বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বন্ধন

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান স্মরজিৎ দত্ত (০ পয়েন্ট)

X স্মরজিৎ দত্ত বন্ধন স্মরজিৎ দত্ত চায়ের কাপটা এখনো টেবিলের উপরে আছে। কাপের একদম গোড়ায় লিপস্টিক এর দাগ এখনো মুছে যায়নি। অথচ সে আর নেই; আমাদের সকলকে ছেড়ে সে চলে গেছে, না ফেরার দেশে। খবরটা খবরের কাগজে নজর পড়লো তন্ময়ের মায়ের। প্রথমে ঠিক বুঝতে পারল না তরুণীমা, সেই তরুণীমা কিনা যে গতকাল রাতেই তাদের এই বাড়ি থেকে শেষ বেরিয়ে ছিল। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় জ্বল জ্বল করছে খবরটি। মাঝরাতে তরুণী, রক্তাক্ত অবস্থায় নিউটনের রাস্তায়। তন্ময়ের মা কিছুতেই বুঝতে পারল না তরুণীমার কি হয়েছিল? অ্যাক্সিডেন্ট না সত্যিই ওকে কেউ খুন করে ফেলল? নিজের অজান্তেই ডুকড়ে উঠলো তন্ময়ের মা। নিজের মনেই প্রশ্ন করে উঠলো আমার মন কাঁদছে কেন? তরুণীমা তো আমার মেয়ে নয়। তরুনিমা নিজের মেয়ে না হয়েও এই ঘরের প্রতি কোনায় কোনায় তার ছোয়াকে অনুভব করছে তন্ময়ের মা। হঠাৎই মনে পরল এক সন্ধ্যার ঘটনা। বিকেল বেলার সন্ধিক্ষণে দরজায় বেলবাজার শব্দ। তন্ময়ের মা ছুটে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই তরুণীমা কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচবার মতোই ঘরে ঢুকেই জড়িয়ে ধরল তন্ময়ের মাকে। তন্ময়ের মা বলল, কি হয়েছে বল! তুই এমন হাপাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে? তরুণীমা বলল, কাকিমা আমার অপরাধ, আমি তো নিজে থেকে নিজেকে সুন্দর তৈরি করিনি। জন্ম থেকে যেমন আছি তেমনভাবেই চলছি। আমার উজ্জল রূপ, আমার লাবণ্য আমার যৌবন সেটাই কি আমার অপরাধ! আমার অপরাধ তোমার ছেলেকে আমি ভালোবাসি! প্রতিনিয়ত আমায় উঠতে বসতে বিভিন্ন শাসানি খেতে হচ্ছে। আমি আর পারছি না। তোমার ছেলেকেও বলতে পারি না । তোমার ছেলেকে বললে সে হয়তো রাগের মাথায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করে বসবে। কাকু নেই তোমরা দুজনে একা থাকো। দিনকাল সত্যি খুব ভালো নয় ওকে অফিস যেতে হয় এখান থেকে অনেকটা দূর। মাঝেমধ্যে যেন ভাবি আমার মরে যাওয়াই ভালো তাতে হয়তো ওই লোভাতুর চোখ গুলোর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবো। তন্ময়ের মা বেশ ঝাঁঝালো সুরেই বলে উঠলো তুই আমারও মেয়ে আজ থেকে আমি তোকে বাসে তুলে দিয়ে আসব। দেখি পাড়ার কে আছে তোর মুখের দিকে চোখ তুলে তাকায়। আমি মরে যাইনি তাকিয়ে দেখলে ওই দুটো চোখ আমার হাতে আসবে ওদের চোখে থাকবে না। তোর কাকু অনেক অল্প বয়সে আমাকে রেখে মারা গেছে। আমার রূপ আমার লাবণ্য আমার যৌবন সব নিয়েই একা বেঁচে ছিলাম । ঐ লোভাতুর চোখ আমাকে ছিন্নভিন্ন করে খায় নি, এমন নয়। তবুও কেউ সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাকানোর সাহস হয়নি। তাই তুই চিন্তা করিস না মা। আমি তোকে দিয়ে আসব বাসের রাস্তা পার করে দিয়ে। অঝোরে কাঁদতে থাকে তন্ময়ের মা। এত বছর ধরে ও আমাদের বাড়িতে আসছে কোনদিন কখনো ওকে একা ছেড়ে দিইনি আমি কিংবা তন্ময়। গতকাল তন্ময়ের শরীর খারাপ শুনে এসেছিল ওকে দেখতে । কদিন ধরেই আসবে আসবে করেও আসতে পারেনি। বাড়িতে একা থাকবে আর আমি ওকে বাসের রাস্তায় তুলে দিতে যাব সেটা ও মেনে নিতে পারেনি। ও নিজেই বলেছিল তুমি চিন্তা করো না মা, আমি ঠিক পৌঁছে যাব। বাসে উঠেই তোমায় ফোন করে দেব। হয়তো ভেতর থেকেই কাকিমার বদলে মা শব্দটা বেরিয়ে এসেছিল সেদিন তরুণীমার মুখ থেকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তন্ময়ের মাকে সেদিন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল তরুণিমাকে তবুও রাত গড়িয়ে যাচ্ছে মেয়েটার কোন ফোন নেই। সারারাত ধরে ছটফট করেছে। তন্ময়ের মা। কি হলো, ওকি ফোনটা হারিয়ে ফেলল । তন্ময়ের মা নিজে অনেকবার ফোন করেছে ফোন বেজে গেছে ধরেনি। উতলা মন আরো উতলা হয়েছে। তবুও কূলকিনারা খুঁজে পাইনি তন্ময়ের মা। বেশ অনেক রাতেই পাশের ফ্ল্যাটের রমেন বাবু বাড়ি ফিরেছিল। ডাইনিং স্পেসে বসেছিল তন্ময়ের মা পাশের ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাঁচবার পর রমেন বাবুর স্ত্রী দরজা খুলতেই রমেন বাবু বললেন, কি দিনকাল পড়লো গো ! ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটা এভাবে মরে গেল ঠিক চিনতে পারলাম না তবুও কেন জানি মনে হল খুব চেনা। চারিদিকে পুলিশের ছয়লাপ; প্রচুর লোকের ভিড় জিজ্ঞাসা করলাম, কিছু লোকের মুখে জানলাম মার্ডার হয়েছে। এটা এখন আমাদের সমাজের একটা সাধারন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে গেছে। ভালো লাগলো না তবুও চলে আসতে হল। আমাদের বাড়ির মেয়েটাও বাইরে থাকে তো বড় চিন্তা হয়। রবিন বাবুর স্ত্রী বললেন তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে এত কথা বলবে ! কেন এসব চিন্তা করছো ? এসব দেখে লাভ নেই এটাই স্বাভাবিক। দেখো হয়তো কোন খাড়া খাড়ি ছিল। তুমি ঘরে এসে সুস্থ হয়ে বসো। একটু নিস্তার নিয়ে মেয়েকে ফোন করে কথা বলো। কথাগুলো গোগ্রাসে গিলেও তন্ময়ের মায়ের উতলা আরো বেড়ে গেল ।কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না ।এত রাত্রে ছেলেকে ঘরে রেখে বাইরে যদি যায় ; যদি সত্যি সেরকম কিছু ঘটে থাকে তাহলে তো সেটা পুলিশ বা অন্য কিছু ঘটবে। ছেলেটাকে একা রেখে আমি কিভাবে যাব? ইত্যাদি পাঁচ কথা ভাবতে ভাবতে কি করবে কিছুই না বুঝতে পেরে শুধুই পায়চারি করতে লাগলো। সারারাত দুচোখ এক করতে পারল না । বারবার তন্ময়ের ঘরে ঢুকে অসুস্থ তন্ময়ের দিকে তাকায় আর পায়চারি করতে থাকে তন্ময়ের মা। কখন ভোর হবে ,কখন ওই কাজের মেয়েটা আসবে ? ওই কাজের মেয়েগুলো, ওরাই লোকাল স্থানীয় সংবাদ বহন করে বেড়ায়। ওর কাছে হয়তো পরিষ্কার জানতে পারবো আমার উতলাটা কতটা সত্য না কতটা মিথ্যা নিজের মনেই বলে ওঠে মিথ্যাই যেন হয়। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা ভোর পাঁচটায় পৌছলো। রাতের অন্ধকার কাটলেও তেমন পরিষ্কারভাবে কাটেনি। ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে একটু গিয়ে দাঁড়ায় তন্ময়ের মা। নিচ দিয়ে রুমিতা বৌদি যাচ্ছে। সকাল বেলায় তন্ময়ের মা আর রুমিতা বৌদি একসঙ্গেই হাটে । রুমিতা বৌদি এসেই তন্ময়ের মাকে ডেকে নিয়ে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিচ থেকে ডাকার জন্যই ওপরদিকে তাকিয়ে তন্ময়ের মাকে দেখতে পেয়ে বলে আজ আর এই ক্যাম্পাসের বাইরে যাব না। যদি নামো তাহলে এখানেই হাটবো। তন্ময়ের মা জিজ্ঞাসা করে কেন গো? আমরা তো ওদিকেই হাঁটতে যাই। রুমিতা বৌদি বলে, খবরের কাগজ আসেনি, খবরের কাগজ পড়োনি, শোননি আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরে এই বাসস্ট্যান্ডের ওখানে খুন হয়েছে। তন্ময় মা জিজ্ঞাসা করে খুন ! তার বয়স কত ? ছেলে না মেয়ে? এর পরের বিষয়টা রুমিতা বৌদি আর নিচ থেকে বলতে চাইল না । শুধু বলল একটু ঘুরে নি । ফিরে আসবো তোমাদের বাড়ি ঢুকবো, তখন বলব ক্ষণ। তুমিও নেমে এসো একটু ঘুরি। তন্ময়ের মা বলল না গো আজ শরীরটা ঠিক নেই তুমি ঘুরে এসো অপেক্ষা করছি চা খেতে খেতে কথা বলব। ডাইনিং রুমেই বসে অপেক্ষা করছিল তন্ময়ের মা শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায় যদি সত্যিই তরু হয়ে থাকে তবে তার সাথে আরো কে খুনই বা হতে হলো কেন? কি এমন রাগ ছিল যে সে খুন না করে সেই রাগ মেটাতে সক্ষম হলো না। এবার গতকাল রাতে পাশের বাড়ির রমেন বাবুর কথায় যা মনে হল তা তো তরুণীমা হতে পারে । কেন ওর কি অপরাধ ছিল? ওকে খুন করল কেন? ও কি কোন খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল? হয়তো বা ছিল একদিকে