বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
টুকি বাবুর ভালোবাসা
নাফিজ আহমেদ,,
আজ লেখক নয় বরং একজন সাধারণ মামা হয়েই উঠিয়ে নিলাম টেবিলের এক কোনায় পরে থাকা কলমটা। লেখনীতে রুপায়িত করলাম নিজের বুকের পরম তলে তাদের জন্য জমা হওয়া সমস্ত আবেগ ও ভালোবাসা। তাদের প্রস্থানে কেন জানি হৃদয়ের অতল গহব্বরের এক অজানা ব্যাথা বারংবার আঘাত হানছে। মনে পরে যায় তাদের আগমনের প্রথম দিনটা। আহ! কত আনন্দ বিরাজমান ছিল আপন গৃহের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। শুধু কি গৃহ! সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল বাড়ির মানুষগুলোও। আমিও খুব খুশি ছিলাম ঐদিন কেননা আজকে যে আমার ভাগ্নেভাগ্নি আগমন ঘটিয়েছে আমাদের নীড়ে। দিনের সিংহভাগ সময়ই অতিবাহিত করতাম তাদের সাথে। কাক ডাকা ভোরে ভাগ্নে চলে আসবে আমার নিকট। আমাকে ব্যাক্ত করবে মামা ওঠো। আমি আবার বলবো কেন? সে আপন মনে আমাকে অবহিত করবে নানু(আমার আম্মু)তোমাকে উঠতে বলেছে তাই। আমি বিছানা থেকে উঠতে চাইব না তবুও কেন জানি জোর করে আমাকে ওঠাতে ও সক্ষম হবে। ভাগ্নে আমার খুবই চঞ্চল প্রভৃতির। আমি বাহিরে এসে অবলোকন করছি আম্মু আমাকে সকালের পান্তা দিচ্ছে। ভাগ্নে আমার আগেই চৌকি দখল করে উপবিষ্ট হয়ে আছে। আমি আম্মুকে বললাম এখন কেন পরে খাচ্ছি। মা আমাকে আচর্যকর কথা বলল যে বাবু এতক্ষণ যাবৎ তোর জন্য অপেক্ষা করছে। অবশেষে তোকে তো ডেকেই নিয়ে আসল। আমি অভিভূত হয়ে তার দিকে চেয়ে আছি আর এখন ওয়াকিফহাল হলাম যে কেন সে এত ভোরে আমাকে ডাকল। আসলে আমার ভাগ্নে আমার সাথে সকালে পান্তা খেতে পছন্দ করে। যাইহোক হাতমুখ ধৌত করে চলে আসলাম রান্নাঘরে বাবুতো (আমার ভাগ্নে) আগে থেকে বসে আছে। আমি খাবার শুরু করতেই আমার কাছে জিজ্ঞাসা করছে মামা তোমার ভাত ঐরকম হলো কি করে? আমাকেও ঐরকম করে
দাও কি আর করা অবশেষে আমি আপন হাতে তার ভাত খুব সুন্দর করে নাড়িয়ে দিই। এবার দুইজন মিলে মজা করে খেতে থাকি। খাওয়ার মাঝে মাঝে তার ছোট্ট ছোট্ট কথাগুলো আমার অনেক আনন্দ দিতো। খাওয়া শেষে যাই টুকি কাছে (আমার ভাগ্নী) সে এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। আমি তাকে ডেকে ওঠালাম। সে আবার
