বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আফ্রিকার খাবার দাবার

"ভ্রমণ কাহিনী" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X আফ্রিকার যে স্মৃতি আমার কাছে বেশি মনে পড়ে তা হল রাতের বেলা ক্যাম্পফায়ারের আলোতে বসে থাকা।তখন মাত্র কচি জেব্রার ঝলসান মাংস দিয়ে রাতের খাবার শেষ করেছি। হাতে মগ ভর্তি গরম কফি বা চা। কেউ কেউ পাইপে আগুন ধরাছে। আমরা আগুন থেকে খানিক দূরে বসেছি। আগুনের দিকে পিঠ ফেরান। এই সময়টা সবাই চুপ চাপ থাকত। যতক্ষণ না কাপ খালি না হয়। তখন একজন একটা মন্তব্য করলেই আড্ডার কুমড়োটা গড়ানো শুরু হত। ক্যারি বসেছে একটা গাছের গুড়ির সাথে ঠেস দিয়ে।মুখে লাউয়ের খোলার পাইপ।ধুমপান করছে। খানিকটা ধোয়া মেঘের মত জমে আছে মুখের সামনে। এইলকা নিজের পা দুটো ক্রস করে বসেছে। ওর মুখে পাইপ। টানছে। কেতলিতে পানি ফোটার মত শব্দ হছে।ডেভিড বসেছে খালি একটা প্যারাফিনের টিনের উপর। মোটামুটি আগুনের কাছেই। যাতে কয়েক মিনিট পরপর জ্বলন্ত কাঠের চলাগুলো নাড়াচাড়া করতে পারে। ফলে আগুন টা ভাল করে জ্বলতে পারে। আমি বসেছি খানিক দূরে । আমার রাইফেলটা পরিষ্কার করছি। আর কাজের ফাকে ফাকে ঝলসানো ভুট্টার মধ্যে কামড় বসাছিলাম। আচ্ছা করে মাখনের প্রলেপ দেয়া হয়েছে ভুট্টাটার মধ্যে। আবাসুকু বসেছে বেশ খানিক দূরে। পিচ্চি করে নিজের জন্য আগুনের কুণ্ড বানিয়েছে সে। একটা তাওয়া বসিয়ে রেখেছে জ্বলন্ত কয়লার উপর। কচি একটা জলহস্তি মেরেছে বিকেলে। ওটার কিছু মাংস তাওয়াতে ভাঁজছে। মাঝে মাঝে এক টুঁকরো মাংস তুলে নিচ্ছে তাওয়া থেকে। নিজের হাতের তালুতে সেটা লুফালুফি করে টপ করে মুখে পুরে দিছে। ধীরে ধীরে চিবুচ্ছে আর চারিদিকে নজর বোলাচ্ছে। আপাতত মনে হয় নিজের খাওয়া নিয়ে ই ব্যস্ত। কিন্তু আমি জানি রাতের একটা শব্দও ওর কান এড়িয়ে যাবে না। বহু দুরে সাপের কামড় খেয়ে ইদুর মারা যাচ্ছে, বা ছিমছাম বাতাসে পোকা উড়ে যাবে, বা কাছের নদীতে একটা জলহস্তি ঝুপ করে নামল সেই শব্দ ও ওর কানে আসবে। জুলু ব্যাটা। আফ্রিকা হছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাংসের ভাঁড়ার ঘর। মুরগি আর বুনো পশু থেকে প্রচুর মাংস পাওয়া যায়। আর ভাল মত রান্না করতে পারলে সব কিছুই খেতে দারুন লাগে। সেটা হোক হাতির মাংস বা গিরগিটির মাংস ।রান্নাার সাধারণ নিয়ম গুলো কোটি কোটি মানুষ জানে না। অথচ তারা প্রতিদিন ই রান্না করছে। ধরা যাক খানিক মাংস রান্না করতে গেলে আমরা শুধু সেদ্দ করছি তো করছি ই।যত ভাল সেদ্দ মাংসের স্বাদ তত ভাল হবে এই আশায় বসে থাকি। কিন্তু শেষ মুহুতে মাংসে কিছু সবজি গোল মরিচ আর লবণ দিলে স্বাদ অনেক বদলে যায়। আর এই সব দেয়ার পর মাত্র ১০ মিনিট সেদ্দ করতে হবে। হাতির মাংস খেতে ভাল, তবে হাতির শুড় সবচেয়ে মজার । মসলা দিয়ে রান্না করলে ভালই লাগে। হাতির পা সাধারণ মাংসের মতই রান্না করা হয়। অনেক সময় লাগে রান্না করতে। কেমন আঠালু। স্বাদহীন। একদম ফালতু। তবে অনেক সময় নিয়ে বেকড করে কয়েক চামচ মাংস যদি ভাঁজা সসেজ আর সেদ্দ টক মিষ্টি উট পাখির ডিমের সাথে পরিবেশন করা হয় তবে সকালের নাস্তা, দুপুরের ভোজ আর রাতের ডিনারে তিন বেলাই আপনি খেতে পারবেন ।. আমি বেশির ভাগ আফ্রিকার খাবারের রেসিপি পেয়েছি আমালিতা নামে এক কালো বাবুচির কাছে। এিশ বচ্ছর ধরে রান্না করছে বেচারা। বেশির ভাগ সময় সরকারি অতিথীশালায় রান্না করত । জলহস্তির মাংস দিয়ে যে সসেজ বানাত তার সাথে শূয়রের মাংসের সসেজের সাথে খুব তফাত ছিল না,., বড় বুনো মুরগি, বাচ্চাউটপাখি,জংলা হাঁস এগুলোর পেটের ভেতরে সসেজের টুকরো, ভুট্টার দানা, আর আলুভত্তা ভড়ে আগুনে ঝলসে খেতে দারুন। অল্প আঁচে সময় নিয়ে ঝলসাতে হবে। জঙ্গলের ভেতরে খাওয়া দাওয়া অনেক গুরুত্বপুন। অনেক সময় শিকার করার চেয়ে ও। আমরা মাঝে মাঝে সসেজ আর মুরগি দিয়ে তরকারি ও রান্না করতাম।যে একবার খেয়েছে তার কাছে তরকারির আবেদন কখনই পুরানো হবে না। । তবে বলা দরকার ইউরোপ আর আমেরিকার রেস্তুরেন্ট গুলোতে তরকারি নামে যা দেয় তা অখাদ্য। শিকার বা সাফারিতে যাবার সময় কারি পাউডার খুব গুরুত্ব সহকারে নিতাম। ঠিক যে ভাবে বন্দুক বা গুলি নেয়া হত। আর এমন ভাবে কারি পাউডারের কৌটা যত্ন করে রাখতাম যেন গুপ্তধন কারি পাউডার শেষ হলে বানিয়ে নিতাম। মৌরির দানা, ধনিয়া, জিরা, জ্যামাইকান আদা এই রকম হাবিজাবি অনেক কিছু মিলিয়ে বানাতাম কারি পাউডার। তাওয়ারে খানিকটা গরম করে নিতাম। বা শিশিতে ভড়ে রোদে রাখতাম। অনেক দিন ভাল চলত। সারা পৃ থিবীতে দুই ধরনের কারি মারাত্নক রকম জনপ্রিয়। ইনডিয়ান কারি আর মালাই কারি। চিঙড়ি দিয়ে দারুন মালাই কারি হয়। কিন্তু আফ্রিকায় সহজে চিংড়ি পাওয়া যায় না। তবে পেলেই খাওয়া হত। সব ধরনের মাংস দিয়েই তরকারি রান্না করা যায়।, বুনো দাঁতাল শূয়র, বুনো মোষ, জেব্রা, বড় শিংওয়ালা অ্যানটিলোপ, ভেরা, মোদ্দা কথা আফ্রিকান সব বুনো প্রাণী দিয়েই তরকারি রান্না করা যায়।আমার কিছু বন্ধু বান্ধব কুমিরের মাংস খেতে পচ্ছন্দ করত। আমি নিজে কুমির দারুন ভয় পেতাম। তাই এর মাংস সহজে গলা দিয়ে নামত না। সাপের মাংস সাদা, মাছের মত স্বাদ। ভাল মত রান্না করলে মুরগির চেয়ে ভাল হয়। বেশির ভাগ আমেরিকান সাফারিতে এসে ভেড়া, গরু, বাছুর আর শূয়রের মাংস খেতে পছন্দ করে।ইটালিয়ান, পতুগিজ আর স্প্যানিশরা যা পায় তাই খায়। কোন বাছ বিচার নেই। ফরাসীরা সে সবই খায় যে গুলোর স্বাদ আসল সবাদের চেয়ে ভিন্ন । জার্মানরা সব খায়। যদি রান্নাটা ভাল হয়। গ্রিক আর রাশিয়ানরা সবই খায়। আর সব সময় ওদের খিদে লেগেই আছে। একবার উইলিয়াম পি, পারকিন্স নামে এক আমেরিকান সাহেবের গাইড হয়েছিলাম আমি। টেক্সাসে থাকেন ভদ্রলোক। তিনি একবার মাংসের ফালি ঝলসে খেতে দিয়েছিলেন আমাকে। মনে হয়েছিল জুতার তলি খেলাম।এত শক্ত। লোকটাকে এক হাত দেখে নেয়ার জন্য আমি একরাতে রান্না করলাম।পাহাড়ি হরিণের মাংস। বড় এক টুকরো মাংস নিয়ে দুই পিঠ কাটা চামচ দিয়ে ইচ্চে মত কাচলাম। যতক্ষণ মনে চাইল। তারপর লবন আর গোল মরিচের গুড়ো মাখালাম। দুই পিঠেই।