ভালই হয়েছে আমার ছেলেটা তো মুক্তি পেল । পরক্ষণেই নিজের বুক ডুকড়ে ওঠে না, না, ওই মেয়ে কখনো কোন খারাপ কাজে যুক্ত হতে পারেনা ,পারেনা। হঠাৎই কলিং বেলটা বেজে উঠলো। রুমিতা বৌদি ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই বলল কি দিনকাল পড়লো গো, এভাবে আগে তো কখনো খুন হতে শুনিনি রাতের বেলাতেই বা কেন বেরিয়ে ছিল মেয়েটা? তন্ময়ের মা বলে উঠলো তুমি ঘরে এসো আগে বসো। তারপর শুনছি। অনেক বর্ণনাই দিল রুমিতা বৌদি কিন্তু কোনোটাতেই ম্যাচ খাওয়াতে পারল না তন্ময়ের মা। সেই মেয়েটি তরুনিমাই কিনা? হঠাৎই রুমিতা বৌদি বলল জানো মেয়েটা বোধহয় কোন আত্মীয় পরিজনের বাড়ি গিয়েছিল ওর পরনে ছিল ঢাকাই জামদানি। ফর্সা গায়ের রঙে ঢাকাই জামদানির বেগুনি রঙে বর মানিয়েছিল মেয়েটির। তন্ময়ের মা এক ঝটকায় হঠাৎ চমকে উঠলো তুমি দেখেছো গো মেয়েটাকে? রুমিতা বৌদি বলল, হ্যাঁ তো! গতকাল রাতে যখন প্রথম শুনলাম তখন ছেলেকে নিয়েই প্রথম গিয়েছিলাম আমি। তবে জানো মেয়েটির নাম জানিনা তবে মেয়েটিকে দেখে আমার ছেলে বলছিল যে তোমাদের বাড়িতে ওকে আগে দেখেছে। তন্ময়ের মা এতক্ষণ ধরে যে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল হঠাৎই এক দমকে কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে। জানি ও আমার কেউ নয় । তবুও ওর আনা গোনা, মা বাপ মরা মেয়ে লড়াই করে বেঁচে চলেছে সমাজের সাথে । কাজ করে ফ্ল্যাট কিনেছে। এয়ার হোস্টেস এর কাজ করেও শুনেছিলাম । সামনেই ওর প্রমোশন ছিল। কি হলো এমন যে মেয়েটাকে ওরা এভাবে মেরে ফেলল? কথার মাঝেই আবার কলিংবেলের শব্দ। তন্ময়ের মা আইহোল দিয়ে তাকিয়ে দেখে বাইরে গুটিকয় পুলিশ। তন্ময়ের মা বেশ সদর্পে গেট খুলে তাদেরকে বললেন আসুন। পুলিশ অফিসার সহ তিনজন এসেছে । পুলিশ অফিসারটি বললেন আমি সুজিত মাঝি নিউ টাউন থানা থেকে এসেছি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই, বলা যাবে? তন্ময়ের মা বললো নিশ্চয়ই কেন যাবেনা? আপনারা হয়তো এসেছেন যে মেয়েটি গতকাল খুন হয়েছে তার সম্বন্ধে কিছু জানতে। আমারও আপনাদের কাছে অনেক কিছু জানার আছে। পুলিশ অফিসারটি বললেন আমরা কল লিস্টে লাস্ট আপনার কল দেখেছি । ও মারা যাবার পরেও আপনি অনেকবার হয়তো চেষ্টা করেছেন ওকে ফোন করবার। একটু জানতে পারি কি কারনে? তন্ময়ের মা, এবার বেশ গম্ভীর গলাতেই বলল আমি রিটিয়ারম্যান। গোয়েন্দা দপ্তরেই আমি চাকরি করতাম বিশেষ পদেই। আমি কি আপনাদের কাছে জানতে পারি, যে মেয়ে লড়াই করে সমাজে বেঁচে আছে তার কি রাতের বেলায় কাজ সেরে বাড়ি ফেরাটাও অপরাধ, তার কি এতটুকু স্বাধীনতা থাকবে না? কেবলই তাদের ভয়ের তাড়নায় ডুকরে লুকিয়ে এভাবেই বেঁচে থাকতে হবে আজও কলকাতার মেয়েদের? হ্যাঁ আমি জানি আপনাদের হয়তো বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নটা আসবে, আমার এই প্রশ্নের বা আমার পরিচয়ের । একটু অপেক্ষা করুন, বলে তন্ময়ের মা ভেতর থেকে একটা ছোট্ট ফাইল নিয়ে এলো তার থেকেই তার অফিসের লাস্ট আই কার্ড পুলিশ অফিসারের হাতে দিয়ে বলল আর ইউ শিয়োর। পুলিশ অফিসার এবার মাথার টুপিটাকে নামিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলল ক্ষমা করবেন ম্যাডাম। আমরা অবিশ্বাস করিনি। তন্ময়ের মা যেন পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তার হৃদয়ের মধ্যে আটকে রেখে ছিল। জানেন মেয়েটি বেশ কিছুদিন আগেই হঠাৎই বাড়িতে ঢুকে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠেছিল বলেছিল আমার রূপ আমার লাবণ্য তার কোনটি তো আমি তৈরি করেনি কাকিমা। যা দিয়েছিল ঈশ্বর আমি তাই নিয়েই বেঁচে আছি। আমিতো অতিরিক্ত কিছু করিনি। সেদিন আমি ওকে ভরসা দিয়েছিলাম। আমি প্রতিদিন ওকে বাসস্ট্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে আসতাম। আমার ছেলে অসুস্থ ওকে দেখতে এসেছিল ঐ মেয়ে। আর আমি ওকে একা বাড়ি রেখে যাব সেটাও সায় দেয়নি সেদিন। আমার স্বামী অনেক আগেই আমাকে একা রেখে চলে গেছেন। