বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
গল্প- খেলা
লেখক- খুরশিদ জামান কাকন
মাস দুয়েক হলো একটি ভালো সরকারি চাকরী পেয়েছি। মাইনে যা পাই, তাতে দিব্যিই দিন চলে যায়। ব্যস্ততায় কাটছে সময়। অনেকদিন হলো বাড়ি যাওয়া হয়নি। কর্মব্যস্ত জীবনের প্রতি এখন হয়েছে অভ্যস্ত। শরীর আর মনে এখন আর কোন ক্লান্তির ছাপ দেখা যায় না। হয়তো এটাই জীবন। আর এ জীবন পাওয়ার জন্যই হয়তোবা আমরা প্রচেষ্টা চালাই।
.
এইতো কয়েক বছর আগেও প্রচেষ্টা নামক দুর্লভ প্রত্যয়টি আমার মধ্যে ছিলো না। জীবনটাকে হ্যালাফ্যালা করে কাটিয়ে দিতাম। জীবন নিয়ে কোন চিন্তাই ছিলো না। কিন্তু কথায় আছে, মানুষ ঠেকে শিখে। আমার দশাও ঠিক তাই।
.
সুখ মানুষকে স্বপ্ন দেখায়। দুংখ মানুষকে কাদায়। আর অতি দুংখ মানুষকে বদলায়। অতিমাত্রায় দুংখ প্রাপ্তির ফলেই আজকের আমার এ অবস্থান। নয়তো দৃশ্যপট ভিন্ন হলেও হতে পারতো।
.
তখন আমি সবেমাত্র কলেজে। কলেজের পাশেই একটা বাংলো। বাংলোতে একটা মেয়ে থাকতো। মেয়েটার নাম তানিশা। কলেজের পাশের একটি স্কুলে পড়তো ও।
.
ওকে আমার খুব ভালো লাগতো। কেনো ভালো লাগতো, তা জানিনা। ওর হেলে দুলে হেটে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মগ্ন থাকা সবি আমার ভালো লাগতো।
.
আমি প্রতিদিন কলেজ যেতাম। যতোই কারণ থাকুক, কখনওই কলেজ মিস দিতাম না। ক্লাস করার ছলে চুপিচুপি শুধুই ওকেই দেখতাম। ওর মধ্যে একধরনের মুগ্ধতা ছিলো, যা আমাকে সবসময় ওর দিকে টানতো।
.
এভাবে কেটে যায় ছয় মাস। ওকে কিছুই বলা হয়না। একবার আমাদের কলেজের একটি অনুষ্ঠানে ও এসেছিলো। ওকে সেদিন ভীষণ সুন্দর লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো সারাবেলা ওর দিকে চেয়ে থাকি। হয়তো এটাই প্রেম। আর হয়তোবা এটাই একজন মানুষের আরেকজন মানুষের প্রতি ভালো লাগা।
.
আমি মনের মধ্যে সাহস রাখলাম। ধীরেধীরে একপা দুপা করে এগিয়ে গেলাম। ঠিক ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার তখন হাটু কাঁপুনির মতো অবস্থা। কি বলবো না বলবো ভেবে, সবকিছুই গুলিয়ে ফেললাম।
.
>> এই যে মিস্টার সরেন, সামনে দাঁড়িয়েছেন কেনো? (তানিশা)
> কাকে বলছেন আমাকে? (আমি)
>>হ্যা, আপনাকেই বলছি। (তানিশা)
>ও হ্যা, আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো! (আমি)
>> তো বলেন? (তানিশা)
>একটু ওদিকে চলেন, এখানে বলা যাবেনা! (আমি)
>>তার কোন দরকার নেই। পথ ছাড়েন আমার সময় নেই। (তানিশা)
.
তানিশা সামনের দিক হাটা শুরু করলো। পিছন থেকে আমি তড়িঘড়ি করে বলে উঠলাম।
>> শুনেন, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে। সারাজীবন আপনার পাশে থাকতে চাই। রাখবেন আমায় আপনার পাশে?
