বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
প্রাচীনকাল থেকে রাজ্য অমরাবতীতে এক অন্ধকার অভিশাপ ছিল। দুর্গের এক কোণে, কালো পাহাড়ের ওপরে, ছিল এক ভয়ংকর ডাইনীর বাস। তার নাম ছিল চণ্ডীমা। লোককথা বলে, একসময় সে ছিল এক সাধারণ মেয়ে, কিন্তু এক নিষ্ঠুর রাজা তার পরিবারকে হত্যা করলে প্রতিশোধের আগুনে সে কালো জাদু আয়ত্ত করে ভয়ংকর এক ডাইনীতে পরিণত হয়। চণ্ডীমার অভিশাপে অমরাবতীর রাজ্যের মানুষ ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতো। প্রতি পূর্ণিমার রাতে দুর্গের কাছাকাছি কেউ গেলে সে তাদের জাদুর বাঁধনে আবদ্ধ করে অদৃশ্য করে ফেলত।
রাজকুমার অরিন্দমের আগমন
অমরাবতীর রাজা বিশাল সিংহ ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক। তার একমাত্র পুত্র, রাজকুমার অরিন্দম, ছিলেন অসাধারণ সঙ্গীতজ্ঞ। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঁশি বাজাতে ভালোবাসতেন, আর তার সুরে পশুপাখি পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে যেতো।
একদিন রাজসভায় এক বৃদ্ধ সাধু উপস্থিত হয়ে বললেন,
“মহারাজ, এই রাজ্যের অভিশাপ মুক্ত করা সম্ভব। তবে শুধু শক্তির মাধ্যমে নয়, বরং সুরের জাদুর মাধ্যমে।”
রাজা বিস্মিত হলেন, “কিন্তু তা সম্ভব কিভাবে?”
সাধু বললেন, “ডাইনী চণ্ডীমার হৃদয়েও একসময় প্রেম ও দয়া ছিল। সে ভালোবাসতো সুর ও সঙ্গীতকে। যদি কেউ এমন এক মোহনীয় সুর বাজাতে পারে যা তার হৃদয় স্পর্শ করবে, তবে তার কালো জাদু নষ্ট হয়ে যাবে।”
রাজা চিন্তায় পড়ে গেলেন, কিন্তু রাজকুমার এগিয়ে এসে বললেন, “আমি যাবো! আমি আমার সুর দিয়ে তাকে অভিশাপ মুক্ত করবো।”
ডাইনীর দুর্গের পথে যাত্রা
রাজকুমার একাই রওনা হলেন দুর্গের দিকে। পথে নানা বিপদ আসতে লাগলো—বন্য পশুরা তার পথ আটকানোর চেষ্টা করল, ঝড় উঠল, আগুনের স্রোত বইতে থাকল। কিন্তু রাজকুমার অটল রইলেন। অবশেষে, রাতের অন্ধকারে তিনি পৌঁছালেন দুর্গের সামনে।
ডাইনী চণ্ডীমা তাকে দেখতে পেয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠল, “হাহাহা! তুমি কি ভাবছো, তুমি আমাকে হারাতে পারবে?”
সে হাত তুলে এক অশুভ মন্ত্র উচ্চারণ করল, আর কালো ধোঁয়ার স্রোত রাজকুমারকে ঘিরে ধরলো।
কিন্তু অরিন্দম ভয় না পেয়ে ধীরে ধীরে বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন।
সুরের জাদু
প্রথমে হাওয়ার ঝাপটা শীতল হয়ে গেল। পাখিরা থমকে গেল। বাতাসে যেন এক অদ্ভুত মিষ্টি সুর ভাসতে লাগল।
চণ্ডীমার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। সে হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো, কিন্তু সুর তার হৃদয়ে প্রবেশ করছিল।
তার স্মৃতিতে ফিরে এলো পুরনো দিনগুলো—যখন সে শিশু ছিল, যখন তার মা তাকে ঘুম পাড়াতেন সুরেলা গান শুনিয়ে, যখন তার বাবা ভালোবাসা দিয়ে মাথায় হাত রাখতেন।
সে ব্যথায় চিৎকার করে উঠল, “না! এটা সম্ভব নয়!”
কিন্তু তার কালো চামড়ার ওপরে সোনালী আলো ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। তার সব জাদুর প্রতীক ভেঙে গেল, চোখের রঙ স্বাভাবিক হয়ে গেল, এবং কিছুক্ষণের মধ্যে সে এক সাধারণ নারীতে পরিণত হলো।
অভিশাপ মুক্তি ও শান্তির ফিরে আসা
রাজকুমার তাকে শান্তভাবে বললেন, “তুমি এখন মুক্ত। প্রতিশোধ তোমাকে কিছু দিতে পারেনি, কিন্তু সুর তোমার প্রকৃত সত্তাকে ফিরিয়ে এনেছে।”
চণ্ডীমা কাঁদতে লাগল। সে রাজকুমারের পায়ে লুটিয়ে পড়ে বলল, “আমি বহু বছর ধরে ভুল পথে ছিলাম। আমাকে ক্ষমা করো!”
রাজকুমার তাকে রাজ্যে নিয়ে এলেন। রাজা বিশাল সিংহ তাকে ক্ষমা করলেন এবং রাজ্যের সকলের সামনে ঘোষণা করলেন,
“অন্যায়ের প্রতিশোধ কখনো শান্তি আনতে পারে না। তবে ভালোবাসা, সুর, ও ক্ষমাই পারে এক অভিশপ্ত আত্মাকে মুক্তি দিতে।”
সেই রাত থেকে অমরাবতীতে আর কোনো অভিশাপ রইল না। রাজকুমার অরিন্দমের বাঁশির সুর রাজারাজড়াদের গল্প হয়ে থাকলো, আর তার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা রইল।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now