বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কলেজে ১ম দিন এসেই এমন কিছু একটা দেখবো ভাবিনি। আসলে এমন কিছু যে হতে পারে এটা আমার মাথাতেই আসেনি। আরে 'এমন কিছু' বলছি কেন, ওটা'তো একসময় আমার অনেক প্রিয় কিছু ছিল। ছিল নয়, আছে। ওকে দেখার পর বুঝলাম ও এখনো আমার অনেক প্রিয় কিছুই আছে।
আমি ওকে দেখে ঠিক যতটা না অবাক হয়েছি, মনে হলো ও আমাকে দেখে তার চেয়ে অনেক বেশিই অবাক হলো। তাই আমি একটু ভয়ই পাইলাম। ভয়টা এই নিয়ে যে আমাকে এখানে দেখে ও থাকবেতো? পরে ভাবলাম আমি এমন কোন পারসন নই আই মিন ছিলাম না যে আমার জন্য ও কলেজ ছাড়বে। তাই এইসব আজাইরা চিন্তা বাদ দিয়ে একটা খুশি খুশি মোড নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
.
.
ছোট বেলা থেকেই পাড়ায় বদ পোলা নামে আমার একটা সুখ্যাতি ছিল। কিন্তু আপনারা এটাকে সুখ্যাতি না বলে যে কুখ্যাতি বলবেন এটা আমি সিউর। কিন্তু আমার মনে হয় বদ হওয়া একটা আর্ট। এটা সবাই হতে পারে না।
মাইসেল্ফ উৎস। আর এই আর্টে আমার দক্ষতা থাকার কারনে আমাকে ক্লাস নাইনেই দুইবার স্কুল চেইঞ্জ করতে হয়েছিল। প্রথমত জে.এস.সি. এর পরে বাবা-মা আমাকে অন্য একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল যাতে আমি সেখানে গিয়ে একটু ভাল হই। কারন সেই স্কুলের রুলস গুলো আগের স্কুল থেকে একটু হার্ড ছিল। আর দ্বিতীয়ত আমি সেখানেও দুই মাসের বেশি টিকতে পারি নাই। আর কাহিনী টা ছিল সেই দুই মাসেই।
.
নতুন স্কুলে সবেমাত্র তিন চারদিন হয়েছে। এরই মধ্যে ক্লাসের টপ বদ গুলার সাথে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে। আমি আর বদ গুলা ক্লাস শুরুর আগে হাইবেঞ্চের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় একটি মেয়েকে দেখলাম ক্লাসে ঢুকতে। দেখে সাধারন মেয়ে বলেই মনে হলো মানে অতোটা মডার্ন নয় আরকি। কিন্তু আমার ওই সাধারন মেয়েটাকেই কেন যেন অসাধারন ভাবে ভাল লেগে গেল। মূহুর্ত টা ছিল এমন যে আমি শুধু মেয়েটার মধ্যেই হারিয়ে গেছি। চারপাশে সবকিছু ঘোলা আর আমার চোখ শুধু মেয়েটাকেই ফোকাস করে আছে। ঠিক যেন DSLR এর মতন। কথাগুলা মুভি টাইপের মতন হয়ে গেল তাইনা? আরে প্রেমে পড়ার আগে এমনি হয় রে ভাই। যাই হোক মেয়েটা যেইমাত্র আমাদের সামনে দিয়ে যাবে তখন আমি আমার মুভি মোড থেকে বেড়িয়ে এসে দোস্তদের বললাম
- আজকাল চুলে বেণী করা মাইয়াগুলা কিউট হইয়া যাইতেছে রে মামা।
আমি একটু জোরেই বললাম যাতে ও শুনতে পারে। আর ও খুব ভালভাবেই বুঝতে পারল যে কথা টা আমি ওকে উদ্দেশ্য করেই বলেছি কারন স্কার্ফের নিচ দিয়ে ওর মোটা তাজা বেনীজোড়া বেশ ভাল করেই দেখা যাচ্ছিল। কথা টা শোনার পর ও চেহারায় এমন একটা ভাব করে আমার দিকে তাকালো যেন এমন কথা জীবনে ১ম বারের মত শুনল। তার পর আমার চারপাশের ফাজিল গুলাকে একবার দেখে নিল। এবার হয়তো বুঝাল যে এই ধরনের টোন যেন নেক্সটে আর না করা হয়। আমি ওর এমন ভাবসাব দেখে বেশ মজাই পাইলাম।
.