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার দৌলতেই স্বামীর চাকরি আমি পেয়েছি। বলুন আজকের দিনে কলকাতার বুকে একটি মেয়ের স্বাধীনতা কি থাকবে না। পুলিশ অফিসার বললেন, ম্যাডাম যখন মেয়েটি আপনাকে অভিযোগ জানিয়েছিল যে কেউ তাকে ফলোআপ করছে বা কেউ তাকে প্রতিনিয়ত এইভাবে ইভটিচিং করে যাচ্ছে আপনার একটা ইনফরমেশন হয়তো থানাকে দিয়ে রাখা উচিত ছিল। তন্ময়ের মা বললেন, আপনি অমূলক বলেননি। হয়তো আমি তাও করতাম কিন্তু ওর ওই বলার দিন আর আজকের মধ্যে যে সময়টুকু আমি পেয়েছি সে সময়টুকুতে আমার ছেলে বড়ই অসুস্থ । ও একটু সুস্থ হলেই আমি বলেছিলাম ওই মেয়েকে নিয়েই আপনাদের কাছে যাব বিস্তারিত ঘটনা বলে কিভাবে সেই ছেলেগুলোকে বা ওই চক্রকে ধরা যায় তার জন্য অনুরোধ জানাবো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। পুলিশ অফিসার সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদ সম্পূর্ণ করেই চলে গেল। তন্ময়ের মা আর রুমিতা বৌদি একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো হঠাৎ তন্ময়ের মায়ের কথাতেই নিস্তব্ধতা ভাঙলো। খুব অল্প বয়সে জানো তোমার দাদাকে আমি হারিয়েছি সেই ছোট্টবেলা থেকে অনেক কঠিন লড়াই করে তন্ময়কে মানুষ করতে হয়েছে আমাকে। যে সামাজিক নিকৃষ্টতায় মেয়েটিকে সারা জীবনের মতন চলে যেতে হল । তেমন বহু অবস্থার সম্মুখীন আমি নিজেও হয়েছি সে সময়ে প্রতিদিন। কিন্তু আমি নিজে জানি আমার বা তোমার কি যে কোন মেয়েরই সকলের সমান সাহসিকতা থাকে না। আমার ছিল বলেই হয়তো আমি বেঁচে গিয়েছি। রুমিতা বৌদি চলে যাবার পর তন্ময়ের মা বেশ খানিকক্ষণ বিমর্ষ হয়ে বসে রইল। এই মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত তাও সে বুঝে উঠতে পারল না। অহরহ তার মনে অকালে হারিয়ে যাওয়া তরুণীমার চেহারাটাই বারবার ভেসে উঠছিল। তার পরিচিত দু একজন পুলিশ অফিসার তাদের সাথে দেখা করে আলোচনা করবে এমন স্থিরও করল সে। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে একটা দোটানোর টান দেখা দিল। এটা খুব সত্যি কথা মেয়েটির পরিবারের তেমন কেউ ছিল না কেউ এসে তার ডেড বডি সনাক্ত করবে এমনও কাউকে পাওয়া যায়নি। সনাক্ত করবার জন্য ডাক পড়েছিল তন্ময়ের মায়েরই। নিজের সন্তানের মতই সবশেষে তার সৎকার্যের সমস্ত কাজ করেছিল তন্ময়ের মা-ই। মার্ডার হবার পরে বেশ ক'দিন খবরের কাগজে কম বেশি আলোচনার শেষে একসময় কাগজের থেকেই হারিয়ে গেল সেই খুনের ঘটনার সর্বশেষ পরিণতি। ইতিমধ্যে নিউটন থানার বড়বাবুও পরিবর্তন হয়ে গেছে। একজন নতুন লেডি ইন্সপেক্টর এসেছেন। নাম তার তিলোত্তমা চৌধুরী। খবরটা শোনার পরেই তন্ময়ের মায়ের আবার নতুনভাবে এই বিষয়টি নাড়া দেয় তার মনে। নিজের মনে বলে ওঠে এটা ঠিক তরুণীমাকে আর কোনদিন আমরা ফিরে পাবোনা। কিন্তু কেবলমাত্র একটি মেয়ে বলেই নিঃশব্দে এভাবে মানসিক অত্যাচার এবং শেষ পরিণতিতে পৃথিবীর থেকে চির বিদায় সেটাই একটা সাধারণ রীতি হয়ে দাঁড়াবে! তার কোন বিচার, তার কোন হদিস, তার কোন কিনারা কোনটাই কি হবে না। পরেরদিন তিনি সকালে নেহাতই পরিচয় এর তাগিদে নিউটনের থানায় গিয়ে উপস্থিত হল। হয়তো কোন প্রয়োজন ছিল না । তবুও বিষয়টির গুরুত্ব অনুযায়ী তার প্রাক্তন পরিচয় প্রমাণসহ দিয়ে দেখা করতে চাইলেন বর্তমান লেডি ইন্সপেক্টর এর সঙ্গে। কোন একদিন তার পারমিশনও পাওয়া গেল। ইন্সপেক্টর এর ঘরের সামনে গিয়ে তন্ময়ের মা একটু সম্মতিসারে এই বলল "আসতে পারি ম্যাডাম"? সাবলীল অথচ গুরুগম্ভীর চাহুনির সাথে মিষ্টি হাসিমাখা মুখে বলল "হ্যাঁ নিশ্চয়ই আসুন"। একেবারেই ভূমিকা বাদ দিয়ে তন্ময়ের মা তার পূর্ব পরিচয়ের প্রমাণ দিয়ে একটু হালকা প্রতিবাদের