বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
সুচনা....
“জীবন কোনো রঙিন স্বপ্ন নয়”
কথাটা অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে ছেলেটার কাছে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই জেল থেকে পালানো। হ্যাঁ, জেল। ছেলেটার গ্রামটা একটা জেল থেকে কোনো অংশে কম না। যে গ্রাম একটা পরিবারের কাছে জিম্মি থাকে, সেটা জেল হবেই না বা কেন?
বিখ্যাত পাবনা জেলার বিখ্যাত পলাশপুর গ্রাম। যদি বাংলাদেশের সুন্দর গ্রাম গুলোর একটা তালিকা করা হয়, তাহলে ‘পলাশপুর’ গ্রামটা প্রথম সারির দিকেই থাকবে। সেই পলাশপুর গ্রামের সুনামধন্য তালুকদার পরিবারের বড় ছেলে আশরাফ তালুকদার। চারিত্রিক অবক্ষয়ের সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে এই আশরাফ তালুকদার। পাঁচটা হত্যা মামলার আসামি, ক্ষমতার দাপটে বারবার আইনকে নিজের মতো ব্যবহার করে। পদ্মার পারে যত অপকর্ম হয়, সব তার নির্দেশে।
পলাশপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব মোহসিন তালুকদার। পাঁচ সন্তানের পিতা, গাম্ভীর্যে ভরপুর এই ব্যক্তি একসময় খুবই নিষ্ঠার সাথে গ্রামটাকে দেখভাল করে গেছেন। বংশের ধারা অনুযায়ী সেই দায়িত্ব এখন আশরাফ তালুকদারের কাঁধে। মোহসিন তালুকদারের সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের এই আশরাফ তালুকদার, এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তাকে ব্যতীত হয়। এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ এখন আশরাফ তালুকদারের জন্ম নিয়েও সন্দেহ করে।
ক্ষমতার দাপটে দানবে পরিণত হওয়া আশরাফ তালুকদারের সবচেয়ে সহজ শিকার হচ্ছে গ্রামের যুবকেরা। অভাব-অনটনের সংস্কৃতির পরিবারে জন্ম নেওয়া এই গরিব শ্রেণির যুবকেরা কিশোর বয়সে কলমের পরিবর্তে হাতে পেয়েছিল অস্ত্র। ফলে যাদের হওয়ার কথা ছিল ‘সম্পদ', তারা অল্প বয়সে হয়ে গেছে কিশোর গ্যাং-এর সক্রিয় সদস্য, আর বর্তমানে আশরাফ তালুকদারের কালো দুনিয়ার নিবেদিত কর্মী। আর এই কর্মী হওয়ার বিনিময়ে আশরাফ তালুকদার তাদেরকে দিয়েছে অর্থ এবং নারী। তবে এই যুবকদের দ্বারা কালো দুনিয়া ভালোভাবে চালালেও সম্প্রতি সে বুঝতে পারছে, কিছু কাজের জন্য ‘গুবরে ফোঁটা পদ্মফুল’ গুলোকেও লাগবে!
‘বাংলাদেশে রাজনীতির সবচেয়ে ভালো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে সৎ মানুষ কখনো ক্ষমতায় যেতে পারে না। যদি কোনোভাবে ক্ষমতায় চলেও যায়, তবে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে “সৎ” শব্দটা আর থাকে না।’ এই কথাগুলো আশরাফ তালুকদার ভালোভাবেই জানে। আগামী নির্বাচনে নমিনেশন পাওয়ার মতো সকল যোগ্যতা তার মধ্যে আছে, এ নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। তার একমাত্র মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে হেমায়েতপুরের কৃতি সন্তান নোমান চৌধুরি। মোহসিন তালুকদারের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করার কারণে আশপাশের পাঁচ গ্রামে ভালোই নামডাক তার। এককালে দুই দেহ এক প্রাণ হিসেবে খ্যাত নোমান চৌধুরি এবং আশরাফ তালুকদারের বন্ধুত্ব ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগেনি। যে মুহূর্তে বন্ধুর অন্ধকার জগতে পা দেওয়ার খবরটা সামনে এসেছিল, সেই মুহূর্তে তাদের বন্ধনে একটা ফাটল ধরেছিল। সেই ফাটল কালের পরিক্রমায় ‘শত্রু’ শব্দ দিয়ে বন্ধ হয়েছে।
টাকা-পয়সা এবং সম্পদের লোভ নোমান চৌধুরির কোনো কালেই ছিল না। যেখানে মানুষের তাকদির তার জন্মের আগেই উপরওয়ালা লিখে দিয়েছেন, সেখানে অবৈধ পথে টাকা আসার কথা নোমান চৌধুরি কখনো চিন্তাও করতে পারে না। এই কারণে শত লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়ার পরও নোমান চৌধুরিকে তার রেখা থেকে এক চুল পরিমাণ সরাতে পারেনি আশরাফ তালুকদার।
কিন্তু আশরাফ তালুকদার থেমে থাকার লোক নয়। তার যে কোনো মূল্যে নোমান চৌধুরিকে রাস্তা থেকে সরাতে হবে। এককালের প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে হত্যা করতে হয়তো হাত কিছুটা কাঁপবে! আর এই গুরুদায়িত্ব পড়েছে তার ডান হাত সোহেলের কাঁধে।
“আব্বাস!”