চুলায় ফ্রাইন প্যান অল্প আঁচে বসিয়ে দিলাম। হালকা গরম হতেই ভেজিটেবল অয়েল ঢেলে দিলাম। সামান্য। তেল গরম হতে মাংসের ফালি ঢেলে দিলাম। মাএ ৫ মিনিট রান্না করে উল্টে দিলাম। অপর পিঠ ও ৫ মিনিট রান্না করলাম। নামানোর আগে রসুনের ঘ্রানওয়ালা লবণ ছিটিয়ে নামালাম। লম্বা ফালি করে কেটে সাদা প্লেটে করে কাটাচামচ আর ছুরি দিয়ে পরিবেশন করলাম পারকিন্সকে। ভদ্রলোক বড় এক টুকরো মাংস মুখে দিয়ে কয়েকবার চিবিয়ে গোল্লাগোল্লা চোখে আমার দিকে তাকাল । টেক্সাসের মানুষ জন গ্রীল করা স্তেক হরহামেশা খেয়ে থাকে। তারপর ও উইলিয়াম পি, পারকিন্স আবাক হল। কি করেছ তুমি? জানতে চাইল। কি এমন কায়দা করলে যে মাংসের স্বাদ এমন মজার হয়েছে? 'ভেতরে মাংসের জুসটা আটকে রেখেছিলাম। আর মাংসের চরবির স্বাদই মুখে স্বাদ এনে দিয়েছে' 'কিন্তু তুমি তো কাটা চামচ দিয়ে মাংস কেচে দিয়েছ। ভেতরের জুস বের হয়ে যাবে না?' 'না। যদি তুমি ভালমত লবন আর গোল মরিচের গুড়ো মাংসের ফালিতে মাখিয়ে নাও তবে সেই লবণ আর গোল মরিচের গুড়ো ছিদ্র গুলো বন্ধ করে ভেতরে জুস আটকে রাখবে। ফলে স্বাদ হবে দারুন। আর মাংসের ফাল কখন ও ওভার কুক করবে না।' মাংস গ্রিল করার সময় বেশির ভাগ সময় আমি খদ্দের সামনে বসিয়ে রাখতাম। ধীরে ধীরে লাল কয়লার আগুনে মাংস ঝলসাতে শুরু করতাম। আফ্রিকান রাত দারুন মায়াবী । সুন্দর বাতাস বইত। সরসর করে লম্বাঘাস গুলো বাতাসে দুলতে থাকত। সেই বাতাসে মাংস পোড়া দারুন চনমন করা ঘ্রান আর ধোঁয়া ভেসে যেত খদ্দেরের নাকে। কয়লার আগুনে দেখতাম ওদের চোখ খিদেয় ঝিকিমিকি করছে। আমেরিকানদের আরও একটা মজার অভ্যাস হল বারবিকিউ করার সময় ঝলসান ভুট্টা খাবেই খাবেই।কেন কে বলবে? দ্বিতীয় জিনিসটা হল আনতিলোপের ঝলসানো মাংস। ওদের চাই ই চাই। বাধ্য হয়ে বানাতে হত। তবে যে কোন বারবিকিউ মাংসের জন্য দরকার ভাল বারবিকিউ সস। সস ভাল হয়ে বারবিকিউয়ের স্বাদ ভাল হবে। আফ্রিকান রান্নায় মাসরুম থাকে। কারন এখানে জঙ্গলে সারা বছরই নানা জাঁতের নানান রঙের মাশরুম পাওয়া যায়। ঝিনুকের খোসার মত এক রকম মাশরুম পাওয়া যায় কঙ্গোতে।মাখন আর দুধ দিয়ে রান্না করলে স্বপ্নের মত স্বাদ হয়। আহ। সোনালি হলুদ এক ধরনের মাশরুম পাওয়া যায় ।একদম মাংসের মত। মাশরুম সব রকম করে খাওয়া যায়। সেদ্দ,গ্রিল, ভাঁজা। আচার বানিয়ে এমন কি দেশি মসলা দিয়ে তরকারির মত করে ও। শুধুমাএ কুচি করে কেটে তাওয়াতে তেল দিয়ে ভাজলে ও দারুন মজার হয়। •আফ্রিকার সব জায়গাতে ব্যাঙ পাওয়া যায়।লাল ব্যাঙ ।হুলুদ ব্যাঙ। চিরকি মিরকি ছিটয়ালা ব্যাঙ। ধূসর ব্যাঙ। পিচ্চি ব্যাঙ। ঢাউস সাইজের ব্যাঙ। সব ব্যাঙই খাওয়া যায়। মানে ব্যাঙের পা। ব্যাঙের পিছনের পা খাওয়া যায়।রান্না করলে মুরগির মাংসের মত লাগে। উগান্ডাতে ব্যাঙের পা ভাঁজা ভাল চলে। ভাজার আগে গোল মরিচের গুড়ো, লবণ আর খানিক লেবুর রস দিলে দারুন হয়। পরিবেশনের আগে সামান্য বাদামী মাখন উপরে দেয়া হয়। সাধারণত সাথে ঝলসানো মাশরুম আর টমেটো দেয়া হয়। কখন বা কুমড়া সেদ্দ। আর আফ্রিকাতে যে কত পদের কুমড়ো হয় আল্লাই জানে।