বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

দ্বিতীয় পুরুষ

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Kakon (০ পয়েন্ট)

X লেখক: নীলাভ্র বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর ঘরে গুটিশুটি মেরে বসে আছে চিত্রা। বাসর ঘর সাজানো হয়নি। টিনের ঘরে ভাঙাচোরা একটা চৌকির ওপর সে বসে আছে। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দে সে চমকে উঠলো। কিন্তু যে মানুষটা ঘরে ঢুকল সে তার স্বামী নয়! আতংকিত কণ্ঠে চিত্রা জিজ্ঞেস করল, কে আপনি! - আমি তোমার নাগর। এগিয়ে এসে বিছানায় বসল লোকটা। মধ্যবয়সী একজন লোক। চিত্রার ঘোমটা সরিয়ে সরাসরি লোকটা ব্লাউজের কাঁধে হাত দিলো। চিৎকার করে উঠল চিত্রা৷ লোকটা তার মুখ চেপে ধরে বলল, চুপ মাগী৷ চেঁচাইস না। তোর সওয়ামী তোরে আমার কাছে বেইচা দিছে। চিত্রার গলা শুকিয়ে গেল। তার স্বামী জয়নাল একটা লোকের কাছে তাকে বিক্রি করে দিলো! এটা কিছুতেই হতে পারে না। জয়নাল চিত্রাকে বিয়ে করার জন্য একমাস ধরে চিত্রার বাবা সোহরাব উদ্দীনের পিছনে ঘুরেছে। শুটকি ব্যবসায়ী জয়নালের স্বাস্থ্য ভালো, বাপ মা কেউ নাই। তাতে কি? সদরে বড় শুটকির দোকান আছে তার। সোহরাব উদ্দীন মেয়েকে জয়নালের সঙ্গে বিয়ে দিলেন। বিয়ের দিনই জয়নাল বউ নিয়ে বাড়িতে এলো। ভাঙাচোরা বেড়ায় ঘেরা টিনের একটা ঘর। ঘরের এক কোনায় শুধু একটা চৌকি বসানো৷ আর কোনো আসবাব নাই। চিত্রার খারাপ লাগেনি। সে যখন এসেছে, এই ঘরের শ্রী ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু এ কী হল তার কপালে! জয়নাল বিক্রি করে দিলো তাকে? লোকটার হাত সরিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে উঠল চিত্রা। কিন্তু কেউ এলোনা। কে আসবে? এই বাড়িতে একটাই ঘর, আর কেউ থাকেনা এখানে। আশেপাশের বাড়ি থেকেও কেউ ছুটে এলোনা তাকে বাঁচাতে! বুদ্ধি করে চিত্রা বলল, আপনি কে সত্যি কইরা কন? - কইলাম তো তোমার সওয়ামী তোমারে বেইচা দিছে৷ বিশ হাজার টাকায়। আইজ রাইতে তোমার লগে আমার বাসর হইবো। কাইলকা আমরা চইলা যাবো এই গ্রাম থাইকা। তারপর থাইকা তুমি হইবা আমার সোহাগের কামলা খাটা রানী৷ - জয়নাল কই? - জয়নাল মদ খাইয়া পইড়া রইছে। সকাল হইতেই সে ভাগবো। ওরে আর পাইবা না। - কই যাইবো জয়নাল? - যেখান থাইকা আইছে, সেইখানেই যাইবো। তুমি কি ভাবছ গঞ্জে ওর দোকান আছে? সব তো মিছামিছা কতা। ওর কুনো দোকান নাই। মাগীর ব্যবসা করে হালায়। আইজ এই গেরামে, কাইল ওই গেরামে। লোকটার কথা চিত্রার অবিশ্বাস করার উপায় নেই। আসন্ন বিপদের কথা ভেবেই ভয়ে শিউরে উঠল চিত্রা। এই লোকটা আজকে তার সর্বনাশ করবে৷ তারপর বাকি জীবন নরকের আগুনে জ্বলার মতো তীব্র কষ্টে কাটবে চিত্রার। এই লোকের সঙ্গে শরীরের জোরে সে কিছু করতে পারবে না। তাকে জিততে হবে বুদ্ধির জোরে। চিত্রা দ্রুত চিন্তা করতে লাগল কি করা যায়। লোকটা চিত্রার গায়ে হাত দিচ্ছে। হাতে ও পিঠে হাত বুলাচ্ছে। চিত্রা বুদ্ধি করে বলল, আপনারে একটা কথা জিগাই। হ, জিগাও। কথা না কইলে শইল্যে মজা আসে