অসময়ে মালিকের ডাক শুনতে কখনো অভ্যস্ত নয় আব্বাস। যেদিন সর্বপ্রথম তালুকদার মঞ্জিলে পা দিয়েছিল, সেদিন সে দুটো জিনিস পেয়েছিল—থাকা-খাওয়ার জায়গা এবং প্রতিদিন বিকেলে আশরাফ তালুকদারের কাছে এক কাপ চা নিয়ে যাওয়া। তিন বছরের নিয়মে হঠাৎ পরিবর্তন ঘটায় অনেকটা শঙ্কিত সে। পাশাপাশি ইদানীং দিনকালও বেশি ভালো যাচ্ছে না। কখন কী ঘটে যায়, এ নিয়ে সবসময় তাকে তটস্থ থাকতে হয়।
— “সোহেলরে ডাইকা আন!”
তালুকদার মঞ্জিলে আব্বাসের সবচেয়ে অপছন্দের ব্যক্তি হচ্ছে এই সোহেল। অপছন্দ হওয়ার কারণও রয়েছে বটে। সে মনে করে, তালুকদারের মাথায় রাজনীতির ভূতটা এই সোহেলই ঢুকিয়েছে। তবে অপছন্দ করার পরও সোহেলকে এড়িয়ে চলার মতো সুযোগ কখনো পায়নি সে। এর কারণ, সে সবসময় আশরাফ তালুকদার এবং সোহেলের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
— “জি ভাই, ডাকছিলেন?”
সোহেলের যাবতীয় কাজের মধ্যে আশরাফ তালুকদারের সবচেয়ে পছন্দের বিষয় হচ্ছে ডাকার সাথে সাথে সাড়া পাওয়া। গ্রামের একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত এক দিনমজুর পরিবারে জন্ম নেওয়া সোহেলের বয়স যখন ছয়, এক দুর্ঘটনায় বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়। মোহসিন তালুকদার পরিবারহারা শিশুটিকে একা ছাড়েননি। জানাজা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নিজের সাথে নিয়ে এসেছিলেন।
— “কাম দুইডা কোনদিন শেষ অইব?”
প্রথম কাজটা হচ্ছে একজনকে ধরে আনা। সেই কাজ শেষ, কাল সকালেই ছেলেটাকে তালুকদারের সামনে হাজির করা হবে। আর দ্বিতীয় কাজটা শেষ করার সময় ও সুযোগ এখনো সে পায়নি।
— “দ্বিতীয় কাজটা এখনো শেষ হয়নি ভাই!”
— “কী ব্যাপার কত সোহেল, কইদিন ধইরা দেখতাছি তোর কামে মন কম? ওই নোমানের লেইগ্যা মায়া এহনো কাডেনাই, নাহি কোনো মাইয়ার পাল্লায় পড়ছস ?”
