বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ২

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Ruhul Amin Raj (০ পয়েন্ট)

X বাবাকে তার ছাত্রছাত্রীরা মুরগি ডাকে এই খবর প্রথম শুনে তিনি মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে কপালে ব্যথা পেয়েছিলেন। মাথায় পানি ঢেলে মোটামুটি সুস্থ করার পর মার প্রথম বাক্য। টগর, সত্যি তোর বাবাকে সবাই মুরগি ডাকে? ভাইয়া বলল, মুরগি সবাই ডাকে না, কেউ কেউ ডাকে মুর্গ, মুরগির চেয়ে মুর্গ শব্দটা ভালো। মুর্গ শুনলে মাথায় আসে মুর্গ মুসাল্লাম। মুর্গ মুসাল্লাম একটি উচ্চমানের মোঘলাই খানা। কাউকে মুর্গ ডাকা তার প্রতি সম্মানসূচক। রূপবান পুরুষদের স্ত্রীরা কুরূপা হয় এটা নিপাতনে সিদ্ধ। মা নিয়মের ব্যতিক্রম। তিনি শুধু যে রূপবতী তা না, তাঁর বয়স মোটেই বাড়ছে না। তাঁকে এখনো খুকি মনে হয়। আমেরিকান সায়েনটিস্টরা খবর পেলে মার ‘জিন’ নিয়ে গবেষণা করে কিছু বের করে ফেলত। মা অত্যন্ত অলস প্রকৃতির। সকাল ১০-১১টার আগে কখনো বিছানা থেকে নামেন না। তিনি অনেক ধরনের রান্না জানেন কিন্তু রাঁধেন না। মার একটি বিশেষ অর্জন বলা যেতে পারে। স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ার সময় মা শরৎচন্দ্রের দেবদাস উপন্যাস পুরোটা মুখস্থ বলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। দেবদাস এখনো তাঁর মুখস্থচর্চার মধ্যে আছে। প্রায়ই তাঁকে দেবদাস হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। টগর ভাইয়া খুব ভালো রেজাল্ট করে বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করেছে। তাকে বুয়েটে লেকচারার পদে যোগ দিতে বলা হলো। ভাইয়া বলল, আমি ‘চিৎকারক’ হব না। লেকচারার হওয়া মানে ক্লাসে চিৎকার দেওয়া এর মধ্যে আমি নই। মা বললেন, তাহলে কী হবি? ভাইয়া বলল, কিছুই হব না। চিন্তা করে করে জীবন পার করে দেব। মা বললেন, কী সর্বনাশ! ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে বলল, সর্বনাশের কিছু না মা। এই পৃথিবীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছেন, যাঁরা কোনো কাজকর্ম ছাড়া শুধু চিন্তা করে জীবন পার করে দিয়েছেন। যেমন গৌতম বুদ্ধ। তুই গৌতম বুদ্ধ হবি? গৌতম বুদ্ধ হওয়া যায় না। আমি অন্য কিছু হব। অন্য কিছুটা কী? চট করে তো বলা যাবে না। ভেবেচিন্তে বের করতে হবে। প্রায় তিন বছর হয়ে গেল ভাইয়া চিন্তা করে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সময় বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে তাকে পা নাচাতে দেখা যায়। এই সময় তার চোখ বন্ধ থাকে। ভাইয়া কখন জেগে আছে, কখন ঘুমাচ্ছে বোঝা যায় না। ঘুমের মধ্যেও সে পা নাড়তে পারে। গতকাল রাতে বাবার সঙ্গে ভাইয়ার কথা হয়েছে। বাবা বললেন, তোমার মার কাছে শুনলাম তুমি গৌতম বুদ্ধ হবে। ভাইয়া শুয়ে ছিল। শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলল, তোমরা সবাই যদি চাও তাহলে গৌতম বুদ্ধের মতো কেউ হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। অনেক দিন হলো পৃথিবীতে নতুন কোনো ধর্ম আসছে না। নতুন ধর্ম আসার সময় হয়ে গেছে। বাবা ঝিম ধরে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। ভাইয়াও বসে ঘন ঘন হাই তুলতে লাগল। এক সময় বাবা উঠে চলে গেলেন। বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন। কী