সুরে বলল আপনার আগের অফিসার এই বিষয়টির দেখাশুনা করছিলেন। জানিনা, তার কতটুকু কি এগিয়েছে। এটা ঠিক মেয়েটির তেমন কেউ নেই। তবুও আমার ঘরের শেষ অতিথি যেমন সে ছিল তেমনি নেহাতই একটি মেয়ে বলেই তাকে নিঃশব্দে এভাবে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিতে হবে অথচ তার প্রতিবাদ তার বিচার এবং অন্যায়ের সামান্য শাস্তি কেউ পাবে না ; অন্ততপক্ষে আমি একজন প্রাক্তন আইডি ডিপার্টমেন্টের একজন অফিসার হয়ে এ বিষয়টিকে সেভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমি আশা করব আপনি নতুনভাবে পুনরায় কেসটিকে তদন্ত করে এর সঠিক কিনারা আপনি করবেন। এই অব্দি কথা বলার শেষ করার পর নিউটন থানার নতুন লেডি ইন্সপেক্টর মাননীয়া তিলোত্তমা চৌধুরী তার বসার চেয়ারটি ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে একরকম অভিবাদনের সুরে তন্ময়ের মাকে বললেন, ম্যাডাম আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি এই কেসটি নতুন ভাবে তদন্ত করে এর কিছু কিনারা আপনাকে দেওয়ার চেষ্টা আমরা করব। তবে আপনি বা আপনার পরিবার সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন আমাদের এই কেসের ইনভেস্টিকেশন করবার জন্য। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি? যে মেয়েটি মার্ডার হয়েছে তার সাথে আপনার কোন আত্মীয়তা সূত্র আছে? তন্ময়ের মা বললেন কেন? আত্মীয়তার সূত্র যদি না থাকে তবে কি তা কোন তদন্তের সম্ভব নয়? লেডি ইন্সপেক্টর তিলোত্তমা চৌধুরী পুনরায় বললেন না তেমন কোন কিছু নয় তবে তদন্তের স্বার্থে আমার এই জিজ্ঞাসা। তন্ময়ের মা বললেন আমার ছেলের সাথে মেয়েটির একটি সম্পর্ক ছিল এবং আমাদের বাড়িতে তার যাতায়াত ছিল অহরহ। এমনকি যেদিন মার্ডার হয় সেদিনও সে বেরিয়েছিল আমাদের বাড়ি থেকেই। লেডি ইন্সপেক্টর বললেন, আচ্ছা বুঝেছি, আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখব। তন্ময়ের মা সেই লেডি ইন্সপেক্টর এর কথায় আশ্বস্ত হয়ে উঠে আসবার জন্য উদ্যত হলেই; লেডি ইন্সপেক্টর টি পুনরায় তাকে ডেকে বললেন আর হ্যাঁ আমি অবশ্যই একবার আপনার বাড়ি যাব আপনার বাড়ির বাকি সকলের সাথে যদি প্রয়োজন হয় আমি কথা বলব। তন্ময়ের মা বেশ সাদরেই তা গ্রহণ করলেন এবং জানালেন তারা পূর্ণ সহযোগিতা করবেন এই মৃত্যুর তদন্তের জন্য। থানা থেকে তন্ময়ের মা বেরোবার সময় আবার ইন্সপেক্টর এর ডাকে পেছন ঘুরলেন। ইন্সপেক্টর তিলোত্তমা চৌধুরী বললেন ম্যাডাম আমি একবার আপনাদের বাড়িতে যাব আপনার ছেলের সাথেও কিছু কথা জিজ্ঞাসাবাদ করার আছে। আপনার ছেলে কখন বাড়িতে থাকেন? তন্ময়ের মা বললেন আজ প্রায় তিন মাসের ওপরে ও অসুস্থ। বাড়িতেই আছে অসুস্থতার কারণে এই দুঃসংবাদ তাকে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি আরো একটি কারণে যেহেতু সেই মেয়েটির সাথে আমার ছেলের একটা ভালোবাসা ছিল। ওর শারীরিক যে অবস্থা তাতে এ সংবাদ পেলেই অন্য কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে কিনা এই ভেবেই আমি তাকে মা হিসেবে জানাতে পারিনি। ইন্সপেক্টর বললেন, বেশ আমি যাব অবশ্যই সেভাবেই তার সাথে কথা বলবো। আর যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি আপনার ছেলের কি হয়েছে? তন্ময়ের মা বললেন ছোটবেলা থেকেই ওর ইমিউনিটি পাওয়ার খুব কম। কারণটা সেসময় বুঝতে পারিনি। ক্রমান্বয়ে বড় হতে হতে ওর হাঁপিয়ে যাওয়া রিদিমে প্রবলেম ইত্যাদি কিছু বিষয় প্রকাশ পায়। সর্বশেষ ডাক্তারের মত অনুসারে ওর হার্টে দুটো ফুটো আছে ওষুধ চলছে দু-তিন মাস না যাওয়া পর্যন্ত ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না অপারেশন করবার। ইন্সপেক্টর তিলোত্তমা কিছুটা দ্বিধা কিছুটা দ্বন্দ্বে বেশ খানিকক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর বললেন ম্যাডাম আপনি আজ বাড়িতে