মনের ভিতর চাপা কথা গুলো যে মুখফুটে এতো সহজে বলতে পারবো, তা কখনো ভাবিনি। কিভাবে যে বলে ফেললাম, তা নিজেও জানিনা।
.
তানিশা হাটা বন্ধ করলো। পিছন ফিরে আমার দিক ঘুরে তাকালো। আমার চোখে চোখ রাখলো। কিন্তু আমি বেশিক্ষণ চোখ খোলা রাখতে পারলাম না। ভয়ে ততক্ষণে আমার চোখমুখ সব বন্ধ হয়ে গেছে।
ও মুখে কিছুই বললো না। আবার হাটা শুরু করলো।
.
আমি এগিয়ে গিয়ে আবারো ওর পথের সামনে দাঁড়ালাম। এবার ও জানালো, ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। আর ও ওর বয়ফ্রেন্ডকে অনেক ভালোবাসে।
.
ক্ষণিকেই আমার পৃথিবী থেমে যাওয়ার মতো অবস্থা। চেনাজানা সবকিছুই কেমন জানি অচেনা হতে লাগলো।
.
তবে এর কিছুদিন পর আবার দেখা হলে ও আমাকে ওর ফ্রেন্ড বানাতে চাইলো। এরপর থেকে আমাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা হতো। আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছিলাম।
.
দুজন দুজনার সাথে সবসময় কথা বলতাম। একজন আরেকজনের সাথে কথা না বলে বেশিক্ষণ থাকতে পারতাম না। এরই মধ্যে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে।
.
আমাদের এ মধুর সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্যে কেউ কেউ তো দিনরাত উঠেপড়ে লেগে থাকতো। কিন্তু আমাদের বন্ধনটা এতোটা জোরালো ছিলো যে কোন ছলচাতুরীই তা ছিন্ন করতে পারেনি।
.
কিছুদিন পরে তানিশার খুব ঝামেলা হয় বয়ফ্রেন্ডের সাথে। আর তা এতদূর এগোয় যে ওদের মধ্যে ব্রেকআপ হয়ে যায়।
.
ও খুব ভেঙ্গে পড়ে। মনে মনে অনেক কষ্ট পেতে থাকে। ও নিঃসঙ্গ দিন কাটাতে থাকে। সেসময় প্রতিটা মুহূর্ত আমি ওর পাশে ছিলাম।
.
এভাবে কেটে যায় আরো চারবছর। ও একা একা থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এতদিনে ও ওর দুংখ-কষ্ট অনেকটাই মুছে ফেলতে পেরেছে। সবসময় ওর পাশে থেকে আমি ওকে অনুপ্রেরণা জোগাতাম। ওকে সর্বদা এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতাম।
ওকে কখনওই আমি মন খারাপ করে থাকতে দিতাম না। সর্বক্ষন ওর মুখে মলিন হাসি ফুটানোই ছিলো আমার কাজ।
.
হঠাত একদিন তানিশা জানালো ও একজনকে ভালোবেসে ফেলেছে। ছেলেটা ওর সাথে ওর কলেজেই পড়ে। দেখতে শুনতে বেশ স্মার্ট। ছেলেটির নাম জয়।
.
হয়তো তানিশার মনে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছে ছেলেটি। আর তাই তো, তানিশা ছেলেটির জন্য হয়েছে দেওয়ানা। আর হবে নাইবা কেনো, জয়ের জয় হবে নাতো, আর কার হবে বিজয়।
.
আমি হাসি মুখে ওকে অভিনন্দন জানালাম। ওকে সেদিন খুব খুশি হতে দেখেছিলাম। এতোটাই খুশি যে ওকে পৃথিবীর সবচেয়ে হ্যাপী মনে হচ্ছিলো।
.
ও আমাকে ওর সবচেয়ে ভালো ফ্রেন্ড ভাবে। ও আমার সাথে ওর সব কথা নির্ধত্বায় শেয়ার করে। আমি সবসময় আমাদের এই বন্ধুত্বটাকে ভীষণ সম্মান করতাম। সবসময় ভাবতাম আমাদের বন্ধুত্ব হলো পৃথিবীর বেস্ট রিলেশন।
.
