বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

চলন্ত ট্রেনে হঠাৎ দেখা -০৪

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাফিজ আহমেদ (০ পয়েন্ট)

X চলন্ত ট্রেনে হঠাৎ দেখা - ০৪ লেখকঃ নাফিজ আহমেদ আমরা আর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে উপস্থিত হলাম। এখান থেকেই রাত ৮:৪৫-এ “দ্রুতযান এক্সপ্রেস” পঞ্চগড় অভিমুখে যাত্রা করবে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলাম প্রায় বিশ মিনিট। এর মধ্যেই চোখের সামনে চিত্রা এক্সপ্রেস চলে গেল। হঠাৎ লিজা বলল, — “আপনি চলে যান, আমি একাই যেতে পারব।” আমি তাকিয়ে বললাম, — “তা কি করে হয়? আপনাকে একা রেখে আমি কিভাবে চলে যাই বলুন?” এই কথোপকথনের মাঝেই দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করল। আমরা দু’জনেই ট্রেনে ওঠার জন্য হাঁটতে শুরু করলাম। ট্রেনের একেবারে শেষের দিকে দুটি খালি সিট দেখে বসে পড়লাম। প্রায় বিশ মিনিট আমরা পাশাপাশি বসে গল্পে মেতে উঠলাম। সে তার জীবনের নানা ঘটনা ভাগ করে নিচ্ছিল আমার সঙ্গে। আর আমি, চুপচাপ, মনোযোগ দিয়ে তার বলা কথাগুলো শুনছিলাম। জানলাম, মেয়েটির বাবা মারা গেছেন—এক বছর এক মাস হলো। তিনি আগে একজন চাকরিজীবী ছিলেন, পরে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এই দুর্নীতিপরায়ণ পৃথিবীতে সৎভাবে টিকে থাকা কি সহজ? চট্টগ্রাম থেকে মাল আনতে গিয়ে একবার সম্পূর্ণ ট্রাকটি ডাকাতি হয়। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তার পিতা লিটন সাহেব স্ট্রোক করেন। সেই আঘাত আর সইতে না পেরে, শেষমেশ তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান। লিজা যখন কথাগুলো বলছিল, আমি লক্ষ করলাম—তার চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দুগুলো মুক্তোর মতো চিকচিক করছে। হয়তো আজ বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ছে তার। মনে হচ্ছিল, আজকের পৃথিবী তার জন্য ভীষণ ভারী হয়ে উঠেছে। আমি-ও মাঝে মাঝে আমার জীবনের কিছু গল্প ভাগ করে নিচ্ছিলাম তার সঙ্গে। জানতে চাইলাম, — “আপনি জয়দেবপুরে কী করেন?” সে উত্তর দিল, — “আমি ওখানকার একটি পাবলিক হাই স্কুলে চাকরি করি।” শুনে কিছুটা হতবাক হয়ে গেলাম। মাত্র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে সে—এই বয়সে তার তো বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর কথা, স্বপ্ন সাজানোর কথা। অথচ সে চাকরি করছে। বুঝলাম, বাস্তবতা তাকে সময়ের আগেই বড় করে দিয়েছে। ভাবলাম, তার বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, হয়তো তাকে এভাবে ছুটে চলতে হতো না। হঠাৎ আমাদের সিটের মূল মালিক চলে এলেন। আগেই বলেছি, আমাদের টিকিট ছিল ঢাকা টু জয়দেবপুর—আসনবিহীন। তাই বাধ্য হয়েই উঠে দাঁড়ালাম। আমি এবং লিজা ট্রেনের গেইটের কাছে এসে দাঁড়ালাম। নিশুতি রাতে ব্যস্ত শহরের বিভিন্ন আলোর ঝলকানির মধ্যে ট্রেন চলতে শুরু করল। গেইট থেকে রাতের শহর দেখতে অপার্থিব লাগছিল। হালকা বাতাস আমাদের চুলের মেঘ উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, মনটা হয়ে উঠছিল ফুরফুরে। হৃদয়ে একরকম আনন্দের জোয়ার, তার সঙ্গে গল্প করে কাটানো মুহূর্ত যেন অনন্তকাল ধরে ধরে রাখতে ইচ্ছা হচ্ছিল। ট্রেন ততক্ষণে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছে গেছে। যদিও আমার এখানেই নামার কথা ছিল। এখান থেকে ‘বলাকা’ বা ‘আজমেরী গ্লোরী’ কিংবা ‘গাজীপুর পরিবহন’-এ করে আমি সহজেই টঙ্গী পৌঁছে যেতে পারতাম। কিন্তু কেন জানি না, মেয়েটিকে একা রেখে যেতে মন চাইলো না। তাই হেসে বললাম, — “আমি কিন্তু আপনার সঙ্গেই জয়দেবপুর যাচ্ছি।” সে মাথা নেড়ে মৃদু হেসে বলল, — “ঠিক আছে, চলুন।” চলবে...


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ চলন্ত ট্রেনে হঠাৎ দেখা -০৪

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now