ওইদিন বাসায় রুমে এসে ফোনে টেকনোলোজি বিষয়ক খবর পড়ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ-ই মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেল। ক্লাস থেকে ওর নামটা জানতে পেরেছিলাম। সেটা ছিল বৃষ্টি। সকালের ঘটনাটা মনে পড়তেই আমি ভাবলাম মেয়ে তোরে খাইছি। আমার হাত থেকে তোমার নিস্তার নাই।
.
তারপর থেকেই আমি বৃষ্টির সাথে আমার যথাসম্ভব বদগিরি শুরু করে দিলাম। তবে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখলাম আমাদের ক্লাসে আমার মত বদ আরো অনেকেই ছিল। আর তারা অন্য মেয়েদের সাথে টাংকি মারলেও বৃষ্টির সাথে কখনই মারতো না। কারণ ও নাকি অনেক রাগি আর অতিরিক্ত ভদ্র। তো কি হইছে? আমি ভয় পাই নাকি। আমার ওকেই লাগবে। ক্লাসে ও স্যারকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে আমিও ওইটা নিয়েই স্যারকে প্রশ্ন করতাম। কখনো কখনো পচাইতাম ওকে। মাঝে মাঝে ও যে অনেক রেগে যেত এটা বুঝতাম। আর ওরে রাগাইতে পারলে আমার ব্যাপক আনন্দ লাগতো। মনে হতো ও রাগলেই আমি সার্থক। ক্লাস শেষে একদিন বের হবো এমন সময় কে যেন ডাকল
-- এই উৎস, শুনে যাও
- এই কে বে
পিছনে তাকিয়ে দেখি ওমাগো। এইডা তো বৃষ্টি। যাক মনে মনে ভাবলাম আমার কপাল খানা মনে হয় এতদিন পর খুলল। ও আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বললাম
- আরে বৃষ্টি যে। কি অবস্থা? কেমন আছো?
-- ছিহ্... তুমি প্রথমে ওইটা কি বললা
- কোনটা কি বললাম
-- "কে বে" না কি যেন একটা বললা
- আরে ওইটা? আমি তো বললাম যে কেগো তুমি সুন্দরি
-- তাই না? শোন তোমার সাথে আমি এইসব আজাইরা কথা বলতে আসি নাই।
- তাহলে কি? হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ
-- তুমি এইসব কি শুরু করছ কি। প্রতিক্লাসে তুমি আমাকে নিয়ে অমন করো কেন? তুমি পাইছো টা কি হ্যা। আর আজকে তুমি কি বললা ক্লাসে?
- আরে ইজি ইজি। তুমি এতো রেগে যাচ্ছ কেন?
-- তোমার জন্য আমার বান্ধবীদের কাছ থেকে আমার কথা শুনতে হচ্ছে। নেক্সটে যদি আর এমন হয় তাহলে আমি তোমার নামে হেড স্যারের কাছে কমপ্লেইন করব। যত্তসব ফালতু পোলাপাইন
ওর কথার সাউন্ড শুনে ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমারো কেমন যেন আর কথা বের হচ্ছিল না। আসলে ও এমন ভাবে বলতে পারে এইটা আমি ঠিক মিলাতে পারছিলাম না। তাই ওখান থেকে কারেন্ট চলে আসাই ভাল মনে করলাম
- আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম
এটা বলেই আর পিছে না তাকিয়ে সোজা হাটা ধরলাম।
.