ও যা বলতো আমি তাই করতাম। সবসময় ওকে খুশি রাখাটা আমি নিজের চ্যালেঞ্জ মনে করতাম। আমি কখনওই ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতাম না।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে ও কেমন জানি বিরূপ আচরণ করতে শুরু করলো। দেখা হলেও এড়িয়ে যেতো ধরলো। ফোন দিলেও কল রিসিভ করতো না। টুকটাক কথা হলেও, এমনভাবে কথা বলতো যেনো আমি ওর একেবারে অচেনা।
.
যে মেয়েটা কিছুদিন আগেও আমার সাথে ব্যস্ত সময় কাটাতো। সেই মেয়েই এখন ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আমাকেই এড়িয়ে যেতে লাগলো।
.
জীবনে নতুন মানুষ এসেছে। যাকে নিয়ে সে হাজারো স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। তাই হয়তো সে এখন আমায় ভুলেছে, আর হয়েছে জয়ের।
.
আমার খুব খারাপ লাগলেও মনে মনে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করলাম। আর ভিতরে ভিতরে পুড়ে গেলেও আমি এসবের কিছুই বুঝতে দিতাম না ওকে।
.
এরমধ্যে হঠাত একদিন ও বললো ওর সাথে যেনো আর কোনরকম যোগাযোগ না করি। ওর পথে যেনো আর বাধা না হয়ে দাড়াই। ও নাকি জয়কে নিয়ে হ্যাপী থাকতে চায়, আর তাই আমাকে দূরে দূরে থাকতে বলে।
.
মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল। তাই বলে একটা মানুষ এতো কম সময়ে এতোটা পরিবর্তন হতে পারে, তা আমার জানা ছিলো না।
.
ভিতরে ভিতরে আমি বিশাল বড় একটা ধাক্কা খাই। কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারি না। সবকিছুই এলোমেলো হতে থাকে। একটা সময় মনে হয়েছিলো এ জীবন বৃথা। আর তাই নিজেকে শেষ করতেও চেয়েছিলাম।
.
কিন্তু তা পেরে উঠা হয়নি। ধীরে ধীরে জীবনের মূল্য বুঝতে শিখি। নিজের ফিউচার সম্পর্কে সচেতন হতে থাকি।
.
পরে আর কখনো আমি তানিশার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। অন্য শহরে গিয়ে থাকতে শুরু করি। আর পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত থাকি।
.
জীবন চলার পথে আমরা সবাই কমবেশি হোচট খাই। হোচট খেয়ে আমরা ধরেই নেই জীবনে আমরা আর কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবো না। নিজেরাই মনে মনে ভয়ের বীজ লালন করে, নিজেদের উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নিজেরাই নষ্ট করি।
.
তার চেয়ে ভালো হয় যদি হোচট খেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে তা জীবনের শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা যায়। আর সেই মুহূর্তে ধৈর্য ও মনোবল ধরে রেখে তা যদি সাহশের সাথে মোকাবেলা করা যায়।
.
জীবনের কালো অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে আমি পেয়েছি আলোর দেখা। হারানোর বেদনা ভুলে পেয়েছি সঠিক পথের দিশা।
এখন আমি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। নিজের হ্যাপিনেজ
গুলো নিজের মধ্যেই রাখি আবদ্ধ। কারো কাছ থেকে
কোন আশা নয়, দিনশেষে চাই শুধু নিজের কর্মের জয়।
.
আমি একা থাকতেই অভ্যস্ত। আর একাকীই থাকতে চাই। এ
জীবনে সঙ্গিনী চাইনা। আর কাউকে তানিশার মতো
আপন করতেও চাইনা। এ জীবন নিজের মতো করেই
কাটিয়ে দিতে চাই।
.
তাই বিয়ে, ঘর-সংসার এসব নিয়ে কখনো ভাবিনা। ভাবনা
শুধু নিজেকে নিয়ে, আর নিজের মা-বাবাকে নিয়ে।
.