সোহেল অনেকটা ঘাবড়ে গেল মনে হয়। সেও ইদানীং একটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক নতুন শিক্ষিকার আবির্ভাব ঘটেছে। নারী-ঘটিত ব্যাপারে সোহেলের কোনো কালেই চিন্তা ছিল না। তালুকদারের কর্মীদের মধ্যে সোহেলই একমাত্র ব্যক্তি, যে কিনা নারীদের থেকে দশ হাত দূরে থাকে। এর কারণ অবশ্য ধর্মের সীমারেখা নয়। সে মনে করে, পুরুষ ধ্বংস হয় নারীর কারণে। কোনো একদিন কারো মুখে সে শুনেছিল, ‘সংসার নাকি সুখী হয় রমণীর গুণে’। গ্রামের এরকম সুখী পরিবার কখনো দেখেনি সে। তাই লোকমুখে শোনা কথায় তার বিশ্বাসও কখনো হয়নি। জীবনে অনেক পাপ করার পর মনের অজান্তেই চিরকুমার থাকার শপথটা করে ফেলেছিল বোধহয়। মনে হচ্ছে, এই মাস্টারনির কারণে শপথটাও ভেঙে যাবে। এই তো সেদিন রাস্তার ধারে টং দোকানে বসে চা পান করছিল। সাময়িক সময়ের জন্য দৃষ্টি চলে গিয়েছিল রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকা মেয়েটার দিকে। দৃষ্টিতে তার কিছু না হলেও মেয়েটির পা কাদা-মাখা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। হঠাৎ জেগে ওঠা মানবতার কারণে মেয়েটিকে শুধু ওঠতে সাহায্য করেছিল সোহেল। কিন্তু ঘটনাটা আর রাস্তায় থাকেনি। বাচ্চাদের মুখে পর্যন্ত ঐ ঘটনার ছড়াছড়ি। বাতাসে ভেসে সেই ঘটনা বোধহয় ভাইয়ের কানেও চলে এসেছে।
— “না ভাই, এমন কোনো ঘটনা নেই। আসলে শরীরটা খারাপ যাচ্ছে”।
চৌধুরী পরিবারে একপ্রকার শোকের মাতম চলছে। একে তো আশরাফ তালুকদারের সাথে ঝামেলা! ঝামেলাটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে বিষয়টা চৌধুরির কাছে একপ্রকার লজ্জাকর বটে! একদিকে আশরাফ তালুকদার ছিল তার বাল্যকালের বন্ধু, নিজের বন্ধুর এরকম অবনতি সে কখনো মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু এরকম একজন লোকের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল, এখন তার সাথেই রাজনৈতিক ময়দানে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা এখন এটা না, দুই দিন ধরে তার একমাত্র ভাতিজাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে নির্ধিদায় বলে দিতে পারে এটা কার কাজ, কিন্তু শুধু জানলেই তো হবে না? প্রমাণও লাগবে, লোক অবশ্যই লাগিয়েছে সে, সাথে পুলিশকেও ইনফর্ম করেছে। আপাতত ধৈর্য ধরতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে ধার্মিক না হলেও কুরআনের এই কথাটার উপর সে খুব আমল করে— ‘নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (২:১৫৩)।
‘বেশিক্ষণ অন্ধকারে থাকলে মানুষের চোখের পিউপিল আকারে বড় হয়ে যায়। হঠাৎ তীব্র আলো পড়লে তখনও পিউপিল বড় থাকে, তাই একসাথে অতিরিক্ত আলো রেটিনায় এসে পড়ে। তখন আইরিস ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে পিউপিল ছোট করার জন্য। কিন্তু এটি তাৎক্ষণিক হয় না; কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে চোখের ভিতরে আলো বেশি ঢুকে গিয়ে রেটিনাকে কিছুক্ষণের জন্য অতিরিক্ত উজ্জ্বলতায় আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফলে ঝাপসা লাগে।’
দৃষ্টির ঝাপসা ভাবটা কেটে যাওয়ার পর আরমান বুঝতে পারল রোমটা একটু সেতসেতে এবং নাকে আসা এতক্ষনের উৎকট গন্ধের কারণও বুঝতে পারল—রোমের দক্ষিন কোনে কতগুলো মদের বোতলের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তিনদিন ধরে এক বন্ধুর মেসে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত বিশ্বাস কখনো ভালো ফলাফল আনে না, তা সে এখন ভালোভাবে টের পাচ্ছে।
চাচার লোকেরা তাকে ধরে আনলে এতক্ষণে সে বুঝতে পারত। হতে পারে চাচার কোনো শত্রু তাকে ধরে এনেছে, তবে এই ভুলটা কিছুক্ষণের মধ্যে ভেঙে গেল। চাচার শত্রু বটে, তবে অপহরণের কারণ ভিন্ন।
— ‘হাতের বাধন খুইল্লা দে আব্বাস!’
সামনের লোকটাকে ভালোভাবেই চিনতে পারল আরমান। নোমান চৌধুরির বন্ধু হওয়ার কারণে সচরাচরই চৌধুরি পরিবারে দেখা যেত আশরাফ তালুকদারকে। এককালে তার প্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে আশরাফ তালুকদার ছিল অন্যতম।
— ‘কিরুম আছ বাবজান?’