রুমে থাকলেই আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঝামেলাময় মুহূর্ত গুলো মনে আসে। আর এখন আমি রুমে বসে আজকের ঘটনাটাই ভাবছি। ওর বলা শেষ লাইনটা কানের কাছে বার বার প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে। "যত্তসব ফালতু পোলাপাইন" হোয়াট দা...! আম্রে বলে কিনা ফালতু পোলা।
মাইয়া তোরে বেশি পছন্দ কইরালছি তাই কিছু কইতে পারি নাই। কাল থেকে তর লগে আরো বেশি গুটিবাজি করুম খারা তুই। উৎসর প্রেস্টিজে হ্যান্ড দেয়া?...
.
পরদিন আমি স্কুলে ওর সাথে পার্ট নিবো বাট তেমন কোন চান্স পাইলাম না। তাই ভাবলাম যে স্কুলে হয় নাই তো কি হইছে আজ যে ভাবেই হোক বৃষ্টিকে ডিস্টার্ব করবই। এজন্য আমি ওইদিন ওর বাসায় যাওয়ার পথে দাঁড়ায় ছিলাম। কিছুক্ষন পর দেখলাম ও আসতেছে আর আমাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ও মুখে একটা বিরক্তিকর ভাব ফুটিয়ে তুলল। আমাকে ক্রস চলে যাবে এমন সময় আমি হুট করে ওর সামনে চলে আসলাম।
-- এটা কি হলো?
- কি
-- এভাবে সামনে আসলা কেন? কি চাই
- ফালতু পোলাপাইনেরা তো এমনি করে। তাই আমিও করতেছি
-- মানে কি
- আরে তুমি আরেকদিন বললা না যে আমি নাকি ফালতু পোলা?
-- হুম তো
- তাই ফালতামো করতেছি।
এবার ও এমন একটা ভাব করল যেন আমাকে খেয়ে নিবে। পরে রাগে আর কিছু বলতে না পেরে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
.
ওইদিন আমি ওইভাবে ওকে জালায়ে বেশ মজা পাইলাম। তাই তারপর থেকে প্রতিদিন ওই পথেই দাঁড়ায় থাকতাম। কোন কোন দিন আমার সাথে আরো কয়েকটা ভদ্র পোলারা থাকতো। মাঝে মাঝে ওকে আসতে দেখে আমি তাহসানের ছোট ভাই হয়ে যাইতাম। যেমন "বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি, করেছি কতই আর্তনাদ... আবার যেমন "ও বন্ধু লাল গুলাবি কই কই রইলা রে..." যদিও এগুলা তাহসানের গান না। তবে আমার গানের ভাবসাব তাহসানের মতই কিনা।
যাই হোক একদিন ওর সাথে একটা ছেলেকে যেতে দেখলাম। এটা দেখে শুভ বলল
-- এই উৎস, ছেলেটা কেরে বৃষ্টির সাথে যায়
- আমি কি জানি
-- ওমা তোর বউ আর তুই জানবি না কে?
- নারে বাপ জানি না
-- তাহলে কে হতে পারে
আর তখন জয় বলে উঠল
- আরে মামা এই ছেলেটাকেই তো আমি ওইদিন বনলতার সামনে বৃষ্টির সাথে কথা বলতে দেখছিলাম
কথাটা শুনা মাত্র মাথার ভেতর কেমন যেন একটা যন্ত্রণা অনুভব করলাম। আমি আর কিছু না বলে সোজা ওদের দিকে হাটতে লাগলাম। তারপর ওদের কাছে গিয়ে ডাক দিলাম
- এই বৃষ্টি দাঁড়াও
আমার কথা শুনে ও থেমে গেল। আমি তখন বৃষ্টির সামনে না গিয়ে ডিরেক্ট ওই ছেলেটার সামনে গিয়ে বললাম
- এই তুই কেরে? বৃষ্টির সাথে তোর কি
আমাকে এভাবে বলতে দেখে ছেলেটা একটু ভয় পেয়ে গেল। তাছাড়া আমার সাথে আরো ৪-৫ জন ছিল তাই ওর মুখ দিয়ে আর কথাই বের হচ্ছিল না। ছেলেটা বলল
- বি বি বৃষ্টি আ আমার....
