বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গাড়ি নিয়ে চলেছি বেড়াচাঁপার উদ্দেশ্যে

"গ্রাম্য লোককথা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাসরুল্লাহ (০ পয়েন্ট)

X কলকাতা থেকে আমরা দুই বন্ধু গাড়ি নিয়ে চলেছি বেড়াচাঁপার উদ্দেশ্যে। আমাদের গন্তব্য একদা সমৃদ্ধশালী নগরী চন্দ্রকেতুগড়। কলকাতা থেকে যার দূরত্ব মেরেকেটে মাত্র ঘন্টা দেড়েক। শহর ছেড়ে বেরোতেই পথের দু'ধারে সবুজের সমাহার। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। পথের দু'পাশে প্রচুর ভেড়ি। এখানে চিংড়ি মাছের চাষ হয়। ড্রাইভার গাড়ি থামাল। ভেড়ির পাশে কিছুক্ষণ থামলাম। শুনলাম এখানেই নাকি ছিল পদ্মদহ। জনশ্রুতি বলে, রাজা চন্দ্রকেতুর রানি এই পদ্মদহে জলে আত্মহত্যা করেছিলেন। সে গল্প না হয় পরে শোনানো যাবে। পদ্মাদহ মজে গিয়েছে অনেকদিন। এখন চাষজমি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে। বেড়াচাঁপার মাটির তলায় লুকিয়ে আছে এক সুবিশাল মহানগরী, যার নাম চন্দ্রকেতুগড়। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত মহকুমার দেগঙ্গা ব্লকের প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছিল এই মহানগরীর বিস্তৃতি। এখানকার শ্রী দিলীপ কুমার মৈত্র একান্ত নিজের প্রচেষ্টায় তাঁর নিজের বাড়িতেই চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন। সংগ্রহশালায় স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে মৌর্য, কুষাণ, গুপ্ত, শুঙ্গ, পাল ও সেন যুগের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। দেখা মিলবে যক্ষ যক্ষিণী মূর্তি, গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, সূর্য মূর্তি, রমণী মূর্তি, বাঘের দেবতা, হাতি ও গণেশ মূর্তি প্রভৃতি। আর দেখা মিলবে, লাল-নীল-সবুজ-হলুদ রংয়ের পুঁতি এবং পুঁতির মালা। যা কয়েক হাজার বছর আগে রমণীদের অঙ্গের শোভা বাড়াত। আর এখানকার আর দুটো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হল খনা-মিহির ঢিপি এবং রাজা চন্দ্রকেতুগড়। বর্তমানে খনা-মিহির ঢিপি জায়গাটা ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে ঘিরে রাখা হয়েছে। তবে ভেতরে যাওয়া যায়। শোনা যায় এখানেই খনা-মিহিরের বাসস্থান ও আরাধ্য দেবতার মন্দির ছিল। গোটা জায়গা জুড়ে রয়েছে ছোটো ও পাতলা ইটের পাঁচিল। ইঁটের পাঁচিলের উপরে ঢিবির মতো হয়ে আছে। মনে হয় সমস্ত ঢিবিটা খুড়লে গোটা মন্দিরটা চোখের সামনে ভেসে আসবে। কল্পনায় দেখতে পেলাম এখানে বসেই খনা লিখছে—‘মঙ্গলে ঊষা বুধে পা/যথা ইচ্ছা তথা যা’। অথবা খনার স্বামী মিহির হয়ত কোনো জটিল অংকের সমাধানে ব্যস্ত। আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালা। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে কোনো নদীর বাঁধ। গোটা গড়টাই এখন মাটির তলায় ঘুমিয়ে। মাইলখানেক বিস্তৃত বাঁধের মতো দেখতে জায়গাটির মুখটাতেই একটি প্রাচীন বৃহত বটগাছ আড়াল করে দাঁড়িয়ে। এখানেই ছিল রাজার বিশাল প্রাসাদ। মানস চোখে দেখতে পেলাম যেন রাজা চন্দ্রকেতু যাবেন রণক্ষেত্রে। হজরত আব্বাস আলির সঙ্গে যুদ্ধ। যাওয়ার সময় রানিকে বললেন, যুদ্ধে জয়ী হলে রাজপ্রসাদের দিকে উড়ে আসবে সাদা পায়রা। পরাজিত হলে উড়ে আসবে কালো পায়রা। ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকারে জয় সুনিশ্চিত হওয়ার মুখে রাজধানীতে উড়ে আসতে থাকল কালো পায়রা। যা দেখে সৈন্যরা হতম্ভব হয়ে পড়ে। পড়াজিত হন রাজা চন্দ্রকেতু। বন্দী হলেন আব্বাস আলীর হাতে। এদিকে রানি কালো পায়রা দেখে বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সময়ে অসময়ে চলে যান পদ্মদহের দিকে। আর এই পদ্মদহেই একদিন আত্মবিসর্জন দেন রানি। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বন্দরনগরী, যার একদিক দিয়ে বয়ে যেত পদ্মা, অন্যদিকে ভাগীরথী। এখন গল্পকথায় পরিণত হয়েছে। এখন মৃত পদ্মার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আধা মফস্বল, আধা গ্রাম্য জনপদ বেড়াচাঁপা। পুরো বেড়াচাঁপা এবং আশপাশের জনপদে শুধু লোককথা, উপকথার ছড়াছড়ি। কিছু জানা হল, অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেল।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৬০ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now