বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

এক নিষ্ঠুর প্রহরে আপনি

"সত্য ঘটনা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাফিজ আহমেদ (০ পয়েন্ট)

X এক নিষ্ঠুর প্রহরে আপনি নাফিজ আহমেদ সময় যে এত নিষ্ঠুর তা আগে বোধগম্য ছিল না। আসলে যত সময় অতিবাহিত হচ্ছে ততই যেন নতুন অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছি। লেখাপড়ার জন্য এখন আর খুব একটা নিজ বাড়িতে থাকতে পারিনা, ঢাকাতেই থাকতে হয়। এবারও প্রায় দুই মাস পর ফিরলাম আপন নীড়ে। বাড়িতে এসেই প্রথম অবলোকন করলাম মায়ের মায়াবী অবয়ব খানা। আমাকে দেখে খুশিতে তার চক্ষু দুটি দিয়ে বেয়ে পরছে মায়ার বারিধারা আর আপন মনেই বলছে "আজ দুই মাস আমার মধুকে রান্না করে খাওয়াতে পারিনি আজ নিজ হাতে খাওয়াবো" আমি আপন মনে শ্রবণ করলাম তার ব্যক্ত করা উক্তি গুলো তবে কাওকে বুঝতে দিলাম না। মনে মনে ভাবছি এই পৃথিবীতে সার্থহীন ভাবে যদি কেউ ভালোবাসতে পারে তবে সে মা-ই। মা আমাকে খাবার দিল। খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বাহির হয়ে গেলাম বাড়ির বাইরে। অনেক দিন হলো কাছের মানুষগুলোর সাথে দেখা হয়নি। সবকিছু পরিকল্পনা করেই বাড়ি থেকে বাইরে আসলাম। পরিকল্পনা মাফিক প্রথমে একটু মাঠের দিকে আসলাম মাঠে এসেই দেখি একজন আপন জমিতে সার দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কাকা কেমন আছেন? তার সাথে অনেক সময় ধরে কথা হলো। কথার এক পর্যায়ে সে বলল সাইদুল তো এখন মসজিদে নেই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় গেছে? সে নিজ চেহারা টা মলিন করে এক বুক বেদনা নিয়ে ব্যাক্ত করল ওর মসজিদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আমি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে তার দিকে চেয়ে আছি আর আপন মনে বলছি কিভাবে সম্ভব? পাঠকবৃন্দ তার আগে বলে রাখি (সাইদুল হলো আমাদের গ্রামের পুরনো মসজিদের ইমাম ও খতিব। ভাইয়ের সাথে আমার খুবই গভীর সম্পর্ক। প্রতিদিন স্নিগ্ধ বিকেলে আমার একই সাথে বসে হারিয়ে যেতাম গল্পের শহরে। কাক ভেজা বৃষ্টি মাঝে একজন আরেকজনের ছাতার নিচেই আশ্রয় নিয়ে পদার্পন করতাম গ্রামের ছোট্ট বাজারে, একই সাথে দু'জনে হোটেলে বসে খেতাম গরম গরম পিয়াজু নতুবা সিঙ্গারা। আহ কতই না মজা করে দু'জন একসাথে আহার করতাম আর সাথে সাথে একে অপরের ভিতর নিমজ্জিত থাকা গল্পগুলো ব্যক্ত করতাম। কখনো কখনো তেপান্তরের মাঠে বসে অবলোকন করতাম ডুবন্ত সূর্যকে। মেঘহীন নীলাকাশ দিয়ে এক ঝাঁক পাখি স্বাধীন ডানা মিলিয়ে উড়ে যায় আপন নীড়ে দেখতে কতই না ভালো লাগতো। সন্ধ্যের ঝিরিঝিরি বাতাস যখন আলতো করে ছোঁয়া দিতো উপলব্ধি করতাম মাগরিবের নামাজের আর খুব একটা দেরি নেই। দুজনে আবারও ফিরতাম মসজিদের দিকে। নামাজ সম্পূর্ণ করে দু'জনে একটু খোশগল্প গল্পে মেতে উঠতাম। এভাবেই অতিবাহিত হয়ে যেত ঘন্টা খানেক। কখনো কখনো একেবারে এশার নামাজ পরে প্রত্যাবর্তন করতাম আপন গৃহে,আবার কখনো কখনো দু'জনে একই সাথে সমাপ্ত করতাম এশার নামাজ।) বাড়িতে থাকতে এভাবেই আমার প্রহরগুলো পাড় হয়ে যেত, কিন্তু যখন শুনলাম ভাই এখন আর মসজিদে থাকে না আসলেই হৃদয়ের অতল গহিনে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ভাবছিলাম আর কি কখনো একসাথে পাড়ি দিতে পারব ব্যস্ত শহরের বর্ষণসিক্ত পথ! কাঠফাঁটা চৈত্রের তপ্ত দুপুরে তেজস্বীয় উত্তপ্ত সূর্যের তাপ কি একসাথে সহ্য করতে পারব! স্নিগ্ধ বিকেলে পরিবেশের অভূতপূর্ব দৃশ্য কি আর একসাথে অবলোকন করতে পারব! এগুলো ভাবতে ভাবতেই ফিরলাম বাজারে ইচ্ছা ছিল আছরের নামায টা ভাই আর আমি একই সাথে আগের মতো পুরনো মসজিদে আদায় করব কিন্তু কি আর করা একাকী বাজার মসজিদেই আদায় করলাম। নামাজ পড়ে বাহিরে আসতেই দেখি সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে সাইদুল ভাই। খুশিতে আত্মহারা হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই হঠাৎ এখানে এই সময়? সে বলল তোমার আসার খবর পেয়েই দেখা করতে চলে আসলাম। আগের ন্যায় দু'জনে উপবিষ্ট হলাম বাসু চাচার চায়ের দোকানে। চায়ের গরম কাপে চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই শুনছি নাকি আর মসজিদের দায়িত্বে নেই কি হয়েছে বলেন তো শুনি? সে বিষাদ ক্লান্ত চেহারা নিয়ে বলতে শুরু করল তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। সবকিছু শোনার পর খুব খারাপ লাগলো। সে আমাকে শান্তনা দিচ্ছে আরে সমস্যা নেই প্রায়ই তো আসব দেখা হবে ইনশাল্লাহ। কিন্তু আমি ঠিকই অবগত ছিলাম আর আগের মতো একসাথে অতিবাহিত করতে পারবো না নিজেদের প্রহর গুলো। যেটা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো এখন আর খুব একটা ভাইয়ের সাথে দেখা হয়না। ভুলক্রমে দেখা হলেও খুব একটা কথা হয়না। স্বাভাবিক সালাম বিনিময় ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা এখানে শেষ। আগের মতো দোকানে বসে খেতে খেতে মিনিটের পর মিনিট গল্প আর হয়না। আসলে আমাদেরকে আলাদা করে দিল কোন এক নিষ্ঠুর প্রহর।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now