যান আমি আপনাদের বাড়িতে যাব আপনার সাথে এবং আপনার ছেলের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তবে অবশ্যই কথা দিলাম আমি ইউনিফর্ম পড়ে যাব না যাতে আপনার ছেলের কোন সন্দেহ বা কোন জিজ্ঞাসা জাগে। দুদিনের মাথায় তিলোত্তমা এক রবিবার দেখে উপস্থিত হলেন তন্ময়ের বাড়িতে। বাড়ির ঠিকানা কেস ডায়েরির খাতা থেকে সংগ্রহ করবার সময় তিলোত্তমার কেন জানি সন্দেহ জেগেছিল। এই অ্যাড্রেসটা তার খুব চেনা লাগছে। যাইহোক যথাসময়ে বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়ে সন্দেহটা অনেক নিশ্চিত হল এটা তার স্কুল লাইফের কোন এক বন্ধুর বাড়ি। তন্ময় নামের সঙ্গে এ বাড়ি জড়িত। তবুও তিলোত্তমা চাক্ষুষ পরিচয়ে নিশ্চিত হতেই দোতলার ঘরের সামনে এসে কলিংবেল বাজাতে বাজাতেই তার স্কুল লাইফের কিছু ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল তার মনে। কলিং বেল বাজবার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের দরজা খুলল তন্ময়ের মা । তাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানালো ঘরে আসবার জন্য। যে তিলোত্তমা স্থানীয় থানার ইন্সপেক্টর সে তন্ময়ের বাড়িতে চেয়ারে বসেই কোন ভূমিকা না করেই তন্ময়ের মাকে সরাসরি প্রশ্ন করল, কাকিমা তুমি আমায় চিনতে পারছ? তন্ময়ের মা এমন অবস্থার জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলেন না। ইন্সপেক্টর হিসেবে যাকে দেখে এসেছে থানায়। আজ সে ঘরে এসে ম্যাডামের বদলে কাকিমা আবার ফিরতি জবাবে চিনতে পারছি কিনা ? বেশ দন্দে পড়ে গেল সে। ইন্সপেক্টর তিলোত্তমা এবার বলেই বসলো কাকিমা আমি সেই তোমার ছোট্ট তিলু। তুমি এ নামের সাথে খুব পরিচিত এ নামেই তুমি আমাকে ডাকতে। দীর্ঘ কুড়ি বছর আগেকার ঘটনা তন্ময়ের মায়ের হৃদয়কে করলো আন্দোলিত। সে সময়ে তন্ময়ের বাবা বেঁচে ছিলেন এটা খুব সত্যি কথা তন্ময়ের অনেক বন্ধু বান্ধবী সে সময়ে আসত এ বাড়িতে। হঠাৎই তিলোত্তমা বলে উঠল কাকিমা তোমার মনে পড়ে তুমি চাকরি থেকে ফিরে আসার পর যে গল্প মাঝেমধ্যে শোনাতে তন্ময় কে আর তা আমরা শুনতাম ওর মুখে স্কুলে। আর সেই গল্পের প্রত্যক্ষ শোনার লোভে রবিবার করে ছুটে আসতুম তোমার বাড়ি। কাকু আমায় খুব ভালবাসতেন আর আমি কাকু কে বলতাম আমি কাকিমার মত গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টে চাকরি করব। সেই সৌভাগ্য কাকিমা আমার হয়নি। তবে গোয়েন্দাগিরির মত কাজ এ চাকরিতে আছে। আমার ছোটবেলার অনুপ্রেরণা ছিলে তুমি। দীর্ঘ বছর এই বাড়িতে আসা বন্ধ হয়ে গেছে এটা সত্য । চাকুরী পাবার পর পোস্টিং হয়েছিল এ জেলার বাইরে। তবে যেহেতু আমি মেয়ে চিঠি চাপাটি ইত্যাদি করে এতদিনে আমার বাড়ির কাছাকাছি পোস্টিং জোটাতে সক্ষম হয়েছি। চলো কাকিমা। বন্ধুকে চোখে দেখিনি অনেকদিন। আর তুমি বলছো ও অসুস্থ । সেই তন্ময় আর আজকের তন্ময় হয়তো অনেকটাই আলাদা দেখবো। জানিনা ও আমাকে দেখে চিনতে পারবে কিনা? ইন্সপেক্টর তিলোত্তমা তন্ময়ের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। বিছানায় শায়িত তন্ময় কিছুটা উদাস নয়নে তাকিয়ে আছে ঘরের উর্দ্ধ আকাশের দিকে। দরজার কাছ থেকেই তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে একটুও চিনতে অসুবিধে হলো না তিলোত্তমার। নিঃশব্দে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তিলোত্তমা। স্কুলে মনিটর হিসেবে খুব খ্যাতো ছিল তন্ময়। সুনাম ছিল ভালো নাটক করবার জন্য যে নাটকের অন্যতম কুশলী তিলোত্তমা নিজেও । সেই জায়গা থেকেই একটা অজানা ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল তন্ময়কে ঘিরে তিলোত্তমার মনের গহনে। কিন্তু ব্যক্তিত্বের বহরে তন্ময় এতটাই রেস্ট্রিকটেড ছিল তাই হয়তো কোন মেয়েই তার প্রকাশ্যে এসে "আমি ভালোবাসি"একথা বলার সৎ সাহস সে সময়ে কোন মেয়েরই