না। লোকটা চিত্রাকে টেনে হিঁচড়ে বিছানায় শোয়াতে চেষ্টা করল। চিত্রা বাধা দিতে দিতে বলল, আপনি কি করেন? আমারে বিশ হাজার ট্যাকা দিয়ে কিনছেন। তাইলে তো আপনার ম্যালা ট্যাকা। লোকটা উচ্চশব্দে হেসে বলল, হ। আমার মেলা ট্যাকা। তোমারে যখন নিয়া যাবো দেখবা কত রানীর মত রাখবো তোমারে। আজ থাইক্যা দুই মাস আগে তোমারে এক ঝলক দেইখা আমার শইলে জোয়ার আইছে। জয়নালের কাছ থাইকা এর আগেও আমি অনেক মাগি কিনছি। হ্যারে আমি কইছিলাম যে এইটারে আমার লাগবো। ভয়ে শিউরে উঠল চিত্রা। কিন্তু এখন তাকে বুদ্ধি হারালে চলবে না। নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে তাকে বুদ্ধি দিয়ে কিছু করতে হবে। চিত্রা বলল, ওই মাইয়াগুলা এখন কই? - জায়গামতো আছে। তবে তোমারে ওদের ওইখানে নিমুনা। তুমি আমার লগে থাকবা। আগামী একমাস আমি শুধু তোমার লগে.. দাঁত বের করে হাসল লোকটা। এমন কুৎসিত ও ভয়ংকর কথা জীবনেও শুনেনি চিত্রা। ভয়ে আতঙ্কে সে বারবার সবকিছু ভুলে যাচ্ছে। কিন্তু সাহস হারালে চলবে না, সাহসী হতে হবে তাকে। চিত্রা বলল, আপনি যা চান আমি আপনারে সব দিবো। আদরে সোহাগে ভরাইয়া দিবো। সবার চাইতে বেশি সুখ আইনা দিবো। আপনি আমার একটা কথা রাখবেন? - তাই নাকি। ক দেহি কি কতা? - আপনি আমারে সবার থাইকা আলাদা রাখবেন। আমি যেটা চাইব সেটা আইনা দিবেন। ভালো ভালো খাওয়াইবেন। ভালো জামা কাপড় তেল সাবান দিবেন। আপনি আমারে সুখে রাখলে আমি আপনারে চরম সুখ আইনা দিবো। লোকটা কুৎসিত হাসি হেসে বলল, তোর মত মাল আমি আর একটাও পাই নাই। তুইতো বড় ভালা রে। - হ, রাখবেন আমার কথা? - ক্যান রাখমু না। তুইতো আমার চান্দের বাত্তি। - ঠিক আছে রাজি। তাই আমি যেভাবে কমু সেইভাবে কইরেন। - তা হইব না। আমি আমার মত করমু। - একবার শুইনাই দেখেন। এমন সুখ জীবনে আপনারে কেউ দিতে পারত না। লোকটা বিমোহিত হয়ে গেল চিত্রার কথায়। তার জিভ লকলক করে উঠলো। জ্বলজ্বলে চোখে চিত্রার দিকে চেয়ে আছে। চিত্রা বলল, খাড়ান শাড়ির মধ্যে অনেক সিপ্টিপিন আছে। আমি সিপ্টিপিন গুলা খুইলা লই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে দুইটা সেফটিপিন খুললো সে। লোকটা আর তর সইছে না। চিত্রার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। চিত্রা বলল, এমন করলে তো হইবো না। আমারে খুলতে দেন। তারপর দেইখেন। আপনাকে আমি কি দেখাই? চিত্রা লোকটাকে ঠেলে বিছানায় সরিয়ে দিল। শুয়ে রইলো লোকটা। সেফটিপিন খুলতে খুলতে বিছানার উপর উঠে বসল চিত্রা। একটা সেফটিপিন খুলতে গিয়ে সে অনেক সময় নিল। লোকটা অধৈর্য হয়ে বলল, কই হইলো তোমার। - এইটা খুলতাছে না। সিপ্টিপিন না খুললে তো আমি শাড়ী-ব্লাউস কিছুই খুলতে পারুম না। একটু ধৈর্য ধরেন। আপনারে কেউ আগে ভালোবাসার কথা বলছে? - না, আমারে কে ভালোবাসার কথা কইব। সবাই কয় বুইড়া খাটাশ। - আপনি এখনো জোয়ান। কে কইছে আপনারে বুইড়া? চিত্রা কথা বলতে বলতে খাট থেকে নেমে মেঝেতে দাঁড়িয়ে পিন খুলতে লাগল। সেফটিপিন খুলে সে একটা দুঃসাহসিক কাজ করে বসলো। বুক থেকে সামান্য শাড়ি সরিয়ে আবার