বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বই প্রেমী মেয়েটি

"সত্য ঘটনা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাফিজ আহমেদ (০ পয়েন্ট)

X বই প্রেমী মেয়েটি নাফিজ আহমেদ,, সৃষ্টি কর্তার এই ছোট্ট ভুবনে নানান ধরনের মানুষ এর পদচারণা। তাঁর মধ্যে অন্যরকম ছিলেন আমার বোন রওজা। নিষ্ঠুর প্রহর হয়তো আমার বোনকে এই ধরার বুকে আপন করে আলিঙ্গন করে নেয়নি। দূরে সরিয়ে দিয়েছে অনেকটা দূরে হয়তো আমার নিরব প্রহরে সঙ্গ দেওয়া মানুষটি আজ অচিন দেশের বাসিন্দা হয়ে গেছে। বোন বলে হাজার বার ডাকলেও আর কখনো সে ডাকের উত্তর নিবে না। আমার বোন ছিল খুবই শান্ত স্বভাবের একটি মেয়ে। গ্রামের মেঠোপথের ছোট ছোট বালুর ধূলিকণা তাকে আলিঙ্গন করে নিয়েছে বারংবার। কখনো কখনো ব্যস্ত শহরের বর্ষণসিক্ত রাস্তাও তাকে আপন করে নিয়েছে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ আমার বোন আর আমাদের মাঝে নেই। দিনের সিংহভাগ সময়ই আমি আমার বোনের সাথে বই পড়ে সময় অতিবাহিত করতাম। আপুর একাধিক ভালো অভ্যাসের মধ্যে অন্যরকম ছিল বই পড়া। সে বই পড়তে খুবই ভালোবাসত। এটা সাধারণ কোন শখ ছিল না। সে বইকে স্থান দিয়েছে হৃদয়ের অতল গহব্বরে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা সম্পূর্ণ টাই তার বুকের পরম তল থেকে তৈরি হতো। সে যেমন ক্লাসের পড়া যথাযথ সম্পূর্ণ করত ঠিক তদ্রূপ বাহিরেও অনেক সাহিত্য অধ্যায়ন করত। ছোট্ট বেলা থেকে আমি খুব একটা বই পড়তাম না। বইয়ের প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ ছিল না। তবে কিভাবে যেন জীবনের সোনালী প্রহরে আপুকে দেখে এই অভ্যাসটা তৈরি হয়ে গেল। আমার বই পড়ার শুরুটা হয়েছিল হুমায়ুন আহমেদ এর উপন্যাস দিয়ে। মাঝে মাঝে আপুকে দেখে আমি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে এক নাগারে চেয়ে থাকতাম। কখনো কখনো তো হারিয়ে যেতাম ভাবনার অতল গহব্বরে, একটা মেয়ে এত নিখুঁত ভাবে কেমন করে সাহিত্য অধ্যায়ন করে! পাতা ঝরা স্নিগ্ধ বিকালে আপুর সাথে আমি হারিয়ে যেতাম বইয়ের পাতায়। আপুর প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল সীমাহীন। যেমনটা হুমায়ুন আহমেদ লিখে গেছে তার বইয়ের পাতায় "মমতাময় নারীদের প্রতি আমার বিশ্বাস সীমাহীন " ঠিক তদ্রূপ আপুর প্রতি আমার ভালোবাসা টা ছিল বাঁধভাঙ্গা ঢেউয়ের ন্যায়। মাঝে মাঝে আমি আমার মালিকের কাছে চাইতাম যে আমাদের এই ভাই-বোনের সম্পর্ক যেন এই ভাবেই পাড়ি দিতে পারে অসীমের পথচলায়। কিন্তু সেটা কি আদৌও সত্য হলো। না! আপু আমাকে রেখে একলা চলে গেলো তার প্রভুর নিকট। এই তিলোত্তমা শহরে আমাকে একলা করে দিয়ে সে হারিয়ে গেলো অচেনা শহরে। আমার আর আপুর সময় গুলো ভালোই কাটছিল। আমি