আরমান ছেলেটাকে ছোটবেলা থেকেই খুব পছন্দ করতো আশরাফ। একটা সময় ছেলেটাকে নিজের পরিবারে নিয়ে আসার পরিকল্পনাও করে ফেলেছিল আশরাফ, কিন্তু সফল হয়নি।
— ‘কেনো ধরে আনলেন?’
— ‘বাবজান, সাংবাদিক অওয়ার পর প্রথম সাংবাদিকতাটা তো আমার ওপরেই করলা। কেসেটটা দিয়ে দেও আর তোমার কামে যাওগা। জানোই তো, তুমি আমার খুব পছন্দের। আমার আবার তোমার চাচার মতো এতো বেশি ধৈর্য নাই। কখন কি কইরা ফালায়, কোনো ঠিক ঠিহানা নাই। এই সোহেল কেসেটটা বের কর! লিডার ফোন দিছে, যাইতে অইব।’
চার দিন পর নোমান চৌধুরি ধৈর্যের ফলাফল পেয়েছে। ভাতিজাকে না পেলেও ভাতিজার বন্ধুকে পেয়েছে। দুইটা ডান্ডার বারের পিঠে পড়তেই গরগর করে সব বলে দিয়েছে। তার কথার সারমর্ম হচ্ছে, ‘দুইজন লোক এসে বলেছিল, আরমানকে তার মেসে আশ্রয় দিতে। হুমকি দিয়েছিল নয়তো তাকে জানে মেরে ফেলবে। ভয়ে তাদের কথামতো কাজ করেছে।’
পুলিশের সহায়তায় ঐ দুজন লোকের ছবি আঁকা হয়েছে। ফলাফল, লোক দুটো সোহেলের খাস লোক।
‘যখন মনের সন্দেহ সত্য প্রমাণিত হয়, তখন মস্তিষ্কে বজ্রপাতের মতো একটা ধাক্কা লাগে। মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা হঠাৎ তীব্রভাবে সাড়া দেয়, ফলে শরীরে অস্বস্তি তৈরি হয়। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, কারো কারো শ্বাস দ্রুত হয়, শরীর গরম বা ঠান্ডা লাগতে পারে, হাত-পা ঘামতে পারে। মুহূর্তের মধ্যে মাথায় ভিড় করে হাজারো প্রশ্ন – এই মুহূর্তে মস্তিষ্ক আসল সত্যকে মেনে নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে।
প্রাথমিক শক কেটে গেলে মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা শুরু করে। এ পর্যায়ে কেউ কিছুক্ষণের জন্য নিঃশব্দে বসে থাকে বা অপ্রকাশ্য শূন্যতায় তাকিয়ে থাকে, কারণ মস্তিষ্ক হরমোনের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে ব্যস্ত থাকে। এরপর ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়ে মস্তিষ্ক করণীয় ঠিক করার জন্য পরিকল্পনা করা শুরু করে।’
নোমান চৌধুরি খবরটা পাওয়ার পর অনেকটা জমে গেছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি। তবে একটা বিষয়ে সে নিশ্চিত, আশরাফ তালুকদার তাকে হুমকি দেওয়ার জন্য আরমানকে অপহরণ করেনি।কিন্তু আরমানকে অপহরণ করার কারণটা যদি তার অনুমানের সাথে মিলে যায়, তাহলে তো বিপদ আরও বেড়ে যাবে!
