বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

দিনশেষে আপন নীড়ে

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাফিজ আহমেদ (০ পয়েন্ট)

X দিনশেষে আপন নীড়ে নাফিজ আহমেদ ভাবতেই কেমন যেন স্মিত কম্পন সৃজন করছে হৃদয়ের অতল গহব্বরে,আর কয়েকদিন পরেই ফিরব আপন নীড়ে। আজ সাত মাস হলো বাড়ি থেকে এসেছি। লেখা পড়ার জন্য এখন ঢাকাতেই থাকতে হয়। এবার এডমিশন দিচ্ছি বিধায় অনেক দিন বাসায় যেতে পারিনি। রমজানের শেষে পরিবারের সাথে ঈদ কাটানোর উদ্দেশ্য যাব নিজ বাসভবনে। আচ্ছা বাসায় সবাই কি আমার জন্য অপেক্ষা করছে? আমার এখনও মনে আছে শেষ যখন বাসা থেকে চলে আসছিলাম হৃদয়ের দ্রবীভূত বাষ্পগুলো দুচোখ বেয়ে অশ্রু হয়ে ঝরে পরছিল জমিনের বুকে। জমিন তাকে সাদরে আলিঙ্গন করে জায়গা দিয়েছিল আপন বক্ষদেশে। পেছনে ফিরে দেখি মা-বাবার চোখের কোনায় জমা হয়েছে বিচ্ছেদের বেদনাবিধুর অশ্রুর বারিধারা। যেন তারা আপন মনে ব্যক্ত করছে আমাদের রেখে যাসনে মুশফিক। সময় কেন এত নিষ্ঠুর! আজ সাত মাসের মধ্যে একটি বারের জন্যও আমাকে যেতে দিল না আপন গৃহে! দেখতে দিল না মা-বাবার মায়াবী অবয়ব খানা! যাদেরকে না দেখে একটা দিনও পার করিনি, কিন্তু সময়ের কি আজীব সিদ্ধান্ত সেই মা-বাবাকে না দেখে এখন অতিবাহিত করতে হচ্ছে মাস কি মাস। কয়েকদিন পর বাড়ি যাব এইজন্য বাড়ির কথা ভিশন মনে পরছে। গ্রামের রেখে আসা সৃতিগুলো খুব বেশি স্মরণ হচ্ছে। গত রমজানেও পুরো মাস টা বাসায় কাটিয়েছিলাম কিন্তু এবার হয়ে উঠল না। গত রোজায় কখন কি করেছিলাম কিভাবে সময়গুলো অতিবাহিত করেছিলাম,মা-বাবার সাথে কিভাবে ইফতার করেছিলাম সবকিছুই আজ খুব বেশি মনে পরছে। মনে হচ্ছে এখুনি চলে যায়৷ দেখতে দেখতে অতিবাহিত হচ্ছে প্রতিটি প্রহর। নিজের সাথে নেওয়া যাবতীয় সামগ্রি গুছিয়ে নিয়ে সকলের সাথে খোশগল্পে মশগুল হলাম। বাড়িতে গিয়ে কখন কি করব,কিভাবে দিনগুলো অতিবাহিত করব এইসব নিয়েই তাদের সাথে আলোকপাত করছি। এইতো আর চারদিন পরেই বাড়ি যাব ভাবলেই কেমন যেন বুকের পরম তলে আনন্দের যশ তুলছে। অবশেষে সমস্ত কণ্টকাকীর্ণকে উপেক্ষা করে কোন এক কাক ডাকা ভোরে রওনা করব আপন নীড়ের খোঁজে। ম্যাছ থেকে যাওয়ার সময় সকলের কাছ থেকে বিদায় নিব। নিজের কাছে থাকা তল্পিতল্পা গুটিয়ে এক দীর্ঘ প্রহর পর পাড়ি দিব নিজ বাসভবনের উদ্দেশ্য। চোখের কোনায় কেন জানি অশ্রু কণা জমা হবে! হয়তো দীর্ঘ দিন পর নেতৃপল্লব দুটি কাছের মানুষগুলোর মায়া মাখা অবয়ব গুলি দেখবে তাই সেই আনন্দে বারংবার কেঁদে দিচ্ছে। সকাল সাতটা বাজে পথে উঠব। বাসে করে টঙ্গীর এশিয়া পাম্প থেকে একবারে বিমান বন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে নামবো। বিমান বন্দর স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে কমলাপুর স্টেশনে নামবো। পরিশেষে কমলাপুর স্টেশন থেকে ১০:৪৫ রুপশী বাংলা আন্তঃনগর এক্সপ্রেসে চড়ে পৌঁছাবো আপন জেলা যশোরে। সেখান থেকে বাসে অথবা ট্রেনে আসব নিজ উপজেলায়। অবশেষে একটা ছোট্ট ভ্যান গাড়ি নিয়ে চলে যাব নিজ বাড়িতে সবকিছু ভাবতেই কেমন যেন হৃদয়ের অতলে সুখ পাখিটা ডানা মিলিয়ে উড়ে যাচ্ছে আপন গন্তব্য। পাতা ঝরা স্নিগ্ধ বিকেলে পৌঁছাবো আমার গৃহে, বাড়ীর অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে হারিয়ে যাব কল্পনার জগতে আচ্ছা এতদিন আমি এই সুখময় দৃশ্য দেখার জন্য একবারও কি আসতে পারলাম না! নানান ভাবনার ভিতর পিছন থেকে হঠাৎ হঠাৎ ডেকে যাবে আমার জননী। তাঁর মায়ায় ভরা চেয়ারা টা দেখে বুকের ভেতর ধাক্কা দিয়ে উঠবে। নিজের ভিতর নিমজ্জিত থাকা সকল ভালোবাসা উজার করে আলিঙ্গন করে নিব আম্মুকে। হঠাৎ আমি অবলোকন করব হাসতে হাসতে আম্মু কেঁদে দিয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করব আম্মু কাঁদছ কেন? সে তার আপন কন্ঠে বলে উঠবে ও কিছু না। তুই আয় সবকিছু রেখে দে আমি নিজের হাতে তোর জন্য রান্না করেছি আয় খেয়ে নিবি। এতক্ষণ সবকিছু আপন নয়নে দেখে যাচ্ছে আমার আব্বু। মোবাইলের পিছন থেকে যে আমার জন্য কতবার কেঁদেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। আব্বু নিজের বক্ষদেশে আমাকে জড়িয়ে নিবে। তাঁর চোখ দুইটি লাল হয়ে যাবে। চোখের ভিতর অশ্রু টলমল করবে। আমি সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করব। কেননা আমিতো জানি আজ সাত মাস পর আব্বু আমাকে দেখে আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারছে না। আসলে এটা আবেগ না বলে ভালোবাসা বলাটাই বাঞ্ছনীয়। সন্তানের প্রতি বাবার নিঃসার্থ ভালোবাসা যা পৃথিবীর সবকিছু কেই হার মানাবে। এতক্ষণে আম্মু রান্না ঘর থেকে ডাক দিবে খাওয়ার জন্য। পাশেই রয়েছে বোনেরা। আমার দুই বোন। বড় আপুরও আমাকে দেখে একই অবস্থা। ছোট্টটার কথা বা নাই বললাম আগের দিন হলে সর্বপ্রথম ওকে নিজের বুকের পরম তলে জায়গা দিতাম কিন্তু সেই অবস্থাটা ও নিজেই ধসে দিয়েছে। আম্মু বারংবার রান্না ঘর থেকে আমাকে ডেকে যাবে। এ যেন মায়াবী ডাক। আমি হাতমুখ ধৌত করে রান্না ঘরে যাব। সামনেই অপেক্ষা করছে মায়ের হাতের রান্না। আহ! আজ কতদিন পর এই সুন্দর রান্না দেখছি। কত দিন মায়ের হাতের রান্না তার সামনে বসে খেতে পারিনি। শেষবার খেয়েছি ম্যাছে ,চাচাতো ভাইয়ের কাছে পাঠিয়েছিল। আম্মু আমার সামনেই বসে আছে। আমি বলছি আম্মু তুমি খাও। সে বলল না তুই খেয়ে নে তারপর আমি খাবানে। মায়েদের একটি কমন কথা এটা, তাঁরা পরিবারের সকলকে খাওয়া-এ নিজেরা খাই। আমি খাবার খাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে ঘুরব নিজ গ্রামে। এই গ্রামের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিহিত আছে আমার স্মৃতি। এই সব কিছু ভাবতে ভাবতে পাড়ি জমালাম ঘুমের দেশে। আম্মু তোমার মুশফিক আর কয়েকদিন পরেই তোমার বুকে ফিরছে। তুমি তেপান্তরের মাঠে অপেক্ষা কর।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ দিনশেষে আপন নীড়ে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now