বললেন পরিষ্কার বোঝা গেল না। মনে হয় থাবড়ানো বিষয়ে কিছু বললেন। ভাইয়ার ঘরের দেয়ালে তার মাথার কাছে আইনস্টাইনের একটা ব্ল্যাক এক হোয়াইট ছবি টাঙানো। ছবিতে জিভ বের করে আইনস্টাইন ভেঙাচ্ছেন। ছবির নিচে ভাইয়া লিখে রেখেছেন—The great fool. ভাইয়ার স্বভাবও মার মতো অলস প্রকৃতির। গোসলের মতো প্রাত্যহিক কাজ তিনি আলস্যের কারণে করেন না। সপ্তাহে বড়জোর দুদিন তিনি গোসল করেন। গোসল না করার পেছনে তার যুক্তি হচ্ছে, পৃথিবীর অনেক দেশেই খাবার পানির ভয়ংকর অভাব, সেখানে আমি গায়ে ঢেলে এতটা পানি নষ্ট করব? অসম্ভব। মা যেমন শুধু দেবদাস পড়েন, ভাইয়া সে রকম না। তার ঘরভর্তি বই। যতক্ষণ তিনি জেগে থাকেন ততক্ষণ তার মুখের সামনে বই ধরা থাকে। আমি আমার নাম মনজু। ভাইয়া যে রকম ব্রিলিয়েন্ট আমি সে রকম গাধা। দুবার বিএ পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছি। দ্বিতীয়বার ফেলের বিষয়টা শুধু ভাইয়া জানে। বাবা-মা দুজনকেই পা ছুঁয়ে সালাম করে বলেছি, হায়ার সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছি। মা মিষ্টি কিনে বাড়িতে বাড়িতে পাঠিয়েছেন। আমাকে বলেছেন, তোর পাসের খবরে এত খুশি হয়েছি! আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম তুই এবারও ফেল করেছিস। [মার স্বপ্নের ব্যাপারটা বলতে ভুলে গেছি। মা যা স্বপ্নে দেখেন তাই হয়। একবার মা স্বপ্নে দেখলেন, রিকশা থেকে পড়ে বাবা পা ভেঙে ফেলেছেন। এক সপ্তাহ পর একই ঘটনা ঘটল। বাবা রেগে গিয়ে মাকে বলেছিলেন, এ ধরনের স্বপ্ন কম দেখলে ভালো হয়। ভালো কিছু দেখবে, তা-না পা ভাঙা, হাত ভাঙা। থাবড়ানো দরকার। মা খুব লজ্জা পেয়েছিলেন।] রহিমার মা রহিমার মা আমাদের কাজের বুয়া। বিরাট চোর, তবে খুব কাজের। ভাইয়ার প্রতি তার আলাদা দুর্বলতা আছে বলে আমার ধারণা। ভাইয়ার যেকোনো কাজ করার জন্যে সে ব্যস্ত। ভাইয়ার সঙ্গে নানা ধরনের গল্পও করে। একদিন ভাইয়াকে বলল, ‘বুঝছেন ভাইজান, শইটলটা নিয়া পড়ছি বিপদে। মানুষের বাড়িত কাম করব কী সবাই শইলের দিকে চায়া থাকে।’ ভাইয়া বলল, ‘তাকিয়ে থাকার মতো শরীর তো তোমার না রহিমার মা। কেন তাকিয়ে থাকে? কী যে কন ভাইজান, রইদে পুইড়া চেহারা নষ্ট হইছে, কিন্তু শইল ঠিক আছে। আইজ পর্যন্ত এমন কোনো বাড়িতে কাম করি নাই যেখানে আমারে কুপ্রস্তাব দেয়নি। হয় বাড়ির সাহেব কুপ্রস্তাব দেয়। সাহেব না দিলে বেগম সাবের ভাই দেয়।’ আমাদের বাড়ি থেকে তো এখনো কোনো কুপ্রস্তাব পাও নাই।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪২৫ জন


এ জাতীয় গল্প

→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৯
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৮
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৭
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৬
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৫
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ৪
→ আমরা কেউ বাসায় নেই পৃষ্টা ১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • আবু হুরাইরা
    Guest ৭ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    ♥♥♥♥ ভেরি ফান্নি

  • আবু হুরাইরা
    Guest ৭ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    ♥♥♥♥ ভেরি ফান্নি