সকালে ভাত খাইনা তার জন্য বাজার থেকে পরোটা নিয়ে আসতে হয় নতুবা হোটেলে নিয়ে যেতে হয়। এভাবে সমাপ্তি হয় দিনের প্রথমাংশ। একটু বেলা হলে ওরা ওদের নানুর সাথে স্কুলে চলে যায়। সারাদিন ওখানে থেকে পড়ন্ত বিকালে চলে আসে খাবার হাতে করে। এসেই আমাকে খাইয়ে দিবে। দুই দিক থেকে দুইজনেই খাবার দিবে সে যে কি আনন্দ তা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কখনো আবার আমরা ঘুরতে যায় প্রকৃতির মাঝে। এইতো সেদিন বাবুকে নিয়ে পাতা ঝরা স্নিগ্ধ বিকেলে ঘুরতে গেলাম তেপান্তরের মাঠে। শহরের কলহল মুক্ত এক নিস্তব্ধ একাকী পরিবেশ। আমরা দুইজন প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করছি। শেষ বিকালের আকাশটা যেন আমাদেরকে তার কাছে ডেকে নেয়। ডুবন্ত সূর্য যেন আপন ভাষায় অবগত করে আজ আর নয় আবার আগামীকাল দেখা হবে ইনশাল্লাহ। সম্মুখে বিল তার পানি দেখতে একেবারে সাদা মনে হচ্ছে একটু তাকে আলিঙ্গন করে ডুব দিই। বাবু আমাকে বলছে মামা আমি সূর্য দেখতে পারিনি। আসলে সূর্যতো ততক্ষণে মেঘের রাজ্যে মিলিয়ে গেছে। অতপর যখন সন্ধ্যের ঝিরিঝিরি বাতাস আমাদেরকে আলতো করে ছোঁয়া দিয়ে চলে যায় সবুজের মাঝে আমরা তখন ফিরি আপনার গন্তব্যে। নিশুতি রাত্রিবেলা টুকি বাবু আমার কাছে চলে আসে। আমাকে বলে মামা একটা গল্প শোনাও। আমিও তাদেরকে শোনাতে থাকি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য গ্রামীণ গল্প। যেটা ছোটবেলা থেকে শ্রবণ করে বড় হয়েছি। "এক দেশে এক রাজা ছিল" আহ! কতই না ভালো লাগতো বাল্যকালে এই সমস্ত গল্প শুনতে। ওদেরকেও শোনালাম,ওরা এক নাগারে শুনতে থাকতো আমার বলা গল্পগুলো। মাঝে মাঝে আবার নিকষ কালো রজনীতে ওদেরকে নিয়ে বাহিরে আসতাম ওদেরকে দেখাতাম তাঁরা ভরা আকাশ। কত রকম প্রশ্ন উদয় হতো তাদের মাঝে। এভাবে অতিবাহিত হতো অনেক টা প্রহর। পরিশেষে চলে আসল তাদের বাড়ি যাওয়ার সময়। যেদিন টুকি বাবু চলে যাবে আপন নীড়ে সেদিন সকালে কেন জানি টুকি মনের অজান্তেই কেঁদে যাচ্ছিল। তার কাঁদা দেখে আমারও ভিষণ কান্না আসছিল। আমি বললাম মামা কাঁদছো কেন? সে বলল বাড়ি যাব না। আমি বললাম তাই বললে কি হয় তোমার পড়া রয়েছে আর বাড়িতো যেতেই হবে। তা ছাড়া তুমি এখন যাও কয়দিন পরে যেয়ে আমি তোমাকে নিয়ে আসব। আমি হয়তো তাকে বুঝাচ্ছিলাম কিন্তু সত্যি বলতে আমিই বিদায় ব্যাথা শোকহত ছিলাম। এতদিন থেকে গেল বাড়ি ছিল জমজমাট, আনন্দে ভরপুর আজ থেকে আবারও নিস্তব্ধ কোন শব্দ নেই, কোন জমজমাটও নেই এইসব ভেবে আমারও অনেক কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু কি আর করা বাস্তবতা তো সকলকেই মেনে নিতে হবে। অবশেষে ওরা সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেল নিজেদের বাড়ি।বাবু তো ছোট ওতো বুঝে না। তবে চলে যাওয়ার সময় টুকি খুব কাঁদছিল। আমার হৃদয়ের অতল গহব্বরের আজীবন নিমজ্জিত থাকবে টুকি বাবুর ভালোবাসা। ইনশাল্লাহ,,
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now