হয়নি। তিলোত্তমা তার বাইরে নয়। নয়নে স্মরণে মননে সে সময়ে তিলোত্তমার মনের গহনে তন্ময়ের যে রাজ চলতো, যাকে নিজের মনে আপন করে নিলেও মুখ ফুটে কোনদিন বলে উঠতে পারেনি যে সে তাকে ভালবাসে। সে ভালোবাসায় নেই ক্ষেদ, নেই এতোটুকু জল। আজ তারই বাড়িতে তারই সামনে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে তারই কোন বিষয়ের জিজ্ঞাসাবাদ করতে উপস্থিত সেই তিলোত্তমা তবে আজ বন্ধু হিসেবে নয় অবশ্যই তদন্তকারী হিসেবে। সেকেন্ড-এর হিসেবে বেশ অনেকটা সময়ই অতিবাহিত হয়ে গেছে ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। কোন ভনিতা না করেই সদর্পে তিলত্তমা ডেকে উঠল সেই ছোট্টবেলায় ডাকা পরিচিত নামেই, কিরে তনয় তুই কেমন আছিস? আমি তিলু রে। শারীরিক অসুখের ভারাক্রান্তে তন্ময় সরাসরি তার ডাকে সাড়া দেওয়া কিংবা চেনার সম্ভব না হলেও স্মৃতির পাতায় হঠাৎই কেন জানি এক অজানা মোচর দিল। উদাস মনে তাকিয়ে শুধু বলল তুমি তিলু। এতদিন যোগাযোগ ছিন্ন তুমি আমায় চিনলে কি করে? উত্তরে ইন্সপেক্টর তিলোত্তমা বলল সে না হয় আজ তোলাই থাক । আজ শুধু শুনব তোমার আজকের এই পরিণতির কারণ। আর আমি আজ যেমন তোমার কাছে এসেছি নেহাতই হঠাৎ এক অজানা যোগাযোগের তোমার খবরে। তোমার অসুখের সমস্ত খবর আমি পেয়েছি কাকিমার কাছে আমার বিশ্বাস তুমি ভালো হয়ে উঠবে। আমি একটা চাকরি পেয়েছি । আর সেই দৌলতে আমার কিছু ভালো ডাক্তারের যোগাযোগ আছে। আমি তার ব্যবস্থাও করব । আমার বিশ্বাস আমি অবশ্যই তোমাকে ভালো করতে পারব। ডাক্তারের সাথে যোগাযোগের কথাটা জোরে বললেও তিলোত্তমা বাকি কথাটা নিজের মনেই বলেছিল। বেশ খানিকক্ষণ ওদের সাথে কথোপকথন চলল কথার মারপ্যাঁচে পুরদস্তুর ইন্সপেক্টর জেনে নিল তরুণীমার সঙ্গে তন্ময়ের যোগাযোগ কতখানি ছিল ? তরুণীমা সেদিন এসেছিল তন্ময় কে দেখতে। যাতে তার অসুবিধে না হয়, প্রাত্যহিক রুটিন ব্রেক করে সেদিন সে বাসে উঠতে গিয়েছিল একাই। কিন্তু যারা বেড়ালের মতন ওত পেতেছিল দীর্ঘদিন; তারা সেদিনের গোল্ডেন চান্স হাতছাড়া করেনি। তারা পৃথিবী থেকে চির বিদায় দিয়েছিল তরুণীমাকে। ওদের মধ্যেই কেউবা তরুণীমাকে পছন্দ করত, সে অভিযোগ তন্ময়কেও বলেছিল তরুণীমা। কিন্তু তরুণীমা মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসত তন্ময়কে। ইন্সপেক্টর ত্রিলোত্তমা সেও ভাবে সেই স্কুল লাইফ থেকে মনে মনে অসম্ভব ভালোবেসেছিল তন্ময় কে। আজ নিজের মনেই তিলোত্তমা প্রশ্ন করে সেদিনের স্কুল লাইফ আজকের যৌবনের বয়সেও তন্ময়কে সবাই ভালোবাসে, কেন? নিজের মনেই উত্তর সে পায় হয়তো তন্ময়ের আন্তরিকতা, আর নিমিলিত চাহুনি অপরপক্ষ এড়াতে পারত না। তন্ময়ের ঘর থেকে বেরিয়ে আবার কাকিমার সাথে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলল। সাথে তন্ময়ের দীর্ঘ দিন ডাক্তারি পরীক্ষার সমস্ত কাগজ যত্ন করে উল্টে পাল্টেও দেখতে ভুলনা। দেখতে দেখতেই ডক্টর সুব্রত গাঙ্গুলী হার্ট সার্জেন্ট তার সাথে ওভার ফোন কথা বলে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিল। আগামী মঙ্গলবার তন্ময়কে নিয়ে যাবে তিলোত্তমাই। কাকিমাকে সে কথা দিয়েই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো । কাকিমা আমি তিন মাস সময় চেয়ে নিলাম এই তিন মাসের মধ্যে তরুণীমার মার্ডারের আসামি আমি ধরবো এবং তার যথোপযুক্ত শাস্তি যাতে হয় তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বা লাইবিলিটি আমি নিজে হাতে তুলে নিলাম। আর এই ডাক্তার বাবুর সাথে সিটিং করার পর উনি যেভাবে যা যা গাইডেন্স দেবেন সেটাকে ফলোআপ করবেন। আর আমি মাঝেমধ্যে আসবো। আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তন্ময়কে ভালো করে তুলতেই হবে। যথা সময়ে ডাক্তার দেখানো হলো তন্ময়কে প্রথম দেখার পরেই ডাক্তারবাবু বেশ জোরালো দাবি খাটিয়েই তন্ময়ের মাকে আশ্বাস