বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ছলনাময়ী এবং চৈত্রী

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রায়হান আহমেদ (০ পয়েন্ট)

X রাহাত খুব শান্তশিষ্ট একটা ছেলে। দেখতেও সেরকম সবার নজর কাঁড়া। খুব ধনীব্যক্তির সন্তান হলেও তাঁর হিংসে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে সে আর সব দশটা ছেলের মতোই আসে ক্লাস করে, আড্ডা দেয়। বন্ধুবান্ধবদের সাথে হৈ হুল্য করে। একদিন সে একা বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কোণে বসে ফোন টিপতেছিলো। হটাৎ একটি মেয়ে তাঁর সামনে আসার টের পায়। কিছুটা অবাক হয় সে। কারন অনেকটা দূরে সে বসে আছে। এখানে কেউ নেই আশে পাশে। তাহলে কি মেয়েটা তাঁর কাছেই এসেছে? এসব ভেবে উঠার আগেই। মেয়েটা বললো এইযে মিষ্টার আপনার পাশে কি একটু বসতে পারি? রাহাত অনুমতি দিলো। কথার ছলে রাহাত জানতে পারে মেয়েটার নাম সানজানা। এর থেকে বেশি কিছু সে জিজ্ঞেস করেনি। এভাবে তাঁদের পরিচয় হয়। একটা সময় বন্ধুত্ব। কিছুদিন যাবার পর রাহাত সানজানার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু সে বলতে পারছেনা। একদিন ঠিক করলো সানজানাকে খুলা কোন জায়গায় আমন্ত্রণ জামিয়ে সে তাঁর মনের কথা বলবে। কিন্তু আকস্মিক বিষয়। ঐদিন রাতেই সানজানা তাঁকে এক ফোন দিয়ে পরেরদিন এক সাথে কোন জায়গায় যাওয়ার কথা বলে। রাহাত ভাবে সেখানেই সে বলবে মনের কথা। পরেরদিন যখন তাঁরা বের হলো। বাতাস বয়ে যাওয়ার জায়গা মানে নদীর পাঁড়ে। যখনি রাহাত তাঁর মনের কথা বলতে যাবে তখনি সানজানা তাকে প্রপোজ করে। বিষয়টা যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। রাহাত'ও রাজি হলো। এভাবেই তাদের এঈ প্রেম-ভালবাসা নামক সম্পর্ক শুরু হয়। সানজানা চায় তাঁদের সম্পর্কটা যেন লুকানো থাকে। কেউ যেন না জানে। তা'ঈ ঘটে কিছু কাছের বন্ধুবান্ধব ছারা কেউ জানেনা। এভাবে আস্তে আস্তে তাঁদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়। সানজানা প্রতিদিন নানা ধরনের অজুহাতে টাকা চায়। রাহাত'ও দেয়। নেকলেস, গলার হার, আংটি স্বর্ণের এগুলো চাওয়া রাহাতের কাছে রীতিমতো তার অভ্যাস হয়ে গেছে। রাহাত'ও পরিষ্কার মনে দেয়। তারপর একদিন সানজানা বললো তাঁর ৫০ লাখ টাকা দরকার। ইনিয়েবিনিয়ে রাহাতকে সে আবেগী করে তুলে। রাহাত'ও টাকা জোগাড় করে দেয়। হটাৎ একদিন সানজানা বলে সে আর সম্পর্ক রাখতে চায়না। রাহাতের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। অনেক সুন্দর করে সে বানিয়ে একটা গল্প বলে সম্পর্ক শেষ করে দেয়। রাহাত অন্যরকম হয়ে পড়ে। নেশায় মগ্নপ্রায়। ধীরেধীরে সে ড্রাগ,ইয়াবা এ জাতীয় মারাত্মক নেশায়'ও জড়িয়ে পড়ে। পারিবারিক ভাবে সবাই খুব অস্বস্তিতে থাকে তার জন্য। অনেক ঝগড়া, রাগ হয় প্রতিদিন। রাহাত সানজানাকে সত্যি'ই অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলো। আর তা সে সইতে পারেনি। অনেক ডাক্তার, মনোবিজ্ঞানী দেখিয়েছে। তা কোন কাজে আসেনি। একদিন