বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ছুটি শেষে মেসের পথে
নাফিজ আহমেদ
আসলে সময় বা স্রোত কখনো কারওর জন্য অপেক্ষা করে না। ব্যস্ত শহরের বর্ষণসিক্ত রাস্তা উপেক্ষা করে পাড়ি জমিয়েছিলাম আপন শহরে কিন্তু সময় আবারও দূরে সরিয়ে দিল নিজ নীড় থেকে। এইতো সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে চলছিলাম এদিক সেদিক কেননা কোথা থেকে যেন আওয়াজ আসল আগামী ২৪ ই ফেব্রুয়ারী থেকে মাদ্রাসা বন্ধ। বাড়িতে আসার জন্য মনটা উতলা হয়ে উঠল আর এক মূহুর্তও থাকতে ইচ্ছা করল না। যেই ইচ্ছা সেই কাজ কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে চলে আসলাম আপন গৃহে। রোজার ছুটি দিয়েছে। লেখা পড়া জন্য এখন বাহিরেই থাকতে হয়। বাড়িতে খুব একটা থাকা হয় না। নিজে বাড়ির বাহিরে থাকলেও মনটা সবসময় হুহু করে কেঁদে যায় বাড়ির জন্য। নিজ গৃহে এসে ভালোই সময়গুলো অতিবাহিত করছিলাম। রমজানের ছুটি যে এত দ্রুত কেটে যাবে তা আগে বোধগম্য ছিল না। দীর্ঘ প্রায় ৫০ দিন ছুটি কাটিয়ে আবার চলে যেতে হবে ম্যাস জীবনে। ভাবলেই হৃদয়ের অতল গহিনে কেমন যেন ধাক্কা দিয়ে উঠছে। বাড়ির পরিবেশে সাথে কাটিয়ে এখন আর অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। তবু ইচ্ছা না থাকলেও যেতে তো হবেই কি আর করা আগামীকাল ছেড়ে চলে যাব এক অজানা অচেনা শহরে। এই কয় দিনে মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না খেয়ে অন্য কিছু কি আর খাইতে ইচ্ছা করবে? নিজের ইচ্ছা মোতাবেক মন যখন যেখানে চেয়েছে ঘুরে এসেছি কিন্তু সেটা কি আর করতে পারব? মেস জীবন তো এক বন্দী খানার ন্যায়। আর কি কোন কাক ডাকা ভোরে আম্মু আমাকে ঘুম থেকে ডেকে দিবে? মেসে তো আর মায়ের মতো আপন কেউ নেই। আসলে মেস কেন পৃথিবীতে কোথাও মায়ের মতো আপন ভালোবাসার সম্পর্ক আর কোথাও নেই। নিজে খাবার খেতে না চাইলেও অনুনয় বিনয় করে যে খাবার খাওয়াছে। তার মতো কেউ কি আর আমাকে খাওয়াবে? কেইবা আমাকে সঙ্গ দিবে এখানে তো আপন কেউ নেই। ডাইনিং এর এক কোনে খাবার রাখা থাকে ইচ্ছা করলে খাও না করলে না খাও। কেউ তো আর জোর করে খাবার খাওয়াবে না। মায়ের মতো সঙ্গ আর কে দিবে এখানে? প্রকৃতির মাঝে একাকী বসে কি আর নিরব প্রহর অতিবাহিত করতে পারব? যাই হোক দিনশেষে বাস্তবতা আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। আজ মনে খুব ইচ্ছা হচ্ছে আমি যদি রাতকে ধরে রাখতে পারতাম। তাহলে এই নিষ্ঠুর প্রহরকে কখনো অতিবাহিত হতে দিতাম না। কিন্তু সেটা তো আমি কখনোই পারবো না। এইসমস্ত কথা ভাবতে ভাবতে কেটে গেল আজকের রাত টা। চোখ মেলতেই নতুন ভোরের সোনারঙা আলো আমার চোখে এসে পড়ল। একটুখানি পরেই ঘুম ভেঙে গেল। নিজের যাবতীয় সব কাজ সেরে অপেক্ষা করছি নির্দিষ্ট সময়ের। নিজের তল্পিতল্পা গুছিয়ে নিরালা দুপুরে বাড়ি থেকে বাহির হয়ে গেলাম। অন্য বার আসার সময় কান্না করি কিন্তু এবার আর কান্না করলাম না। কেননা চিন্তা করলাম আমি কাঁদলে আম্মুও কাঁদবে আমার মনটাও খারাপ হয়ে যাবে। শেষ প্রহরে নানি দেখি চেয়ারে বসে আছে। আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য রাস্তা অব্দি আসল। তাদের মায়া ছেড়ে একবারের জন্যও আসতে ইচ্ছা করছিল না কিন্তু কি আর করা! আসতে তো হবেই। অবশেষে জাগতিক সমস্ত মায়া ভালোবাসা রেখে চলে আসলাম মেসের উদ্দেশ্য আবার ফিরলাম লেখা পড়ার জীবনে। এখন মাঝে মাঝে বাড়িতে কথা বলি। আমার যদি ডানা থাকত তাহলে নিশুতি মূহুর্তে ডানা মিলিয়ে উড়ে যেতাম আপন নীড়ে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now