দিলেন মাসিমা ও আমার ভাইয়ের মতো। আর যার রেফারেন্সে আপনারা আমার কাছে এসেছেন ও আমার বোন। আমি ওকেও কথা দিয়েছি আপনাকেও কথা দিচ্ছি ওকে মাস চারেক যেমন যেমন বলব ওষুধ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। তারপর আমি নিজেই অপারেশন করব আর অপারেশনের চার মাস পর ও আমার আপনার মতন সাধারণ মানুষের মতোই জীবন অতিবাহিত করতে পারবে। তন্ময়ের মা নিজের অজান্তেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আজ আমি বড় অসহায়। কিন্তু এই অসহায়তেও আমার পাশে এভাবে আপনাদেরকে পাব আমি কোনদিন আশা করিনি। সত্যি যদি আমার ছেলে সেই সাধারণ জীবনটা ফিরে পায় অন্তত ওকে সংসারী করে আমি একটু নিশ্চিন্তে তিরোধামে যেতে পারি। যে খবরটা খবরের কাগজের পাতা থেকে প্রায় সরে গিয়েছিল প্রায় চার মাসের মাথায় খবরের কাগজের শিরোনাম চোখে দেখলো তন্ময়ের মা। নিউ টাউনের তরুণী খুনের সমাধান। আসামি হাতেনাতে ধরা পড়ল। অনেকদিন পর খবরের এই শিরোনাম দেখে তন্ময়ের মা উদ্যত হয়ে ছুটে গেলেন থানার দিকে নিজের মনে বারবার কুর্নিশ জানাতে লাগলো ওই লেডি কনস্টেবল ত্রিলোত্তমা চৌধুরী, তিলু কে। খবরের কাগজের থেকেই জানতে পেরেছিল আগামী ৩রা জুলাই তরুণীমা হত্যার দীর্ঘ মামলার রায় হবে। যেহেতু তরুণীমার তেমন কেউ পরিবারের ছিল না। আর এ ঘটনার প্রথম থেকেই তদবির করেছিল অবসর প্রাপ্ত গোয়েন্দা অধিকত্তি রেনু বালা চৌধুরী। তাই তাকেই কেসের পার্টি করা হয়েছিল তরুণীমার পক্ষ থেকে। দীর্ঘ শুনানীর পর বিচারক আসামির 15 বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিলেন। সেদিন কোর্ট ভর্তি লোকের সমাগম মিডিয়ার বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল তন্ময়ের মা এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর তিলোত্তমা চৌধুরীকে ঘিরে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছিল তন্ময়। তাই কোর্টের সেই রায় নিজের কানে শুনবে বলেই গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল তিলোত্তমা চৌধুরী। কোর্ট প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিল তন্ময়ও। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। বাইরে বহু সমাগমের মাঝেই জয়ের বার্তা বহন করে বাইরে বেরিয়ে এলো তিলোত্তমা চৌধুরী। বাইরে তার আগেই অপেক্ষা করছিল তন্ময়ের মা সহ তন্ময়। তিলোত্তমা চৌধুরী বাইরে বেরিয়ে আসার পর তন্ময়ের মায়ের, বহু বছর পর আজ নিজের অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে এলো তুই আজ আমার বাড়িতেই খাবি। তিলোত্তমা চৌধুরী আজ বহু বছর পর এই ডাকের শব্দ কানে আশায় সেও পারল না তার আনন্দের গভীরতাকে ধরে রাখতে । নিজের অলক্ষ্যেই কেঁদে ফেলে বললো জীবনে অনেক বড় লড়াই করেছি। এক সময়ে বাবা-মা সবাইকে হারিয়েছি বোনকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়েও দিয়েছি। কিন্তু নিজের মনে কোনদিন শান্তি ছিল না। হঠাৎ নিউটনের থানায় এসে যখন এই কেসের সম্মুখীন হলাম আমার ছোটবেলার হারানো স্মৃতিকে আবার ফিরে পেয়ে, আবার যেন নতুন করে বাঁচবার আশা তৈরি হয়েছিল। পাশ থেকে তন্ময়ের মা বলে উঠলো আজ বাড়িতে তোকে ডেকেছি এই কারণেই আমার তন্ময় আর তোর, চার হাত এক সঙ্গে করে দুই অসহায়কে একসাথে করব। আমার বিশ্বাস আমি না থাকলেও তন্ময়ের বিরাট গার্ড হিসেবে আমি যাকে নির্বাচন করেছি সেটা আমার ভুল হয়নি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বন্ধন
→ নিঃস্বার্থ স্নেহময় বন্ধনে আমরা[PT]
→ বিয়ে বন্ধন
→ বন্ধুত্বের বন্ধন পর্ব ৪
→ বন্ধুত্বের বন্ধন পর্ব ১
→ বন্ধুত্বের বন্ধন পর্ব ২
→ বন্ধুত্বের বন্ধন পর্ব ৩
→ বন্ধন
→ বন্ধন
→ বন্ধন
→ ভালবাসার বন্ধন
→ বন্ধুত্বের বন্ধন
→ স্বপ্ন থেকে বন্ধন
→ পবিত্র বন্ধন

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now