খপ করে ধরে বলল, দেখেনতো এইখানেও একটা সিপ্টিপিন। খাড়ান আমি খুলতাছি। খুইলা আপনারে আসল জিনিস দেখাইতাছি। লোকটা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। চিত্রা বলল, এমন করলে হইবো? আপনি কাপড় চোপড় খুলেন। - এহনই? - এহন না হইলে কখন? শার্ট খুইলা ফালান। লোকটা শার্টের বোতাম খুলতে লাগল। সেই সুযোগে দরজা খুলে এক দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো চিত্রা। শাড়ি পরে সে দৌড়াতে পারছিল না। শাড়ির আচল এক হাতে ধরে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য সে খুব জোরে দৌড় দিল। রাতের অন্ধকারের মাঝে খুব দ্রুত হারিয়ে গেল। তারপরও তার দৌড়ানো থামল না। মেইন রাস্তায় না গিয়ে এক জংলী রাস্তায় এসে ঢুকলো। খুব এলোমেলোভাবে দৌড়াতে থাকলো। ওই লোকের নিশ্চয়ই তাকে খুঁজে বের করার সাধ্য হবে না। অনেক দূর দৌড়ে আসার পরে বিশ্রামের জন্য একটা জায়গায় দাঁড়ালো। বড় বড় কয়েকবার শ্বাস নিল। আজ বুদ্ধির জোরে সে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে। ওই সময় জ্ঞান হারিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকলে তার সবকিছু শেষ হয়ে যেত। চিত্রা আবারো ছুটতে শুরু করল। অন্ধকারের মধ্যে কতক্ষণ দৌড়েছে সে জানেনা। একটা বাড়ির গোয়াল ঘরের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সারা রাত কাটিয়ে দিল চিত্রা। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলে সে পথ ধরল। রাস্তায় ভ্যান ও অটোগাড়ি চলছে। একটা অটোওয়ালাকে কুন্দনহাটি গ্রামের নাম বলল। ওখানে তার ফুফুর বাড়ি । এই মুহূর্তে বাবার বাড়িতে যাওয়া একদমই ঠিক হবে না। অটোর ভেতরে বসে শাড়ীর আঁচল দিয়ে মাথা মুখ ভালোভাবে ঢেকে নিল চিত্রা। কুন্দনহাটি বাজারে এসে অটোওয়ালা বললো আফা নামেন। - চিত্রার কাছে কোন টাকা নেই। কিভাবে ভাড়া দেবে সেটা বুঝতে পারলো না। - অটোওয়ালা বলল, নামেন না ক্যান? - আমি খুব বিপদে পড়ছি ভাই। আরেকটু সামনে যাইলেই আমার বাড়ি। আপনে আমারে বাড়িত পৌঁছায় দেন। বাড়িত গিযয়া আমি আপনারে ভাড়া দিমু। - অটো আর যাইতো না। - আপনে আমার ধর্মের ভাই লাগেন। আমারে একটু বাড়িতে পৌছাইয়া দেন। আমি অনেক বিপদে পড়ছি। কোন ট্যাকা নাই আমার কাছে। - ট্যাকা না থাকলে অটোতে উঠছেন কেন? - বিপদ তো মানুষেরই হয়। আপনার মা বোন কখনো বিপদে পড়ে না? অটোচালক আর কোন উত্তর দিল না। চিত্রার দেখানো পথ অনুযায়ী সে অটো চালাতে লাগলো। ফুফুর বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়াল অটোগাড়িটা। অটো থেকে নেমে ওই বাড়ির ভেতরে দৌড় দিলো চিত্রা। এক দৌড়ে তার ফুফুর পায়ের কাছে গিয়ে পড়ল। তারপর শুরু করে দিলো হাউমাউ করে কান্না। চিত্রার ফুফু বয়স্ক মানুষ। গায়ের চামড়া ঝুলে পড়েছে, কুঁজো হয়ে হাঁটেন। ভালো মতো হাঁটতে পারেন না। চিত্রাকে চিনতেই ওনার অনেক সময় লাগলো। চিত্রার কান্না দেখে তিনি অবাক হয়ে বললেন, আমাগো চিত্রা না? তুই কানতাছোস ক্যান? কোথ থাইকা আইলি? চিত্রা বলল, আপনারে সব কইতাছি। আগে