এমনেই রাগ মাথায় উঠে গেছিল আর ছেলেটাকে তোতলাতে দেখে রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেছিল। আমি ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টাস করে এক চড় দিয়ে দিলাম। চড়টা এতই জোরে দিছিলাম যে তাল সামলাতে না পেরে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। বৃষ্টি না ধরলে মনে হয় পড়েই যাইতো। ছেলেটাকে ধরার পর বৃষ্টি আমাকে একটা চড় দিয়ে বলল
- ওই তুই ওকে মারলি কেন। কি ভাবিস কি তুই নিজেকে। আমি কি করব আমার সাথে কে যাকে কে না যাবে তাতে তোর কি। তোর মত বখাটে গুন্ডা টাইপের ছেলে আমার একদম পছন্দ না। আমার আশেপাশেও যেন তোকে আর না দেখি।
এরপর ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল "এই হাসিব ভাই চল।" এটা বলে ও চলে গেল আর ছেলেটা মানে ওর ভাইয়া ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকিয়ে ওর পিছু পিছু চলে গেল।
আমার আর কিছুই বলার ছিল না। শুধু গালে হাত দিয়ে ওর গমন পথে চেয়ে রইলাম। আসলে ওটা ওর কি রকম যেন একটা ভাই ছিল। ওর বড় বোনের বিয়ে উপলক্ষে বেড়াতে আসছিল ওদের বাসায়। আর আমি ওটাকে...
.
বৃষ্টির চড় খেয়ে আমি ওইদিন রুমে এসে দরজা লাগিয়ে অনেক্ষন কেঁদেছিলাম। আমি হয়তো ওকে ভালবাসি বলেই এমন করেছি। আর এজন্য ও আমাকে এইভাবে বলবে? আমি এটা কোন ভাবেই মানতে পারলাম না। তাই পরদিন আমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেললাম।
ক্লাসে স্যার চলে যাওয়ার পর আমি বোর্ডের সামনে গেলাম। তারপর স্যার যেখানে বসে তার সামনে যে টেবিল টা থাকে সেখানে হাত দিয়ে কয়েকটা বারি দিয়ে বললাম
- এটেন্টসন প্লিজ
এরপর ক্লাসের সবাই আমার দিকে তাকালো। বৃষ্টিও তাকালো।
আমি বলতে লাগলাম
- দেখো বন্ধুরা তোমাদের বলা হয়নি যে আমি উৎস সরকার সদ্য বিবাহ করিয়াছি। আর তোমাদের ভাবি এই ক্লাসেই তোমাদের সাথে পড়ে।
এটা বলার পর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখি ও চোখ গুলো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো এটা বুঝতে পেড়ে যে আমি কার কথা বলতে চাচ্ছি।
- এখন তোমাদের নিশ্চই জানতে ইচ্ছা হচ্ছে যে তোমাদের সেই সৌভাগ্যবতী ভাবিটি কে যিনি আমার মত একজন সৎ আদর্শবান ছেলেকে কপালে পেয়েছেন। তিনি হলেন এই ক্লাসের গণ্যমান্য ছাত্রী, ২ রোল মিসেস বৃষ্টি সরকার।
.
