বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
চলন্ত ট্রেনে হঠাৎ দেখা – ০৫
লেখক: নাফিজ আহমেদ
ট্রেন ছুটে চলছে শহরের বুক চিরে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে আমরা দু’জন পাশাপাশি সিট পেলাম। চারপাশে রাতের নিস্তব্ধতা, কেবল ট্রেনের ছুটে চলার ছন্দ আর মাঝেমধ্যে হালকা বাতাসের কোমল স্পর্শ—সবকিছু মিলে মনে হচ্ছিল, নিঃশব্দেই যেন কেউ কিছু বলে যাচ্ছে।
আমার পাশে বসে থাকা মেয়েটি—যার চোখে এখনো বাবার জন্য অশ্রু ঝরে পড়ে—ধীরে ধীরে যেন নিজের ভেতরে ভেঙে পড়া দেয়ালগুলো সরিয়ে আমাকে একটু একটু করে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর, হঠাৎ সে আমাকে তার সঠিক নাম্বারটা দিল। যদিও আগেও একটি নাম্বার দিয়েছিল, সেটা ভুল ছিল—হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই। কিন্তু এবার, যখন আমি বিমানবন্দর স্টেশনে না নেমে তার সঙ্গে জয়দেবপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, কিছুক্ষণ পর সে নিজের ফোন বের করে আমাকে তার আসল নাম্বারটা দিল। তবে সেটি তখন সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। জানি না, আদৌ কোনোদিন খুলবে কিনা! যদি খোলে, হয়তো আবার তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।
আমি তাকিয়ে রইলাম তার চোখের গভীরে, যেন কোনো হারিয়ে যাওয়া গল্প খুঁজে ফিরছি। সে চোখ ফিরিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। তারাভরা আকাশটাকে দেখে মনে হলো, যেন প্রকৃতি আজ আমাদের গল্পের সাক্ষী হতে চায়।
ট্রেন ছুটে চলছে, কিন্তু সময় যেন থেমে গেছে। এই নিরব মুহূর্তে, হঠাৎ করেই ইচ্ছে হল তার হাতটি ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু এমন চাওয়াটা কি সম্ভব? মনে মনে বললাম—
"ভয় নেই, আমি হাত ধরার সুযোগ চাইনি... তবে যদি একদিন তুমি নিজে থেকেই দাও—তাহলে হয়তো কোনোদিন তা ছেড়ে দেবো না।"
সে মুখ ফিরিয়ে চুপচাপ বসে রইল। কিছু বলল না, কিন্তু তার চোখ যেন অনেক কথা বলে গেল।
রাত যত গভীর হচ্ছে, আমাদের গল্প ততই অন্তরঙ্গ হয়ে উঠছে। আমার মন বলছে—এই মেয়েটি যেন অবহেলায় পড়ে থাকা কোনো কবিতা, যার প্রতিটি পঙক্তি বুঝতে দরকার কেবল একটু সময়, একটু ভালোবাসা।
আমি মৃদু হাসলাম। মনে মনে বললাম—
"হয়তো এই ট্রেনের গন্তব্য শুধুই জয়দেবপুর নয়... আরও কিছু, আরও গভীর কিছু..."
সে হেসে তাকাল আমার দিকে। চাঁদের আলোয় তার মুখটা ঝলমল করছিল। বুকের ভেতর এক নতুন গল্প বুনতে শুরু করলাম। ভাবতে থাকলাম—এই চাঁদমাখা মুখটা কি আবারও দেখা হবে?
বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর আসতে ত্রিশ মিনিট লাগে। পুরোটা সময় কথা বলতে বলতে চলে গেল। ট্রেন জয়দেবপুর স্টেশনে এসে পৌঁছাল। হৃদয়ের গভীরে এক অজানা ধাক্কা। বারবার মনে হচ্ছিল—এই পথটা যদি আরেকটু দীর্ঘ হতো!
আমরা ট্রেন থেকে নামলাম। লিজা আগে আগে নেমে গেল, আমি মালামালের জন্য একটু দেরি করলাম। তারপরও দেখলাম, সে নিচে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
প্ল্যাটফর্ম থেকে আমরা সামনে এগিয়ে গেলাম। তখনই মনে হলো আমার খিদে পেয়েছে। বললাম—
"চলেন, কিছু একটা খেয়ে নিই?"
সে সম্মত হলো। কিছুদূর গিয়ে একটা দোকান দেখতে পেলাম। ঠিক তখনই তার ফোনে একটি জরুরি কল এলো—তাকে দ্রুতই কোথাও যেতে হবে।
বললাম,
"ঠিক আছে, আজ না হয় খাওয়ানো তোলা থাক—পরে কোনোদিন দিবেন!"