রাহাতের মা ভাবলো। একটা মেয়ে যেহেতু একটা ছেলেকে খারাপ বানাতে পারে। তাহলে আরেকটি মেয়েই পারবে তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে। কিন্তু অনেক খুঁজেও সেরকম মেয়ে তিনি তাঁর ছেলের জন্য খুঁজে পেলোনা। অনেক কষ্টে খুঁজে পেলো। মেয়ের বাড়িতে সমন্ধ পাঠালে রাজি হয়। তাঁদের বিয়ে দেয়া হলো। বাসর রাতে সে চৈতীকে সব খুলে বলে। চৈতীর চোখ বেয়ে শুধু অন্ধকার বইছে। পরদিন সে রাহাতের মার কাছে জানতে চাইলে সব বলে। চৈতীর অনেক কষ্ট হয়। রাহাতকে সে রাহাতকে কোন ভাবেই বুঝিয়ে পারছেনা। এমনকি নেশা করে এসে চড় থাপ্পড় ও দিয়েছে চৈতীকে। চৈতী ভেবে নেয় রাহাত তো আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এজন্য হয়তো মারে। কিন্তু মন থেকে মারতে পারবেনা। সুস্থ মানুষ রাহাত খুব ভালো। কিন্তু ৩ মাসের এক অনাকাঙ্ক্ষিত অতীত তাঁকে পুড়ে ছারকার করে দিয়েছে। চৈতীও তাঁর স্বামীর মন জয় করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। অনেক ভালবাসে , প্রতিদিন মার খেয়েও তাঁর যত্ন করে যায়। অনেকদিন এভাবে যাওয়ার পর'ও কাজ হচ্ছেনা। চৈতী রাহাতকে অনেক বুঝিয়েছে। অতীত সবার'ই থাকে। কেউ বিশুদ্ধ অতীত নিয়ে জন্মায় না। সবার'ই অতীতে কিছুনা কিছু খারাপ ঘটনা থাকে যা কখনো কেউ ভুলেও মনে করতে চায়না। তারমানে কি বাঁকি জীবনটা এভাবে যাবে? চৈতী ভাবে কবে সেদিন আসবে সে রাহাতের বুকে নিবিড়ভাবে মাথা রেখে সব দুঃখের কথা বলবে। একসাথে বসে চাঁদ দেখবে। অভিমান আর খুনসুটিতে মিষ্টি সংসার হবে তাঁর। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। অনেক কান্না করে প্রতিদিন। একবার এসে রাহাত কাঁধে হাত পর্যন্ত রাখেনা। একটা অভিশাপী মেয়ের জন্য সে কেন চৈতীকে কষ্ট দিবে । চৈতী তো নিরপরাধ। তার তো কোন দোষ নেই। মানসিক চাপের কারনে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে ধীরেধীরে। একসময় হাসপাতালে যেতে হয়। তখন রাহাত কিছুটা চৈতীর আদোর, সোহাগ, যত্ন বুঝতে পারে। কিন্তু নেশা তাঁকে ছারেনা। ঐদিকে চৈতীর অবস্থা দিনকেদিন খারাপ হয়েই চলেছে। রাহাত এ খবর শুনে প্রথমবারের মতো চৈতীকে হাসপাতালে দেখয়ে যায়। চৈতী রাহাতকে দেখে অনেক খুশি হয়। কিছুটা পরিবর্তন সে লক্ষ করে রাহাতের মাঝে। এভাবে সে অনেকদিন যাবার পর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়। কিন্তু রাহাত যেই সেই। সে ভাবে আজ বুঝি তার স্বামী এসে আলতো করে বুকে নিয়ে সব রাগ,অভিমান, দুঃখে ভাঙ্গাবে। বিয়ের পর দম্পতীরা কতো কিছু করে তাঁর কিছুই করা হলোনা। তবুও সে তার স্বামীরর সুস্থতার অপেক্ষায় থাকে। অনেকদিন গেলো তাও কিছু হয়নি। একদিন রাঁতে রাহাত চৈতীর সাথে বসে গল্প করবে বলে সময় চাইলো। চৈতী অনেক খুশি হয়। জানো চৈতী সানজানাকে আমি খুব ভালো বাসতাম। সে এরকম করার পর আমার সব মেয়েদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়। শুধু এটুকুই বলে উঠে যেতে চাইলো রাহাত। এর মধ্যে চৈতী বলে উঠে। আমাকে একবার আপনার বুকের মাঝে