বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
চলন্ত ট্রেনে হঠাৎ দেখা – ০৩
নাফিজ আহমেদ
ট্রেন ধরবে বলে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়াচ্ছে। আমিও ওদের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছি—আমারও একই উদ্দেশ্য। কিন্তু হঠাৎ করেই, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ট্রেনটা মিস হয়ে গেল। আমি ঠিক ওদের পিছনেই ছিলাম। হঠাৎ করেই মেয়েটার বড় বোন আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
— আপনি কোথায় নামবেন?
আমি নির্দ্বিধায় বললাম,
— বিমানবন্দর রেলস্টেশনে।
তিনি বললেন,
— আচ্ছা, তাহলে তো ভালোই হয়। আপনি একটু সহযোগিতা করবেন?
আমি বললাম,
— অবশ্যই, বলুন কী সহযোগিতা করতে হবে?
তিনি বলতে শুরু করলেন,
— আসলে আমি সাবাহর (তার বোন) একটা মেডিকেলে চাকরি করি। আপনি যদি আমার ছোট বোনটাকে বিমানবন্দর রেলস্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেন, তাহলে ও সেখান থেকে একাই চলে যেতে পারবে। ও জয়দেবপুর যাবে। এদিকে আমার অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আপুর কথা শুনে আমার মনে যেন অদ্ভুত এক আনন্দের ঢেউ খেলে গেল।
আমি আশ্বস্ত করে বললাম,
— আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ওকে ঠিকমতো পৌঁছে দেব।
মেয়েটির আপু নিশ্চিন্তে আমাদের রেখে নিজ গন্তব্যের দিকে রওনা হলেন। এদিকে আমি আর মেয়েটি একা ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের মাঝে হালকা কথাবার্তা চলছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
— আপনার নাম কী?
(আগেই বলেছি, মেয়েটি আমার চেয়ে প্রায় তিন বছর বড়। তাই "আপনি" সম্বোধনেই কথা বলছি, নতুবা হয়তো "তুমি" বলেই বলতাম।)
মেয়েটি উত্তর দিল,
— লিজা।
এরই মধ্যে বাসা থেকে আমার ফোনে কল এলো। জানতে চাচ্ছে,
— এখন কোথায় আছিস?
আমি বললাম,
— কমলাপুর রেলস্টেশনে।
দেখলাম, লিজার ফোনেও বাসা থেকে কল এসেছে। সে আমার থেকে একটু দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলছে। আমি এদিকে ভাবছি—এখন এখান থেকে কীভাবে যাব?
হঠাৎ চোখে পড়ল, পাশের প্ল্যাটফর্মে একটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে।
(পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলছি—কমলাপুর স্টেশন থেকে রওনা দেওয়া প্রত্যেকটা ট্রেনই বিমানবন্দর রেলস্টেশনে থামে। তবে সব ট্রেন জয়দেবপুরে থামে না।)
আমি লিজাকে বললাম,
— এই প্ল্যাটফর্মে যেহেতু ট্রেন নেই, চলেন পাশের প্ল্যাটফর্মে যাই। একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে।
লিজা সম্মত হয়ে বলল,
— ঠিক আছে, চলুন দেখি।
আমি আর লিজা রেললাইন পার হয়ে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছালাম। দেখি, ৮:০০টায় চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশ্যে ছাড়বে। আমি ট্রেনে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় লিজা বলল,
— আপনি একটু জিজ্ঞেস করুন না, ট্রেনটা জয়দেবপুরে থামবে কিনা।
আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রেলপুলিশকে বললাম,
— আঙ্কেল, এই ট্রেনটা কি জয়দেবপুরে থামবে?
তিনি বললেন,
— না, এটা কেবল বিমানবন্দর স্টেশনে থামবে। এরপর একটানা চলতে থাকবে, জয়দেবপুরে থামবে না।
আমি কিছুটা বিস্ময়ে বললাম,
— তাহলে তো এ ট্রেন ওর জন্য ঠিক হবে না, কারণ ও তো জয়দেবপুরেই নামবে।
আমি লিজাকে বললাম,
— এই ট্রেনটা ওখানে থামবে না। এখন কী করা যায়?
লিজা বলল,
— চলুন সামনে যাই। তথ্য কেন্দ্র থেকে খোঁজ নিই কোন ট্রেন জয়দেবপুরে থামে।
আমি বললাম,
— ঠিক আছে, চলুন।
তথ্য সেবা কেন্দ্র কিছুটা দূরে, আমাদের হেঁটে যেতে হলো। লিজাকে দেখে মনে হচ্ছিল, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। আমি বললাম,
— ব্যাগটা আমাকে দিন, আমি নিয়ে যাই।
কিন্তু সে লজ্জায় দিতে চাচ্ছিল না। আমিও খুব একটা জোর করলাম না, কারণ আমার হাতেও মালামাল ছিল।
আমরা তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে জানতে চাইলাম,
— রাতের মধ্যে কোনো ট্রেন আছে কি, যেটা জয়দেবপুরে থামে?
লোকটা বলল,
— জি, আছে। দ্রুতযান এক্সপ্রেস। এটা রাত ৮:৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ওটা জয়দেবপুরে থামে।
এই উত্তরে আমরা যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
চলবে…
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now