কিন্তু মা-বাবার ভাবনার শেষ নেই। তারা আমাকে নিয়ে
বেশ চিন্তিত। একমাত্র সন্তানের বিয়ে বেশ ঘটা করে
দেওয়ার সাধ তাদের। কিন্তু আমার জন্যে হচ্ছে না
তাদের ইচ্ছাপূরণ।
.
এভাবে আর কতদিন। আর কতদিন নিজের বাবা-মাকে
হতাশ করবো। বাবার ডায়াবেটিস, মায়ের হার্টের
সমস্যা দিনেদিনে বেড়ে চলছে।
.
এইতো সেদিনের কথা ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে
বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন
ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে একবাক্য উপদেশবর্ষণ
করে যান। এই বয়সে শরীরের প্রতি যত্নবান হওয়ার
পাশাপাশি রোগীর মন ভালো থাকা জরুরী। আর তাই
বাবাকে সম্পূর্ণ টেনশন মুক্ত রাখা আমার দায়িত্ব।
.
অনেক ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিলাম, জীবনের দ্বিতীয়
ইনিংস শুরু করবো। আমার ছোট ছোট ইচ্ছে গুলোর অপমৃত্যু
ঘটতে পারে, তাই বলে আমার বাবা-মায়ের বড় বড় ইচ্ছে
গুলো অসম্পূর্ণ রাখা আমার কর্তব্য হতে পারে না। তাই
বাবা-মাকে পছন্দের মেয়ে দেখতে বললাম। আর আমি
কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলাম।
.
দুইদিন পর ভালো একটা সম্বন্ধ আসে। আমরা মেয়ে
দেখতে যাই। যদিওবা মেয়েকে দেখবার খুব ইচ্ছে নেই।
তারপরও সামাজিক প্রথা বলে কথা। তাই পাত্র বেসে
যেতেই হলো।
.
আমরা সন্ধে নাগাদ পৌছালাম ফয়সাল সাহেবের
বাড়িতে। তার দ্বিতীয় কন্যা আফসানার সাথে চলছে
আমার বিয়ের কথা।
.
কিছু সময় পরেই ভিতর থেকে আফসানাকে আমাদের
সামনে আনা হলো। আমি তখন মাথা নিচু করে আছি। সবাই
কানে ফিসফিস করে কথা বলছিলো। মনে হয় সবাই এ
সম্বন্ধে রাজি।
.
আমি বাবা-মায়ের দিকে তাকালাম। তাদেরকে বেশ
হাস্যজ্বল দেখলাম। এবার আফসানার চোখে চোখ
রাখলাম। আসলেই মেয়েটা বেশ সুন্দরী। আর এমন
মেয়েকে বউ হিসেবে কেনা চায়। আর তাই হয়তো আমার
মা-বাবাকে খুশি দেখাচ্ছে।
.
কেউ একজন বলে উঠলো পাকা কথার আগে ছেলে-মেয়ের
মধ্যে কথা হওয়াটা দরকার। আর তাই আমাদেরকে বাসার
ছাদে যেতে বলা হলো।
.
>>দেখেন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
(আফসানা)
>কেনো? (আমি)
>>আমি নাইমকে ভালোবাসি। আর ওকেই বিয়ে করতে
চাই। (আফসানা)
>তো আজকের এ নাটকের কি দরকার ছিলো? (আমি)
>>আমার বাবা অনেক রাগী, আমি নাইমের কথা বলার
সাহস পাইনি। (আফসানা)
>এখন আমাকে কি করতে হবে? (আমি)
>>আপনি শুধু কোনভাবে এ বিয়েটা ক্যান্সেল করেন। আর
সময় সুযোগ বুজে আমি বাবাকে নাইমের কথা বলবো।
(আফসানা)
>ওকে, বেষ্ট অফ লাক। (আমি)
.