হাতের কালশিটে দাগটার দিকে একটু নজর ভুলালো আরমান। ওষুধ লাগিয়েছে, ব্যথাটা সেরে গেলেও কালশিটে দাগটা এখনো রয়ে গেছে। সোহেলের লোক দুটোকে কয়েকটা অকথ্য গালি দিতেও ভুল করলো না সে! সে এখন আছে পাবনার সদরে। বাসের মধ্যে বসে বাস ছাড়ার অপেক্ষা করছে। দুই দিন ধরে টানা বসে থাকার কারণে এখন আর বসে থাকতেও শরীরটা সাথ দিচ্ছে না। ক্যাসেটটা দেওয়ার পর তাকে দুই দিন আটকে রাখা হয়েছিল। মনে করেছিল, তাকে হয়তো এবার মেরেই ফেলবে। কিন্তু আজ সকালে ঘুম ভাঙার পর হাত পায়ের বাঁধনটা আর পেল না। একটু আশ্চর্যও হয়েছিল বটে। এত সহজে মুক্তি পাবে, সে ভাবতে পারেনি। নিজেকে মুক্ত অবস্থায় দেখে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি সে। সোজা বাসে এসে উঠেছে। হেমায়েতপুরে যাওয়ার কথা সে কোনো দিনই ভাবেনি। পরিবারের একমাত্র সদস্য বাবার মৃত্যুর পর সে পাবনা ছেড়েছিল। এই জেলা থেকে পালাতে পারলেই বাঁচে সে।
“মৃত্যু হচ্ছে সকল প্রাণীর জন্য অমোঘ সত্য বিষয়। পৃথিবীতে মহাক্ষমতাবান অনেক রাজা এসেছিল, কেউ কেউ রাজত্ব পেয়ে সৈরাশাসকে পরিণত হয়েছিল, আবার কেউ কেউ সৈরাশাসকের কবল থেকে রাজ্য উদ্ধার করে সেই রাজ্যকে মহাকল্যাণময় রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। সেই রাজারা মহাক্ষমতাবান হওয়া সত্ত্বেও তারা কেউ চিরকাল বেঁচে থাকতে পারেনি। কিন্তু মৃত্যু বরণ যেই করুক, সবাই চায় তার মৃত্যুটা যেন স্বাভাবিক ভাবেই হয়।”
ঘটনাটা আজ সকালের। পদ্মার তীরের মানুষদের সাধারণ পেশা হচ্ছে মাছ ধরা। জেলেদের একটা ট্রলার সারারাত মাছ ধরে সকালে হেমায়েতপুরে ফিরছিল। তীরে পা দেওয়ার সময় একজন জেলের চোখে অদ্ভুত কিছু একটা পড়ল! কাছে গিয়েই বুঝতে পারল, এটা একটা লাশ। অর্ধগলিত একটা মেয়ের লাশ!
পুলিশকে জানানোর আগে জেলেরা লাশের খবর জানিয়েছে নোমান চৌধুরিকে। নোমান চৌধুরী লাশ পরিদর্শনে আসেনি, তবে পুলিশের সাথে তার বিশ্বস্ত খাইরুলকে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, মেয়েটা এই গ্রামের কেউ না।
এসআই আকরাম, সাত দিন হয়েছে পাবনা সদর থানায় পোস্টিং করা হয়েছে। কিন্তু আসার পর একদণ্ডও শান্তিতে থাকতে পারেনি। অবশ্য পোস্টিংয়ের সময় একজন শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে আগাম সতর্কতা দিয়েছিল, পাবনা সদর কোনো সাধারণ থানা না। যা এখন সে হারে হারে টের পাচ্ছে। গত সাত দিনে নোমান চৌধুরীর উপর দুই বার হামলা হয়েছে। তাই উপরের নির্দেশে তার অর্ধেক ফোর্স নোমান চৌধুরীর বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। আর এদিকে অজানা মেয়েটার লাশ, মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
আশরাফ তালুকদারের সব রাগ গিয়ে পড়েছে সোহেলের উপর। আগেই বলে দিয়েছিল, কাম-কাজে ঠিকঠাক মনোযোগ দিতে। কিন্তু না, কোনো মেয়ের পাল্লায় পড়ে সব কাম-কাজ লাটে উঠিয়েছে। একটা কাজে সোহেলের মতো লোক দুই বার ব্যর্থ হয়, এটা তো অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন তো কাজটা আর করা যাবে না, এত পুলিশের ভেতরে গিয়ে মানুষ খুন করা কখনোই সম্ভব না। তবে আশরাফ তালুকদারের মাথায় এখন অন্য একটা চিন্তা খেলা করছে। সে মেয়েটার লাশ নিয়ে কিছুটা রাজনীতি করতে চায়।
এসআই আকরাম মনের সুখে চা পান করছে। এর কারণ হচ্ছে, গত এক মাসের শত চেষ্টার পরও মেয়েটার লাশের কোনো সুরাহা করতে না পারলেও কোনো এক অজানা কারণে কেসটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেছে। সেও আর বেশি ঘাঁটায়নি। সুখে থাকতে কার বা ভূতে কিলায়? তবে তার সুখে থাকাটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না বোধহয়। কারণ কনস্টেবল কামরুল হন্তদন্ত হয়ে আসছে! আর সে কখনো ভালো খবর আনে না।
“কি হয়েছে, কামরুল?”
“স্যার, আশরাফ তালুকদার খুন হইছে!”
চলবে....
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now