বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মধ্যে রজনীর স্মৃতি
নাফিজ আহমেদ
শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছে না। এইজন্য একটু বাহিরে আসলাম। কিছুক্ষণ একাকী অতিবাহিত করছি নিরব প্রহরে,হঠাৎ পাশ দিয়ে একটি গাড়ি মাইকিং করতে করতে যাচ্ছে যে,আজ কাকুরিয়া যুবসমাজ কতৃক এক বিরাট তাফসীরুল কুরআন মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে উক্ত মাহফিলে আপনারা সকলে আমন্ত্রিত। মাইকিং শ্রবণ করা মাত্রই সিদ্ধান্ত নিলাম আম্মুকে নিয়ে আজ মাহফিল শুনতে যাব। নিশুতি রাতে আম্মু আর আমি নিজের মোটরসাইকেলে করে চলে গেলাম মাহফিলের মাঠে। শীতের রজনীতে মাটির সাথে সম্পর্ক গাঢ় করে কুরআনের আলোচনা শুনতে ভালোই লাগে। পর্যায়ক্রমে বক্তারা আলোচনা করতে থাকছে। এক পর্যায়ে প্রধান আলোচক সাবান মাসের মধ্যে রজনী সম্পর্কে আলোচনা করল। এই রাতের ফযিলত ও এই রাতে কি করণীয় সেই সম্পর্কে সকলের সম্মুখে তুলে ধরছে। এই রাতে নাকি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমল আছে সেটা হলো কবর জিয়ারত করা। এই ফযিলত পূর্ণ রাতে নবী সঃ তাঁর মৃত সাহাবী রাঃ-দের কবরের পাশে উপস্থিত হয়ে তাঁদের জন্য দোয়া করতেন। এছাড়াও বক্তা সাহেব অনেক আলোচনা করল। মাহফিল শোনার পর কেন জানি আমার হৃদয়ের অতল গহব্বরে এই আমল টা দাগ কাটলো। আমারও খুবই ইচ্ছা হলো এই জোছনা প্লাবিত রাতে কারওর করব জিয়ারত করি। তাৎক্ষণিক স্মরণ হলো আমার নানা আজ থেকে আঠারো বছর আগে এই ধরাকে পর করে চলে গেছে তার রবের কাছে আর আমার সাথে আম্মুও আছে তাহলে নানার কবরটা জিয়ারত করে আসলে আম্মুরও ভালো লাগবে আবার আমারও ইচ্ছা টা পূরণ হবে। রাত তখন প্রায় ১:০০ আমি গাড়ি বাড়ির দিকে না নিয়ে আম্মুকে নিয়ে নানার কবরের দিকে গেলাম। আম্মু তখনো উপলব্ধি করতে পারলো না যে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে আম্মুকে বললাম নামো। আম্মু বলল কেন?? এই দেখো তোমার বাবার কবরের কাছে এসেছি। চলো দুজনে মিলে নানার কবরটা জিয়ারত করে আসি। আম্মু আবেগাপ্লুত হয়ে গেল। দেখতে পেলাম তার চোখের কোনে জমে আছে নিজ পিতাকে হারানোর কষ্টের অশ্রুধারা। শুনেছি ছোট্ট বেলায় নানা নাকি আমাকে খুবই যত্ন করতেন। সকলকে লুকিয়ে আমার জন্য মিষ্টি আনতেন কেননা আমি যে আমার নানার এক মেয়ের এক ছেলে। আজ নানা আমাদের মাঝে নেই, নানা যদি থাকতেন তাহলে হয়তো তার ভালোবাসাটা আমি অনুভব করতে পারতাম। নানার কবরটা অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। আজ আঠারো বছর সে এখানে শায়িত আর কিয়ামত অব্দি এখানেই থাকবে। নানার কবরের পাশে এসে তার জন্য মন খুলে দোয়া করতে থাকলাম। এই গভীর রজনীতে আমি আর আম্মু ছাড়া কবরস্থানে আর কেউ নেই। আমরা দুইজন নানার জন্য অন্তরের অন্তরস্থল থেকে দোয়া করতে থাকলাম কিছুক্ষণ পরে দেখি আমাদের পিছনে কে যেন এসে দাঁড়ালো। আমি আর আম্মু একটু বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। না জানি কে আসল! এদিকে মোনাজাতের ভিতর তাকাতেও পারছি না। প্রায় দশ মিনিট মোনাজাত করে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার মেজোমামা।আসলে নানার কবরটা মামাদের বাড়ির পাশেই আম্মুর কান্না এবং আমার দোয়ার শব্দে সে বুঝতে পেরেছে। এইজন্য আমাদের সাথে দোয়াই শামিল হয়েছে। যাইহোক মোনাজাত শেষ করে আমরা এই জোছনা মুখরিত রজনীতে গমন করলাম আপন নীড়ে। আম্মুকে বললাম কেমন লাগলো? সে বলল আলহামদুলিল্লাহ। একটা মেয়ে নিজের বাপের কবর জিয়ারত করে আসলেই অনেক তৃপ্তি বোধ করে সেটা আবার মধ্যে রজনীতে। আজকের এই মধ্যে রজনীর স্মৃতি স্মরণ হয়ে থাকবে বাকি জীবন। ইনশাল্লাহ।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now