বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
পাখির কথাই যদি বলো, তাহলে সুজন অন্তত একশো পাখির ডাক তুলেছে।কাক চিল চড়ুই, শালিক, কোয়েল, দোয়েল, পায়রা, ঘুঘু, তোতা, ময়না, বুলবুলি, চোখ-গেল, টুনটুনি, কাদাচোঁখা, কাঠঠোকরা, হুতুম প্যাঁচা- আর কত নাম করব? সুজন এইসব পাখির ডাক তুলে নিয়েছে এই গত কয়েক বছরে।সে ডাক শুনে পাখিরাই যদি ভুল করে তা হলে মানুষের আর কি দোষ?
বয়স কত হল সুজনের? তা হয়েছে মন্দ কি! তাকে আর খোকা বলা যায়না, সে এখন জোয়ান। সে গতরে বেড়েছে, সবল সুস্থ শরীর হয়েছে তার।বাবা বলে, "তুই এবার কাজে লেগে পড়।রোজগারের বয়স হয়েছে তোর।কার্তিক হরবোলা থাকে এই পাশের গাঁয়ে।তাকে গিয়ে বল তোর একটা হিল্লে করে দিতে।নাহয় তার সঙ্গে রইলি ক'টা দিন; তারপর আরেকটু বয়স হলে নিজের পথ দেখবি।"
বাপের কথা শুনে সুজন কার্তিক হরবোলার সঙ্গে গিয়ে দেখা করে।কার্তিকের বয়স হয়েছে দু'কুঁড়ির উপরে- সে বিশ বছর হরবোলার কাজ করছে।কিন্তু সুজন দেখল সে নিজে যতরকম ডাক জানে কার্তিক তার অর্ধেক ও জানে না। সুজন এই কিছুদিন হল নাকিসুরে মুখ দিয়ে সানাই বাজাতে শিখেছে, তার সঙ্গে ডুলি তবলা সে নিজেই বাজায়; শিঙ্গে ফোঁকার আওয়াজ ও শিখেছে, নাচের সঙ্গে যে ঘুঙুর বাজে সেই ঘুঙুরের আওয়াজ করতে শিখেছে মুখ দিয়ে।কার্তিক এসব কিছুই জানে না।সে সুজনের কান্ড দেখে হাঁ! কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলল না, কারন কার্তিকের হিংসে হচ্ছিল।সে শুধু বলল, "আমি শাগরেদ নিই না। তোমার যা করার নিজেই করতে হবে।"
সুজন বলল, "আজ্ঞে আপনি কি করে শুরু করলেন তা যদি বলেন তাহলে আমার একটু সুবিধে হয়।"
তাতে কার্তিকের আপত্তি নেই।সে বলল, "আমি তের বছর বয়সে যন্তিপুরের রাজবাড়িতে গিয়ে হরবোলার খেলা দেখাই।রাজা খুশি হয়ে আমাকে ইনাম দেন। সেই থেকে আমার নাম হয়ে যায়।তুই কোনো রাজাকে খুশি করতে পারিস তো তোরও একটা গতি হয়ে যাবে।আমার দ্বারা কিছু করা সম্ভব নয়।"
সুজন আর কি করে? সে কাউকে চেনে না, কোথাকার কোন রাজবাড়িতে গিয়ে খেলা দেখাবে সে? মনের দুঃখে সে বাড়ি ফিরে এল।
সুজনের গ্রামের নাম হলো ক্ষীরা।ক্ষীরার উত্তরে তিন ক্রোশ দূরে একটা বড় মাঠ ফেরিয়ে ছিল একটা গভির বন।এই বনের নাম চাঁড়ালি।চাঁড়ালির বনে যত পাখি আর জানোয়ারের বাস তেমন আর কোনো বনে ছিল না।সুজন একদিন দিন থাকতে থাকতে সে বনে গিয়ে হাজির হল।জানোয়ারে তার কোনো ভয় নেই আর পাখিতেতো নে-ই-ই।এ বনে গিয়ে তিনটে নতুন নাম-না-জানা পাখির ডাক সে তুলল।সূর্যি যখন মাথার উপর থেকে, পশ্চিমে নামতে শুরু করেছে, এমন সময় সুজন শুনতে পেল ঘোড়ার খুঁরের শব্দ, আর দেখল একপাল হরিণ ছুটে পালিয়ে গেল।কিন্তু পরেই সুজন দেখল যে, বনের মধ্যে দিয়ে আসছেন ঘোড়ার পিঠে এক রাজা, আর আরো পাঁচ-সাতটা ঘোড়ায় তার অনুচরের দল।দেখে সে কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল, কারন বনে অন্য মানুষ দেখবে এটা সে ভাবেনি।এটা সে ভালই বুঝল যে রাজা মৃগয়ায় বেরিয়েছে।
এদিকে রাজাও সুজনকে দেখে অবাক!
"তুই কে রে?" রাজা হাঁক দিয়ে জিগ্যেস করল ঘোড়া থামিয়ে।
সুজন হাতজোড় করে নিজের নাম বলল।
"তুই একা ঘুরে বেড়াচ্ছিস, তোর বাঘের ভয় নেই।"
সুজন মাথা নেড়ে না বলল।
"তার মানে কি এ বনে বাঘ নেই?"রাজা জিগ্যেস করল।"শুনেছিলাম যে চাঁড়ালির বনে অনেক বাঘের বাস?"
"বাঘ আপনার চাই?"
"চাই বইকি! শিকারে এসেছি দেখতে পাচ্ছিস না? বাঘ ছাড়া কি শিকার হয়?"
"বাঘ খুঁজে পাননি আপনারা?"
"না, পাইনি।হরিণ ছাড়া আর কিছুই পাইনি।"
"ও।"
সুজন একটুক্ষণ ভাবলো; বাঘ আছে আর সে বাঘের ডাক আমি শুনিয়ে দিতে পারি, কিন্তু আপনি কি সে বাঘ মারবেন, রাজামশাই?"
"মারব না? শিকার মানেই তো জানোয়ার মারা।"
"কিন্তু বাঘ আপনার কি ক্ষতি করল যে, তাকে মারবেন?"
রাজা আসলে খুব ভাল লোক ছিলেন।তিনি একটুক্ষণ গম্ভীর থেকে বললেন, "বেশ আমি তোর কথা মানলাম। বাঘ আমি মারব না, কারন সত্যিই সে আমার কোনো অনিষ্ট করেনি। কিন্তু সে যে আছে তার প্রমাণ কই?"
সুজন তখন দুহাত চোঙার মতন করে মুখের উপর দিয়ে সামনের দিকে শরীরটাকে নুইয়ে একটা বড় দম নিয়ে ছাড়ল একটা হুংকার।অবিকল বাঘের ডাক।আর তার একফলক পরেই বনের ভিতর থেকে উত্তর এল, ঘাঁয়াঁওঁ!"
(চলবে)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now