অভাব নেই। পুরানো দিনের শিকারিরা হাতি, সিংহ আর এনতিলোপের লিভার আগুনে ঝলসে খেতে পছন্দ করতেন। ঝলসানো লিভার ভাল। যদি টাটকা হয়। আর খুব ধীরে ধীরে আগুনে ঝলসাতে হয়। জলহস্তি আর শূয়রের মাংস পাতলা করে কেটে শুকিয়ে রাখা যায়। এমন কি জলহস্তির চর্বি ও কায়দা করে শুকিয়ে রাখা যায়।আগের দিনের নিঃসঙ্গ শিকারি আর খনিসন্ধানীরা এই সব জিনিস খুব যত্ন করে নিজের কাছে রাখতেন। কফি হয় এখানে। প্রচুর। মনে মনে। এই কফি চলে যায় সারা দুনিয়াতে। নাম করা ব্র্যান্ডের প্যাকেট মুড়ে বের হয়। কালো আফ্রিকান যারা ওরা চা আর কফি দুটোই প্রচুর গিলে। সকাল বা রাত কোন ব্যাপার না। উগান্ডাতে দুধ চা কে ওরা বলে ' চায়ে'। ইনডিয়ানদের কাছ থেকে শিখেছে। নইলে ওরা লাল চা ই বেশি খায়। উগান্ডার একদম নিঝুম গ্রামে গেলে ও আপনি চা পাবেন। আমি লেক ভিক্টরিয়ার আশে পাশের কিছু গ্রামে ছিলাম। সন্ধের পর দারুন শীত পড়ে। বিশ্বাস ই হয় না এটা আফ্রিকা। এমন কি যে কুয়াশা পড়ে সেটা ও অবাক করে দেয়।ছোট্ট শন ঘাসের তৈরি ক্যাফের ভেতরে আগুন জ্বালান হয়। শক্ত বুনো কাঠ কেটে বানান চেয়ার টেবিলে বসে আমি রাতের খাবারের অডার দিতাম। তার আগে ঢাউস এক কাপ কফি। টিনের হলুদ মগে করে চা দিত। জেলখানায় এমন মগ ব্যাবহার করা হয়।ক্যাফে খালি। মাত্র ২/৪ জন খদ্দের। বাইরে দারুন হাওয়ার রাত। কত পোকামাকড়ের শব্দ। । শনশন বাতাসের শব্দ। কেমন একটা বুনো ঘাসের ঘ্রান। আকাশ ভতি অযুত লক্ষ তারা। এত তারা পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না আপনি। এ যে আফ্রিকা। আদিম। বুনো।মায়াবী। নগ্ন আর নিজন। দিনের পর দিন কলা সেদ্দ খেয়ে থাকে উগান্ডার আদিবাসিরা। একে বলে মাটোকো। কলা খোসা ছাড়িয়ে সেদ্দ করে গুতিয়ে ভত্তা বানান হয়। দেখতে হলুদ আঠালো গ্রিজের মত লাগে। খুব বিপদে পড়ে ২/১ বার খেয়ে দেখিছি। জঘন্য। কোন স্বাদ নেই। আজব এক খাবার। এরচেয়ে শিমের দানা সেদ্দ অনেক ভাল। একে বলে বিজানজারো। লাল চুনির মত শিমের দানা গুলো সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সকালে টমেটো, পেঁয়াজ আর সামান্য লবণ দিয়ে রান্না করলে দারুন লাগে। দিনের পর দিন আমি এই সেদ্দ শিমের দানা খেয়েছি।খারাপ লাগেনি।সাথে আটার রুটি।রুটিকে চাপাতি বলে। ইনডিয়ানদের কাছে শিখেছে এটা। রাস্তায় অনেক জায়গাতে দেখি বসে এই চাপাতি বিক্রি করে।কঙ্গোতে ও চাপাতি পেয়েছিলাম। চিকবু থেকে ওল্ড কাম্পালা ফেরার পথে দেখতাম রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফেরিওয়ালা ঝালমুড়ির মত কি যেন বিক্রি করছে। কাগজের প্যাচান কোন ভর্তি করে। কি জিনিসটা? কাছে গিয়ে দেখি ঘাস ফড়িং।