যদি বাজারে কোন কাজে যেতাম তাহলে কাজ শেষে টাকা অবশিষ্ট থাকলে একটা বই ক্রয় করে নিয়ে চলে আসতাম। আপন নীড়ে প্রত্যাবর্তন করে দুই ভাই বোন এক সাথে বইটা পড়তে থাকতাম। বইয়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ছিল নিদারুন। অবশেষে কোন এক বেদনা বিধুর মুহূর্তে হঠাৎ জানা গেল আপুর কি যেন এক রোগ হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে ঠিক ভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে না পাড়ায় জীবনের অবসান ঘটে আমার সেই বই পড়ুয়া সঙ্গীটার। হ্যাঁ, আমার বোন মৃত্যু বরণ করে। আপুর মৃত্যুর দিন আমি খুব একটা বুঝতে পারিনি। তবে তাঁর দাফনের পর আমি সত্যিই অবগত হলাম যে কি যেন একটা আমি হারিয়ে ফেলেছি চিরদিনের জন্য । যেটা এই ইহকালে আর কখনোই ফিরে পাব না হৃদয়ের দ্রবীভূত বাষ্পগুলো দুচোখ বেয়ে অশ্রু হয়ে ঝরে পরছে জমিনের বুকে। এখন বুঝতে পারি যে কাক ডাকা ভোরে আর কেউ আপন করে ডেকে দেয়না। নিজের অবসর সময়ে আর কেউ একটু এসে আড্ডা দেয় না,বলে না যে, আজকে একটা নতুন বইয়ের সংকলন আছে দুইজন একসাথে পড়ব। কৃষ্ণ মধ্য রাতে এখন আর একসাথে বই পড়তে পারব না। বিষাদ ক্লান্ত ভরা চেহারা নিয়ে ভৌ-দৌড় দিয়ে আপন গৃহে ফিরলে কেউ আর সুখের খবর শোনাবে না। বলবে না রাগিব আজ জহির রায়হানের এক বিষ্ময়কর উপন্যাস জোগাড় করেছি। সে চিরদিনের জন্য চলে গেল আপন ঠিকানায়। মাঝে মাঝে দুর্বিনীত নীল আকাশ দিয়ে এক ঝাঁক শালুক উড়ে যায় আপন নীড়ে তাদেরকে ইর্ষা করে হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা উজার করে বলতে চাই আপু তুমি কি আবারও পাখি বেশে আমার সম্মুখে আসতে পারো না! পড়ন্ত বিকালে আমার কাছে এসে আগের মতো গল্প শুনিয়ে যাবা হঠাৎ হঠাৎ। কিন্তু দিনশেষে এটাই বাস্তবতা যে সবুজ বৃক্ষে পরিবেষ্টিত এই ছোট্ট ধরায় আর কখনো খুঁজে পাব না আমার কলিজার টুকরা বোনটিকে। বাসন্তী ভরা জীবনে যাতনার প্লাবন হয়ে আর কখনোই ফিরে আসবে না আমার বোন। সে যে আমাকে একা করে রেখে পাড়ি দিয়েছে ঝিলাম নদীর দেশে। জীবনের সাঁজবেলায় আজ আমি সত্যিই বড় একা। এখন মাঝে মাঝে বই পড়তে ইচ্ছা করলে নিজ থেকেই বই ক্রয় করে পড়তে থাকি। বইয়ের ধূলিকণা জমা পাতায় পাতায় খুঁজে নিতে চাই আমার বোনটিকে। নতুন ভোরের সোনারঙা আলোয় ভরে উঠবে আমাদের মনের উঠোন দোয়া করি আপু মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুক। হয়তো আমি তোমার সাথে নিজের বাড়ন্ত শৈশব অতিবাহিত করতে পেরেছি তবে মালিক যদি চাই আবারও তোমার সাথে জীবনের সোনালী মূহুর্ত অতিবাহিত করতে পারব জান্নাতের সিড়িতে। এইভাবেই বই প্রেমী মেয়েটি হারিয়ে গেল চিরদিনের জন্য। আল-বিদা


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now