নীল, লাল, কমলা, সোনালি—রকমারি রঙের মাছগুলো যেন ছোট ছোট জীবন্ত রত্ন। একদিন তার মনে হলো, নিজের জন্য একটা রঙিন মাছ কিনবে। অদ্ভুত মাছ পাড়ার এক পুরনো দোকানে গিয়ে সে খুঁজতে লাগল একটা সুন্দর মাছ। দোকানটা বাকি সব দোকানের মতো ঝকঝকে ছিল না; ধুলো জমে থাকা কাচের একুরিয়ামে কয়েকটা মাছ অলসভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। নওফেল হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছিল, ঠিক তখনই একটা একুরিয়ামের কোণায় চোখ পড়ল তার। এটা যেন অন্যরকম। একটা মাছ ধীরে ধীরে অন্ধকারের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। গাঢ় নীল রঙ, লাল আঁশ, আর চোখ দুটো অস্বাভাবিক জ্বলজ্বল করছে। নওফেল অবাক হয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল, — "এই মাছটা কত?" দোকানদার একটু চুপ করে থেকে বলল, — "এই মাছ তুই নিবি? এটা কিনিস না বাবা, এটা... অন্যরকম।" — "অন্যরকম মানে?" — "এই মাছকে কেউ কিনতে চায় না। যারা কিনেছে, তারা কেউ ভালো ছিল না। অনেকেই এটা ফিরিয়ে দিয়ে গেছে বা… পালিয়েছে!" নওফেলের কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। সে দোকানদারের কথা পাত্তা না দিয়ে মাছটা কিনে নিল এবং নিজের একুরিয়ামে এনে ছেড়ে দিল। অদ্ভুত ঘটনা সেই রাতেই নওফেল অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখল। সে দেখল, ঘরের এক কোণায় একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখদুটো ঠিক নীলচে লালের মতো জ্বলছে, ঠিক মাছটার মতো! ভয়ে চমকে উঠে ঘুম ভেঙে গেল তার। বিছানা থেকে উঠে একুরিয়ামের দিকে তাকিয়ে দেখল—মাছটা নেই! অথচ ঢাকনা দেওয়া ছিল, তাই বাইরে পড়ে যাওয়ার কথাও নয়। তারপরই হালকা এক ফিসফিসানি কানে এল। — "আমাকে মুক্ত করো..." নওফেল আতঙ্কিত হয়ে আলো জ্বালাল। কিন্তু তখন আর কিছুই শোনা গেল না। একুরিয়ামে আবার মাছটাকে দেখা গেল, স্বাভাবিকভাবে সাঁতার কাটছে, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিদিন রাতে কিছু না কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকল। কখনো জানালা খুলে যাওয়া, কখনো দরজায় খটখট আওয়াজ, কখনো দেয়ালে ছায়া দেখা যাওয়া। একদিন রাতে, সে অনুভব করল কেউ তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল তার। হাত-পা নড়ছিল না, চোখ খুলতে পারছিল না। তখনই আবার সেই ফিসফিসানিটা শুনতে পেল, — "আমাকে মুক্ত করো...!" রহস্যের খোঁজে পরদিন সকালে, ভয়ে নওফেল দৌড়ে দোকানদারের কাছে গেল। — "আপনি বলেছিলেন, এই মাছ অন্যরকম। এটা কী? এটা কি আমার ক্ষতি করবে?" দোকানদার তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। — "শুধু তোকে বললেই হবে না বাবা, তোকে দেখতে হবে এটা আসলে কী। তোর ঘরে কিছু অস্বাভাবিক দেখেছিস?" নওফেল মাথা নেড়ে সব ঘটনা খুলে বলল। দোকানদার গম্ভীর গলায় বলল, — "এই মাছ আসলে মাছ না, এটা একটা আত্মা। অনেক অনেক বছর আগে এক কিশোর নদীতে ডুবে গিয়েছিল। কেউ তার লাশ খুঁজে পায়নি। তার আত্মা এখন এই মাছের ভেতরে বন্দী। সে মুক্তি চায়, কিন্তু কেউ জানে না কীভাবে তাকে মুক্ত করতে হয়।" নওফেলের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। — "তাহলে আমি কী করব?" — "তুই যদি এই মাছকে নদীতে ফেলে দিস, তাহলে হয়তো মুক্তি পাবে। কিন্তু সাবধান, এর আগে যদি সে তোকে নিয়ে যেতে চায়..." শেষ রাত সেদিন রাতেই নওফেল একুরিয়ামের কাছে বসে মাছটার দিকে তাকিয়ে রইল। মাছটা স্থির হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল, যেন কিছু বলতে চায়। হঠাৎ এক ঝলক আলো জ্বলে উঠল ঘরের ভেতর! নওফেল দেখল, তার সামনে সেই ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। মানুষের অবয়ব, কিন্তু চেহারা অস্পষ্ট। শুধু তার চোখ দুটি আগুনের মতো জ্বলছে। — "তুমি কে?" — "আমাকে মুক্ত করো..." নওফেল বুঝতে পারল, সে দেরি করতে পারবে না। মাছটাকে একটা পাত্রে ভরে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। রাতের অন্ধকারে সে একা একা নদীর দিকে ছুটল। পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল, কিন্তু পেছনে তাকানোর সাহস হলো না তার। নদীর ধারে পৌঁছে সে পাত্রটা খুলে মাছটাকে পানিতে ছেড়ে দিল। সাথে সাথে নদীর পানি আলোতে ঝলমল করে উঠল, আর একটা চাপা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ভেসে এল বাতাসে। তারপর সব আবার শান্ত হয়ে গেল। নওফেল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল, তারপর ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল। সেদিন রাত থেকে আর কোনো ছায়ামূর্তি তার স্বপ্নে আসেনি। তবে মাঝেমধ্যে, রাতে নদীর ধারে গেলে কেউ কেউ বলে, সেখানে নীলচে আলো দেখা যায়। আর পানির নিচে যেন একটা মাছ সাঁতরে বেড়াচ্ছে, যার চোখ দুটি অন্ধকারের ভেতরেও জ্বলজ্বল করছে...


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১০৪১ জন


এ জাতীয় গল্প

→ রঙিন মাছের অভিশাপ

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now