ঠ্যাং আর পাখা ফেলে দিয়ে মসলা দিয়ে তেলে ভেজে বিক্রি করছে, সাথে পেয়াজ কুঁচি। দাম জানতে চাইলাম,শেষে ৫০০ শিলিঙের দিতে বললাম। এই ঘাস ফড়িং ভাঁজার কথা অনেক পড়েছি। বিশেষ করে পুরান দিনের শিকারি জেমস সাদারল্যান্ডের বইতে। মুখে পুরে চিবিয়ে দেখি দারুন স্বাদের রে ভাই। একদম ভাঁজা কুচো চিংড়ী মাছের মত। আলু ভাঁজা। শুনতে যত সাধারন মনে হয়, আফ্রিকায় তত সাধারন একটা খাবার নয়। সবাই খায় এটা। সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। অভিজাত হোটেল হতে গ্রামের পথের দোকান গুলোতেও। পটেটু চিপস বলে। বিশাল আলুগুলোর খোসা ছড়িয়ে লম্বা ফালি করে কেটে ডুবো তেলে ভেজে পরিবেশন করা হয়। এই আলুগুলো কে আইরিশ পটেটু বলে। কারন মিষ্টি আলু ও সাংঘাতিক জনপ্রিয় এখানে। একদম নিঝুম গ্রামে গিয়ে ও দেখি রাস্তার মাঝে কালো কুচকুচে একটা ময়লা তেল ভর্তি কড়াই আর কাঁচের বাক্স ভর্তি কাটা আধভাজা আলুর ফালি সাজিয়ে রেখে ঝিমুচ্ছে বিক্রেতা।গিয়ে প্রথমেই দাম দস্তুর করতে হত। এক হাজার থেকে তিন হাজার শিলিং হত দাম।এক প্লেট আলু ভাঁজা। অডার দেয়া মাত্র ব্যাস্ত হয়ে উঠত বিক্রেতা। প্রথমেই চুলা জ্বালানোর জন্য দৌড় ঝাঁপ শুরু করত সে।ততক্ষণ ননস্টপ বকতে থাকত নানান হাবিজাবি বিষয় নিয়ে। কড়াইয়ের তেল মবিলের চেয়েও খারাপ হত...। আফ্রিকার খাবার দাবার ১৪ আলু কেটে অধেক ভেঁজে রাখার কারন যাতে কাটা ফালি গুলো কালো হয়ে না যায়। জানেন বোধ হয়। আর কাঁচের বাক্সে রাখার জন্য খদ্দের দূর থেকেই জিনিশ গুলো দেখতে পায়। ভাজা শেষ হলে প্লেটে করে পরিবেশন, সাথে কিছুটা বাঁধাকপির কুচিঁ। যেটা অভিজাত রেস্টুরেন্ট গুলোতে কল স্লো বলে। এমন কি রাস্তার পাশের দোকান গুলোতেও এই বাঁধাকপির কুচিঁ আলু ভাজার সাথে দেয়। লেবুর রস আর লবণ দিয়ে মাখান। কোমল পানীয় চলে ভাল। সোডা বলে। কাঁচের বোতল ভর্তি। দাম ৮০০ থেকে ১০০০ শিলিং। পান করার পর বোতল ফেরত দিয়ে হয়। নিঝুম গ্রামগুলোতে ফ্রিজ নেই। ওরা বিয়ার আর সোডার বোতলগুলো মাটিতে পুঁতে রাখে। যাতে ঠাণ্ডা লাগে। সীমান্তের কিনারে একটা গ্রামে গিয়ে দেখি পুরো গ্রামে মাত্র একটা মুদি দোকান। সেখানে মাত্র ১ কেস বিয়ার আর ১ কেস সোডা রাখা। বিক্রি হলে খালি বোতল গুলো নিয়ে দোকানদার শহরে চলে যায়। ভর্তি বোতল নিয়ে ফিরে আসে। ঈগল নামে দারুন একটা বিয়ার পাওয়া যায়। শহরে একদম চলে না। নিঝুম গ্রামগুলোতে দারুন চলে। অদ্ভুত রকম স্বাদ। আমি পরপর তিনটে ঈগলের অডার দিতেই দোকানদারের হাসি দুই কানে গিয়ে ঠেকল। দারুন মক্কেল পাওয়া গেছে। দিনটা শুভ ওর। আমি বসে ছিলাম দোকানের বাইরে। চারিদিকে ঘুঁটঘুঁটটি অন্ধকার।আকাশ ভর্তি তারা। নিচে গাছ পালার আড়াল ভর্তি ও তারা। ওগুলো আসলে জোনাকি। দোকানে একটা মোম জ্বলছে। বাতাসে মোমের শিখাটা নড়াচড়া করতেই দোকানদার ছায়াটা নাচানাচি করছিল। আফ্রিকায় যাবেন আর তেলাপিয়া খাবেন না তা কিন্তু হয় না। অনেকটা দিল্লিতে গিয়ে দিল্লির লাডডু না খাওয়ার মতই। বিশেষ করে কেনিয়া, উগান্ডা আর তানজানিয়ার লোকজন তো তেলাপিয়া খেয়েই বেঁচে আছে। এই তিন দেশের ঠিক মাঝে রয়েছে লেক ভিক্টোরিয়া। পৃথিবীর দ্বিতীয়তম বড় মিষ্টি জলের হ্রদ। পিচ্চি একটা সাগর যেন। আর মনে রাখা দরকার তেলাপিয়ার আদি বাসভুমি কিন্তু আফ্রিকা। লেক ভিক্টোরিয়ার এক একটা তেলাপিয়ার সাইজ দেখলে পিলে চমকে যাবে। কি চকচকে। আঁশ গুলো নতুন পয়সার মত। এমন কি উগান্ডার ২০০ শিলিং মুদ্রা পয়ন্ত তেলাপিয়ার ছবি ছেপে বের করেছে। লেক ভিক্টোরিয়ার তেলাপিয়ার মত এত জ্যান্ত আর সুন্দর তেলাপিয়া আর কোথাও দেখিনি আমি। আফ্রিকার খাবার দাবার ১৬ লেক ভিক্টোরিয়ার আশেপাশে প্রচুর হোটেল আর ক্যাফে গজিয়ে উঠেছে, এরা সারা বছর দারুন ব্যাবসা করে। তবে মনে রাখার মত তেলাপিয়া ভাজা খেয়েছিলাম সেৎসেৎ দ্বীপে গিয়ে। দারুন একটা দ্বীপ। লেক ভিক্টোরিয়ার ঠিক মাঝে। সুন্দর রোদ, বাতাস। বাচ্চাদের খেলার মার্বেলের মত লেকের পানি। দ্বীপ ভর্তি লম্বা অচেনা গাছ আর দীঘল সবুজ ঘাস। প্রত্যেকটা হোটেল সৈকতের কাছাকাছি। সন্ধের পর দারুন ঠাণ্ডা লাগে। অনেক শুকনো কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালায় ওরা। ঠাণ্ডা বিয়ারের বোতল হাতে আগুনের পাশে বসে ছিলাম আমি। আর আমার গাইড মুস্তাফার মুখে শিকারের গল্প শুনছিলাম। হাতি শিকারের গল্প। এখন ও পোচারের উৎপাত বিন্দুমাত্র কমেনি। ওদিকে কিচেনে রান্না করা হচ্ছিল তেলাপিয়া। আমি ভাবছিলাম ২০ হাজার শিলিং দিয়ে একটা তেলাপিয়া মাছের অডার দেয়া কি ঠিক হল? দামটা কি বেশি হয়ে গেল না? কাম্পালা শহরে তো এই দামে ৪টা মাঝাঁরি আকারের তেলাপিয়া কিনতে পারতাম। অবশ্য কাঁচা। কিন্তু এই বিজন দ্বীপে...। ভাবলাম দেখাই যাক না। এ দিকে মুস্তাফা বকবক করেই যাছে। এই কালোদের একটা বাজে স্বভাব হচ্ছে এরা প্রচুর কথা বলে। এমন বাচাল জাতি আর দেখিনি আগে। মাত্র পনের মিনিট পর প্লেটে করে চলে এল তেলাপিয়া। সাইজ দেখে পিলেটা চমকে গেল।আধহাত লম্বা ।প্লেটের বাইরে লেজ ঝুলছে। প্লেটের আকার ও মারাত্নক। ভাজা মাছের পাশে সুন্দর করে রাখা আছে লম্বা করে কাটা আলু ভাঁজা। হলুদ ২ টুকরো লেবুর ফালি। আর পান্নার মত এক মুঠো সেদ্দ মটরশুটির দানা। মাছের উপর মাখান হয়েছে ঘন লালচে কমলা রঙের অচেনা এক সস। অদভূত লোভনীয় ঘ্রান আচ্ছিল।জানতে পারলাম ঐ সসটার নাম চিলি-গালিক সস। লাল মরিচ আর রসুন ভিনেগারে চুবিয়ে রাখে সারা রাত। তারপর একসাথে মেশালে তৈরি হয়ে যায় লোভনীয় এই সসটা। কি জিভে পানি এসে গেছে তাই না? পরিবেশের কারনে খাবারের স্বাদ আগাল বাগাল হয়। সিডনি শহরে এই তেলাপিয়া মাছ ভাজা সস্তা থাইল্যান্ডি রেস্তুরেন্ট গুলোতে শুধু বিক্রি হয়। স্বাদ জঘন্য। কিন্তু লেক ভিক্টরিয়ার মাঝে এক নিঝুম দ্বীপে এর স্বাদ অন্য রকরম। আকাশ ভর্তি ছোট ছোট বরফের টুকরোর মত তারা। লেকের পানির রঙ বাচ্চাদের মাবেলের মত কালো। পুইশাঁকের মত শ্যাওলাগুলো সৈকতে এসে পরে আছে। ঠাণ্ডা হিম বাতাস ভেসে আসছে দূর থেকে। লম্বা দীঘল ঘাসগুলো শনশন করছে। খেয়ে ফেলা অধেক বিস্কুটের মত চাঁদটা ঝুলে আছে আকাশে। সেই হলুদ আলোতে সৈকতে বালিগুলো স্বর্ণরেণুর মত মত লাগছিল। বিশাল একটা রেডিয়ো বাজছিল পাশেই। আফ্রিকান সোহালিলি ভাষার গান। আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তবে সুরটা দারুন। আমার সামনে প্লেট ভর্তি রাক্ষুসে সাইজের তেলাপিয়া। একটু একটু করে ভেঙ্গে মুখে দিচ্ছি। মুখের ভেতরে গলে যাচ্ছে নরম রসালো ঝাল মাছের টুকরো। লেক ভিকটরিয়ার আশেপাশের গ্রামগুলোতে বাদাম সেদ্দ করে বিক্রি করে। জীবনের প্রথম দেখলাম।