বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আজ বিকেল ৫ টায় সাফার সাথে সিফাতের দেখা করার কথা। তাঁদের সম্পর্কের এক বছর পূরন হতে চললো প্রায়। কিন্তু সিফাত ঘুমুচ্ছে এই বিকেল বেলা। তার এই একটা অভ্যাস যেখানে সেখানে যখন তখন ঘুমুতে পারে! পারে বলতে ঘুমিয়ে যায় আরকি। ভুলে যাওয়ার একটা রোগ আছে।
.
ঐদিকে সাফা বসে আছে আধ-ঘন্টা ধরে প্রায়। ফোন দিচ্ছে সিফাত'কে কিন্তু সিফাতের ফোন বন্ধ করা। সিফাত ঘুমানোর আগে ফোন বন্ধ করে ঘুমায়। ঘুমের মধ্যে বিরক্ত তাঁর একদম'ই পছন্দ না। সিফাতের ঘুম ভাঙ্গলো রিফাতের ডাকে।
.
রিফাত হচ্ছে সিফাতের একমাত্র ফুটবল! মানে রিফাতকে সিফাত ফুটবল বলে ডাকে। মুখটা দেখতে গোল-গাল সুন্দর তাই রিফাতকে ফুটবল বলে ডাকে। সিফাত ঘুম থেকে উঠার পরেও মনে হলোনা তাঁর আজ দেখা করার কথা।
.
ফোনটা অন করার সাথে সাথেই দেখে সাফার তেত্রিশ'টা মেসেজ। তখন চোখ কপালে। আল্লাহ মেয়েটা আজ সিফাত'কে মেরেই ফেলবে!! তারাহুরু করে রেডি হয়ে এক দৌড়ে নদীর পাড়ে। দু'জনের'ই পছন্দের জায়গা এটা।
.
পিছন থেকে মিষ্টি করে ডাক দিলো "বাবুই" সাফা পিছন ফিরে সিফাতের দিকে তাকিয়ে একবার ঘড়ি দেখতে বললো ক'টা বাজে! সিফাত ঘড়ি দেখে জিহ্বায় কামড়!! পাঁচটা বেজে ৫৭ মিনিট! সন্ধা প্রায়!
.
সিফাত কান ধরে উঠবস করতে লাগলো সাফার বলার আগেই। কারন খুব ভালো করেই জানে সিফাত যে সাফা তাঁকে। শাস্তি'ই দিবে। কোনো কথা নেই উঠবস করতেই আছে। প্রায় অনেকবার উঠবস করার পর হটাৎ সাফা হেসে দেয়।
.
সিফাত উঠবস করতেই আছে। সাফা কাছে এসে আটকিয়ে বলে," হয়েছে আর করতে হবেনা পাগল একটা। এতো দেরী হলো কেন? নিশ্চয় ঘুমুচ্ছিলা ? " সিফাত মাথা নাড়িয়ে বলে হুম। সাফা এবার একটু রাগ করে বলে,
.
এতো ঘুমাও কেন হুম? এভাবে চললে তো তপমার সাথে থাকা যাবেনা! কথাটা শুনে সফাতের মুখটা কালো হয়ে গেলো। ঘুম ব্যাপার'টা আল্লাহ্র রহমত। তাই সিফাত চুপ করে আছে কিছু বলার নেই। সাফা সফাতের কালো মুখটা দেখে আবার রাগ করে বলে,
.
ঐ কথায় কথায় এভাবে মুখ কালো করে রাখো কেন? টেনশন করো? হিহি আরে পাগল আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো? এবার একটা ভেটকী'মার্কা হাসি দিয়ে সিফাত বলে, " আমি জানিতো তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা " সাফা সিফাতের দিকে তাঁকিয়ে ভেংচি দিয়ে,
.
খুব জানো না? তাহলে কথায় কথায় মুখ কালো করো কেন? সিফাতের সেই পুরুনো উত্তর " কি করবো আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতেই পারিনা। আর তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমি সত্যি মরেই যাবো!
.
সাফা'র এবার চোখে পানি, " আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাইনা? কষ্ট দিয়ে মজা পাও! তুমি জানোনা!! তোমাকে না কতবার বলছি মরার কথা না বলতে ! তাও কেন বলো? আমি যাচ্ছি বাসায় কাজ আছে!
.
বলে সাফা উঠতে চাইলো। সিফাত হাতটা ছাড়লোনা। এক হাতে কান ধরে বলে, " সরি আর কোনদিন বলবোনা। জানোই তো আমার ভূলে যাবার অভ্যাস আছে। সাফা দাঁড়িয়ে থেকেই বলে, " হ্যাঁ ভুলবাই তো! দুদিন পর তো আমাকেই ভুলে যাবা "
.
সিফাত বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে, " সেদিন যেন আমার মরন হয় " আবার সাফা রেগে যায়! মরার কথা বললো তাই! সিফাত যখন খেয়াল করলো সে মরার কথা বললো তখন, " আল্লাহ না আমার মরন হবেনা। আমি মরলে তোমার কি হবে?
.
আজ আর সাফা'কে আটকানো যাবেনা। বাসায় চলে গেলো একরাশ মন খারাপ নিয়ে। সিফাতের নিজের প্রতি অনেক রাগ হয়। যে কথাটাতে সাফা রাগ করে সেই কথাটাই বারবার মুখ থেকে বেরিয়ে যায়!!
.
অতঃপর সাফার রাগ ভাঙ্গাতে ফুটবল'কে দিয়ে অনেকগুলো গোলাপ সাফার জানালার পাশে রেখে দেয়। সাফা মন খারাপ হলেই ফোন-টোন সব বন্ধ করে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। এভাবে সাফার রাগ ভাঙ্গানো নতুন কিছু না।
.
বারবারই রাগ করলে এভাবেই রাগ ভাঙ্গাতে হয়। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। এর ফলে ফুটবল সিফাতের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও নেয়। মানে ফুটবল চায়'ই সাফা কোন কারনে রাগ করুক আর তাঁকে পাঠাক ফুল নিয়ে!!
.
কিছুদিন পর সাফার বাসা থেকে সাফাকে বিয়ে দিতে চাইছে। প্রায় অনেক কিছুই ঠিকও হয়ে গিয়েছিলো! অনেক কষ্ট করে তিনজন মিলে বিয়েটা আটকায়। ঝামেলা শেষ হলোনা! এবার সিফাত'কে বিয়ের চাপ দিচ্ছে।
.
কিন্তু কোন চাকুরীতে এখনও যোগ দেয়নি সিফাত। বাবায় চাপ দিচ্ছে। বলে তুই বুড়ো হয়ে যাবি কিন্তু বিয়ে করতে পারবিনা। সাফা'কে বিষয়'টা বলার পর সাফা টেনশনে পড়ে যায়!
.
অতঃপর ফুটবল মা'কে সব খোলে বলে খুব কষ্ট করে বোঝালো। সবশেষে সব ঘূর্ণিঝড় পেছনে ফেলে বিয়েটা সাফার সাথেই হয়। সে কি কাহিনি!! সাফা বাসর ঘরে বসে আছে। সিফাত এখনো আসছে না! কিছুক্ষণ পর এলো।
.
সাফার বিষাল ঘোমটা'টা সরিয়ে বোকার মতো তাঁকিয়ে আছে। কেউ কোন কথা বলেনা। সাফা তো লজ্জায়.. !! কিন্তু সিফায়! সাফা নীরবতা ভেঙ্গে বলে, "এই গর্ধভ এভাবে দেখার কি আছে? সিফাতের একটা'ই উত্তর "ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো "
.
সাফার প্রচণ্ড রাগ হয়। বাসর রাতেও... ঘুমাবে!! কিছুই করার নেই। সিফাতের এতো রাত জাগার অভ্যাস নেই। তবুও আজ অনেক জেগে রয়েছে ভাগ্যেস! সিফাত একমিনিটেই সেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছে।
.
বিয়ের কিছুদিন পর একটা চাকুরীতে জয়েন করে সিফাত। কিন্তু সমস্যা তো সেই একটাই! ঘুম!! রাতে ঠিক সময়ে ঘুমুলেও নয়টার আগে ঘুম কোনভাবেই ভাঙ্গে না। কপাল ভালো অফিস বাসার কাছেই। মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই ফ্রেশ হওয়া খাওয়া-দাওয়া সব সারতে হয়।
.
অনেকদিন তো না খেয়েই যেতে হয়। একটু সুযোগ পেলেই অফিসে ঘুম। এনিয়ে অনেক ঝাড়িও শুনতে হয়েছে বসের কাছ থেকে অনেকবার!! সাফা বিয়ের পরেও সিফাতের ঘুম কমাতে পারলোনা।
.
আর একবার ঘুমুলে চার-পাঁচ ঘন্টার ভীতরে কোনভাবেই তাঁকে জাগানো যাবেনা। মাথায় পানি ঢালা ছাড়া! একবছর পর তাঁদের মেয়ে সন্তান হলো। ছোট শিশুটা না যতটা ঘুমায় তার চেয়ে বেশি ঘুমায় সিফাত!!
.
এখন আর অতো ঘুমাতে পারেনা সিফাত কারন সারাক্ষণ মেয়েটা তাঁর কাছেই থাকে। খেলা করতে হয়, এই করতে হয় সেই করতে হয়। কান্না করলে যোকার সাঁজতে হয়। এখন সাফা শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে মিঠমিঠিয়ে হাসে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now