বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
জীবনে চলার পথে যুদ্ধ
লেখকঃ নাফিজ আহমেদ
আমরা যেখানে বসবাস করি এটা পুরোটাই সমাজ আর এই সমাজ গঠিত হয় নানান মানুষের সমন্বয়ে। আজ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রকাশ করব এই লেখনীতে। লেখাপড়ার জন্য অনেক দিন ধরেই বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছি। আজ প্রায় এক মাস পরে রওনা হয়েছি বাড়ির দিকে। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বাসা অনেকটাই দূরে,এইজন্য যাতায়াতের সুবিধার্থে বাস ব্যবহার করা হয়। তো আজ দ্বিপ্রহরের সময় আমি উপবিষ্ট আছি বাসের মধ্যেখানে। কিছুক্ষণ পর অবলোকন করলাম দুইজন বাচ্চা বাসের ভিতর আসল। ছেলে এবং মেয়ে। বয়সটা খুব বেশি নয়। এইতো ছেলেটার বয়স হয়তো দশ আর মেয়েটার বয়স পাঁচ মত হবে। দূর থেকে দেখে খুব একটা বোধগম্য হলো না। একটু বাদেই দেখি তারা আমার নিকটবর্তী হলো। আমি তাদের কর্মকান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে এক নজরে তাদের দিকে চেয়ে আছি। তারা দুইজন সম্পর্কে আপন ভাই-বোন। বড় ভাই ছোট বোনের মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার জন্য মানুষে নিকট মাক্স বিক্রয় করছে। আমি যেন একটু ভাবনার অতল গহ্বরের মিলিয়ে গেলাম। মা পাখিটাও হয়তো তার ছানাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য মুক্ত বাঁতাসে স্বাধীন ডানা মেলে একটু আহার অন্বেষণ করতে থাকে সমাজের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমি আরও একটু এইজন্য অবাক হলাম যে, ছেলেটা ইচ্ছা করলে মানুষের দ্বারে ভিক্ষা করতে পারতো কিন্তু সে ঐটা না করে বৈধ ভাবে মাক্স বিক্রয় করে টাকা উপার্জন করছে। সে আমার নিকট আসল কিন্তু আমার মাক্স প্রয়োজন না থাকাই আমি নিইনি। তবে আমার বিবেকে কেন যেন একটা প্রশ্নপর উত্থান হলো। আমি আর একটুও না ভেবে পকেট থেকে কিছু টাকা বাহির করলাম তাকে দেওয়ার জন্য কিন্তু ততক্ষণে সে বাস থেকে নেমে গেছে। তবুও হাতে টাকা টা রেখে দিলাম। মনে করলাম জানালা দিয়ে দিতে পারলে সেটাই করব। আলহামদুলিল্লাহ, আর সেটাই হলো আমি জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পারলাম সে বাসের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে তার ছোট্ট বোনটাও ছিল। আমি তাকে ইশারা করতেই সে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করলো আর আমি সাথে সাথে জানালা দিয়ে টাকাটা তার দিকে নিক্ষেপ করে দিলাম।আর সে টাকা টা নিয়ে চলে গেল তার আপন গন্তব্যে। মনের সাথে কিছু কথা ব্যক্ত করলাম, হয়তো টাকাটা তার প্রয়োজননুযায়ী কিছুই হবে না। তবুও কেন জানি মনের ভিতর এক অজানা আনন্দ উঁকি দিয়ে উঠছে বারংবার। হয়তো একটু হলেও তাদের পাশে দাঁড়াইতে পারছি। এটাই অনেক কিছু। একটু পরে দেখি আরেক জন বড় ভাই ঠান্ডা পানি নিয়ে আসল বাসের ভিতর। সাধারণত অনেকেই তো রাস্তায় এগুলো বিক্রয় করে কিন্তু সে বলছে এই টাকা দিয়ে তার মাকে চিকিৎসা করবে। বিষয়টা পরিলক্ষিত করে খুবই খারাপ লাগল। একটা মা যে তার সন্তানের কাছে কতটা ভালোবাসার হয় তা একমাত্র যাদের মা নেই তারাই বোঝে কিংবা যাদের মা দূরে থাকে তারাই বোঝে। লোকটা চাইলে তার মায়ের জন্য ভিক্ষা করতে পারতো কিন্তু সে সেটা না করে বরং স্বল্পকিছু পানি বিক্রয় করছে। এটা আল্লাহর রাসুল সঃ এরই সুন্নাত। আল্লাহ তায়ালার কাছে সবথেকে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ হলো ভিক্ষা ও তালাক দেওয়া। আমাদের সমাজে অনেক লোক এখনও বিদ্যমান আছে যারা কিনা সুস্থ সবল থাকা সত্বেও তারা নিজেদের কে ভিক্ষাবৃত্তির ভিতর নিমজ্জিত করে রাখছে। এটা আসলেই অনেক গর্হিত একটা কাজ। লোকটা কয়েকটি পানির বোতল বিক্রয় করে চলে গেল অন্য বাসে। আমাদের যাত্রাও এতক্ষণে অনেক দূরে এসেছে। বাহিরের পরিবেশটা অবলোকন করে অতিবাহিত করছি অবশিষ্ট প্রহরগুলো। বাহিরে তাকাতেই হঠাৎ দেখি একটা ছেলে লেবুর শরবত বিক্রয় করছে। বয়স খুব একটা বেশি নয়, এইতো তেরো বছর মতো হবে হয়তো। এই কঠিন গরমের ভিতর সূর্যের অসহনীয় তাপকে নিজের সাথে আলিঙ্গন করে তেজস্বীয় রোদ্দুরে একাকী দাঁড়িয়ে বিক্রয় করছে শরবত। হয়তো তার জীবনেও লেখা আছে এক বেদনাদায়ক বিশাল গল্পের ভান্ডার নতুবা এখন তার ঘরে থাকার কথা ছিল। আজকের ভ্রমণে অনেকগুলো ঘটনা এই চর্ম চোখে দেখেছি। সমাজের প্রতিটা মানুষেরই জীবনে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে এক বিরাট গল্পের ভান্ডার। যেটা লেখায় রূপায়িত করলে হয়তো সকলেই একেকজন সাহিত্যিক হয়ে উঠত। সকলের ভিতরই নিহিত আছে জীবনে চলার পথের যুদ্ধ। (দোয়া করি সকল যোদ্ধারাই যেন আপন জায়গা থেকে বিজয়ী হয়।)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now