এবং খেলাম। দাম কত সস্তা। বিশাল পাত্রে লবন দিয়ে সেদ্দ বসিয়ে দেয় বাদামগুলো। খাবার সময় মনে হল বিচিত্র স্বাদের মটরশুঁটির দানা খাচ্ছি। সব কিছুই ভাল। কবির কাছে পাউরুটি আর ঝোলা গুড় ভাল।আপনার কাছে হয়ত খাস্তা লুচি আর আলুর দম ভাল। যার যেমন মর্জি। কেউ হয় নাপিত আর কেউ হয় দর্জি। উগান্ডায় প্রচুর আঁখ হয়। সাইজ দেখলে বাঁশ লজ্জা পাবে। ফলে চিনির উৎপাদন দারুন। বস্তা ভর্তি চিনি চলে যায় সুদান, কেনিয়া আর বতসোয়ানাতে। কাউল্লা গুলো চিনি পছন্দ করে। এক কাপ চায়ে ৪ থেকে পাঁচ চামচ চিনি ও নেয়। গ্রামের মুদি দোকনে চিনির প্যাকেট আর মোমবাতি থাকবেই। বিশাল এক গ্রামে একটা মাত্র মুদির দোকান। আর মাত্র ৬ ব্যাগ চিনি! সবার কাছে চিনি কেনার পয়সা নেই যে। মিষ্টি আলু সেদ্দ আর আধ পাকা কলা পুড়িয়ে খায়। শহরে গেলে তেলের পিঠা কিনে খায়।আমাদের দেশে রাস্তায় যেমন গোলগোল্লা টাইপের জিনিস বেচা হয় তেমন আরকি। মুরগিকে ওরা বলে কুরু। অদ্ভুত নাম। এখানে মুরগি খাওয়া দারুন বিলাসের ব্যাপার। কারন মুরগি পালতে গম, ভুট্টা এই রকম শস্য দানা লাগে যে। পাবে কোথায়? ওরা যখন গ্রাম থেকে শহরে আসে কোন আত্নীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে তখন সবার মালপত্রের সাথে একটা মুরগি থাকে। শুভেচ্ছার নিদশণ স্বরূপ। শহরে ওল্ড কাম্পালা, বকোতো, চিকবু এই জায়গাতে সন্ধের সময় রাস্তায় ঝলসানো মুরগির মাংস বিক্রি করে। ২০০০ শিলিং দাম চার ভাগের এক ভাগ মুরগির। কয়লার আগুনে ঝলসান হয়। লবন আর মিক্স মসলা মাখিয়ে রাখে পুরো বিকালটা। গনগনে কয়লার উপর তারের জালে মাংস রাখা মাত্র চমৎকার নীলচে ধোঁয়া উঠতে থাকে। কি দারুন লোভনীয় ঘ্রান। পেট ভরতি খিদের সময় দোকানদারকে শুদ্ভ চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করত। আমার চেহারা দেখে কাউল্লা দোকানদার সবগুলো দাঁত বের করে হেসে বলত, বাওয়ানা জাস্ট ওয়েট। আমি ধাতানি দিতাম। সুন্দরী কালো মেয়ে হলে আমিও দাঁত বের করে দারুন একটা হাসি দিতাম। যা আমার স্বভাব!!!! ওরা মদ গেলার অজুহাত খুঁজে। বাপ মা মারা গেলে ও ওরা মদের আসর বসিয়ে দেয়। আমার পাহারাদার ফ্রান্সিসকে অনেকবার জিগগেস করেছিলাম, অনেক টাকা পয়সা হলে তুমি কি করবে? বড় একটা শ্বাস ফেলে বলেছিল, বাওয়ানা মিলুনি আমি মদ খাবো। একটা স্বপ্ন নিয়ে ওরা বাঁচে। টাকা হলে মদ খাবে। বিয়ার কোম্পানিগুলো দারুন ব্যবসা করছে। নাইল, বেল, ক্লাব, ঈগল, টাসকার সফল কোম্পানি। হান্টার চয়েজ নামে কেনিয়ান একটা ব্র্যানডি দারুন চলত। খুব পুরানো এই হান্টার চয়েজ। পুরানো দিনের শিকারিরা এটা ছাড়া অচল। অনেক বিখ্যাত শিকারি নাকি পছন্দ করতেন এই বোতলটা। রঙটা মধুর মত।