সে হেসে বলল,
"আচ্ছা ঠিক আছে।"
স্টেশন পার হয়ে আমরা রাস্তার ধারে চলে এলাম। তাকে বললাম,
"আপু, আপনি ইজিবাইকে করে চৌরাস্তায় চলে যান। ওখান থেকে কোনাবাড়ির গাড়ি পেয়ে যাবেন।"
পাঠকবৃন্দ, অবাক হচ্ছেন আমি তাকে ‘আপু’ বললাম কেন? মেয়েটি আমার থেকে তিন বছর বড়, তাই শুরু থেকেই আমি তাকে 'আপু' বলে সম্বোধন করেছি। তবে এই ‘আপু’-র পেছনে যে এক অন্যরকম আবেগ কাজ করে, তা তো সহজে বলা যায় না।
লিজা ইজিবাইকে উঠল। আমি পেছন থেকে বললাম—
"নাস্তা করানো কিন্তু তোলা রইল!"
সে হেসে বলল,
"ঠিক আছে।"
কিন্তু কেন জানি, তাকে ছেড়ে যেতে মন চাইল না। কিছু না ভেবেই আমিও ইজিবাইকে উঠে পড়লাম। লিজা একটু অবাকই হলো।
বললাম,
"চলেন, আমিও চৌরাস্তায় যাই। সেখান থেকে আজমেরীগ্লোরি বা বলাকা বাসে টঙ্গী চলে যাবো।"
আবারও আমরা গল্পে মগ্ন হলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম—
"আমাদের কি আর কখনো দেখা হবে?"
সে বলল—
"হতে পারে..."
ইজিবাইক চলছে আপন গতিতে। মন চাইছিল চালককে বলি—"এই মিয়া, আস্তে চলেন!"
তাকে খুনসুটির ছলে বললাম—
"এই পথ যদি শেষ না হতো, বলো তো কেমন হতো?"
সে আবেগঘন কণ্ঠে বলল—
"জীবনের কিছু কিছু পথ শেষ না হলে আবার সমস্যাও হয়..."
আমি হালকা হেসে চুপ করে গেলাম।
চৌরাস্তা এসে গেল। এবার সত্যিই বিদায়ের সময়। আমাদের পথ দুই দিকে বিভক্ত—লিজা যাবে কোনাবাড়ি, আমি যাব টঙ্গী। ইচ্ছে করলেও মালপত্রসহ এত রাতে তার সঙ্গে যাওয়া সম্ভব নয়।
ইজিবাইক থেকে নামার পর আমি ভাড়া দিতে গেলাম, কিন্তু লিজা বারবার বলল সে দেবে। শেষমেশ জোর করে আমিই দিলাম।
বিদায় মুহূর্ত। তাকে জিজ্ঞেস করলাম—
"আপনি কিছু খাবেন?"
সে বলল—
"না, আর এই নিন, আপনার পানির বোতল।"
আমি বললাম—
"না, আপনি রাখুন।"
তবুও সে জোর করে দিতে চাইলো। শেষমেশ আমি বোতলটা নিলাম না।
কিছুদূর হেঁটে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই জায়গায়, যেখানে আমাদের পথ চিরতরে ভিন্ন হয়ে যাবে।
আমি বললাম—
"ঠিক আছে, যান তবে। তবে রাতের খাবার, গাড়িভাড়া আর পানির বোতল—সবই কিন্তু তোলা রইল, ফেরত দিতে হবে!"
লিজা হেসে বলল—
"আচ্ছা ঠিক আছে, কোনো একদিন সব দিয়ে দেবো।"
হাসিমুখে বিদায় নিলাম, যদিও মুখের হাসির আড়ালে ছিল এক গভীর বেদনা। ও চলে যেতে লাগল... আমি এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম।
জানি না, আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা!
হয়তো ওর মায়াভরা চেহারাটা আর কোনোদিন দেখা হবে না,
আবার হয়তো একদিন দেখা হবেই—
যে দেখা হয় চিরকালের জন্য।
ও চলে গেল... বাতাসে মিশে হারিয়ে গেল তার অস্তিত্ব।
আমিও আমার গন্তব্যে রওনা দিলাম। আজমেরীগ্লোরি বাসে করে ফিরে এলাম নিজ ঠিকানায়। এশিয়া পাম্পে নেমে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ফেলে এলাম...জানিনা তার মুখের স্মিত হাসি আর কখনো দেখার সুযোগ হবেনা। জানিনা তার কালো কেশের গন্ধে আর কখনো অচিনপুরে হারিয়ে যাবো কিনা। তবে শেষ মেশ বলি যেখানে থেকো সুখী থেকো ভালো থেকো।
পাঠকবৃন্দ,
আবার যদি কোনোদিন মেয়েটির সঙ্গে আমার দেখা হয়, তাহলে এই গল্পের পরবর্তী পর্ব আপনাদের জন্য নিয়ে আসব। ইনশাআল্লাহ।
খুব শীঘ্রই তার খোঁজে বের হবো।
তাতে আরও কয়েকটি পর্ব আপনারা নিশ্চয়ই পাবেন। ইনশাআল্লাহ।
(অসমাপ্ত)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now