আমার বিশ টা ট্যাকা দ্যান। ফুফু ঘরের ভেতরে দৌড়ে গিয়ে তোষকের নিচে থেকে বিশ টাকা বের করে দিলেন। চিত্রা বলল, অটো আলারে ভাড়াটা দিয়ে আইসেন ফুপু। অটোকে বিদায় করে দিয়ে তার বৃদ্ধ ফুফু চিত্রার কাছে এলেন। চিত্রার পরনে লাল শাড়ি। ভাতিজির বিয়ে হয়েছে সেটা তিনি জানেন না। কারণ ভাইয়ের সঙ্গে তার খুব একটা যোগাযোগ নেই। জীবন ও সময়ের স্রোতে হারিয়ে গিয়ে কেউ কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। তাছাড়া সোহরাব উদ্দিন একটা কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে মেয়েকে জয়নালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পাড়া প্রতিবেশি কিংবা আত্মীয়-স্বজন কাউকেই তিনি দাওয়াত দেন নি। চিত্রা তার বিপদের সব কথা খুলে বলল। বৃদ্ধ ফুফু অনেক কান্না করলেন তাকে জড়িয়ে ধরে। চিত্রা ফুফুকে বলল, আমি যে এইখানে আইছি এটা এখনই আব্বারে জানাইয়েন না। ওই লোকটা যদি আব্বার কাছ থাইকা খবর পাইয়া এখানে আইসা পড়ে। আব্বারে এখনই কিছু জানানোর দরকার নাই। চিত্রার কথা মেনে নিলেন তাঁর ফুফু। ভাতিজিকে নিরাপদে ফিরে পেয়েছেন এটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। এরপর মাস ছয়েক চিত্রার ফুফুর বাড়িতেই কেটে গেল। ফুপুর দুই ছেলে ও ছেলের বউ, নাতিপুতি নিয়ে ভরা সংসার। ভাবীদের কাছে বোঝা মনে হলেও ভাইদের কাছে চিত্রা বোনের মতোই রইল। সেই ঘটনার কয়েকদিন পর সোহরাব উদ্দিনকে গোপনে খবর দিয়ে নিয়ে আসা হয়। তিনি নিজের মেয়েকে এমন বিপদে ফেলে দিয়েছেন ভেবে সব সময় হাহাকার করে কান্না করেন। মেয়েকে তিনি বোনের বাড়িতেই রেখে দিলেন। আর বাড়িতে গিয়ে এমন ভাব করলেন যেন মেয়ে তার জামাইয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে খুব সুখে আছে। গরীব ও অসহায় সোহরাব উদ্দিনের এছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। মেয়েটা টেনেটুনে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। স্কুলে পড়ার কারনেই মেয়েটার এমন বুদ্ধি হয়েছে। এটাই মনে করেন তিনি। তিনি মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেও মেয়েটাকে ফিরে পেয়েছেন এজন্য সব সময় শুকরিয়া আদায় করেন। দেখতে দেখতে প্রায় নয় মাস কেটে গেল। ফুফাতো ভাইয়ের বউদের চোখের এখন চিত্রা একটা বিরক্তির নাম। নিজেদের সংসারে এরকম একজন যুবতী মেয়েকে তারা সহ্য করতে পারছে না। তাদের স্বামীরা যথেষ্ট ভালো চরিত্রের অধিকারী হলেও ভরসা করতে পারছে না তারা। চিত্রার উঠতি যৌবন। কখন কি বিপদ ঘটে যায় বলা যায় না। এই আপদকে ঘর থেকে বিদায় করতে চায় তারা। দুই ভাবির কথামতো চিত্রার ভাইয়েরা তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করলো। তবে এবার যেন আর কোন ভুল না হয় সেই কথা ছেলেদেরকে ভালোমতো বুঝিয়ে দিলেন চিত্রার ফুফু। এই গ্রামেরই এক ছেলের পছন্দ হলো চিত্রাকে। ছেলেটির নাম রুপক। বাজারে তার বাবার একটা কাপড়ের দোকান আছে। রূপক কাপড়ের দোকানে বেচাকেনা করে আর বাবার জমিজমা দেখাশোনা করে। ছেলে হিসেবে বেশ ভালো। চিত্রার ফুপাতো ভাই আশিকের সঙ্গে একই স্কুলে পড়েছিল রূপক। মেট্রিক পাশ করা ছেলেটি অনেক দায়িত্ববান হিসেবেও সবাই চেনে তাকে। তার সঙ্গেই বিয়ের কথা চলতে লাগলো চিত্রার। বিয়েতে একদমই ইচ্ছা নেই মেয়েটির। একবার তার জীবনে যে অভিশাপ নেমে এসেছিল সে দ্বিতীয়বার আর এ ভুল করতে চায় না। কিন্তু অন্যের সংসারে আর কতদিন এভাবে বোঝা হয়ে পড়ে রইবে। ভাইদের স্ত্রীর চোখ রাঙানি সে অনুভব করে। কোন মেয়ে তার সংসারে অন্য একটা মেয়েকে সহ্য করতে পারেনা। তারা কেন সহ্য করবে তাকে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা ভাইয়েরা চিত্রার ভালো চায়। তারা বুঝেশুনে গ্রামেরই ছেলে আর আশিক ভাইয়ার বন্ধুর সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা বলছে। এতে চিত্রার মোটেও অমত থাকা উচিত না। সোহরাব উদ্দিন একদিন বেড়াতে এলে চিত্রা তাকে বলল, আব্বা আমি কি করবো? সোহরাব উদ্দিন অশ্রুসজল চোখে বললেন, আগেরবার আমি কোন খোঁজ খবর না নিয়া ভুল করছি। এবার তোর ভাইয়েরা অনেক খোঁজ খবর নিছে। তারা তোর জন্য একটা ভাল পাত্র ঠিক করছে রে মা। তুই আর অমত করিস না। চিত্রা ভেবে পায়না বাবাকে সে কি উত্তর দেবে। তার অতীতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা কাউকে বলাও যায় না। সে যে এখনো কুমারী এটা কেউ বিশ্বাসই করবে না। সেই রাতের পর থেকে আর কখনো জয়নালের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সোহরাব উদ্দিন গোপনে অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন জয়নালকে। খুঁজে পেলে তিনি জয়নালকে কেটে টুকরা টুকরা করে হয়তো ভাসিয়ে দিতেন। কিন্তু জয়নাল গ্রামে অতিথি হয়ে এসেছিল আবার উধাও হয়েছে অন্য কোথাও। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। চিত্রার একবার বিয়ে হয়েছিল সেটা পুরোপুরি গোপন রাখল সবাই। ভরা বর্ষার এক দিনে বেশ আয়োজন করে বিয়ে হয়ে গেল চিত্রার। গ্রামবাসীরা এল, পাত্র পক্ষ থেকে এসেছিল বেশ কয়েকজন। তারা খুব সুন্দর করে বউ সাজিয়ে বিয়ে করে নিয়ে গেল চিত্রাকে। এবার বাসর ঘরে বসে থাকতে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল চিত্রা। ঘরে যে মানুষটি প্রবেশ করল সবার আগে তার দিকে একবার ভালো করে খেয়াল করলো সে। বিয়ের আগে একবার মাত্র রূপক কে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তাতে লোকটাকে বেশ ভালো মনে হয়েছিল চিত্রার। কথাবার্তা খুব একটা হয়নি। আজকে ঘরে ঢুকেই রূপক বলল, বাইরে বাতাস। আকাশ খারাপ করছে। মনে হয় বৃষ্টি হইবো। আপনার কিছু লাগলে বলেন ঐ ঘর থেকে আইনা দেই। বৃষ্টি শুরু হইলে তো আর ওই ঘরে যাইতে পারবেন না। ভীষণ অবাক হয়ে রূপকের দিকে তাকাল চিত্রা। তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো। যে মানুষটা ঘরে ঢুকে প্রথম কথাতেই তাঁকে তাঁর প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, সে নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৩১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now