ঝাঝাল স্বাদ। আমি দু একটা বোতলের ছিপি খুলেছি কিনা এমন প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। কিছু কথা থাক না গোপন। কলা পচিয়ে আর ভুটটা পচিয়ে ও মদ বানায়। গ্রামের পুরুষ মানুষ গুলো তো অকর্মা। সরাইখানায় বসে বসে মদ গিলে। মহিলা আর বাচ্চা গুলো খুব পরিশ্রম করে। সারা দিন মাঠে কাজ করে। সাঝবেলা সামান্য কিছু আলু আর শিমের দানা নিয়ে বাড়ি ফেরে। বাচ্চাদের মাথায় থাকে শুকনো লাকড়ির বোঝা। নইলে রান্না করবে কি দিয়ে? পানি ও তো ফুটিয়ে খেতে হবে। নইলে নিঘাত ম্যালেরিয়া...! রান্না কয়লার আগুনে হয়। কাজেই দারুন চনমন করা একটা সুঘ্রান থাকে খাবারে। পাহাড়ি গ্রাম গুলোতে সন্ধের পর শীত পরে ।বিশেষ করে কাবালে আর কিসরু নামে দুটো গ্রামে ছিলাম, সেখানে যে শীত পরে রাতে তাতে মনে হয় ইউরোপের কোন গ্রামে আছি। গ্রামের গরীব বাসিন্দাগুলো সন্ধের রান্না বসায়। ঐ আরকি কলা সেদ্দ, আলু সেদ্দ, শিমের দানা সেদ্দ। ভুট্টার ময়দা জ্বাল দিলে ফুলে ফেঁপে কিম্ভুত একটা দলা হয়, দেখতে হালুয়ার মত। ওরা বলে পুষো। ভাতের বিকল্প জিনিস। শিমের দানা দিয়ে খেতে ভাল । এই খায় ওরা। ভিকটোরিয়া লেকের পাশে যারা থাকে ওরা মাছ খেতে পায়। যারা দুরে থাকে তারা আত্নীয় স্বজনদের মাছ নিয়ে ফিরতে বলে। ঈদের দিন মাংস খাওয়া হয়। গ্রামের পথে পথে অনেক বুড়ি মহিলাকে দেখেছি হাতে করে ৪টা ডিম বা মাত্র ছয়টা বেগুন নিয়ে বাজারে যাচ্ছে। বিক্রি করলে বড় জোর ১০০০ শিলিং পাবে। নিজের বাগানের জিনিস। বা নিজের পোষা মুরগি। টাকা দিয়ে লবণ, চিনি বা তেল কিনে আনবে। আমরা যে আলুভাজা হরদম খাই গরীবের খাবার মনে করে, ওদের কাছে কিন্তু দারুন বিলাসিতা এই আলু ভাজা খাওয়া। প্রচুর ফল হয়। আম, আনারস, তরমুজ, পেঁপে, আভকাডো আর কাঁঠাল। দাম সস্তা। খায়ও অনেক। জিনিস গুলো সাঙ্গাতিক টাটকা।এমন তরমুজ জীবনেও খাইনি। রাতের বেলা ওল্ড কাম্পালা শহরে যখন ফিরতাম তখন দুই পিচ্চি পিচ্চি ভাই বোনকে দেখতাম। রাত ১১ বাজে। ওরা অ্যালুমিনিয়ামের বড় এক থালায় মাত্র ২টা ভুট্টা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ১০০০ শিলিং হলে আমাকে দিয়ে দেবে। এই দুটো বিক্রি না করে বাড়ি ফিরলে মা বকবে যে। বোনটার বয়স সাত বা আট হবে,ভাইটা আরও ছোট। বিকেলে ১০টা ভুট্টা নিয়ে ওরা শহরে চলে আসে।বিক্রি করে বাড়ি ফিরে। যত তারাতারি বিক্রি করতে পারে তত জলদি বাড়ি ফিরতে পারে। তাহলেই গোসল করে খেতে পারে রাতের খাবার। বিক্রি না হলে ভীষণ বিপদে পরে যায় ভাইবোন। আমাকে দেখলেই ছুটে আসত ওরা। বোনটা চেঁচাত, স্যার কিনে ফেলুন স্যার। তাহলে বাড়ি ফিরতে পারব। পিচ্চি ভাইটা টালুমালুভাবে হাটত, বোনকে সাহায়্য করার জন্য বেচারা গলা ফাটাত,স্যার কিনুন স্যার। খুব ভাল ভুট্টা। হায় জীবন। এই রাতে সেদ্দ ভুট্টা খাবার দরকার নেই আমার। কিন্তু কালো এই পিচ্চি ভগবান দুটোকে রাস্তায় রেখে যাই কি করে? ১০০০ শিলিঙ দিয়ে বলি, নে তোরা ভুট্টা দুটো খেয়ে নিস। ওরা হাসতে হাসতে বাসে উঠে বসে। হাতের মুঠোয় সোনালি ভুট্টা। দাঁত বের করে হাসছে ওরা। আমি বাড়ির পথ ধরি। আকাশ ভর্তি কত তারা। এ যে আফ্রিকান মায়াবী রাত। কালো এক মেয়ের মত। যাকে আমি ভালবাসি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৭৭৬ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now