সবই ঠিক ছিল বাট আমার এই ইন্টারন্যাশনাল ভাষণ হেডস্যার শুনে ফেলল কারন এর পরে তারই ক্লাস ছিল। মন দিয়ে ভাষণ গুলো দেয়ার সময় যখন আমি স্যারের দিকে খেয়াল করলাম তখন দেখলাম স্যার হাঁ করে আমার কথা গুলো গিলছিলেন। আর ঠিক তখন আমি সহ পুরা ক্লাস স্যারের দিকে তাকিয়ে পুরা থম হয়ে গেলাম। তারপর স্যার দুম করে ক্লাসে এসে আমার কান ধরে টানতে টানতে সোজা অফিস রুমে নিয়ে গেলেন। তারপর বাবাকে ডেকে সুন্দর করে আমার আকাম গুলা বুঝায়ে দিয়ে আমার হাতে টি.সি. ধরারে দিলেন। স্যার যখন বাবাকে এইসব কথা বলছিলেন বাবা তখন আমাকে কোন প্রকার বকাঝকা না করে আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন যে "কোন পুণ্যে আম্রে এমন একখান সুপুত্র দান করলা আল্লাহ্।" স্যারের কথা শেষে বাবা আমার আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলেন। আমি তখন বাবাকে একবার বলেছিলাম "বন্ধুদের সাথে একটু দেখা করে আসব?" বাবা শুধু বললেন "কোন দরকার নেই।" আমি আর কোন কথা না বলে বাবার সাথে সাথে চলতে লাগলাম। যাওয়ার সময় ক্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম বৃষ্টি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে ছিল। দূর থেকে ওর চেহারাটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। তবে আমি এইটুকু কিভাবে যেন বুঝেছিলাম আমি চলে যাচ্ছি দেখে ওর যতটা খুশি হওয়ার কথা ছিল সেটা ও মোটেই ছিল না। বরং ওকে কিছুটা বিষণ্ণ মনে হয়েছিল। কেন সেটা এখনও আমি জানি না।
.
.
ওইদিনের পর আমাকে ছোটমামার বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার মামা একজন স্কুল শিক্ষক আর আমি মামার স্কুলেই ভর্তি হয়েছিলাম। এস.এস.সি. এর পরে আবার পাবনাতে এসে একটা কলেজে ভর্তি হলাম। আর এখানেই আজ দুই বছর পর বৃষ্টির সাথে আমার আবার দেখা হলো। আমি এখন আগের থেকে অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছি কারণ মামা আমাকে মোটামোটি সাইজ করে দিয়েছেন। tongue emoticon
.
পরদিন একটু তাড়াতাড়ি কলেজে এসে আমি মাঝের সারির ঠিক কোনার দিকে বসে আছি। বসে নেই আসলে বৃষ্টির অপেক্ষা করছি। অনেক্ষনই হয়ে গেল তাও বৃষ্টির আসার কোনো খোঁজই পাচ্ছি না। এদিকে ক্লাস টাইম প্রায় শুরু হবারই মতো। স্যার যখন আমাদের ক্লাসে ঢুকলো ঠিক তখনি বৃষ্টিকে স্যারের পিছে পিছে ঢুকতে দেখলাম। ও সামনের বেঞ্চের কোনার দিকটায় বসল। স্যারই ওকে সামনে জায়গা করে দিলেন। পরে জানলাম যে ওটা বৃষ্টির বাবা আর আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল! আর ঠিক তখনি আমার মনের মধ্যে সদ্য ফুলে যাওয়া বেলুনটি হিরো আলমের ভাঙা গালের মতো চুপসে গেল।
.
