বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ছোট বেলার ঈদ
নাফিজ আহমেদ,,
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি, কিন্তু আসলেই কি সেই আনন্দ আর কখনো ফিরে আসবে! আসলেই ছোট বেলার ঈদ সত্যিকারেই ছিল আনন্দঘন সময় । এখন ঈদ মানে মনে হয় আগের দিন চুল দাড়ি সুন্দর করে কেটে ঈদের দিন সকালে একটু মিষ্টি কিছু আহার করে ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। এরপর আর কি! মন চাইলে একটু এদিক সেদিক ভ্রমণ করা,ব্যাছ এখানেই শেষ বছরের এক অনন্য দিন। নিস্তব্ধ পরিবেশে একাকী দাঁড়িয়ে নিজের সাথে ব্যক্ত করছি ছোট্ট বেলায় কাটিয়ে আসা ঈদের স্মৃতি গুলো। আগামীকাল ঈদ হবে শুনলে কত যে আনন্দ করতাম তার কোন ইয়ত্তা নেই। মায়ের কাছে বায়না করে নিথর সন্ধ্যায় একাকী দোকান থেকে বাজি ক্রয় করতাম। আমার এখনো স্মরণ আছে একবার শরীরটা ভিষণ অসুস্থ ছিল তবুও আব্বুর কাছে বায়না ধরলাম বাজি কিনে দেওয়ার জন্য আর সেটা কিনেও দিলেন। আমি আনন্দ চিত্তে অসুস্থ শরীর নিয়ে কয়েকটা বাজি ফুটালাম। ছোট্ট বেলায় তো আর নামাজ তেমন একটা আদায় করা হতো না। বাজি ক্রয় করেই আনন্দ ভরা হৃদয় নিয়ে পাড়ি জমাতাম নানি বাড়ি। শৈশবের সিংহভাগ সময় সেখানেই অতিবাহিত করি। নানি বাড়ি থাকা সমবয়সী যত ছেলেপেলে আছে সবাই নির্দিষ্ট এক জায়গায় একত্রিত হই। সেখান থেকে ছোট্ট একটা ঝটিকা মিছিল দিতাম। মিছিলে নির্দিষ্ট কোন স্লোগান ছিল না যেটা মাথায় আসত সেটাই বলতাম উদাহরণস্বরূপ মোদের আশা মোদের গৌরব আমরি বাংলা ভাষা, শিক্ষা নিয়ে গর্ব দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। এইরকম আরও কত কিছু যে বলতাম সেগুলো এখন আর স্মরণ নেই। সমবয়সী সকলে একসাথে গ্রামের এদিক থেকে ঐদিক দৌড়াদৌড়ি করতাম। সবাই মিলে কত যে দুষ্টামি করেছি! এখনো মনে পড়ে গ্রামে একজন বয়স্কা মহিলা ছিল বাড়িতে একাই থাকতো। আমরা সমবয়সীরা ছোট্ট ইটের টুকরো নিয়ে তার ঘরের টিনের উপর নিক্ষেপ করতাম। কত যে গালাগালি শুনেছি কিন্তু তারপরও ঐসমস্ত দুষ্টামি কাজের ভিতর যে আনন্দ খুঁজে পেতাম এখন আর কোথাও সেটা পাই না। কখনো কখনো তো আমরা সকলে লুকোচুরি, ধরাধরি এই প্রভৃতি খেলায় মেতে উঠতাম। ঈদের আগের দিনের রাত ছিল আমাদের জীবনের সেরা রাত। এত ছোটাছুটি করেও ক্লান্তি কখনো আমাদেরকে ঘায়েল করতে পারেনি। রাত যত গভীর হতো বাজির আওয়াজ তত বেশি শোনা যেত। অবশেষে রাত বারোটা একটার দিকে ক্লান্তশ্রান্ত শরীর নিয়ে ফিরতাম আপন নীড়ে। ভোরবেলা আবার ওঠা লাগবে। কোন রকম একটু স্মিথ ঘুম দিয়ে পুনরায় কাক ডাকা ভোরে উঠতাম। আগের দিনই কাওকে বলে রাখতাম হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়ার জন্য। কথা অনুযায়ী তাদের বাড়ি গিয়ে দেখি লাইন লেগে গেছে কি আর করা একএক করে সবাইকেই দিয়ে দিচ্ছে। তবে সেই সময়ের অপেক্ষাটা ছিল পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মূহুর্ত। অপেক্ষমাণ হয়ে কত কিছু যে হৃদয়ের অতলে পোষণ করতাম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাইহোক সিরিয়ালে আমার পালা আসলে অপেক্ষার ইতি ঘটে। মনের আনন্দে নিজের পছন্দের ডিজাইন অনুযায়ী হাতে মেহেদী দিতে থাকি। সে এক সোনালী অতীত। আর কি কখনো ফিরে পাবো সেই প্রহরগুলো! এবার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মেহেদী হাতে সঠিক ভাবে বসে গেলে গোসলের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। বছরের অন্য আর কোন দিন না হলেও ঈদের দিন ঠিকই আম্মু তার নিজের হাতে আমার শরীর পরিষ্কার করে দিত। সেটা এক মায়াবী মূহুর্ত ছিল আবেগময় এক সময়। কিন্তু এখন কেন শরীর পরিষ্কার করে দেয় না? ওও বড় হয়ে গেছি তাই! যাইহোক এবার আসে আসল সময় নতুন পোষাক পরিধান করে রওনা করি ঈদগাহে। নামাজ তো আর পড়ি না। সমবয়সী সকলে আসে তাদের সাথে একটু আড্ডা দিই। দোকান থেকে কিছু ক্রয় করি। বড়দের নামাজ শেষ হয়ে গেলে পরিচিত এক একজনের কাছ থেকে টাকা নিই যাকে বলা হয় ঈদ বোনাস। কত যে স্মৃতিময় মূহুর্ত ছিল এটা কে কত ঈদ বোনাস তুলতে পারে রীতিমতো সেটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। পাঠকবৃন্দ জানেন এখনো অনেকে ঈদ বোনাস দেয় কিন্তু ছোট বেলার দুই টাকা পেয়ে যতটা খুশি হতাম এখন দুইশো টাকা দিলেও সেই আনন্দ টা পাইনা। আসলে ছোট বেলার ঈদ ছিল আমাদের জীবনের এক চিরসুখময় দিন। এখন এই ব্যস্ত শহরের বর্ষণসিক্ত রাস্তার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই স্মৃতিগুলো নিমজ্জিত আছে। সেই অতীতগুলো স্মরণ করেই এখন অতিবাহিত করি বর্তমানের দিনগুলো। সত্যিই কি আর কখনো ফিরে আসবে ছোট বেলার ঈদ। উত্তর হয়তো না.....
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now