নিচে নেমেই বিদায় নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।
যেতে যেতেই আমি বাবা-মাকে জানালাম এ মেয়ে
আমার পছন্দ নয়। কেনো অপছন্দ, তা তাদের জানাইনি। শুধু
এটুকু বলেছি, এ বিয়েতে আমার মত নেই। তাদেরকে বেশ
হতাশ মনে হলো। কিন্তু তেমন কিছু বললো না। শুধু বললো,
আরো মেয়ে আছে সমস্যা নেই।
.
কয়েকদিন পর আজ আবার আমরা অন্য একটি মেয়ে দেখার
জন্য রওনা দিয়েছি। মেয়েটার নামধাম কিচ্ছু জানিনা।
জানার ইচ্ছেও নেই, শুধু সবাই খুশি হলেই আমি রাজি।
সবার ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরই নির্ভর করছে আমার ভবিষ্যৎ।
.
আমরা বসে আছি। সবাইকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।
মেয়ে আমার পছন্দ হবে কিনা এ নিয়ে সবাই
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কিন্তু আমার মধ্যে এসবের কোন ছাপ
নেই। বেশ দিব্যিই সময় কাটছে আমার।
.
কিছুক্ষণ পড়েই মেয়েকে আমাদের সামনে আনা হলো।
মাথায় লম্বা ঘোমটা দেওয়া। মুখ দেখা যাচ্ছে না। পাশ
থেকে কেউ একজন ঘোমটা সরিয়ে দিলো। আমি তখন
বাবা-মার দিকে তাকিয়ে। তাদেরকে বেশ খুশি মনে
হলো। মা ইশারায় আমাকে মেয়েটার দিকে তাকাতে
বললো।
.
আমি ধীরেধীরে চোখ ঘুরিয়ে মেয়েটার দিকে
তাকালাম। একি মেয়েটা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে কেনো !
এ কে? আমি কি মেয়েটাকে চিনি?
.
মনের মধ্যে নানান দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলাম। মেয়েটাকে
আমার খুব চেনা মনে হলো। আমি চোখ থেকে চশমা
নামালাম। ভালো করে চোখ ঘসে নিলাম। প্রথমে
ঝাপসা, পরে স্পৃষ্ট দেখলাম। কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস
হলো না।
.
ক্ষনেই চোখ বন্ধ করে আবার খুললাম। কিন্তু একই দৃশ্য।
কিছুতেই তা বিশ্বাস হবার নয়। একি স্বপ্ন না সত্যি। তা
আমি কিছুতেই নির্ধারণ করতে পারলাম না। নিজেই
নিজের হাতে চিমটি কাটলাম। ব্যথা পেয়ে বুঝলাম, যা
হচ্ছে তার সবি সত্যি।
.
আমরা যাকে দেখতে গেছি। সে আর কেউ নয়। সে হলো
তানিশা। যাকে কিনা একসময় আমি প্রানের চেয়েও
বেশি ভালোবেসেছিলাম। যে কিনা নিজের
ভালোবাসা পেয়ে আমায় করেছিলো অবহেলা।
.
কিন্তু এরকমটা তো কখনো হওয়ার কথা ছিলো না। সে তো
হয়েছিলো জয়ের। জয়কে নিয়েই তো সে বেধেছিলো
সুখের স্বপ্ন। তবে আজ এমনটা হলো কেনো। এ প্রশ্ন আমার
মনের মধ্যে ঘোরপ্যাঁচ করতে লাগলো। কিন্তু এর কোন
উত্তর আমার জানা ছিলো না।
.
আমি কি করবো তা ভেবে পাচ্ছি না। আর আমার করনীয়
কি হতে পারে তাও আমার অজানা। আমার ইচ্ছা-
অনিচ্ছা গুলোর মৃত্যু তো অনেক আগেই ঘটেছে। এখন তো
আমার শুধু অন্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছা গুলো পূরনে
আনুষ্ঠানিকতা দেওয়া বাকি।
.
জানিনা এই ইচ্ছা অনিচ্ছা খেলায় কে হাসবে, আর কে
কাঁদবে। শুধু এটুকু জানি সবি সময়ের ধাঁধাঁ। সময় সবকিছু
বলে দিবে। শুধু অপেক্ষার পালা।
--------সমাপ্ত----------
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now