তাই প্রতিদিন কলেজে এসে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো কিছু করার কনফিডেন্স আমার মধ্যে আর নাই। আগের মতো হলে নাহয় ওইসব প্রিন্সিপাল টিন্সিপাল গোনার টাইম ছিল না আমার কাছে। তবে এখন আমার ইচ্ছা থাকলেও বদমাইশি করতে আর তেমন ফিল পাই না। সব ফিল আমার ওই ফইন্নি মামা মনে হয় বক্সে ভরে রাখছে।
যাই হোক কিছুদিন যাওয়ার পর আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে বৃষ্টিও মাঝে মাঝে আমার দিকে খেয়াল করে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে ও তাকায় না। তবে আমি যখন অন্য কিছু করি তখন ও যে আমাকে খেয়াল করে এটা বুঝি। কিছুদিন ব্যাপার টা বোঝার পরে আমার একটা জিনিস মাথায় আসল যে ও আমাকে পছন্দ করতে লাগতেছে নাতো? কিন্তু এটাও কি হওয়া সম্ভব। আবার অসম্ভবেরও কিছু দেখিনা কারন আমার চেহারাতে তো মোটামোটি একটা কিউট্ট্যা কিউট্ট্যা ভাবই আছে হোক আমি আগে একটু বেশিই বদ ছিলাম। তা বলে কি এখন প্রেম করা যাবে না? তাই আমি একদিন ক্লাস শেষে এক বালতি আশা আর এক চামচ সাহস নিয়ে বৃষ্টিকে ডাক দিলাম।
- বৃষ্টি, একটু শুনবে
বৃষ্টি আমার দিকে শুধু একবার তাকিয়ে আলোর গতিতে সামনের দিকে হাঁটা ধরল। ওর চোখে আমি তখন ভয় দেখেছিলাম। তার মানে ও আমাকে ঠিক আগের মতো ফাজিলই মনে করে। আর এমন ফাজিলকে ক্লাসে এতো ভদ্রভাবে থাকতে দেখে হয়তো ভেবেছিল আমি আমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি এজন্য হয়তো করুণা করে তাকাতো। আর আমি কিনা কি ভেবে অস্থির। সবই কপাল। এই কপালডায় মনে হয় খালি মরুভূমি, কোনো বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও নাই এখানে।
.
একদিন সকালে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে আর হুডি গায়ে দিয়ে এক দোকানে বসে চা খাচ্ছি। একটু পড়েই বৃষ্টির প্রাইভেট শেষ হবে। তাই ওকে দেখার জন্যই মূলত এখানে এসে বসে থাকা। আমি দোকানের একটু ভেতরের দিকে বসে আছি যাতে ও আমাকে দেখতে না পারে। একটু পরে বৃষ্টিকে আসতে দেখলাম। প্রতিদিন ওর সাথে কয়েকটা বান্ধবী থাকে কিন্তু আজ ওকে একাই দেখলাম। ও যখন দোকানটা পাড় হয়ে গেল তখন আমি বেরিয়ে আসলাম আর যতদুর পর্যন্ত ওকে দেখা যায় চেয়ে থাকলাম। ও কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখলাম দুইটা ছেলে কোত্থেকে এসে যেন ওর সামনে দাড়ালো। তারপর ওকে কি যেন বলতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম যে বৃষ্টি আর ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। জায়গাটা এমনিতেই একটু ভেতরে তার উপর এই শীতের সকালে রাস্তার আশেপাশে কাউকেই দেখলাম না। তাই আমি একটু এগিয়ে গেলাম ব্যাপার টা বোঝার জন্য। যেতে যেতে দেখলাম ওদের মধ্যে একটা ছেলে ওকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। আমি আর কিছু না ভেবে উড়ে এসে ছেলেটার নাকে আড়াই কেজি ওজনের একটা ঘুসি দিয়ে দিলাম। তারপর দুইজনই আমাকে মারতে এগিয়ে এলো। ওদের সাথে কয়েকাটা এলোপাথাড়ি হাতাহাতি লাত্থালাত্থি হওয়ার পরে যখন বুঝলো যাকে আমি ১মে এসে ঘুসি মেরেছিলাম ওর নাক ফেটে রক্ত পড়ছে তখন ওরা দৌড়ে পালিয়ে গেল। ওরা চলে যাওয়ার পর আমি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললাম
- ওরা কারা ছিল?