ঠায় দিন। দেখবেন আমি আপনাকে ভালোবেসে আদোত,স্নেহ, যত্নে আপনার সব কষ্ট দূর করে দিবো। কিন্তু রাহাত শুনলোনা। একদিন সে খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে। চৈতীকে ভেজা চুলে অনেক অপরুপ লাগছে। খুব ইচ্ছে করছে কাছে যেতে হটাৎ। এ অপরুপ দৃশ্য সে না কতোদিন মিস করেছে। চৈতী রাহাতের চাহনি দেখে লজ্জা পেয়ে রুম থেকে চলে গিয়ে ভাবে। রোজ সকালে আমার মাথার ভেজা চুল থেকে পানি মুছার সময় আমার পাশে একটু আসলে কি হয় এরকম। রাহাত আস্তে আস্তে বুঝতে পারে সে চৈতীকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা অনেক সহ্য করেছে। এখন তার ভাবতে লজ্জা করছে নিজের স্ত্রী'র গায়ে সে কতোবার না হাত তুলেছে। তাও চৈতী একবারের জন্যও চোখ তুলে তাকায়নি তাঁর দিকে। প্রতিরাতে বাসায় ফিরে নেশা করে। মুখে শরীরে কতো দুর্গন্ধ লেগে থাকে। তাও চৈতী আলতো করে তার পাশে ঘুমায় চড় থাপ্পড় খেয়েও। এসব ভাবতে ভাবতে সে নিজের কাছেই লজ্জায় আর শ্বাস নিতে পারছেনা। একদিন সে নেশা না করে বাড়ি ফিরে। কিন্তু আজ অন্যদিন এর থেকে পুরো বিপরীত। তার হাতে কিছু গোলাপ ফুল। দরোজা খুলে রাহাতের এমন অবস্থা দেখে সে অনেক খুশি হয়। সে দরোজা খুলে দিয়েই চলে গেলো। রাহাত লজ্জা পাচ্ছে। চৈতীকে সে এ পর্যন্ত কিছুই দেয়নি আর সানজানা। থাক সে কথা আর সে ভুলেও মনে করতে চায়না। চৈতীকে ডাক দিয়ে বললোঃ তোমার জন্য চৈতী নেবেনা? এতোটা পরিবর্তন দেখে চৈতী পুরো দমে অবাক। তারপর সে ফুলগুলো নিয়ে বললো। হ্যা নিবোনা কেন? অবশ্যই নিবো। রাহাত আর দেরি করতে পারছেনা। সোজা চৈতীর পায়ের কাছে গিয়ে পড়তে চাইলো। চৈতী মাঝ পথে আটকালো। এই কি করছো এগুলো? রাহাতের চোখে অসহায়ত্ব আর দোষীর পানি। রাহাত বললোঃ আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে মাফ করে দাও। আমি আর পারছিনা কাছে থেকেও তোমার থেকেও দূরে থাকতে। চৈতীর দু-চোখ বেয়ে আনন্দ আর সুখের পানি ঝড়ছে। রাহাত এবার তাঁকে আলতো করে নিবিড়ভাবে চৈতীকে বুকে নিলো। চৈতী মনে মনে ভাবে আমিতো এই দিনটার জন্য'ই অপেক্ষায় ছিলাম। কিসের দুঃখ,কষ্ট । চৈতীর নিরবতা দেখে আবারো রাহাত বললোঃ কি হলো ক্ষমা করবেনা আমায়? বলো কি করবো আমি। তবুও তুমি আমাকে ক্ষমা করো। নেশার ধারেকাছে'ও যাবোনা। বলোনা চুপ করে থেকোনা দয়া করে। এবার চৈতী রাহাতকে আরো শক্ত করে জড়য়ে ধরে। ভালবাসবে আমায়? রাহাত বললোঃ হ্যা খুব। তারপর চৈতী রাহাতের চোখের পানি মুছে দেয়। রাহাত অবাক হয়। বলে তোমাকে আর আমি কষ্ট দিবোনা। সুখেদুঃখে সবসময় পাশে থাকবো। তোমাকে আমার নিশ্বাস করে রাখবো। পরদিন থেকে রাহাতের সুস্থ স্বাভাবিক আচরণ দেখে মা খুব খুশি হয়। বউমাকে ডেকে নিয়ে তাঁর কপালে খুব খুশি হয়ে একটি চুমু দেয়। মা তোমার ঋণ আমি কোনদিনও ভুলবোনা। এরকম ভাবে মায়ের মুখ থেকে শুনার পর চৈতী বললো। এরকম ভাবে বলছেন কেন? আপনার সন্তান আমার'ও তো একমাত্র স্বামী।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৬৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now