--... (চুপ)
- কি হলো বলছো না কেন ওরা কারা ছিল (এবার একটু ধমের স্বরে বললাম)
আমাকে এভাবে বলতে দেখে ও একটু চমকে গেল। তারপর উল্টে আমারি ওপর ভাব নিয়ে বলল
-- তোমাকে বলবো কেন ওরা কারা ছিল
ওর কথাটা শুনে এবার আমার একটু কষ্ট লাগলো আর একই সাথে একটু রাগও হলো। তাই আমি আর কিছু না বলে উল্টা হাঁটা ধরলাম।
-- এই উৎস শুনে যাও
আমি থেমে গেলাম তারপর ওর সামনে গিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ও বলল
-- মারামারি করতে পার না তো করতে আসছ কেন?
আমি এবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি যে আমি তো ভালভাবেই মারামারি করলাম। নাক মুখ ফাটিয়ে দিলাম। তাহলে বৃষ্টি এই কথা বলছে কেন। ও আবার বলল
-- তোমার কপাল অনেকখানি কেটে গেছে।
আমি কপালে হাত দিয়ে দেখলাম আসলেই অনেক টা কেটে গেছে। আর এখন ওর ওই কথা বলার কারণ টা বুঝলাম। তারপর আমি বললাম
- আমি তাহলে এখন বাসায় যাই
-- হ্যা গিয়ে আম্মুকে বলো প্রতিদিন যে মেয়েটার জন্য চায়ের দোকানে বসে থাক আজ তার জন্য মাথা ফাটিয়ে এনেছো।
আমি এবার একটু লজ্জা পাইলাম। তার মানে আমি প্রতিদিন ওর জন্য ওখানে বসে থাকি এটা ও জানে।
.
বৃষ্টি আমাকে সামনের একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেল। এত সকালে কোনো ডক্টরকে আসে না। শুধু একজন নার্সকে দেখলাম। নার্স আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করতে করতে কোথায় যেন গেল। এখন কেবিনে শুধু আমি আর বৃষ্টি আছি। বৃষ্টিই বলা শুরু করল
-- ছেলে দুইটা নাকি আগে আমাদের কলেজে পড়তো। বাবা ওদেরকে কি একটা অকাজের জন্য নাকি কলেজ থেকে বার করে দিয়েছিল। এইজন্য আমার উপর মনে হয় এর প্রতিশোধ নিতে আসছিল।
- আমার বউরে খামছানো এতো সোজা না। (আস্তে আস্তে বললাম)
-- কিছু বললা?
- না কিছুনাতো
-- দেখ তোমাকে আমি এখানে ট্রিটমেন্ট করতে নিয়ে আসছি মানে তুমি আবার অন্য কিছু ভেবোনা। যেহেতু আমার জন্যই তোমার এমন হইছে তা...
ও কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আমি একটা বিস্ময়কর কাজ করে ফেললাম। বৃষ্টির দুই গাল ধরে ওর ঠোঁটে চুমো খেয়ে দিলাম। তারপর হাফ ব্যান্ডেজ অবস্থাতেই দিলাম দৌড়। যাওয়ার আগে একবার পিছন ফিরে দেখলাম বৃষ্টি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
.
.
আমি ভেবেছিলাম হয়তো সেদিনই আমার বাড়িতে কোনো বড়সর নালিশ যাবে বা এমন খবর যাবে যে আমাকে কলেজ থেকে টা টা বাই বাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতোদিনেও যখন কিছু হয় নি তাই আজকে কলেজ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বৃষ্টিকে চুমো খাওয়ার আজ বারোদিন পরে কলেজ যাচ্ছি। যেতে যেতে ভাবছি মামার দুই বছরের প্রচেষ্টা তাহলে সব জলে গেল। মেয়েটা আমাকে আবার সেই ফাজিল বানিয়েই ছাড়লো। কলেজে গিয়ে দেখলাম সবকিছু ঠিকই আছে। নো প্রবলেম। বরং বৃষ্টিই আজ কলেজে আসেনি। দুইটা ক্লাস করে আমি কড়ই গাছতলা এসে বসলাম। এমন সময় কোথা থেকে যেন বৃষ্টি এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। ওকে দেখে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আমার দিকে ওর ওমনভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে ভাবছি পালাবো কিনা। এমন সময় ও বলল
-- এই বান্দর তুই ওইদিন কি করলি? বল কি করলি
- ইয়ে মানে বৃষ্টি আমাকে মাফ করে দাও। তোমার বাবাকে কিছু বলনা প্লিজ
-- কি বলব? তুমি আমাকে কিস করেছ এটা বলব?
- ... (আমি চুপ)
-- আমি ভেবেছিলাম তুমি মনে হয় ভাল হয়ে গেছ। কিন্তু তুমি সেই আগের মতই ফাজিল আছো। বরং এখন আরো বেশি।
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা। তাই বললাম
- আচ্ছা তুমি তো আজ কলেজে আসো নাই। তাহলে জানলা কিভাবে আমি এখানে?
-- আমাকে জানানোর লোক কম আছে নাকি। আর তুমি এইসব ছাড়। আগে বলো এমন কেন করলা?
- দেখ আমি যেটা করেছি সেটাতো আর ফেরানো যাবে না তাইনা। আর ভালবাসার মানুষকে একটা চুমো খাইসি তো কি হইছে কি।
-- কে কার ভালবাসার মানুষ? যদি তাই হতো তাহলে সেইদিনের পর অন্তত একটা খোঁজ নিতা।
আমি এবার ওর কথায় একটু অবাক হলাম। আর এটাও বুঝলাম মেয়ে আমার প্রেমে পড়েছে।
- কি বলবো বুঝতে পারতেছি না।
-- আমিও তো বুঝতে পারতেছি না?
- তুমি আবার কি বুঝতে পারতেছ না?
--তুমি যেইদিন স্কুল থেকে চলে গিয়েছিলে তারপর থেকে আমি একটুও ভাল ছিলাম না। আর কলেজে ১ম তোমাকে দেখে আমি যে কতটা খুশি হয়েছিলাম সেটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। এমন কেন হলো?
- কারণ তোমাকে এখন সত্যি সত্যিই মিসেস বৃষ্টি সরকার হতে হবে তাই
-- তোমাকে আসলে ধরে খামছানো উচিৎ
আমি ওর মুখে খামছানো কথাটা শুনে হেসে ফেললাম
- ভালবাসি যে
-- আমিও মনে হয়
- কি
-- বলব না
- আমি বলি
-- আবার কি বলবা
- তোমার গালটা আসলেই অনেক নরম ছিল
ও আমার হাতে একটা চিমটি দিয়ে বলল
-- তুমিতো তো দেখছি বড়ই ফাজিল...
.
আমি এবার ওর হাত ধরে বসে পড়লাম আর এইটুকু বুঝলাম যে কলেজের প্রিন্সিপালকে শ্বশুর মশাই ডাকার সময় হয়ে আসছে।
.
.
.
- এই কলেজে ক্লাস শেষে একদিন তোমাকে ডাক দিছিলাম তুমি শুনলা না কেন?
-- কবে?
- ওই যে কলেজে ১ম যেদিন তোমাকে ডাক দিলাম তুমি তো শুনলাই না উল্টে চোখ বড় করে চলে গেলা
- ওহ ওইদিন? তুমি হয়তো খেয়াল কর নাই যে আমাদের প্রিন্সিপাল মানে তোমার শ্বশুর মশাই ওইদিন আশেপাশেই ছিল...
.
কি বলেছিলাম? দেখলেন তো, কলেজের প্রিন্সিপাল এবার সত্যিই আমার "শ্বশুর মশাই" হয়ে গেল। grin emoticon
.
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now